• ঢাকা
  • শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Songbad Prokash

ইনস্টাগ্রাম

টুইটার


লিংকডইন

পিন্টারেস্ট

গুগল নিউজ


মোরাল পুলিশিং, নাকি আইন, কোনটি দিয়ে বিচার হবে?


তানিয়া কামরুন নাহার
প্রকাশিত: মে ২২, ২০২২, ১২:২০ পিএম
মোরাল পুলিশিং, নাকি আইন, কোনটি দিয়ে বিচার হবে?

সম্প্রতি নরসিংদীতে একজন তরুণীকে রীতিমতো হেনস্তার শিকার হত🥀ে হয়েছে। স্লিভলেস পোশাক ও জিন্স পরার কারণে স্থানীয় লোকজন মেয়েটির গায়ে হাত পর্যন্ত দিয়েছে, পোশাক খুলে নিতে চেয়েছে। ঘটনাটি আমরা জানতে পেরেছি ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওর মাধ্যমে। ভিডিওতে আমরা দেখি বোরকা পরা একজন নারীকে এ কাজ করতে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। টিপ, জিন্স, স্লিভলেস পোশাক পরার কারণে নারীদের প্রায়ই সাম্প্রদায়িক মানসিকতার ব্যক্তিরা কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বিচার করে বলে, “এসব তো ধর্মে অনুমতি দেয় না”। অথচ দেশের কোনো আইনে অন্যের ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা যায় না। এমন কি দেশের আইনে টিপ, জিন্স, স্লিভলেস পোশাক পরাতেও কারো কোনো বাধা নেই। তবুও আমরা সব সময় অন্যকে দেশের আইন নয়, বরং ধর্ম দিয়ে বিচার🐻 করতে পছন্দ করি। অন্যের ব্যক্তিগত ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করি আর ধরনের ঘটনাকেই মোরাল পুলিশিং বলা হয়ে থাকে। আরো কিছু উদাহরণ দিলে ব্যাপারটি স্পষ্ট হবে।

মাদ্রাসায় হুজুর শিক্ষকের দ্বারা শিশু (ছেলে, মেয়ে যেকোনো শিশু) ধর্ষণের ঘটনা ইদানিং প্🥂রায়ই লক্ষ্য করা যায়। তবে ধর্ষণের ঘটনা যে শুধু মাদ্রাসাতেই ঘটে তা নয়, স্কুলেও ঘটে। ভিকারুন্নেসার পরিমল কাণ্ডের কথা নিশ্চয়ই ভুলে যাননি। এমন কী সিলেটে এমসি কলেজে শিক্ষার্থীদের দ্বারা গণধর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে। এখানে দেশের আইন অনুযায়ী প্রতিটিই ধর্ষণ অপরাধ। কিন্তু ধর্ষকের গায়ে যদি দাঁড়ি টুপি থ🐲াকে, তবে ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধের কথা ভুলে গিয়ে সবাই ব্যক্তিটিকে ধর্ম ও পোশাক দিয়ে বিচার করতে শুরু করে। দেয়। এগুলোও মোরাল পুলিশিং।

কিছুদিন আগে রেলে টিকেট কালোবাজারি করার দায়ে গ্রেপ্তার হলেন একজন অফিস🔥ার। টেকনাফে মারামারিতে ইয়াবা কারবারি নিহত হলো। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে শত কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছে ডিজির ড্রাইভার। এমনি আরও বহু উদাহরণ দেওয়া যাবে। এবং এদের প্রত্যেকের দাঁড়ি, টুপি ও পাঞ্জাবি থাকায় তাদের মূল অপরাধ ভুলে গিয়ে পোশাক দিয়ে বিচার করা শুরু করে দেয় সবাই। প্রসঙ্গত, একটি গল্প মনে করাতে চাই।

এলাকায় এক চোর ধরা পড়েছে, গণপিটুনি চলছে। এক শিশু তার বাবার কাছে আবদার ধরেছে, চোর দেখবে। তাকে চোর দেখানো অবাক হয়ে বলে, “চোর কোথায়, এটা তো একজন মানুষ!” ঠিক তেমনি অপরাধী তো আলাদা কোনো ভিনগ্রহী প্রাণী নয় যে, চেহারা বা পোশাক দেখলেই চিনতে পারবেন। সে আপনার আমার মতোই একজন। আর দশজন সাধারণ মানুষ যেমন হয়, কেউ টুপি পাঞ্জাবি পরে, দাঁড়ি রাখে, কেউ শার্ট প্যান্ট পরে, কেউবা লুঙ্গি ফতুয়া পরে, অপরাধীও তেমনি পোশাক পরে। অপরাধীর আলাদা কোন ইউনিফর্ম থাকে না, যাতে তাকে দেখলেই বোঝা যাবে সে অপরাধী! পোশাক দেখেই যদি অপরাধী চেনা যেত, তবে পাইরেটদের মতো এক চোখে কালো পট্টি বেঁধেই অপরাধীরা ঘুরে বেড়াত। অথচ দেখুন, শিল্পকলা একডেমির মহাপরিচালক যখন শত কোটি টাকা লোপাট করে দেন তখন তার পোশাক কিংবা নারীলোভী ও খুনী বিশিষ্ট শিল্পপতির পোশাকটাও আপনার আমার চেয়ে আলাদা কিছু নয়, হয়তো একটু বেশি দামী। অথচ তখন ওটা আর আপত্তিকর মনে হয় না! আর কোনো অপরাধীর যদি টুপি দাঁড়ি পাঞ্জাবি থাকে, তবে শুরু হয় ধর্ম দিয়ে বিচার করা, তা🍌র পোশাক নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ। এ ধরনের মোরাল পুলিশিংয়ের ফলে সাম্প্রদায়িক ঘৃণা, বিদ্বেষই শুধু বৃদ্ধি পায়। এরই ফলশ্রুতিতে পালটা জবাব হিসেবে পিকে হালদার, ওসি প্রদীপ, সুধাশু সুরের দুর্নীতি বিচারটাও হয় ধর্ম দিয়েই মোরাল পুলিশিং করে। আমরা বেমালুম ভুলে যাই তাদের গুরুতর অপরাধের কথা। এতে শুধু সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষই ছড়ায়।

ঠিক যেমনটা ঘটেছিলো, সম্প্রতি নরসিংদীতে জিন্স টপস পরা তরুণীর সঙ্গে এবং কিছুদিন আগে লতা সমাদ্দারের টিপ নিয়ে। অথচ অপরাধের বিচার হওয়া উচিত দেশের আইন অনুযায়ী। ধর্ম বা কারো পোশাক বিবেচনা করে, মোরাল পুলিশিংয়ের মাধ্যমে নয়! নরসিংদীতে ঘুরতে আসা সেই তরুণ তরুণী যদি অনৈতিক কোন কর্মকাণ্ডের উদ্দেশ্যে সেখানে গমন করে বা অসামাজিক/অনৈতিক কোন কাজ করেও থাকে, সেটির বিচারও মোরাল পুলিশিং দিয়ে নয় বরং দেশের আইন দিয়েই হওয়া উচিত। এমন কী, কেউ যদি তার ধর্মকে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে অপরাধ করে থাকে, সেটিও আইন দিয়েই বিচার করা সম্ভব! কিন্তু আমরা আইন দ🌞িয়ে কাউকে যেন বিচার করতেই চাই না। সব কিছুর মধ্যে মোরাল পুলিশিং করতেই হবে। এসব ঘটারও কিছু কারণ রয়েছে। এর একটি কারণ হচ্ছে, ঘুরে ফিরে আমাদের সবার সাম্প্রদায়িক চেহারাটি একই রকম। আরেকটি কারণ হচ্ছে, আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা।

দেশের সংবিধান ও আইন নিয়ে সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাবেই মোরাল পুলিশিং করে সবক꧑িছুকে বিচার করার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ। দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থাও এমন জট🙈িল প্রক্রিয়া যে, সাধারণ মানুষ এগুলোকে এড়িয়েই চলতে চায়। ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালীরা নিজের ইচ্ছে মতো আইন চালিয়ে নেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ বড় বিপাকে, তারা তো আইনের বিচার পায় না। নিজের হাতে আইন তুলে নেবার উপায়ও তাদের নেই। নিরুপায় হয়ে তারা বড়জোর আল্লাহর কাছেই বিচার চাইতে পারে।  বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেও ধর্মের কাচ দিয়ে সবকিছুকে দেখার প্রবণতা তৈরি হয়। মোরাল পুলিশিং বাড়ে। দেশের আইনের প্রতি কারোরই আস্থা নেই। তাই সরকারের উচিত সাধারণ নাগরিকদের দায়িত্ব ও অধিকার, রাষ্ট্রের সংবিধান ও আইন সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির কর্মসূচি নেওয়া। তাহলে এ ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ অনেকটাই কমানো সম্ভব। 

 

লেখক : শিক্ষক ও লেখক।

Link copied!