বাংলাদেশে সম্প্রতি অভূতপূর্ব যে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সূচনা হয়েছে, সেখানে ভারতের ভূমিকা দুই দেশের এই সম্পর্ককে এক যুগসন্ধিক্ষণের সামনে এনে দাঁড় করিয়েছে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাংলাদেশে একটি স্বজনতোষী, জনবিচ্ছিন্ন সরকার ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে ভারতের ভূমিকা বাংলাদেশের মানুষের মনে গভীর রেখাপাত করেছে, যার রাজনৈতিক-সামাজিক ও বাণিজ্যিক অভিঘাত দীর্ঘ সময় ধরে অনুভূত হবে এবং দুই দেশের আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ককে নতুন এক গতিপথে নিয়ে যাবে। বিশ্লেষকেরা আরও বলছেন, বিশ্বায়িত এই যুগে বাংলাদেশ-ভারতের বর্তমান সম্পর্কের প্রেক্ষাপট থেকে অন্যান্য দেশেরও অনেক কিছু শিক্ষণীয় রয়েছে। কারণ, ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক অত্যন্ত ব্যাপক, বিস্তৃত ও বহুমাত্রিক; যা গত দুই দশকে দুই দেশের শাসকশ্রেণির নিপীড়নমূলক ও কর্তৃত্ববাদী দৃষ্টিভঙ্গি এবং একে অপরের সহযোগী ভূমিকার কারণে ক্রমশই নাগরিক বিচ্ছিন্নতায় রূপ ন🌳িয়েছে, যা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মাধ্যমে শঙ্কা সৃষ্টি করেছে।
ভারতের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশি জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্ব না করে চরম কর্তৃত্ববাদী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা করার ভুল নীতির কারণে এখন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য আসাম, মেঘালয়া, মিজোরাম, ত্রিপুরার সঙ্গে যোগাযোগ ও বাণিজ্য উন্নত রাখতে প্রবেশাধিকার ও বঙ্গোপসাগরের পথ ব্যবহারের সুযোগ গুরুতর প্রশ্নের মুখে পড়বে; যা ভারতের জন্য ক্ষতির কারণ হবে। সম্পর🥃্কের এই টানাপোড়নের অর্থ বাংলাদেশের স্থলপথ এবং চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে পণ্য পরিবহনে বিলম্ব এবং একই সঙ্গে ২০২৩ সালের নভেম্বরে চালু হওয়া আগরতলা-আখাউড়া আন্তঃসীমান্ত রেলসংযোগে সমস্যা তৈরি হওয়া। ভারতের ব্য🃏বসায়ী মহলও বলছে, বাংলাদেশের পতিত সরকারকে অন্ধসমর্থন দিয়ে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক ও ভারতের অর্থ ও বাণিজ্য সম্ভাবনাকে গুরুতর ঝুঁকির মুখে ফেলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ৫৩ বছর আগে স্বাধীন হওয়ার সময় থেকেই ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও প্রতি বিদ্বেষ নয়’—এর সাংবিধানিক আদেশ অনুসারে একমাত্র ইসরায়েল ছাড়া বিশ্বের আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কে সহযোগিতামূলক উদ্যোগকে উৎসাহিত করেছে, যেখানে পারস্পরিক সহযোগিতা ও শ্রদ্ধাবোধ সামগ্রিক উন্নয়নের অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশ তার তিন দিক থেকে বেষ্টন করা ভারতের সঙ্গে আর্থিক-বাণিজ্যিক ও বিনিয়োগ সম্পর্কের অংশীদার হয়েছে। কিন্তু বিগত দুই দশকে দুই দেশের শাসকদলের সম্পর্কের গভীরতা ব্যাপকভাবে বিস্তৃত ও শক্তিশালী হয়েছে, যার মূল দর্শন ছিল ভারতের আর্থিক ও বাণিজ্যিক লাভবান হওয়ার বিনিময়ে বাংলাদেশের একনায়কতান্ত্রিক ক্ষমতাকে টিকে রাখা। আর এ কারণেই ♒বাংলাদেশ-ভারত অর্থ ও বাণিজ্য সম্পর্কে এখন গুরুতর টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে, যার প্রমাণ পাওয়া যায় বিভিন্ন সংস্থার সাম্প্রতিক সব হিসাব-নিকাশে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ভারত থেকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পণ্য আমদানি হয়, যা মোট আমদানির ১৮ শতাংশ। চীন থেকে আসে মোট আমদানির ২৫ শতাংশ। ভারত থেক🦂ে যত অর্থমূল♚্যের পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ, রপ্তানি করে তার ৭ ভাগের মাত্র ১ অংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের আমদানি বিল পরিশোধের পরিসংখ্যানে চোখ রাখলে দেখা যায়, ২০১১-১২ অর্থবছরে ভারত থেকে ৪৭৪ কোটি (৪.৭৪ বিলিয়ন) ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছিল বাংলাদেশ। এর পরের ১০ বছরে আমদানি গুণিতক হারে বেড়েই চলেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে এসে ভারত থেকে আমদানির পরিমাণ দাঁড়ায় ১ হাজার ৩৬৯ কোটি (১৩.৬৯ বিলিয়ন) ডলারে। তবে ডলার সংকটের কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরায় বাংলাদেশের সার্বিক আমদানি ১৬ শতাংশের মতো কমেছিল। তারপরও ভারত থেকে হয় ১ হাজার ৬৩ কোটি (১০.৬৩ বিলিয়ন) ডলারের। বাংলাদেশের আমদানি করা ভারতীয় পণ্যের তালিকায় শীর্ষে আছে তুলা। মোট আমদানি খরচের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই হয় বস্ত্রখাতের এই কাঁচামাল আমদানিতে। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়কাল থেকে পর পর কয়েক দশক ভারত থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ ও খাদ্যপণ্যই বেশি আমদানি হতো। কিন্তু বিগত দুই দর্শকের প্রবণতায় দেখা যায়, কাঁচামাল ও শিল্পায়নে প্রয়োজনীয় মূলধনী যন্ত্রের মতো পণ্য আমদানি বেশি হচ্ছে সময়, পরিবহন পথ ও খরচ কম হওয়ায়।
আমদানি করা কাঁচামালনির্ভর বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের সিংহভাগ কাঁচামাল আমদানি হয় ভারত থেকে। সব মিলিয়ে ভারতের পঞ্চম বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য হচ্ছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়া ভারতের রপ্তানি আয় প্রথম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। মূলত ভারত থেকে সুতা, খনিজ জ্বালানি, ভোজ্যতেল, রেলপথ ছাড়া অন্য যানবাহনের যন্ত্রপাতি, বয়লার, জৈব রাসায়নিক, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, লোহা ও ইস্পাত, প্লাস্টিক ও প্লাস্টিক সামগ্রী এবং বিশেষায়িত কিছু ওষুধ। অন্যদিকে ভারত থেকে যেসব খাদ্যপণ্য আমদানি হয়, তার মধ্যে রয়েছে পেঁয়াজ, মশলা, দুগ্ধজাত খাবার, সূর্যমুখী ও সয়াবিন তেলসহ ভোজ্য তেল, চিনি, মধু, শিশুদের গুঁড়া দুধ, কোমল পানীয়, চিপস, বিস্কুট, চকোলেট, ক্যান্ডি, কফি, চা ও দানাশস্য। ভারতীয় ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি অ্যাকিউট রেটিংস অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের আমদানি অর্থাৎ ভারতের রপ্তানি আয়ে স্বল্পমেয়াদে বিরূপ প্রভাব এবং সামগ্রিক রপ্তানি চিত্রকে মাঝারিভাবে আঘাত করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, ভারতের টেক্সটাইল পণ্য আমদানি (বাংলাদেশের রপ্তানি) সেক্টরে কিছু ভারতীয় কোম্পানির সরবরাহ শৃঙ্খলকে প্রভাবিত করবে স্বল্প মেয়াদে। তবে সংস্থাটি মনে করে, বাংলাদেশে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতে অস্থিরতা ও উৎপাদন কম হলে ভারতের এই খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো লাভবান হতে পারে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কিত জাতিসংঘের কমট্রেড ডেটাবেস-এর চলতি সেপ্টেম্বরে হালনাগাদ হিসাব অনুসারে𝔍, ২০২৩ সালে বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানি ছিল ১১.২৫ বিলিয়ন ডলারের। তবে গত ৩ আগস্ট ভারতের ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (আইবিসিসিআই) জানিয়েছে, ভারত থেকে বার্ষিক ১৪-১৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ, যা আগস্টে ৩০ শতাংশ কম🌄ে গিয়েছে। অর্থাৎ ৩০০ মিলিয়ন ডলারের আমদানি কমেছে।
ভারত থেকে বাংলাদেশের আমদানির এই চিত্রের বিপরীতে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ অনেক কম। তারপরও গত কয়েক বছর ধরেই রপ্তানি উন্নয়ন ব্যু๊রো (ইপিবি) বলছে, ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে, যা বেসরকারি সংস্থাগুলো আংশিক সত্য বলে মত দিয়েছে এবং বলছে, এই দুই দেশের বাণিজ্য ভারসাম্যে অতীতের মতো এখনো আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশি পণ্য ও সেবার রপ্তানি গন্তব্যের তালিকায় ভারতের স্থান ছিল দ্বাদশ। ওই বছর ভারতে ৮৭ কোটি ডলারের পণ্য ও সেবা রপ্তানি হয়েছিল। পাঁচ বছরের মধ্যে ভারতের অবস্থান এখন সপ্তম। ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৯৯ কোটি ডলারের পণ্য ভারতে রপ্তানি করে বাংলাদেশ। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারতে ২১৩ কোটি (২.১৩ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ৭ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই ভারতের বাজারে পণ্য রপ্তানি থেকে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় হয়নি। ইপিবির সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে অর্থাৎ জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে ভারতের বাজারে ১২৭ কোটি ৩৯ লাখ (১.২৭ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। এই অংক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে ভারতে পণ্য রপ্তানি থেকে ১৫২ কোটি ৭৪ লাখ (১.৫৩ বিলিয়ন) ডলার আয় এসেছিল।
বাংলাদেশ-ভারত অর্থ ও বাণিজ্য আলোচনায় আরও তিনটি অন্যতম খাত, সেবা, বিনিয়োগ ও রেমিটেন্স। এই তিনটি খাতের ৯৯ শতাংশই ভারতের অনুকূলে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বাংলাদেশে ভারতের বিশাল ভোক্তা বাজারে প্রসারের পাশাপাশি কাঁচামাল রপ্তানি, ভারতীয়দের দক্ষ শ্রমবাজার তৈরি এবং ভারতে বাংলাদেশিদের চিকিৎসা ও মেডিকেল ট্যুরিজম ইত্যাদি খাত বিগত দুই দশকে ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে। কিন্তু এসব খাতে বাংলাদেশের অবস্থান তৈরি ও উন্নয়নের পথে ভারত নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা দিয়েছে এবং তা করা হয়েছে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় আইনের বেড়াজাল তুলে। ফলে সম্ভাবনা থাকলেও বাংলাদেশ বিশাল প্রতিবেশী দেশ ভারতে বাণিজ্য সম্প্রসারণের সুবিধা কাজে লাগাতে পারেনি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারত বাংলাদেশে যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করেছে, বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি ও বিশাল বাজারের জাপান, জার্মানি বা ফ্রান্সেও সে পরিমাণ রপ্তানি করতে পারেনি। অন্যদিকে বাংলাদেশ যোগ্যতা থাকলেও ভারতে নামমাত্র রপ্তানি করতে পেরেছে। এ কারণে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভারতের ইকোনমিক টাইমস, ইন্ডিয়া টুডেসহ অনেক গণমাধ্যমে গত আগস্টের মাঝামাঝি তাদের প্রতিবেদনে আভাস দিয়েছে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও জনগণের নেতিবাচক মনোভাবের কারণে বা🐻ংলাদেশে ভারতের অর্থ ও বাণিজ্য অঙ্গনে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, যার বড় একটি ক্ষেত্র রেমিটেন্স। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ভারতের জন্য চতুর্থ বৃহত্তম রেমিট্যান্সের উৎস ছিল বাংলাদেশ। ২০১৭ সাল থেকেই ভারত ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি করে রেমিট্যান্স আয় করতে শুরু করে, যা পরের বছরগুলোয় দ্রুতহারে বাড়তে থাকে। ধারণা করা হয়, স্পর্শকাতর হওয়ায় ভারতের সরকারি ত💯রফে বাংলাদেশ থেকে প্রকৃত রেমিটেন্স আয়ের প্রকৃত চিত্র প্রকাশ করা না করা হলেও দেশটির সরকারের তরফে বলা হয়েছে, ২০২১-২২ সালে ভারতের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশ থেকে ২৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স আয়। ২০১৭ সাল থেকে ২ বিলিয়ন ডলার করে হার বৃদ্ধির প্রবণতা বিবেচনায় নিলে বলা যায়, ভারত ২০২৩ অর্থবছরে কমপক্ষে ৩০ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স আয় করেছে বাংলাদেশ থেকে। মূলত পোশাক শিল্পের মার্চেন্ডাইজিং, ফ্যাশন ডিজাইনিং ও ক্রেতা হ্যান্ডলিং খাত থেকে বেশি রেমিটেন্স নেন ভারতীয়রা, যাদের ৮০ শতাংশই কোনো ধরনের কর-ট্যাক্স দেন না।
দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার হিসাবে, বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে বাংলাদেশে ৫ লাখ ভারতীয় নাগরিক অবস্থান করছেন। আবার কোনো সংস্থার মতে, এই সংখ্যা ২৬ লাখ। কিন্তু বাংলাদেশ প🃏ুলিশের হিসাবে, ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতীয়দের সংখ্যা ১ লাখ ৭ হাজার ১৬৭ জন। এদের মধ্যে ব্যবসা ও বিনিয়োগ ভিসায় রয়েছেন ১০৪৮৫ জন, চাকরি ১৪৩৯৯ জন, স্টাডি ৬৮২৭ জন এবং ট্যুরিস্ট ভিসায় ৭৫ হাজার ৪৫৬ জন। ভারতীয়দের বাংলাদেশে বৈধভাবে চাকরি করার সুযোগ দেওয়া হলেও বাংলাদেশিদের দেশটিতে চাকরির কোনো সুযোগ নেই। কারণ, ভারতীয় আইনে বিদেশিদের সেখানে চাকরি করা নিষিদ্ধ। কাজেই বলা যায় ভারত থেকে বাংলাদেশের রেমিটেন্স আয় শূন্য। অপরদিকে বাংলাদেশিদের কল্যাণে ভারতের টুরিজম ও চিকিৎসা খাত রমরমা ব্যবসা করছে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ সরকারের জানায়, ভারতীয় দূতাবাস অন্তত ১৭ লাখ বাংলাদেশিকে চিকিৎসা ও ভ্রমণ ভিসা দিয়েছে। বিভিন্ন বেসরকারি হিসাব বলছে, ভারতীয় টুরিজম ও চিকিৎসা খাত বাংলাদেশিদের মাধ্যমে প্রতিবছর অন্তত ২৫ বিলিয়ন ডলার আয় করছে। অপরদিকে বাংলাদেশের ভারতীদের মাধ্যমে এই খাতে আয় ১ মিলিয়ন হয় কি না, তা নিয়ে অনেকের সন্দেহ আছে।
উল্লিখিত তথ্যাবলি বিবেচনায় নিয়ে বলা যায়, আন্তঃরাষ্ট্রীয় অর্থ-বাণিজ্যের মূল পাঁচটি খাত অর্থাৎ আমদানি, রপ্তানি, সেবা, বিনিয়োগ ও রেমিটেন্সে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক পুরোপুরি অসম। একটি বৈষম্যনির্ভর ও শোষণকেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থাকে একচেটিয়া ও নিরঙ্কুশ সমর্থন দিয়ে এবং দ্বিপাক্ষিক নানা ইস্যুতে যেভাবে ভারতের সরকার স্বার্থপর আচরণ করেছে, তাতে বাংলাদেশ ও ভারতের সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের সম্পর্কে বড় ধরনের দূরত্ব ও অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে। তারপরও এই দুই দেশকে সহাবস্থানমূলক চিন্তাভাবনাকে প্রাধান্য দিতে হবে। সব পক্ষকেই বুঝতে হব🌱ে, পারস্পরিক স্বার্থকে শ্রদ্ধা করা এবং মূল্য দেওয়া প্রতিবেশীর স্বচ্ছন্দে জীবন যাপনের জন্য অপরিহার্য।
লেখক: অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়; সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশে অর্থনীতি সমিতি