করোনাকালে শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপীই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কম বেশি অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। ওই সময়🎶ের প্রেক্ষাপটে🌺 এটিই ছিল তুলনামূলক নিরাপদ উপায়। শিক্ষার্থীদের ফলাফল নির্ধারণেও বিকল্প ব্যবস্থা উদ্ভাবন করা হয়। অটোপাস ওই সময়ের পরিস্থিতির একটি ব্যবস্থা ছিলো। কিন্তু এটিই শেষ পর্যন্ত স্থায়ী রূপ পাবে, এমনটা অনাকাঙ্ক্ষিত।
করোনাকালে অটোপাসের শিক্ষার্থীরা প্রচুর ট্রলের শিকার হয়েছে, এখনো হচ্ছে। অথচ অমন পরিস্থিতির জন্য ওরা মোটেও দায়ী ছিলো না। এরপর সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের ওপরে পরীক্ষা দিয়ে দু একটা ব্যাচ বের হয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে জেন-জি ও জেন-আলফা, দুটি প্রজন্ম করোনার রেখে যাওয়া প্রভাব থেকে এখনো মুক্ত হতে পারেনি। এটি কিন্তু সারা বিশ্বেরই চিত্র। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে চিত্রটা না হয় একটু বেশিই নাজুক𝔉। হবেই বা না কেন? অনলাইনে পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীর পাশ থেকে যদি তার বাবা-মা-ই উত্তর বলে দেন, তবে এর থেকে রেহাই কোথায় পাওয়া যাবে। এটা তো সেই দেশ যেখানে অভিভাবক শিক্ষক একজোট হয়ে প্রশ্নফাঁসে জড়িত হয়, সেই দেশ যেখানে পুলিশি প্রহরা ছাড়া পাবলিক পরীক্ষা কল্পনাও করা যায় না।
২০২৩ সালেও কিছু সংখ্যক এইচএসসি পরীক্ষার্থী পরীক্ষা পেছানোর আন্দোলন করে, যদিও তারা ব্যর্থ হয়। ২০২৪ এর জুলাই আন্দোলনের পর স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষার্থীদের পক্ষে আবার পরীক্ষায় বসাটা সম্ভব ছিলো না। আন্দোলনে অংশ নিয়ে অনেকেই নিহত ও আহত হয়েছে। বাকিদেরও প্রয়োজন ছিলো সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিংয়ꦇের। তারপরেও ওই মুহূর্তে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীর দাবির মুখে অটোপাসের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দেশের অন্য সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এটি নিয়ে বড় কোনো প্রতিবাদ জানায়নি। হালকা পাতলা ট্রল হয়েছে শুধু। যদিও এটা সহজে অনুমেয়, শেখ হাসিনার সরকার যদি ২০২৪ এর পরীক্ষার্থীদের অটোপাস দিয়ে দিতো, তবে প্রতিবাদী ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা এটা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করতো। শত সংগ্রাম করে হলেও তারা কিন্তু পরীক্ষায় অংশ নিয়েই তাদের মেধার স্বাক্ষর রাখার শপথ করতো। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চাইলে দেরিতে হলেও পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করতে নিশ্চয়ই পারতো। আহতদের তালিকা করা এমন কোনো জটিল কাজ ছিলো না। শুধু তাদের অটোপাস দিয়ে দিলেই হতো হয়তো। আসলে পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে, এ পরীক্ষায় কী করলে বৈষম্য, আর কী করলে সমতার ভিত্তিতে ন্যায়বিচার করা যায়, তার হিসাব মেলানো কঠিন। তাই সব দিক রক্ষা করে ২০২৪ সালেও অটোপাসের সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী বলা যায়।
অনেকেই অটোপাস শিক্ষার্থীদের নিয়ে ট্রল করে থাকেন। এসব থেকে বিরত থাকা উচিত সবার। উত♊্তীর্ণ শিক্ষার্থীদেরও কিন্তু এবার দায়িত্ব আরও বেড়ে গেলো। তাই জীবনের পরবর্তী লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য তাদের উꩵচিত হবে সততার সঙ্গে ভালোভাবে পড়ালেখা করে যাওয়া। মেধাবীদের অধিকার রক্ষায় যারা আন্দোলনে অংশ নিয়েছে, তাদের প্রতিটি কাজ কর্মে মেধার পরিচয় দেখতে চায় দেশবাসী। আর হ্যাঁ, মেধা মানে শুধু পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা নয়। সততা, দেশপ্রেম, দায়িত্বশীলতা, বিনয়, দায়িত্বশীলতা, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, দ্রুত কার্যকরী সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা, জ্ঞান, প্রজ্ঞা, শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকা, কাজের দক্ষতা, ভদ্র আচরণ ইত্যাদি সব কিছু মিলেই মেধা একটা টোটাল প্যাকেজ।
লেখক : শিক্ষক ও লেখক