প্রাণিজ আমিষের একটি বড় উৎস মাংস উৎপাদনে একসময় পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ। তবে এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ দাবি করা হয়। তবে🐈 দাম তুলনামূলক বেশি। দেশে মাংসের কেজি ১২শ টাক❀া হয়েছে, এমন রেকর্ডও আছে। যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ দাম। সরকারের বাজার সংশ্লিষ্টরা দাম নিয়ন্ত্রণে কঠোর হলে দাম কমাতে বাধ্য হয় বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি।
দেশে উচ্চবিত্তদের চেয়ে মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষের সংখ্যা বেশি। যাদের পক্ষে বেশি দামে মাংস কিনে প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ করা খুবই কষ্টসাধ্য। এরপর নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি๊তে প্রতিদিনের জীবিকার ব্যয় নির্বাহে হিমশিম খেতে হয় গৃহকর্তাদের।
গত এক বছর ধরে বেশিরভাগ সময়ই মাংসের দাম ৭৫০ টাকার বেশি ছিল। তবে গত দুই মাস আগে হঠাৎ করে তা ৫৯৫ টাকায় নেমে আ🍰সে। যা রীতিমতো অবাক করে দেয় সাধারণ মানুষদের।
গরুর মাংসের সাধ্যের দামে সবচেয়ে বেশি খুশি হয় মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষেরা। কারণ, মাংসের কেজি ৫৯৫ টাকা হওয়ায় তা ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ছিল। বাজারে ৭৫০ টাকা কেজির মাংস ৫৯৫ টাকা কেজি বি🦩ক্রি করে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন খিলগাঁও এলাকার ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান (খলিল)🃏। তবে সেটা বেশিদিন ধরে রাখতে পারেননি তিনি।
এদিকে জাতীয় ভোক্তা অধিকꦦা🐈র অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করে ৬৫০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রির ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মাস অ্যাসোসিয়েশন। সেটিও বেশিদিন কার্যকর হয়নি। যখন গরুর মাংসের প্রতি সাধারণ ক্রেতাদের চাহিদা বাড়াল, ঠিক তখনই তা বেড়ে আবার ৭০০ টাকায় ঠেকল।
অন্যদিকে, ঊর্ধ্বমুখী মাংসের বাজারে খলিল যেমন আলোচনায় এসেছিলেন, তেমনই আরেক মাংস ব্যবসায়ী জসিমও নতুন করে 𒊎আলোচনায় এসেছেন ৫০ টাকার খুচরা মাংস বিক্রি করে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে দীর্ঘদিন ধরেই মাংস বিক্রি করেন মো. জসিম। চার ছেলেকে নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করেন তিনি। বাজার যখন যেমন যায় সবার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই তিনি সেই দামে মাংস বিক্রি করেন। তবে এর পাশা♐পাশি নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ, ছাত্র, ব্যচেলরদের কথা বিবেচনা করে ১০০ গ্র♍াম, ২৫০ গ্রাম, ৩০০ গ্রাম, ৫০ টাকা, ১০০ টাকার মাংসও বিক্রি করেন তিনি।
জসিমের অল্পমূল্যের খুচরা মাংস বিক্রির ঘটনা দোকানে আসা ক্রেতাদের মুগ্ধ ꩵকরছে।
দেশে যখন করোনা মহামারি আকার ধারণ করেছিল, তার 🗹আগে থেকেই অল্প টাকার মাংস বিক্রি শুরু করেন জসিম। তা এখনও চলমান রেখেছেন। আগামীতেও চলামান থাকবে বলে জানান তিনি।
নিম্নআয়ের মানুষ যেন প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ করতে পারে সেজন্যই দোকানের সামনে বড় প্ল্যাকার্ডে ‘এখানে ১০০ গ্রাম ২৫০ গ্রাম মাংস বেচা হয়’ লিখে রাখা হয়েছে। কোনো ক্রেতা অল্প মাংস কিনতে এসে যেন সংকোচবোধ না করেন। সেজন্যই পল্যাকার্ড টোনিয়েছেন তিনি। তার এমন উদ্যোগের প্রশংসা🐻 আশেপাশের মানুষের মুখে মুখে।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় মো. জসিমের দোকানের সামনে গিয়ে ক্রেতাদের দেখা যায়। কেউ ১ কে🅰জি মাংস কিনতে এসেছেন কেউ আধা কেজি। এদের একজন বাবু। তিনি বলেন, “জসিম ভাইয়ের দোকানের মাংস খুব ভালো। তিনি আমাদের মতো সা♛ধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে ১০০ গ্রাম মাংসও বিক্রি করেন। যা ঢাকার আর অন্য কোথাও বিক্রি করে কিনা আমার জানা নেই। আমরা তার দোকানে এসে অল্প টাকার মাংস চাইলেও আমাদের না করেন না।”
তিনি আরও বলেন, “আগে মাংসের দাম অনেক বেশি ছিল। ছয় মাসেও একবার মাংস কিনতে পারতাম না। কারণ, যা ইনকাম করি তা দিয়ে সংসার চালা𝓡নোই কঠিন হয়, মাংস তো দূরের কথা। এখন জসিম ভাই অল্প টাকার মাংস দেয় বিধায় কম করে হলেও পরিবারের সদস্যদের মুখে মাংস তুলে দিতে পারি। জসিম ভাইয়ের মতো যদি অন্যরাও এই ব্যবস্থা চালু করতো তাহলে আমাদের জন্য অনেক ভালো হতো।”
কম টাকার মাংস বিক্রির উদ্যোগসহ নানা বিষয় নিয়ে মো. জসিমের ছেলে জলিলের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, “একটা সময় গেছে আমরা বেশি দামে মাংস কিনে খেতে পারিনি। বহুবার এমন অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়েছে। আমরা জানি মাংসের প্রতি মানুষের চাহিদা কেমন। দাম বেশি দেখে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষরা চাইলেও এক কেজি গরুর༺ মাংস কিনে খেতে পারে না। আমরা সেই জায়গা থেকেই মূলত কম টাকারও মাংস বিক্রি করার উদ্যোগ নিয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “ঢাকায় অনেক শিক্ষার্থী ম্যাচে থাকে বা ব্যচেলর থাকে। দ্⛎রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে তাদের খরচ বেশি যায়। আগে যেখানে মাসে ৩ বার গরুর মাংস কিনতো, এখন দাম বেশি দেখে একবার কিনছে, এমন শিক্ষার্থীও এসেছে আমাদের দোকানে। এছাড়াও অনেক পরিবার আছে যারা বেশি দামে মাংস কিনতে গেলে কয়েকবার ভাবতে হয়।”
জলিল বলেন, “সাধারণ মানুষ যেন কম টাকার মাংস কিনতে সংকোচবোধ না করেন সেজন্য আমরা প্ল্যাকার্ড টানিয়ে রেখেছি। আমাদের দোকানে এমনও লোক এসেছে, ৫০ টাকা দিয়ে বলেছে আমাকে একটু মাংস দেন। আমরা তাকেও ৫০ টাক🍒ার মাংস দিয়েছি। হয়তো তার ২৫০ গ্রাম মাংস কেনার সামর্থ্য ছিল না বিধায় ৫০টাকা নিয়ে এসেছে। আমরা তাকেও ফিরিয়ে দেয়নি। কাউকেই ফিরিয়ে দিতে চাই না।”
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে জলিল বলেন, ৬৫০ টাকা গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ঠিকই, অথচ আমরা এ দামে পাইকারি পর্যায়েও কিনতে পারি না। যেখানে কিনতেই পারি না সেখানে বিক্রি করবো কিভাবে? এখন গরুর দাম বেড়েছে, গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে। বিশেষ করে বলতে হয়- খামারি পর্যায়ে গরুর দাম বেশি। যে দামে একটি গরু কেনা হয় তাতে যা মাংস আছে সে হিসেব করলে আপনারাই সঠিক দাম কত রাখা যায় নির্ধারণ করতে পারবেন। এখানে অনেক ছাট মাংস বের হয়, তেল বের করতে হয়। মাংসে একটু হাড্ডি গেলে ক্রেতা নিতে চায় না। সবদিক বিবেচন☂া করেই আমরা মনে করি মাংসের দাম আরও একটু বাড়ানো উচিত। কারণ ৭০০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি করে আমরা লাভ করতে পারছি না।