যুগ যুগ ধরে সম্পর্কের বেড়াজালেই আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছে মানুষ। আপনজনের সঙ্গে আত্মার সম্পর্ক, বন্ধু মহলের আন্ত💃রিকতার সম্পর্ক, প্রেমে মায়ার সম্পর্ক এমন সম্পর্ক নিয়েই এগিয়ে চলছে সবাই। এর বাইরেও একটি সম্পর্ক গড়ে উঠে। যাতে আত্মা, আন্তরিকতা, মায়া সবকিছুই থাকে। শুধু থাকে না কোনো সুনির্দিষ্ট নাম। বন্ধুর চেয়েও বড় কিন্তু ভালোবাসার চেয়ে কম এমন একটি সম্পর্কও গড়ে উঠতে দেখা যায় আধুনিক যুগে। এই সম্পর্ককে বিশেষজ্ঞরা নাম দিয়েছেন সিচুয়েশনশিপ বা দায়হীন সম্পর্ক।
অনেকের কাছেই নতুন এই নামটি। বলা যায়, নব্বই দশকের আগের মানুষরা এমন সম্পর্কের কথা হয়তো ভাবতেই পারতেন না। কিন্তু যুগ বদলের সঙ্গে এমন সম্পর্ক এখন দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। সিচুয়েশনশিপ বা দায়হীন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছেন তরুণ-তরুনীরা। এমনকি এই সম্পর্কের বেড়াজা🍸ল থেকে বাদ পড়ছে না বয়স্করাও। বলা যায়, ধীরে ধীরে এমন দায়িত্বহীন সম্পর্কের দিকে ঝুঁকছে সমাজের একাংশ।
সিচুয়েশনশিপ (দায়হীন সম্পর্ক) একটি জটিল সম্পর্কের রসায়ন। এটি সম্পর্কের জটিলতা। জেনারেশন জি বা জেনারে𝓰শন আলফা যারা তারাই বেশি🌌 জড়াচ্ছেন এই সম্পর্কে। কখনো ইচ্ছে করেই আবার কখনো অজান্তেই এমন সম্পর্কে জড়াচ্ছেন। যেখানে থাকে না কোনো প্রতিশ্রুতি, থাকে না কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা, কিংবা সারাজীবন সঙ্গে থাকার কোনো ভবিষ্যত পরিকল্পনা। তবুও এই সম্পর্কে থাকে আত্মার টান, আন্তরিকতা আর মায়া। যার কারণেই একে অন্যকে ছেড়ে থাকাটাও চিন্তু করতে পারেন না। আবার একসঙ্গে সারাজীবন এক ছাদের নীচে থাকতেও তাদের থাকে আপত্তি। তারা দীর্ঘ সম্পর্কে জড়াতে ভয় পান। যা থেকে বেশ গোলমেলে হয়ে উঠে এই সম্পর্ক।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিচুয়েশনশিপ সম্পর্কে ভালোবাসার অনুভূতি থাকে কিন্তু💜 প্রতিশ্রুতি থাকে না। এই সম্পর্কে ঘনিষ্ঠতা থাকে কিন্তু জবাবদিহিতা থাকে না। তারা বর্তমানে বাঁচতে চায়, তাই🐽 ভবিষ্যৎ নিয়ে কেউ ভাবে না। যেকোনো সময় এরা দূরে চলে যেতে পারে কিন্তু আবারও কিছুদিনের ব্যবধানে এক হয়েও যেতে পারে। এমন জটিল সম্পর্কই এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে এই প্রজন্মের দিকে।
যেকোনো পরিস্ꦇথিতিতেই সিচুয়েশনশিপ সম্পর্কে জড়াতে পারেন যেকোনো মানুষ। হয়তো বিচ্ছেদের পরপর একাকিত্ব কাটাতে অন্য কারো সঙ্গ উপভোগ করতে সিচুয়েশনশিপ সম্পর্ক হতে পারে। আবার কোথাও বেড়াতে গিয়ে সাময়িক ভালো লাগ🌃া থেকেও ঘনিষ্টতা বাড়তে পারে। আর গড়ে উঠতে পারে এই জটিল সম্পর্ক। অনেকে সময় বন্ধু মহলেই কারো সঙ্গে এমন সম্পর্ক হতে পারে। যাকে ভালোবাসলেও বিয়ে পর্যন্ত সম্পর্ক গড়ার কোনো পরিকল্পনা থাকে না। শুধু তাই নয়, এমন সম্পর্ক এখন বেশি হচ্ছে ভার্চ্যুয়াল জগতে পরিচয় থেকেও। ভালো লাগার প্রকাশ, অনুভূতির আদান-প্রদান, ঘুরে বেড়ানো সবই হচ্ছে। কিন্তু ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা দুজনই উদাসীন। এটিও সিচুয়েশনশিপ সম্পর্কের জটিল সমীকরণ।
সিচুয়েশনশিপ সম্পর্কে প্রভাবে কী হতে পারে
যেহেতু সিচুয়েশনশিপ সম্পর্কে কোনো প্রতিশ্রুতি থাকে না, তাই হঠাত্ চলে গেলে তা অন্য সঙ্গী𒉰র মনের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। এই সম্পর্কে জবাবদিহিতা থাকে না, তাই সারাক্ষণ অনিশ্চয়তায় থাকতে হয়। এক সময় হতাশা ও উদ্বেগ বেড়ে যায়। আত্মবিশ্বাস কমে যায়। সংবেদনশীল ব্যক্তিরা দীর♉্ঘ অবসাদ ও বিষণ্নতায় চলে যায়। ধীরে ধীরে এই সম্পর্কে বিষাক্ততা জীবনকে মারাত্মক ক্ষতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।
তবে সিচুয়েশনশিপ সম্পর্কে দুজনের বোঝাপড়ায় দূরে সরে যাওয়াটা ইতিবাচক হতে পারে। তারা দুজনই নিজেদের সঙ্গ উপভোগ করছে এবং একটি সময় পর নিজেরাই আলাদা হয়ে যাচ্ছে এমন অবস্থা খুব বেশি মানসিক চাপ ফেলবে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বরং একাকিত্বের সময় এমন সঙ্গে আরও মানসিক প্রশান্তি দিতে পার𒆙ে। তাই এমন সম্পর্ক থেকে কখন বের হয়ে আ⛎সা উচিত সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন বলে পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
সিচুয়েশনশিপ সম্পর্ক থেকে কেন বের হবেন
- দুজন ব্যক্তির বোঝাপড়াটা কেমন তা অবশ্যই বড় বিষয়। চাওয়া-পাওয়া ভিন্ন হলে তা থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত শুরুতেই নিতে হবে।
- সম্পর্ক উপভোগের চেয়ে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া চাপ বেশি মনে হলেও সেখান থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি।
- যদি দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কে যেতে চান, তবে সঙ্গীর সঙ্গে স্পষ্টভাবে আলোচনা করে বোঝাপড়াটা ঠিক করে নিন।
- একে অন্যের অনুভূতিকে সম্মান, অনুভূতির প্রতি সদয় ও শ্রদ্ধাশীল থাকলে সম্পর্ক ভালো নয়। যদি এগুলোর কমতি থাকে তবে সময় নষ্ট না করে শিগগিরই বেরিয়ে আসুন।
- সিচুয়েশনশিপ সম্পর্ক থেকে বের হতে একটি স্বাভাবিক সম্পর্কে জড়াতে হবে। যেখানে থাকবে ভবিষ্যত পরিকল্পনা আর প্রতিশ্রুতি। নয়তো এমন জটিল সম্পর্কে আপনিও হয়তো সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে যাবেন।