• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Songbad Prokash

ইনস্টাগ্রাম

টুইটার


লিংকডইন

পিন্টারেস্ট

গুগল নিউজ


লাশের শহর দেরনায় মৃতের সংখ্যা হাজার হাজার


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৩, ০৫:২০ পিএম
লাশের শহর দেরনায় মৃতের সংখ্যা হাজার হাজার
বন্যায় বিধ্বস্ত দেরনা শহরের একাংশ । সংগৃহীত

লিবিয়াতে এখন যত দূর চোখ যায় শুধꦜু ধ্বংসস্তূপ আর মৃতদেহ। এমনকি সমুদ্রেও ভাসতে দেখা যাচ্ছে মৃতদেহ। ড্যানিয়েল নামক ঝড় ও তার ফলে সৃষ্ট বন্যা বিধ্বস্ত করে দিয়েছে দেশটির দেরনা শহরকে। লাশের পচা গন্ধ ও স্বজন হারানোদের আর্তনাদে ভারী হয়ে আছে সেখানকার পরিবেশ। বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছে, মৃতদেহ গণকবর দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে পড়ে রয়েছে অসংখ্য মরদেহ। মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে আড়াই হাজার পার হয়েছে। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত ৪ সেপ্টেম্বর গ্রিসের উপকূলে ভূমধ্যসাগরের ওপর তৈরি হয়েছিল ঝড় ড্যানিয়েল। এ কারণে ৫-৬ সেপ্টেম্বর গ্রিসে রেকর্ড বৃষ্টিপাত হয়। দেশটির জাগোরা গ্রামের একটি অংশে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৭৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। মধ্য গ্রিসের অনেক 🌳অংশে ২৪ ঘণ্টায় ৪০০ থেকে ৬০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। প্রবল বৃষ্টিতে গ্রিসে ১৫ জন মারা যান।

‘ড্যানিয়ꦅেল’ গ্রিস পার হয়ে শক্তি সঞ্চয় করে লিবিয়ার দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমে ‘মেডিকেন’ (মেডিটেরানিয়ান হারিকেন)-এ পরিণত হয়। ‘মেডিকেন’-এ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় ও মধ্য-অক্ষা🥀ংশের ঝড়ের কিছু বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। এই ঝড় সাধারণত সেপ্টেম্বর ও জানুয়ারির মধ্যে তৈরি হয়।

লিবিয়ার জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্র জানিয়েছে, ১০🌠 সেপ্টেম্বর তীব্রতর হয় ‘ড্যানিয়েল’। ফলে দেশের বিভিন্ন অংশে ১৫০ থেকে ২৪০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয় লিবিয়ার আল-বায়দাতে। সেখানে ১০-১১ সেপ্টেম্🔜বরের মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় ৪০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে।

রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) ড্যানিয়েল আছড়ে পড়ে লিবিয়ার উপকূলে। ঝড়টির তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে যায় আল-বায়দা, আল-মার্জ, তোবরুক, 💝বাতাহসহ বেশ কিছু শহর। প্রবল বৃষ্টি ও বন্যার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেরনা শহরটি। ঝড়ের তাণ্ডবে শহরের তিনটি বাঁধ ভেঙে গিয়ে পানি প্রবেশ করে। আর এতে অসংখ্য মানুষের মৃ𒀰ত্যু হয়। নিখোঁজ হয় হাজারো মানুষ।

শহরের পা🥀নি বিশেষজ্ঞরা বিবিসিকে জানিয়েছেন, প্রথমে দেরনা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরের বাঁধটি ভেঙে পড়ে। পরে প্রবেশ করা পানির চাপে দেরনা থেকে এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাঁধটি ভেঙে যায়। প্লাবিত হয় শহরটির বিস্তীর্ণ 💮এলাকা।

লিবিয়ার বিমানপরিবহন মন্ত্রী ও পূর্বাঞ্চলীয় প্রশাসনের জরুরি পরিস্থিতি কমিটির সদস্য হিশাম চকিউয়াত বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, “সমুদ্রে, উপত্যকায়, ভাঙা বাড়ির নিচে সর্বত্র লাশ পড়ে রয়েছে।” তিনি আরও বলেন, 🐭“শহরের ২৫ শতাংশ মুছে গিয়েছে।”

শুধু দেরনা শহরেই মারা গিয়েছেন ২ হাজার ২০০ জন। দেরনার ওয়াহদা হাসপাতꦿালের পরিচালক মহম্মদ আল-কাবিসি রয়টার্সকে বলেন, “শহরের দুটি ভাগের মধ্যে একটিতে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৭০০ জন মারা গিয়েছেন। অন্যটিতে এই সংখ্যা ৫০♈০ জন।”

মৃতদেহ গণকবর দেওয়া হচ্ছে । সংগৃহীত

পূর্ব লিবিয়ার স্বাস্থ্যমন্🍎ত্রী ওথমান আবদুল জলিল সোমবার দেরনা শহর পরিদর্শন করে জানান, দেরনা এখন ‘ভুতুড়ে শহর’। তিনি বলেন, ‘‘শহরের এখানে-সেখানে পড়ে রয়েছে মৃতদেহ। বহু মানুষ এখনো পানিবন্দি। না খেয়ে আছেন অনেকে। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে রয়েছে আরও অস𝐆ংখ্য দেহ। অনেকেই ভেসে গিয়েছেন সমুদ্রে।’’

ইন্টারন্যাশনাল ๊ফেডারেশন অব দ্য রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজের একটি প্রতিনিধি দলের প্রধান তামের রমজান মৃতের সংখ্যাকে ‘অসংখ্য’ বলে বর্ণনা করেছেন এবং নিখোঁজের সংখ্যা আনুমানিক দশ হাজার🤪 বলে জানিয়েছেন।

লিবিয়ার ইমার্জেন্সি অ্যান্ড অ্যাম্🍰বুলেন্স অথরিটির প্রধান ওসামা আলি জানিয়েছেন, শক্তিশালী কর্দমাক্ত স্রোতে উপত্যকার বাড়িগুলো ভেসে গিয়েছে। শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে, ফোন লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এর ফলে উদ্ধার প্রক্রিয়া জটিল হয়ে পড়েছে।

সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্যোগের প্রস্তুতিতে ত্রুটির কথা স্বীকার করে আলি বলেছেন, “লিবিয়া এমন বিপর্যয়ের জন্য প্রস্তুত ছিল না। এর আগে এমন বিপর্যয় প্রত্যক্ষ করেনি। আমরা স্বীকার করছি যে ত্রুটি ছিল। যদিও প্রথমবার এমন 🥀বিপর্যয়ের মুখোমুখি হলাম আমরা।✱”

দেরনার এক বাসিন্দা আহমেদ মহম্মদ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, “আমরা তখন ঘুমোচ্ছিলাম। ঘুম ভাঙতেই দেখি বাড়ির চ🧸ারপাশ দিয়ে পানির স্রোত। ভয়ঙ্কর স্রোত! সেই পানি ১০ ফুট পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। আমরা বেরোনোর চেষ্টা করেও পারিনি। শেষে বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিই।”

শহরের অপর এক বাসিন্দা রাজা সাসি। যিনি তার স্ত্রী ও ছোট মেয়েকে নিয়ে কোনও রকমে বেঁচে গিয়েছে𒊎ন। তিনি রয🃏়টার্সকে বলেন, “প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম ভারী বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু মধ্যরাতে আমরা একটি বিশাল বিস্ফোরণ শুনতে পাই। পরে জানতে পারি একটি বাঁধ ভেঙে গিয়েছে।”

সঙ্ক𝐆ট🌳 মোকাবিলায় বেশ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যেই সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান বেনগাজিতে ১৬৮টি অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল পাঠানোর ঘোষণা করেছেন। ইতালি উদ্ধার অভিযানে সহায়তার জন্য প্রতিরক্ষা দল পাঠাচ্ছে। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরবও।

লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলি থেকে মঙ্গলবার জাতীয় ঐক্যবদ্ধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী আবদুল হামিদ ডিবেইবা জানিয়েღছেন, ১৪ টন ত্রাণ সমেত একটি বিমান বেনগাজিতে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু বন্যাবিধ্বস্ত দেরনাতে এখনও ত্রাণ পৌঁছনো সম্ভব হয়নি।

২০১১ সালে শাসক মুয়াম্মর গাদ্দাফির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে দেশবাসী। ফলে তার পতন হয়। তার পর থেকে দেশটির পূর্বে বেনগাজিকেন্দ্রিক প্রশাসন ও পশ্চিমে ত্রিপোলিকেন্দ্রিক প্রশাসনের মধ্যে ব♛িরোধ চলছে। তার প্রভাব পড়েছে বন্যাবিধ্বস্ত পূর্ব লিবিয়ার উদ্ধার কাজে।

আবহাওয়াবিদরা সতর্ক করে বলেছে, বিশ্ব উষ্ণায়নের ꦜফলে ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলবর্তী এলাকাগুলোকে আরও শক্তিশালী ‘মেডিকেন’-এর জন্য প্রস্তুত থাকতে হতে পারে। সূত্র-আনন্দবাজার।

Link copied!