• ঢাকা
  • সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৪, ৪ ভাদ্র ১৪৩১, ১৩ সফর ১৪৪৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Songbad Prokash

ইনস্টাগ্রাম

টুইটার


লিংকডইন

পিন্টারেস্ট

গুগল নিউজ


খুলেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষার্থীদের ট্রমা কাটাতে যা করবেন


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২৪, ০২:০৬ পিএম
খুলেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষার্থীদের ট্রমা কাটাতে যা করবেন
বিএএফ শাহীন কলেজের শিক্ষার্থী আহনাফ নেই , তাকে স্মরণ করে রাখা হলো ফুলের তোড়া। ছবি: সংগৃহীত

যখন একা থাকি ভয় লাগে; ঘুমোতে গেলে মনে হয় কেউ আমাকে রামদা নিয়ে তাড়া করছে। নৃশংস সব ঘটনা চোখের সামনে ꧂ভেসে উঠে। ঘুম থেকে চমকে উঠি। তবে সবার সঙ্গে যখন থাকি তখন ভয় লাগে না। তাই চেষ্টা🦂 করি কাজের মধ্যে থাকতে, সবার সঙ্গে থাকতে।

এভাবে𓃲ই বলছিলেন স্নাতক প্রথম বর্ষে পড়ুয়া শিক্ষার্থী সামিয়া পারভি♓ন।

এ রকম আরও অনেককেই ট্রমার মধ্যে থাকতে দেখা যাচ্ছে। গত জুলাই মাসে ছাত্র আন্দোলনে ঘটে যাওয়া নৃশংসতা দাগ কেটেছে শিশু-কিশোরসহ সব বয়সীদের মনে। এই ট্রমা দীর্ঘস্থায়ী হলে তাদের মধ্যে দেখা দিতে পারে ঘুমের সমস্যা, খিটখিটে মেজাজ, নিজেকে গুটিয়ে রাখারಞ প্রবণতা, শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা আর মনোযোগহীনতা। এটা বাড়তে থাকলে দেখা দিতে পারে পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (পিটিএসডি)।

এরই মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে। তাই এ সময় শিশু-কিশোরদের ট্রমা কাটিয়ে উঠতে পরিবার ও শিক্ষকদের এগিয়ে আসতে হবে🐬। ট্রমা থেকে উত্তরণের উপায় সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ও কথাসাহিত্যিক ডা. মোহিত কামাল।

তিনি বলেন, যখন শিশুরা এমনকি বড়রাও কোনো ট্রমাটাইজ, নৃশংস, সহিংস, নির্মম ঘটনার ভেতর ‍দিয়ে যায় তখন তাদের মধ্যে নানান বিষয় আসে। অংশগ্রহণকারীদের মনের অবস্থা হয় এౠকরকম, আবার যারা অংশগ্রহণ করে না, কিন্তু নিষ্ঠুরতা দেখেছে তাদের এক রকম মনের অবস্থা হয়। যারা বিভিন্নভাবে নৃশংসতা দেখেছে তাদের মধ্যে ট্রমাটা গেড়ে বসে থাকে। আর অংশগ্রহণকারী, আঘাতপ্রাপ্ত বা মিছিলে অংশ নিয়ে স্লোগান দেওয়া মানুষটি ওত সহজেই ভেঙে পড়বে না।

অংশগ্রহণকারীদের মনের মধ্যে একটি ভাব তৈরি হয়। দেশের জন্য কিছু করেছে এমন কৃতিত্ববোধ তাদের মধ্যে তৈরি হতে থাকবে। ফলে তারা ট্রমার মধ্য দিয়ে গেলেও মানিয়ে নিতে পারে। যাকে আমরা মেডিকেলের ভাষায় বলি এডজাস্টমেন্ট, একস্পেটেন্স, এডাপ্টেশন। এই জিনিসগুলো হয় মূলত এক মাসের মধ্যে। এই এক মাসের মধ্যে তারা যদি ট্রমা কাটিয়ে উঠতে না পারে সেক্ষে🐎ত্রে মনোচিকিৎকের পরামর্শ নিতে হবে।

মোহিত কামাল শিক্ষক ও অভিভাবকদের কিছ🌳ু পরামর্শ দিয়েছেন। যেমন-

  • গত জুলাই মাসে ঘটে যাওয়া নিষ্ঠুরতা দেখে অনেকেরেই অ্যাকিউট স্ট্রেস ডিসঅর্ডার তৈরি হতে পারে। আর সেগুলো যদি সে প্রকাশ করতে না পারে সেটা স্থায়ী হয়ে যেতে পারে। তার দুঃখ, খারাপ লাগা যদি কারও কাছে প্রকাশ করতে না পারে সেক্ষেত্রে দায়িত্ব বড়দেরই। বড়দেরই উচিত তাদের বয়সের স্তর থেকে নেমে সেই শিশু বা কিশোরের চিন্তার স্তরে, আবেগের স্তরে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলার। এতে ট্রমাটাইজ শিক্ষার্থী তার মনের কথা, তার ভয়ে কথা বলতে পারবে; আবেগ প্রকাশ করতে পাবে। তখন সে ট্রমা বা মানসিক চাপ থেকে বের হতে পারবে।
  • যার মন খারাপ হচ্ছে, ঘুম হচ্ছে না, ভয় পাচ্ছে, দুঃস্বপ্নে নিষ্ঠুরতার নানান বিষয় এলোমেলোভাবে দেখছে তাদেরকে বোঝাতে হবে এটা স্বাভাবিক। এটা তোমার দুর্বলতা নয়; বরং মানবিক গুণের পরিচয়। তুমি জাতির জন্য কিছু করেছ সেটাই বড়; এভাবে তার সঙ্গে ইতিবাচক কথা বললে সে ভেতরের কষ্টটা থেকে সহজেই বের হতে পারবে এবং ভয় বা আতংককে মোকাবেলা করতে পারবে। তখন ট্রমাটাও এক সময় কেটে যাবে। তার সঙ্গে যেকোনো পরিস্থিতিকে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা বেড়ে যাবে। যদি খুব বেশি পর্যায়ে চলে যায় অবশ্যই একজন মনোচিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।
  • সে কিসে আনন্দ পেত সে কাজ তাকে করতে দেওয়া। যদি সে আগে বই পড়তে আনন্দ পেত কিংবা খেলাধুলা করতে পছন্দ করত, তাকে সেটা করতে দেওয়া। মোবাইল বা ইন্টানেটের বাইরে যদি কিছু সময় সে থাকতে পারে তাহলে সহজেই ট্রমা থেকে বের হয়ে আসতে পারবে।
  • শিশুটিকে কোনো ভয়ভীতি বা ফলাফল নিয়ে টার্গেট চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। যেমন ‘স্কুল অনেক দিন বন্ধ ছিল, বেশি করে পড়তে হবে’ এভাবে চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।
  • পরিবারের সকলের মধ্যে বিশেষ করে শিশু বা সেই শিক্ষার্থীর মা-বাবার মধ্যে যেন সুন্দর সম্পর্ক বজায় থাকে সে বিষয়ে খেয়াল রাখবেন। যদি সবার মধ্যে ভালো সম্পর্ক সে দেখে, তাহলে আনন্দের মধ্য দিয়ে তার ভালো সময় কাটবে।

শিক্ষকদের করণীয়

  • অনেকদিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে। শুরুতেই শিশুদের পড়াশোনার জন্য চাপ দেওয়া যাবে না। ভালো ফলাফল করতেই হবে এভাবে বলা যাবে না। যতটা সম্ভব তার সঙ্গে নমনীয়ভাবে কথা বলতে হবে।
  • ক্লাসকে আনন্দময় করে তুলতে হবে। শুরুতে ক্লাসে মজার কোনো গল্প বা আবৃত্তি কিংবা গানেরও আয়োজন রাখতে পারেন। চাপ না দিয়ে ধীরে ধীরে শিশুকে পড়ায় ফিরিয়ে আনতে হবে।
  • শিক্ষকদেরও উচিত শিক্ষার্থীরা যা করেছে সেটা নিয়ে তাদের সামনে প্রশংসা করা। স্কুল যে শিক্ষার্থীর জন্য নিরাপদ; সেই বোধ তার মধ্যে তৈরি করুন। এ ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে এতে যেন তাদের মনে কোনো একটা গোষ্ঠী বা বাহিনীর ওপর ক্ষোভ বেড়ে না যায়।
  • শিক্ষকরা হয়ত জানেন তার কোনো শিক্ষার্থী আন্দোলনে ছিলেন, তখন শিক্ষক যদি তার সঙ্গে কথা বলেন তার অভিজ্ঞতা শুনে বাহবা দেন, ইতিবাচক কথা বলেন তাহলে সে ক্লাসে নিরাপদ বোধ করবে এবং ধীরে ধীরে পড়াশোনায় ফিরে আসবে।
  • যারা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, এখনো হাসপাতালে ভর্তি আছে, যার পা চলে গেছে বা চোখ নষ্ট হয়ে গেছে কিংবা আন্দোলনে মারা গেছে তাদের দেখে শিক্ষার্থীরা কষ্ট পায়। এ অব্স্থায় আন্দোলনে প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থী যদি মারা যায় তাহলে স্কুলে বিষয়টিকে মর্যাদা ও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া উচিত। আহত শিক্ষার্থীদের খবর রাখলে এবং তাদের সম্মানিত করলে বাকি শিক্ষার্থীরা শান্তি পাবে। 
Link copied!