ছাত্র🎃-জনতার অবিস্মরণীয় গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকেই বাংলাদেশ নিয়ে൩ ভারতের গণমাধ্যমে নেতিবাচক খবর প্রচার হচ্ছিল। এক ধরনের বিরোধিতার সুর দেখা যাচ্ছিল। তবে বাংলাদেশের হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারের পর তা চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে।
এমনটাই মনে করছেন গণমাধ্যমের 🐷বিশ্লেষকরা। তারা আরও বলছেন, ‘হাজার হাজার হিন্দুকে বাংলাদেশে হত্যা করা হচ্ছে, হিন্দু নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে’ এধরণের বাক্য প্রায়শই শুনতে পাওয়া যাচ্ছে চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে ভারতে সংগঠিত বিক্ষোভগুলো থেকে।
এভাবে প্রতিনিয়ত রাজনৈতিক ভাষণ, প্রিন্ট ও ইলে♚ক্ট্রনিক মিডিয়ার প্রতিবেদন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম– সব মিলিয়ে ভারতে যে ন্যারেটিভ বা বয়ান তৈরি করা হচ্ছে, তা দেশটির হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে অনেক সাধারণ মানুষও বিশ্বাস করে ফেলছেন বলে মনে করছেন 🍌বিশ্লেষকরা। এ নিয়ে খবর প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা।
ভারতের তথ্য যাচাই ও ভুয়া খবরের খোঁজ দেওয়া একটি ওয়েবসাইট ‘অল্ট নিউজ’ বাংলাদেশ সংক্রান্ত বিদ্বেষমূলক বেশ কয়েকটি খবর খুঁজে পেয়েছে গত কয়েক দিনে। যেগুলোতে ‘বাংলাদেশের হ꧑িন্দুদের ওপরে আক🔜্রমণ’ হচ্ছে বলে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়েছে। যেগুলোতে ‘সেভ বাংলাদেশি হিন্দুজ’, ‘অল আইজ অন বাংলাদেশি হিন্দুজ’, ‘প্রে ফর বাংলাদেশি হিন্দুজ’ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি ‘জিহাদিরা বাংলাদেশের হিন্দুদের কেটে ফেলছে অথচ বিশ্ব একেবারে চুপ করে আছে’ এমন বাক্যও যুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে ভারতের অল্ট নিউজের সম্পাদক প্রতীক সিনহা বলেন, “বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপরে হামলা হচ্ছে এটাও যেমন ঘটনা, তেমনই এটাও সত্য যে বহু ভুয়া খবর, অসত্য তথ্য সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার𒈔 করা হচ্ছে মূলত দক্ষিণপন্থী সামাজিক মাধ্ꦐযমগুলোতে। এর মধ্যে অনেক ভুয়া তথ্যই আবার মূলধারার গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হচ্ছে – এটা আমরা দেখতে পাচ্ছি।”
বিষয়টি স্বীকার করেন সর্বভারতীয় টিভি নিউজ নেটওয়ার্কের পূর্বাঞ্চলীয় সম্পাদক বিশ্ব মজুমদারও। ‘নেটওয়ার্ক ১৮’-এর পূর্বাঞ্চলীয় সম্পাদক মজুমদার বললেন, “কোনো তথ্য বা ভিডিও পেলে সেটা যাচাই বাছাইয়ের ব্যাপারটাই এখন উঠে গেছে। আমরা যে সাংবাদিকতার শিক্ষা পেয়েছি🤡, ২৫-৩০ বছর ধরে কাজ করছি, তাদের সঙ্গে এখনকার সাংবাদিকদের কাজের ধরণটাই বদলে গেছে। এরা যে কোনও ঘটনা ঘটলে সেটা যাচাই না করেই অন্য চ্যানেলে দেখতে পেলেই তা চালিয়ে দেয়।”
মজুমদার আরও বলেন, “ব্রেকিং নিউজের প্রতিযোগিতা চলছে এটা! কে কত ♔আগে সেনসেশন তৈরি করতে পারবে, সেই ꦫলড়াই চলছে চ্যানেলগুলোর মধ্যে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে যা সংবাদমাধ্যমে দেখানো হচ্ছে, তা সত্যিই সাংবাদিকতা নয়।”
নেটওয়ার্ক🍒 ১৮’-এর পূর্বাঞ্চ𒁃লীয় সম্পাদক আরও বলেন, “বিভিন্ন ভারতীয় টিভি চ্যানেলে উঁচু গলায়, চিৎকার করে কথা বলে বাংলাদেশ সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলি পরিবেশন করা হচ্ছে। যেন একটা যুদ্ধ বেঁধেছে বাংলাদেশের সঙ্গে! সেই ‘যুদ্ধে’ একদিকে বাংলাদেশের হিন্দুরা, অন্যদিকে মুসলমানরা – এমনভাবেই পরিবেশন করা হচ্ছে খবর।”
ভারতীয় গণমাধ্যমের বিশ্লেষকরা বলছেন, “একটা সময়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশ আর ভারতে ‘সুসম্পর্ক’ নিয়ে অনেক 🌃খবর প্রকাশিত হতো। তবে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে মূল ধারার গণমাধ্যম বাংলাদেশ নিয়ে সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি করেছে। তারা বার বার প্রশ্ন তুলছে বাংলাদেশের সরকারের পরিচালনা নিয়ে, কারা এই সরকার ‘আসলে’ পরিচালনা করছে, তা নিয়ে।”
পুণের এমআইটি এডিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণমাধ্যম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সম্বিত পাল বললেন, “ভারতের মিডিয়ায় এর আগে যেভাবে ভারত-বন্ধু শেখ হাসিনার প্রতি প্🌠রচ্ছন্ন সমর্থন দেখিয়েছে, ঠিক সেই পথেই অধিকাংশ মিডিয়া হাসিনা সরকারের পতনের পর মুহাম্মদ ইউনুস পরিচালিত অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। কারণ, তারা মনে করছে বাংলাদেশের এই সরকার ভারতের বর্তমান শাসকদলের বিরোধী।”
শেখ হাসিনা সরকারের সময় হিন্দুদের ওপর আক্রমণের বিষয় উল্লেখ করে অধ্যাপক সম্বিত পাল বলেন, “২০২১ সালে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর আক্রমণের ঘটনা নিয়ে ভারতের মিডিয়া এতটা উচ্চগ্রামে খবর করেনি। কারণ তখন শেখ হাসিনা ক্ষমতায় ছিলেন। তিনি মোদি ঘনিষ্ঠ ছি♊লেন। ভারতীয় মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলো শাসক দলের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তারা ওই ▨অবস্থান নিয়েছিল। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভারতের সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা বদলেছে।”
অল্ট নিউজের সম্পাদক প্রতীক সিনহা আরও বলেন, “সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে শাহিনবাগের প্রতিবাদ আন্দোলন অথবা ইসরাইল বা এখন বাংলাদেশ– সব ক্ষেত্রেই ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে আসলে ঘুরপথে ভারতীয়ꦗ মুসলমানদেরই লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হচ্ছে। এখানকার মুসলমানদের ওপরে বিদ্বেষ ছড়ানো যাতে যুক্তিযুক্ত হিসেবে দেখানো যায়– সেই আখ্যান তৈরির প্রচেষ্টা চলছে।”
এ ব্যাপারে অধ্যাপক সম্বিত পাল বলেন, “এক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক বিভাজনে যাদের লাভ হবে, তারাই এই ভুয়ো খবর ছড়াতে উদ্যোগী হয়েছে। সাম্প্রদায়িক বিভাজনের জন্য এর থেকে ভালো বিষয় আর হতে পারে না। ঠিক যেভাবে ভারতে সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুর💃ুদের মধ্যে টেনশনকে নিজেদের পক্ষে রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য ভুয়া খবর ছড়ানো হয়, ঠিক সে ভাবে বাংলাদেশের ঘটনা নিয়েও তাই হচ্ছে।” অধ্যাপক পাল মনে করেন, বাংলাদেশের হিন্দুদের নিরাপত্তার থেকে অনেক বেশি মাত্রায় ভারতের নির্বাচনী স্বার্থ এখানে কাজ করছে।”