মানুষের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। অনেক সময় মাথায় আঘাত পেলেও স্মৃতিশক্তি হারাতে পারে। স্মৃতিশক্তি হারালেও মানুষ নিজের মাতৃভাষা কখনও ভুলে যায় না। নাম, ঠিকানা, কোনো ঘটনা সব ভুলে গেলেও মাতৃভাষায় কথা বলতে ভুলে যান না। এর প🐈েছনে কারণ কী, জানেন?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের মস্তিষ্কে প্রায় ১০০ বিলিয়ন স্নায়ুকোষ বা নিউরন থাকে। মস্তিষ্ক স্মৃতি তৈরিতে বিভিন্ন স্নায়ুকোষের মধ্যে সংযোগের মাধ্যমে নতুন নতুন ‘সিন্যাপ্স’ গঠন করে। শিশুরা মা-বাবা ও পরিবারের কাছে মাতৃভাষা শেখে♛। সহজাত বৈশিষ্ট্যের কারণে এই ভাষা অবচেতন স্মৃতিতে জমা হয়। এই অবচেতন স্মৃতি মানুষের অবচেতন মনে তৈরি হয়। যা মানুষ মনে রাখার ൩চেষ্টা করে না। কিংবা মনে রাখতে হবে বলেও জোর দিয়ে চিন্তা করে না। বরং নিজের প্রয়োজনে মুখের ভাষা ব্যবহার করে। যা মস্তিষ্কে তৈরি হওয়া সিন্যাপ্সগুলোকে আরও মজবুত করে তোলে।
বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, স্মৃতিগুলো মস্তিষ্কের ‘ফ্রন্টাল কর্টেক্স’ এর বাঁ পাশে স্থায়ী স্মৃতিভাণ্ডারে জমা হয়। শিশু প্রথম শেখা💯 মাতৃভাষা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও মজবুত হয়। এটা স্বভাবজাত চরিত্র হয়ে উঠে। যা মুখস্থ করতে হয় না।
এছাড়াও শিশুর প্রথম ৩ বছরে মস্তিষ্কে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় এক মিলিয়ন ‘সিন্যাপ্স’ তৈরি হয়। শিশুরা এই সময় খুব কম বিষয়ই মুখস্থ করে। তাই এই সময় শিশুর মস্তিষ্কের স্মৃতি ধারণক্ষমতাও বেশি থাকে෴। ৬ বছরের মধ্যে মস্তিষ্ক গঠনের ৯০𓆏 শতাংশ পূর্ণ হয়। এরপর শিশুরা নতুন বিষয়ের সঙ্গে পরিচিত হয় এবং তা শিখতে ও মুখস্থ করতে শুরু করে। যা জমা হয় ‘অর্জিত স্মৃতি’তে। এই ‘অর্জিত স্মৃতি’ যত দ্রুত মস্তিষ্কে জমা হয়, তত দ্রুতই মুছে যায়।
যেমন পরীক্ষার আগে ১০০০ শব্দ অল্প সময়ে মুখস্থ করে পরীক্ষায় লিখে এলেও শিশুরা কিছুদিন পর হয়তো সেই পড়া ভুলে যাবে। কিন্তু শিশুরা মা-বাবা, দাদা, চাচাসহ ছোট ছোট শব্দ 🌠শিখতে প্রায় এক বছর সময় লাগায়। এসব শব্দ জোর করে মুখস্থ করে না। তাই মস্তিষ্কের অবচেতনে জমা হয় এবং সহজে ভুলে যায় না।
অন্যদিকে, মাথায় আঘাত লাগলে বা স্ট্রোক বা ডিপ্রেশনের কারণে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট কোনো অংশ অকেজো হলে আগের সব স্মৃতি হারিয়ে যায়। কিন্তু অবচেতনে জমা হওয়া মাতৃভাষা ভুলে যায় না। এর কারণ মাতৃভাষার প্রধান স্টোরেজ অকেজো হলেও সহায়ক ꦗস্টোরেজ সহজাত বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে কাজ চালিয়ে নেয়। আর তাই ‘অর্জিত স্মৃতি’ মস্তিষ্কের সমস্যার কারণে মুছে গেলেও ‘অবচেতন স্মৃতি’তে তা থেকেই যায়।
তবে কিছুক্ষেত্রে মানুষ মাতৃভাষাও ভুলে যেতে পারে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, মস্তিষ্কে মারাত্মক আঘাতের কারণে যদি ৮০ শতাংশের বেশি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বা ‘ব্রকাস এরিয়া’সহ নষ্ট হয়ে যায়, তবে সে কথা বলার ক্ষমতা ধ্বংস হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে মাতৃভাষায় কথা বলার ক্ষমতাও হারিয়ে যায়। অন্যথায় মানুষ নিজের ভাবপ্রকাশের জন্য যে কোনো মুহূর্ত বা পরিস্থিতিতেই মাতৃভাষায় কথা বলতেই পারে। সূত্র: হেলথলাইন