একসময় আমরা ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা দুই দলকেই সাপোর্ট করতাম। এক দল ফাইনালে যেতে না পারলে অন্য দল—রাইভাল কেউ ছিল না। মেক্সিকো ৮৬-এ ফ্রান্সের সাথে ব্রাজিল হেরে গেলে মন খারাপ কাটিয়ে আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ি ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা নিয়ে। ফাইনালে জার্মানি সাপোর্টার প্রায় ছিলই না। লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর প্রতি আমরা নিজেদের যন্ত্রণা, ক্ষোভ, ভালোবাসা অনুভব করতাম। কারণ, আমরা একই রকম কলোনিয়াল দাসত্বে ছিলাম শতকের পর শতক। তাদের মতো কলোনিয়াল প্রভুদের চাবুকের দাগ আমা꧋দের পিঠে, বুলেটের দাগ আমাদের বুকেও ছিল। তাই ইউরোপের বা আমেরিকার দেশগুলো আমাদের কখনো প্রিয় ছিল না। সারা দেশে বিল্ডিং, মাঠ, দেয়াল, টিনের চাল ভরে থাকতো হুলুদ-সবুজ-আকাশি-সাদা রঙে। কে বলেছে, খেলায় রাজন𓂃ীতি নেই? সবকিছুই রাজনীতির অধীন।
পেলে-ম্যারাডোনার জনপ্রিয়তার মূলে ছিল অন্ধকার গলিতে বেড়ে ওঠা ক্ষুধায় তৃষ্🍒ণা ভুলে ফুটবল নিয়ে নামহীন শ্রেণিহীন দুই কিশোরের জীবনকাহিনি। ম্যারাডোনা বলছে, “সারা দিন মাঠে খেলতাম। সন্ধ্যায় অন্ধকার হয়ে গেলে সবাই বাড়ি ফিরে যেত। তাদের পড়াশোনা আছে, খাবারের সময় আছে, অন্য কাজ আছে। আমার তো কিছু নেই, বাড়ি ফি❀রে আমি কী করব? আমি মাঠেই থাকতাম। অন্ধকারে মাঠে দৌড়াতাম। একা একা অন্ধকার ভেদ করে গোলবারে শুট করতাম।”
আর্জেন্টিনার সেই ম্যারাডোনা তৃতীয় বিশ্বের লক্ষ কোটি অসহায় দরিদ্র ছন্নছাড়া শিশু-কিশোরদের মহানায়ক। ১৯৭০-এর ব্রাজিলের পেলের হাতে আর ১৯৮৬-তে আর্জেন্টিনার ম্যারাডোনার হাতে বিশ্বকাপ মানেই সেই সব ছিন্নমূল শিশু-কিশোরদের স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখা, চুমু খাওয়া। তারা ইনিয়ে-বিনিয়ে চুটকি বানিয়ে হতাশাগ্রস্ত মধ্যবিত্ত শিক্ষিত শꦓ্রেণিকে মোটিভেশনাল লেকচার দেন না৷ তারা দেখান কীভাবে সংগ্রামের মাধ্যমে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অক্ষমতাকে পরাজিত করে স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখতে হয়।
গতকাল খেলার আগে কাঁচুমাচু নার্ভাস আরজেন্টাইন সাপোর্টার ভাস্তেকে বললাম, আজ আর্জেন্টিনা হেরে গেলে, তোমার কি মনে হয় কাল থেকে কেউ মেসি, আর্জেন্টিনাকে ভালোবাসবে না? আগামী ম্যাচে ব্রাজিল হেরে গেলে সবাই মুখ ফিরিয়ে নেবে? দেখবে, আবার বুকে আশা নিয়ে আগামী চার বছর অপেক্ষা করবে। এটা ঠিক, নতুন নতুন অনেক টিম আসবে, ফাইনাল খেলবে, কাপ জিতবে। কিন্তু ফুটবল বিশ্বকাপ যত দিন থাকবে, আর্জ♋েন্টিনা-ব্রাজিলের জনপ্রিয়তা কোনো দিন কমবে না।
আজকের কিশোররা, তরুণরা কেউ তার কারণ না জানলেও ইতিহাস ঠিকই জানে কেন এই জনপ্রিয়তার উন্মাদনা। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা, মেসি🔯-ম্যারাডোনা-পেলে-নেইমার মানে সারা পৃথিবীর হতদরিদ্র শ্রেণির স্বপ্নপূরণের প্রেরণা।