• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Songbad Prokash

ইনস্টাগ্রাম

টুইটার


লিংকডইন

পিন্টারেস্ট

গুগল নিউজ


নাম তার আহমদ ছফা


হাসান শাওন
প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০২৩, ১০:৩৭ এএম
নাম তার আহমদ ছফা

অল্পের জন্য স্বচক্ষে দেখা হয়নি আহমদ ছফাকে। তিনি প্রয়াত হন ২০০১ সালের ২৮ জুলাই। আমি খানিকটা ‘লায়েক’ তখন। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ি সরকারি বাঙলা কলেজে। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে যুক্ত। আবার বাম ছাত্র রাজনীতিরও কর্মী। মন বসে না তখন পড়ার টেবিলে। উড়ে ঘুরে বেড়াই বাংলামোটর, শাহবাগ, চারুকলা, ছবিরহাট, মধুর ক্যান্টিন। এর সবই আহমদ ছফার চরণধূলিতে ধন্য। আমার কমরেডদের কাছে ‘ছফা ভাই’। আমি মানুষটিকে দেখ𝔉িনি। আমার তো তাকে তাই ‘ভাই’ ডাকা সাজে না।  

আহমদ ছফার লেখা পড়েছি পরে। আগে পড়েছি তাকে নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের বয়ান, “আমি আমার যৌবনে হন্টন পীরের মতো একজনকে পেয়েছিলাম। আমরা দল বেঁধে তার পেছনে হাঁটতাম। তিনি যদি কিছু বলতেন মুগ্ধ হয়ে শুনতাম। গভীর রাতে নীলক্ষেত এলাকায় তিনি হাঁটতে হাঁটতে আবেগে অধীর হয়ে দুই হাত তুলে চিৎকার করতেন ‘আমার বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ’। আমরা গভীর মুগ্ধতায় তার আবেগ এবং ꦍউচ্ছ্বাস দেখতাম। তার নাম আহমদ ছফা। আমাদের সবার ছফা ভাই।”

এমন বিস্ময়কর মানুষ সম্পর্কে কৌতূহল জাগে। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের লাইব্রেরি থেকে নিয়ে প্রথম পড়ি আহমদ ছফার উপন্যাস সমগ্র। ব্যাপক আলোড়িত হই। ওনার গদ্য সহজ। হিউমার লেভেল চরমে। বিষয়বস্তু অভিনব। সব মিলিয়ে তিনি অত্যন্ত শক্তিমান লেখক। কিন্তু অবাক বিষয় তাকে নিয়ে আলোচনা কম। লাইব্রেরির বই নেওয়ার কার্ডে দেখি আমার আগে উপন্যাস সমগ্রটি নিয়েছেন মাত্র ৪ জন। তার নন-ফিকশন লেখার মধ্যে প্রথম পড়ি ‘বুদ্ধিবৃত্তির নতু꧂ন বিন্যাস’। এ 🐬বই নিয়ে আমাদের ছাত্র সংগঠনের পাঠচক্রও হয়।

‘বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস’ এর অল্প কিছু অংশ উদ্ধৃত করছি। ♏যাতে স্পষ্ট হয় কেন আহমদ ছফা এই পা চাটা সময়ে প্রায় আলোচনাহীন। কোনো মিডিয়ার সাধ্য নেই তার ওপর ভর করার।  

...“বর্তমান মুহূর্তে আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠিত বুদ্ধিজীবীরাই হচ্ছেন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত শ্রেণি। এরা চিরদিন হুকুম তামিল করতেই অভ্যস্ত। প্রবৃত্তিগত কারণে তারা ফ্যাসিস্ট সর༺কারকেই কামনা করে। কেননা একমাত্র ফ্যাসিস্ট সরকারই কিছুসংখ্যক বুদ্ধিজীবী সম্মান শিরোপা দিয়ে পুষে থাকে। অল্পসংখ্যক বাছাই করা লোককে দিয়ে নিজেদের প্রচার প্রোপাগান্ডা করিয়ে দেশের𝓡 জনসমাজের স্বাধীন চিন্তা এবং প্রাণস্পন্দন রুদ্ধ করেই ফ্যাসিবাদ সমাজে শক্ত হয়ে বসে। চিন্তাশূন্যতা এবং কল্পনাশূন্য আস্ফালনই হল ফ্যাসিবাদের চারিত্র্য লক্ষণ।”

আহমদ ছফার জীবন ছিল ৫৮ বছরের। এর মধ্যে তার প্রতিটি সৃষ্টি জাতির আগামীর পথচলার দিক নির্দেশনা দেয়। জনপদে ধর্মান্ধতার বীজ চিহ্নিত করতে ফিরতে হবে তার ‘বাঙালি মুসলমানের মন’ এ। বাংলা ভাষা নিয়ে তার গবেষণাকর্ম ফেলে দেওয়ার মতো নয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক তার ভাবনা বহু বৈচিত্র্যের একটি দেশের সন্ধান দেয়। বঙ্গবন্ধু ও তার শাসন꧃ আমলকে তিনি চিত্রিত করেছেন মোসাহেবিপনার বাইরে থেকে। বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে তিনি দেখেছেন ভিন্ন চোখে। সিপাহী বিদ্রোহের ইতিহাস নিয়ে তার লেখা অনন্য। তার অনুবাদ কর্ম অসাধারণ। শিশু ও কিশোর সাহিত্য বাল্যেই হৃদয় গড়ে দেওয়ার মতোন। জাতির কাণ্ডারি রূপে তিনি শনাক্ত না করলে হয়তো নিখোঁজই থাকতেন প্রজ্ঞাময় জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক। বিশ্ব কবি গ্যোতে বাংলা অনুবাদহীন নিখোঁজ থাকতেন এক ছফা ছাড়া। ছফাহীনতায় একজন দুনিয়া কাঁপানো এসএম সুলতান নড়াইলে লাল মিয়া হয়েই পড়ে থাকতেন।

মায়েস্ত্রো আহমদ ছফার উপন্যাসে গৌরবের ৫২ আছে। একাত্তরের অন্য পাঠ পড়ি তার ‘অলাতচক্র’তে। স্রেফ দালালি করে কীভাবে ক্ষমতার কেনꦦ্দ্র দখল করে রাজনীতিবিদেরা তার নজির ‘একজন আলী কেনানের উত্থান-পতন’। তার ‘গাভী বৃত্তান্ত’ পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদধারীদের চরিত্র পরিষ্কার হয়। ‘পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ’ বাংলা সাহিত্যে প্র♉াণ প্রকৃতির মানুষের মেলবন্ধনের এক নতুন দিশা দেয়।

আজ ৩০ জুন তার জন্মব🐠ার্ষিকী। শুভ জন্মদিন, আহমদ ছফা।

চিন্তক, দার্শনিক, কবি, লেখক, প্রাবন্ধিক, অনুব𝓰াদক ও সংগঠক আহমদ ছফাকে কারও সাধ্য নেই লুকিয়ে রাখবার। তার ‘জল্লাদ সময়’ কবিতায় যেন লিখে গেছেন তা।

সূর্যালোকে পিঠ দেয়া আততায়ী   
লজ্জিত সময়
যা কিছু প্রকাশ্য তুমি বামহস্তে করছ গোপন
সমূহ ধ্বংসের বীজ গর্ভাশয়ে করেছ রোপণ
কিছু কিছু সত্য আছে কোনদিন লুকোবার নয়।

সাহিত্য-সংস্কৃতি বিভাগের আরো খবর

Link copied!