গত ছয় বছরের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম 🤡তিন মাস ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে জীবিকার সন্ধানে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। আর ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার পথে অসংখ্য মানুষের সলিল সমাধি ঘটছে। জাতিসংঘের শরণার্থীবি🅺ষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) জানিয়েছে, ভূমধ্যসাগরে মানব পাচারের নৌকা প্রতিনিয়ত যাত্রা শুরু করছে এবং মানুষ জীবনঝুঁকি নিয়ে যাত্রা করছে।
ইউএনএইচসিআর এ-ও জানিয়েছে, ভূমধ্যসাগরের পার্শ্ববর্তী দেশগুলো এই মানুষদের উদ্ধারে কিংবা মানব পাচারকারীদের থামাতে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিচ্ছে না। অথচ পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর মানব পাচার রুট হিসেবে পরিচিত ভূমধ্যসাগরে মর্মন্তুদ ঘটনার মাত্রা বেড়েই চলেছে। চলতি বছর নানা সꦛমীক্ষায় অন্তত হাজার ছাড়িয়েছে সলিল সমাধিতে মৃতের সংখ্যা। এই অভিবাসী সমস্যা কেন হচ্ছে? কেনই বা দেশগুলো এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে ঢিলেমি করছে? এমনকি ইউরোপের জন্য অভিবাসী সমস্যা কেনই বা বড় আকার ধারণ করেছে? কীভাবে করেছে?
এর উত্তর খোঁজা কঠিন। কারণ, মাল্টিপোলার বিশ্ব, জলবায়ু পরিবর্তন, অর্থনৈতিক মন্দা, ভূরাজনৈতিক জটিলতা আফ্রিকা ও ইউরোপের অনেক মানুষকে ♛বাধ্য করছে ইউরোপে কর্মসংস্থানের জন্য আসতে। যদিও সম্প্রতি উৎপাদনের ক্ষেত্রে এশিয়া অনেক এগিয়ে গিয়েছে, কিন্তু কর্মসংস্থানের দিকে এশিয়া ও 🐓আফ্রিকার দেশগুলো পিছিয়ে আছে। শুধু তা-ই নয়, রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নানা সংকটের কারণেও অনেকে ইউরোপের দিকে যাত্রা করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
মূলত ইউরোপীয় অঞ্চলে 🦹প্রবেশ করতে পারলে নানা 𓂃পর্যায়ে আত্মগোপন করে জীবিকা খুঁজে পাওয়ার বিশ্বাসও অনেকের মধ্যে রয়েছে। এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক নীতিমালাও অনেককে ইউরোপের দিকে ধাবিত করে। এমন নয় যে ভূমধ্যসাগর দিয়েই সবাই ইউরোপে প্রবেশ করে। তবে আফ্রিকা ও এশিয়া অঞ্চল দিয়ে অধিকাংশ মানুষ এই রুট দিয়ে অবৈধভাবে ইউরোপে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করেন। বাংলাদেশ থেকে অনেকেই ইতালিতে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ইতোমধ্যে ইতালিতে রক্ষণশীল সরকার এই অবৈধ অভিবাসীদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। অথচ অভিবাসীদের পথ রুদ্ধ করার বিষয়ে তাদের পদক্ষেপও নেই।
আফ্রিকা অঞ্চল থেকে অনেকে গ্রিক দ্বীপ ও ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোতে আশ্রয় খুঁজে নেন। মধ্য আফ্রিকা ও পশ্চিম আফ্রিকা অঞ্চলে সামরিক শাসন ও রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে অনেকেই অভিবাসনের পথ বেছে নিচ্ছে। এমনকি ইউক্রেন যুদ্ধও অভিবাসী সংকট বাড়িয়ে তুলেছে। ভূমধ্যসাগরে অবৈধ অভিবাসন বাদেও ইউরোপে আরও অনেক স♍ংকট রয়েছে। কিন্তু যে হারে ভূমধ্যসা𒊎গর দিয়ে অবৈধ অভিবাসনের প্রচেষ্টা হচ্ছে সেখানে মানব পাচার ও সলিল সমাধিতে মৃত্যুর পরিমাণ বেড়েই চলেছে। তাই এটি একটি মানবিক সমস্যাও হয়ে উঠেছে।
২০০৯ সালে গ্রিস, মালটা, সাইপ্রাস ও ইতালির সরকার রোমে একটি অধিবেশন করে। সেখানে তারা অভিবাসীদের বিষয়ে কী করা যায় তা নিয়ে নানা সিদ্ধান্ত ও বহুপাক্ষিক আলোচনা হয়। ফলাফল হিসেবে একটা দীর্ঘ নথি তৈরি হয়। এই নথির নীতিমালা ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে আরও বিস্তৃত সহযোগিতামূলক কার্যক্রমের প্রত্যাশা করছিল। কিন্তু উচ্চাকাঙ্ক্ষী এই পরিকল্পনা ব্যবহারিক ক্ষেত্রে বাস্তবায়নের সুযোগ ছিল ক্ষীণ। মূলত বহুপাক্ষিক ভূরাজনীতিই এই সমস্যার মূল কারণ। এরপর আর বিষয়টি নিয়ে অত মাথা ঘামায়নি কেউ। কিন্তু ২০১৫ সালে অন্তত ১০ লাখ অভিবাসী ইউরোপে প্রবেশ করে সামাজিক ও রাজনৈ🍷তিক সমস্যা তৈরি করে।
১৯৯০ সালে ডাবলিন শান্তিচুক্তি করা হয়েছি অভিবাসনের ফলে কোনো জটিলতা তৈরি যেন না হয় সে লক্ষ্যে। কিন্তু ২০১৫ সালে এতসংখ্যক অভিবাসী সেখানে পৌঁছায় যা অতীতে কল্পনাও করা যেতো না। ইতালি ও গ্রিস এই অভিবাসীদের গন্তব্য হিসেবে বেশি জটিলতায় ভুগেছে। কিন্তু ধরে ধীরে তা পার্শ্ববর্তী ইউরোপীয় অঞ্চলেও বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। ২০১৯ সালে জার্মানিতে ৩০ হাজারের মতো অভিবাসীর হিসাব পাওয়া গেছে সরকারিভাবে। পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১৯ সালের মে মাস থেকে ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত ৫৩ হাজার অবৈধ অভিবাসী ইউরোপে প্রবেশ করেছে। ২০২১ সালের অক্টোবরে প্রায় ৯৯০ জন অন্য ইউরোপীয় অঞ্চলে স্থানান্তরিত হয়। শুধু তাই নয়, অবৈধ অভিবাসীদের ৮০ শতাংশ লোক চাকরির সন্ধান পায়। বাকি ২০ শতাংশ ক♛োনো ইউরোপীয় অঞ্চলে প্রবেশের পর অন্তত পাঁচ বছর নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়। যারা টিকে থাকে তারাই একটি ব্যবস্থা গড়ে নিতে পারে। এ জন্যই এটি একটি মানবিক সমস্যা।
অবৈধ অভিবাসনের পথ সংকুচিত হচ্ছে এ নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু অভিবাসনের সংখ্যা যে বাড়ছে, এটিও সত্য। ২০২২ সালের ১২ নভেম্বর পূর্বোল্লেখিত দেশগুলো আবার অধিবেশন করে৷ কারণ ফ্রান্স ও ইতালি অভিবাসী নৌযান নিয়ে কূটনৈতিকভাবে দায় চাপানোর পথে এগিয়ে যাচ্ছিল। তখন একটি নৌযানে হাজারের বেশি অভিবাসী থাকলেও মাত্র একশজনকে ইউরোপে আশ্রয় দেওয়া হয়। বাকি অংশকে নিয়ে সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। এরকম অসংখ্য 🎐বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যায়। আগামী সময়ে মানবপাচার বন্ধ করা ইউরোপের জন্য সমস্যা অবশ্যই। ইউরোপে মুদ্রাস্ফীতি, খাদ্যসংকট ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সময়ে অতিরিক্ত জনসংখ্যা অবশ্যই থামাতে হবে। এ জন্য আইনি ও আন্তঃদেশীয় উদ্যোগ জরুরি, যা এখনও কার্যকর হচ্ছে না।
অভিবাসী সমস্যা সমাধানের অনেকগুলো পথ রয়েছে। অভিবাসন নিয়ে ইতোমধ্যে অনেক গবেষণা হয়েছে। মূলত মানবপাচার চক্রের বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলার মাধ্যমে প্রতিটি দেশকে নীতিমালা ও আইনি পদক্ষেপ গড়ে তুলতে হবে। আধুনিক বিশ্বে মানবপাচার চক্র যেভাবে কাজ করছে তা আগে শনাক্ত করার প্রযুক্তিগত সক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে। বিশেষত বিভিন্ন উপায়ে অভিবাসনের পথ খুঁজে নিচ্ছে তারা। আন্তর্জাতিক সীমানা অনুসারে উদ্ধার কার্যক্রমও কম। বিশেষত কোনো🐻 রাষ্ট্রে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা, কর্মসংস্থান গড়ে না তোলা, উদ্যোক্তাদের অনুৎসাহী অর্থনৈতিক কাঠামো এসবই জীবিকার তাগিদের জন্য মানুষকে বৈধ অভিবাসনের দিকে ঠেলে দেয়। যেসব অঞ্চলে মানবসম্পদ রপ্তানি করা হয় এবং শ্রমবাজারে জোগান দেওয়া হয়, সেসব দেশে সরকার অনেক সময় কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়♓ সত্য।
তবে অনেকে অসচেতনতাবশত মানবপাচার চক্রের সংস্পর্শে আসে। এমনটি যেন না হয় সে জন্য সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলা জরুরি। ইউরোপ অভ𝓡িবাসন বিষয়ে কট্টর অবস্থানে যাবে। রক্ষণশীল সরকার ইউরোপের অনেক রাষ্ট্রেই ক্ষমতায় যাচ্ছে। তাই আগামীতে এই অভিবাসন সুখপ্রদ হবে না। তাই যেসব এশিয়া ও আফ্রিকার দেশ থেকে অভিবাসী বাড়ছে সেসব দেশের চিহ্নিত সমস্যা শনাক্ত করে সামাজিক পর্যায়ে এই মানবিক সংকটের সমাধান করতে সচেষ্ট হতে হবে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক এই সমস্যার সমাধান খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে।
লেখক : সংবাদকর্মী