জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে শহীদ শেখ রাসেলের ৬০তম জন্মদিন বুধবার (১৮ অক্টোবর)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট ভাই শ♊েখ রাসেল ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর ধানমন্ডির ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবনে জন্মগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর প্রিয় লেখক খ্যাতিমান দার্শনিক ও নোবেল বিজয়ী ব্যক্তিত্ব বার্ট্রান্ড রাসেলের নামানুসারে পরিবারের নতুন সদস্যের নাম রাখেন ‘রাসেল’। এই নামকরণে মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।&nbꦑsp;
শৈশব থেকেই দুরন্ত প্রাণবন্ত রাসেল ছিলেন পরিবারের সবার অতি আদরের। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে রাসেল সর্বকনিষ্ঠ। তিনি ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। রাজনৈতিক কারণে বঙ্গবন্ধুকে জীবনের দীর্ঘ সময় কাটাতে হয়েছে কারাগღারে। এ জন্য শিশু রাসেল পিতার কাঙ্ক্ষিত সান্নিধ্য ও আদর-যত্ন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু পরিবারের অন্য সদস্যদের মতো রাসেলও ছিলেন সহজ-সরল ও অত্যন্ত বিনয়ী। অন্য শিশুদের সঙ্গে নিজের জামাকাপড় ও খেলনা ভাগাভাগি করা এবং মানুষের উপকার করার চেষ্টা তার মাওঝে ছোটবেলা থেকেই পরিলক্ষিত হয়েছে। তিনি ছিলেন আদর্শ পিতার যোগ্য সন্তান। শ♓েখ রাসেল বেঁচে থাকলে হয়তো আজ দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করতেন ও নেতৃত্ব দিতেন। রাসেল যদি বেঁচে থাকতেন, তাহলে হয়তো একজন মহানুভব, দূরদর্শী ও আদর্শ নেতা আজ আমরা পেতাম, যাকে নিয়ে দেশ ও জাতি গর্ব করতে পারত। কিন্তু বাঙালি জাতির দুর্ভাগ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মানবতার শত্রু ঘৃণ্য ঘাতকদের নির্মম বুলেট থেকে রক্ষা পাননি শিশু শেখ রাসেল। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নরপিশাচরা নির্মমভাবে তাকেও হত্যা করেছিল।
১৫ আগস্ট সেনাপ্রধান যখন নিজের বাসভবন আর অফিসে ছোটাছুটি করছেন, উপসেনাপ্রধান🌃 শেভ করছেন আর ব্রিগেড কমান্ডার কিংকর্তব্যবিমূঢ় তখন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে সব শেষ। শেখ কামালকে হত্যার মধ্য দিয়ে হত্যাযজ্ঞের শুরু আর শেষ শিশু শেখ রাসেলকে হত্যার মধ্য দিয়ে। হত্যা মামলার সাক্ষীদের সাক্ষ্যে ওই সকালের নারকীয় এক হত্যাযজ্ঞের চিত্র ফুটে উঠেছে। খুনিদের নির্মমতার যে চিত্র তাদের বর্ণনায় পাওয়া যায়, তার নজির ইতিহাসে আর নেই। বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের যখন পানি পানি বলে চিৎকার করছিলেন, তখন আরেক দফা গুলি করে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়। আর দশ বছরের শিশু রাসেলকে হত্যা করা মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে।
দোতলায় হত্যাযজ্ঞ শেষে শেখ রাসেল এব♏ং বাড়ির কাজের ছেলে আব্দুর রহমান রমাকে যখন নিচে নিয়ে আসা হয়, তখন রাসেল এরই মধ্যে হাঁটুতে গুলিবিদ্ধ মুহিতুল ইসলামকে বলেছিল: ‘ভাইয়া, আমাকে মারবে না তো?’ এ রকম শিশুকেও নিশ্চয়ই খুনিরা মারবে না আশায় মুহিতুল ইসলাম তাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন: ‘না, ভাইয়া, তোমাকে মারবে না।’ বঙ্গবন্ধুর রেসিডেন্ট পিএ এবং মামলার বাদী ও এক নম্বর সাক্ষী মুহিতুল ইসলাম আরও জানান, এরপর একজন আর্মি তার কাছ থেকে রাসেলকে জোর করে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। মুহিতুল ইসলাম ছাড়াও মামলার দুই নম্বর সাক্ষী রমা, তিন নম্বর সাক্ষী মশালচি সেলিম ওরফে আব্দুল এবং চার নম্বর সাক্ষী হাবিলদার কুদ্দুস শিশু রাসেলকে হত্যার মর্মস্পর্শী বর্ণনা দিয়েছেন।
হাবিলদার কুদ্দুস জানান, মেজর আজিজ পাশা ওয়্যারলেসে কথা বলছিলেন। তখন রাসেল মায়ের কাছে যাবে বলে কান্নাকাটি করছিলেন। মেজর আজিজ পাশা ল্যান্সারের একজন হাবিলদারকে নির্দেশ দিয়ে বলে, শেখ রাসেলকে তার মায়ের কাছে নিয়ে যাও। ওই হাবিলদার শেখ রাসেলকে তার হাত ধরে দোতলায় নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর দোতলায় গুলি এবং সেখান থেকে কান্নাকাটির আওয়াজ পাওয়া যায়। আর ওই হাবিলদার নিচে গেটের কাছে এসে মেজর আজিজ পাশাকে বলে, স্যার, সব শেষ। এর মধ্যেই ট্যাংকসহ ৩২ নম্বরে চলে আসে মেজর সৈয়দ ফারুক রহমান। সাক্ষী মুহিতুল ইসলাম জানিয়েছেন, রাসেলকে হত্যার পর মেজর হুদা বেরিয়ে গেলে গেটে হুদাকে মেজর ফারুক কী যেন জিজ্ঞেস করে। জবাবে মেজর হুদা বলে, অল আর ফিনিশড।
লেখক : মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক