‘আমরাই প্রথম জেনারেশন, যাদের বউ পিঠা বানাতে পারে না, রানতে পারে না, কাপড় ধুইতে পারে না।’ প্রসঙ্গ একটি স্ট্যাটাস। ‘জেনারಞেশন’ শব্দটি এখন বেশ জটিল। একসময় দশকের ভিত্তিতে প্রজন্ম নির্ধারণ করা হতো। সাহিত্যাঙ্গনে দশকের ধারণাটি বেশ পুরোনো। তবে আধুনিক সময়ে আমরা আরও দূরদর্শী। শতকের হিসেবে আমরা ভাবছি। এই জেনারেশনের অনেকেই পিঠা বানাতে পারে না। রান্নাবান্না করতে পারে না। কাপড় ধুতে পারে না। অভিযোগ অনেক। এর বিপরীতে নারীর আধুনিক হওয়ার প্রসঙ্গও চলে আসে। নারী আধুনিক হবে, স্বাবলম্বী হবে, এটি আমাদꦚের সামাজিক প্রত্যাশা। তবে বৃহৎ প্রেক্ষাপটে এই আধুনিকতাকে নেতিবাচক ভাবার সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বুনিয়াদকে অস্বীকার করার উপায় কম।
এখনকার নারী কি আসলেই এসব কাজ পারে না? এর বিপরীতের হিসেব দেখা যাক। আগের পুরুষেরা যেভাবে পরিশ্রম করতো, সাংগঠনিক দক্ষতা দেখিয়েছে, পাড়াভিত্তিক ক্লাব ও খেলাধুলার যে প্রসার ছিল, তা কি এখন আছে? নেই। নারীর ক্ষেত্রেও সামাজিক পরিবর্তনের এই ছোঁয়া লেগেছে। একটি মেয়ের জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা, জীবনযাপন সবই নির্ভর করে সমাজের গঠন, কাঠামো ও প্রকৃতির ওপর। এ সমাজ নিয়ন্ত্রণের মূলে যারা রয়েছেন, তারা নিজেদের প্রাধান্য দিয়েই সমাজ নিয়ন্ত্রণ করছেন। তবে এখা🅘নে নারীর স্বাবলম্বী ও অর্থনৈতিক মুক্তির প্রসঙ্গ এখানে মুখ্য নয়। সমাজ বদলেছে। জীবনের ধরন বদলেছে।
সামাজিক পর্যায়ে সম্পর্কের ধরন বদলেছে। গ্রামীণ সমাজে পিঠা উৎসবের কথা অনেক শ🅰োনা যায়। পার্বণ, ঋ🌸তুর আমেজ উপলক্ষে পিঠা বানানোর দায়িত্ব নারীকেই নিতে হয়েছে। তবে সেখানেও একধরনের সম্পর্কের বুনিয়াদ ছিল। প্রতিবেশী নারীরা আড্ডা, গল্প, ছড়ার উল্লাসে মেতে পিঠা তৈরি করেছেন। উৎসবে সবার অংশগ্রহণ থাকে। পিঠা তৈরি করার কাজটি সহজ না। অনেক কাজ থাকে সেখানে। একসঙ্গে নারীরা পিঠা তৈরি করেছেন। শহরেও শীত এলে নানা পিঠা তৈরি করার উপলক্ষ এক সময় ছিল। পাশের বাড়ির ভাবিকে দেওয়ার কিংবা মেহমান আপ্যায়নের জন্য হলেও। এখন সম্পর্কগুলো বিভাজন তৈরি করছে। শহরে পাশের ফ্ল্যাটের পরিবারটির সঙ্গেই কোনো দিন আলাপ হয় না। জানাই হয় না। সেখানে আদান-প্রদানের সেই সংস্কৃতি নেই। এটি শুধু নারী নয়, পুরুষের ক্ষেত্রেও। এখন চায়ের দোকান অনেক। এক পাড়াতেই দশ-বারো চায়ের দোকান। চায়ের দোকানের লাগোয়া চায়ের দোকান। নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে যারা তারাই সেখানে আড্ডা দেয়। এর বাইরের কিছুর তো সুযোগ নেই। এই যে দূরত্ব, সামাজিক দূরত্ব এ-ও আমাদের কর্মপ্রবাহকে প্রভাবিত করে।
শহুরে জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। গ্রামীণ পরিবেশে এখনো পার্বণের ছোঁয়া আছে। তবে আমরা যখন এই প্রজন্মের কথা বলি তখন মূলত শহরের কথাই বলি। এখন পিঠা উৎসব রেস্টুরেন্টের প্যাকেজেই পাওয়া যায়। প্রয়োজন কি পিঠা বানানোর? নারীদের শেখার আগ্রহও বদলেছে। কেক বা পেস্ট্রি বানানোর ক্ষেত্রে নারীদের দক্ষতা কম নয়। রান্নায়ও তারা আগ্রহ দেখাচ্ছে। তবে দেশীয় সংস্কৃতির প্রতি আমাদের আগ্রহ কমছে। অনেকে অনেক পিঠার নামও উল্লেখ করতে পা𒈔রেন না। পিঠা বানানো শেখানো বা গৃহস্থালি কাজের ধারাবাহিকতা শেখানোর পরম্পরা আধুনিক সময়ে কমেছে। সেই সুযোগ কম। ওয়াশিং মেশিন এখন কাপড় ধুয়ে দেয়। অনেকের বাড়িতেই এটি আছে। আমরা এখন ব্যস্ততায় ঘরের বাইরেই খাবার অর্ডার দিই অনেক। জীবন আরও সহজ হয়েছে। না পারার বিষয়টি এই পরিবর্তনের ফলে। এখানে না শেখার ব্যর্থতার দায় নারীর ওপর চাপানো ভুল। তবে সমাজ যে নারীকে এখনো আধুনিক হওয়ার বিষয়কে নেতিবাচকভাবে তার একটি প্রমাণ এসব। আমাদের সংস্কৃতির শিকড় থেকে আমরা দূরে সরে গেছি, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু সেটা আমরা বুঝতে পারছি না।
লেখক : সংবাদকর্মী