জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অতিমাত্রার বন্যা দেখা দিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের ১১ জেলা ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ছে। ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে এ বন্যা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া চীন ও কানাডাও ভয়াবহ হচ্ছে। এর আগ🃏ে ২০২৩ সালের এপ্রিলে, ইরাক, ইরꦡান, কুয়েত এবং জর্ডানে ভয়াবহ বন্যা আঘাত হেনেছে। সঙ্গে ছিল তীব্র বজ্রপাত, শিলাবৃষ্টি এবং অতি মাত্রায় বৃষ্টিপাত।
বিজ্ঞানীরা বলছেন,🔯 এসব বন্য বায়ুমণ্ডলী⛎য় নদীগুলোর কারণে হয়েছে, যা ক্রমেই আরও তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলো প্রতিনিয়ত দীর্ঘ, প্রশস্ত এবং প্রায়শই ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠছে।
এই ‘আকাশেরꦅ নদী’ বা ‘উড়🌊ন্ত নদী’ হল ভূপৃষ্ঠ থেকে বায়ুমণ্ডল পর্যন্ত লম্বা ও প্রশস্ত জলীয় বাষ্পের স্তম্ভ যার উদ্ভব হয় সাধারণত গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চল থেকে, পরে তারা ঠান্ডা মেরু অঞ্চলের দিকে সরতে থাকে। এই উড়ন্ত নদীগুলো পৃথিবীর মধ্য-অক্ষাংশ জুড়ে চলাচল করা মোট জলীয় বাষ্পের প্রায় ৯০ শতাংশ বহন করে।
একটি বায়ুমণ্ডলীয় নদী গড়ে প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ, ৫০০ কিলোমি⛎টার প্রশস্ত এবং প্রায় তিন কিলোমিটার গভীর হয়ে থাকে। অনেক সময় তা পাঁচ হাজার কিলোমিটারের চেয়েও বেশি দীর্ঘ হয়ে প্রশস্ত হয়ে থাকে। যা দেখতে পুঞ্জিভূত মেঘের মতো মনে হয়।
নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির বায়ুমণ্ডলীয় গবেষক ব্রায়ান কান বলেছেন, এই নদীর অস্তিত্ব ইনফ্রারেড এবং মাইক্রোওয়েভ ফ্রিকোয়েন্সি দ🦩িয়ে দেখা যেতে পারে। এ কারণে বিশ্বজুড়ে জলীয় বাষ্প এবং বায়ুমণ্ডলীয় নদী পর্যবেক্ষণের জন্য স্যাটেলাইট বেশ কার্যকর হতে পারে।
উত্তর আমেরিকার দীর্ঘতম নদী মিসিসিপি যতোটা না আর্দ্রতা ছড়ায় তার চাইতে ১৫ গুণ বেশি আর্দ্রতা ছড়াতে পারে বায়ুমণ💃্ডলের বিশাল ও শক্তিশালী নদীগুলো। এই উড়ন্ত নদীগুলো গড়ে যে পরিমাণ পানি নিঃসরণ করে, তা বিশ্বের সবচেয়ে বড় নদী আমাজনের নিয়মিত পানি প্রবাহের প্রায় দ্বিগুণ।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলো সবসময়ই ছিল। তবে বৈশ্বিক উষ্ণতা আরও ব🍷েশি জলীয় বাষ্প তৈরি করছে যা পরিস্থিতিকে বেশ জটিল করে তুলছে।
জিওফিজিক্যাল রিসার্চ জার্নালের ২০২১ সাܫলের এক গবেষণায় দেখা গেছে, পূর্ব চীন, কোরিয়া এবং পশ্চিম জাপানে বর্ষা মৌসুমের শুরুতে (মার্চ এবং এপ্রিল) যে ভারী বৃষ্টিপাত হয় এর মধ্যে ৮০ 𝔍শতাংশ ভারী বৃষ্টিপাতের কারণ এই বায়ুমণ্ডলীয় নদী।
এদিকে, ভারতের আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ভারত মহাসাগরের উষ্ণ পরিব𓃲েশ ‘উড়ন্ত নদী’ তৈরি করছে এবং জুন থেকে সেপ্টেম্বরে এই অঞ্চলে মৌসুমি বৃষ্টিপাতকে প্রভাবিত করছে।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যালের আবহাওয়াবিদ ড. রক্সি ম্যাথিউ কোল বলেন, “যখন সমুদ্রের পানি উষ্ণ হয়ে ওঠে তখন তা বাষ্পীভূত হয়ে ওপরে উঠে বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলোয় জমা হতে থাকে। বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলো এই বিপুল পরিমাণ আর্দ্রতা বা পানি কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিন ধরে ভূপৃষ্ঠে ফেলতে থাকে। এর ফলে কম সময়ের জন্য বৃষ্টিপাত হয় এবং থেমে থেমে বৃষ্টি ঝরে। এর ফলে সারা দেশে ভূমিধ্বস এবং আকস্মিক বন্যার ꧃ঘটনা বেড়ে গেছে “
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলো পৃথিবไীর নতুন নতুন অঞ্চলেও পৌঁছে যাচ্ছ🧜ে। এর একটি কারণ জেট স্ট্রিম। জেট স্ট্রিম হলো জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বায়ুর একটি পরিবর্তিত ধরন। এর গতি অনেক দ্রুত এবং পরিধি বেশ সংকীর্ণ হয়।
চিলির ভালপারাইসো বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়াবিদ ডেনিজ বোজকুর্ট বলেন, “বাতাসে ঢেউয়ের পরিমাণ বেশি থাকা এবং জেট স্ট্রিম মানে এই দ্রুত গতির বাতাস আঁকাবাঁকা পথে যাবে এবং এতে সাধারণ গতিপথ থেকে বিচ্যুতিও হতে পারে। এটি ব﷽ায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলোকে আরও জটিল পথে ধাবিত করতে পারে, সেইসাথে এর সময়কাল এবং ♏বিভিন্ন অঞ্চলে প্রভাব বাড়িয়ে তুলতে পারে।”
সূত্র : বিবিসি বাংলা