• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৪, ১ ভাদ্র ১৪৩১, ১১ সফর ১৪৪৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Songbad Prokash

ইনস্টাগ্রাম

টুইটার


লিংকডইন

পিন্টারেস্ট

গুগল নিউজ


ফিরে দেখা মতি নন্দীকে


আরাফাত শান্ত
প্রকাশিত: জুলাই ১০, ২০২৩, ০২:১৮ পিএম
ফিরে দেখা মতি নন্দীকে

সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় বলতেন, মতি নন্দী লেখকদের লেখক। সন্তোষ কুমার বলেছিলেন, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সার্থক উত্তর𒐪সূরি। আবার অনেকের কাছে মতি নন্দী চিরকাল নিছক খেলার সাংবাদিকই রয়ে গেলেন।

টালমাটাল এই সময়ে নতুন করে আবার মতি নন্দী পাঠ অতি আবশ্যিক। যিনি বলতেন, ‘এখন বন্যার মতো স্বপ্নরাজি ঢেলে দিচ্ছে এ দেশের গণমাধ্যম। এই ফ্যান্টাসিকে বলা হচ্ছে গণসংস্কৃতি। আমাদের বুদ্ধিজীবী সংস্কৃতি একে গ্রহণ করতে নারাজ।’ মতি নন্দী বিশ্🐻বাস করতেন তৃতীয় বিশ্বের নিরক্ষর দরিদ্র দেশের লেখকদের জনসাধারণের কাছে দায়বদ্ধ থাকা খুবই জরুরি৷

মতি নন্দীর প্রায় সব লেখাতেই ব্যক্তি সম্পর্কের টানাপোড়েন, প্রেম, যৌনতা যেমন এসেছে, তেমনই সমাজ অর্থনীতি বিবিধ জটিলতাও জায়গা নিয়েছে। কত আপাত তুচ্ছ বিষয়ের মধ্যে দিয়ে মতি নন্দী সমাজের কঠিন সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন, যা আজও পড়তে পড়তে বিস্মিত হই,🦹 ওনার অন্তর্দৃষ্টি , জীবনবোধ ও সমাজের প্রান্তে থাকা জনসাধারণের প্রতি অসম্ভব দরদ ভালোবাসা ও মমত্ব দেখে। এখন ভাবি, মতি নন্দী এত অসাধারণ সব গল্প লিখেছেন অথচ কখনোই কোনো তথাকথিত লেখক শিবিরে ওনার জায়গা হয়নি। প্রগতি শিবিরের দীর্ঘ তালিকায় তার জায়গা নেই। জাতীয়তাবাদী লেখকদের মধ্যেও মতি নন্দীকে নিয়ে কোনো উচ্ছ্বাস চোখে পড়ে না। সামাজিক দায়বোধ থাকা সত্ত্বেও লেখায় যৌন শব্দ ও যৌনতার আধিক্য থাকার জন্যই সম্ভবত, মার্কসীয় গোষ্ঠী তাকে নিজেদের লোক বলার সাহস পায়নি। আর যিনি আজীবন প্রগতিবাদে বিশ্বাস করতেন তাকে অন্যেরাও স্বীকৃতি দিতে কোনো দিনই চাননি।

অবশ্য আগেই বলেছি ব্যক্তি মতি নন্দী কোনো দিনই এসব প্রাসঙ্গিক থাকা, গোষ্ঠী উপগোষ্ঠী কোনো কিছ🐻ুরই ধার ধারতেন না। যাবতীয় দায়বোধ ওনার ছিল নিজের কলম ও সমাজের প্রতি। এক একটা লেখা নতুন করে দেখতে দেখতে বিস্মিত হচ্ছি কত অক্লেশে তিনি বেশ কয়েক বছর আগেই ‘কপিল নাচছে’র মতো গল্প লিখেছেন। যার শুরুর কয়েকটা লাইন এ রকম—‘আমি তো একা নই। হাজার হাজার লোকের কারুর পাঁচ কারুর পঞ্চাশ হাজার কারুর পাঁচ ⭕লাখ। রনেনবাবু রিটায়ার করে যা পেয়েছিল, সারা জীবনের সঞ্চয় নব্বই হাজার ওখানে রেখেছিল, সব গেছে। আমি তো সেই তুলনায় ভাগ্যবান, ষাট হাজার মাত্র।’ মানি মার্কেটের ধস, সমাজের কী টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি করে তা মতি নন্দী দরদ দিয়ে উপলব্ধি করেছিলেন।

ব্যক্তি মতিদা এসব প্রশংসা নিন্দা কোনো দিনই গায়ে মাখেননি। বলতেন, একজন লে💎খক নির্মোহ চোখে জীবন তার পরিপার্শ্ব, অভিজ্ঞতা থেকে লেখার উপাদান খুঁজবে। দীপ প্রকাশনের ‘মতি নন্দী: ছোটগল্প সমগ্র’ পড়তে পড়তে ওনার বলা কথাগুলোই আবার নতুন করে মনে পড়ছে। সাড়ে পাঁচ শ পাতা🐟র এই বৃহত্‍ অতীব গুরুত্বপূর্ণ সংকলনটিতে ছেষট্টিটি গল্প আছে। তার মধ্যে বই হয়নি এমন তিনটি গল্প— ‘ছাদ’, ‘একটি ঐতিহাসিক সিচুয়েশন’ এবং ‘শূন্যে অন্তরীণ’ও আছে। সংকলিত অন্যান্য গল্পগুলো কাল অনুযায়ী ভাগ করা হয়েছে। ফলে পাঠক মতি নন্দীর একেবারে প্রথম দিককার লেখা—‘রাস্তা’, ‘জীবনযাপন প্রণালী’, ‘প্রত্যাবর্তন’ পড়বেন। তেমনই রাতারাতি মতি নন্দীকে সাহিত্যজগতে প্রতিষ্ঠিত করে যে গল্প সেই ‘বেহুলার ভেলা’ আর একবার পড়ার সুযোগ পাবেন। মজা হচ্ছে প্রথম দিককার লেখা ও পরিণত বয়সে উনিশ শ তিরানব্বই সালে একাধিক গল্প—‘রেড্ডি’, ‘বুড়ো এবং ফুচা’ বা ‘জালি’ পড়তে পড়তেও কখনো মনেই হয় না লেখকের বয়স বেড়েছে। যিনি সাতান্ন সাল থেকে টানা বত্রিশ-তেত্রিশ বছর ধরে লিখছেন তার গদ্য একই রকম নির্মেদ, ঋজু ও প্রাণবন্ত। 

মতি নন্দী প্রায়ই অনুজ লেখকদের বলতেন, ‘লিখেই ছাপাবার জন্যে ব্যস্ত হয়ে পড়ো না। তিন চার মাস ফেলে রাখো। তার পর আবার পড়ো, তখন যদি মনে হয় ঠিকই আছে তখন ছাপার কথা ভাবতে পারো।’ নিজের প্রিয় ‘দ্বাদশ ব্যক্তি’ সম্পর্কে বইয়ের ভূমিকায় মতি নন꧃্দী বলেছেন, ‘বছর পঁচিশ আগের লেখা, দেখছি একটা লাইনও বদলাবার এখনো কোনো দরকার নেই। আজ তার জন্মদিন। স্মরণ করি এ অসাধারণ কথাশিল্পী ও ক্রীড়া সাংবাদিককেꦍ।

Link copied!