“খুপড়ির মধ্যে সাপ আসে। আমি সাপের মধ্যেই শুয়ে থাকি। যদি সাপে⛄ কামড়িয়ে মেরে ফেলে, তাহলে মরে যাব। ভিক্ষা করতে শরম করে আমার। তাই কেউ সাহায্য দিলে খাই। না দিলে লবণ দিয়ে পানি খেয়ে থাকি। পানি খেয়ে ক্ষুধা না গেলে মানুষের বাড়িতে গিয়ে ভাত চেয়ে খাই। এখনো পর্যন্ত কোনো মেম্বার বা চেয়ারম্যান বলে নাই যে, এই নে ১০ টা টাকা।”
এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ষাট বছরের বৃদ্ধা রানু বেগম। তিনি যে ঘরে থাকেন, সেটি গাছের ডাল-পালা, পুরোনো পলিথিন, ছেঁড়া কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে রাস্তার পাশে স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে কলাগাছের ঝোপের আড়ালে বানানো একটি খুপড়ি। প্রথম দেখাতে যে কারো মনে হবে কাকের বাসা। এখানেই খেয়ে না খেয়ে তিন বছর ধরে বস🅺বাস করছেন রানু বেগম।
সম্প্রতি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ভূমখাড়া ই🌳উনিয়ন𓄧ের পূর্ব নলতা এলাকার লাকুরিয়া বাড়ি কান্দি গ্রামের ছৈয়াল বাড়ির সামনে এমন চিত্র দেখা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পূর্ব নলতা গ্রামের মৃত হাছান ছৈয়ালের মেয়ে রানু বেগমের বিয়ে হয় পাশের ইউনিয়ন কেদারপুরের সাহেবের চর গ্রামের হাকিম খানের সঙ্গে। স্বামীর অভাবের সংসারে ৯ সন্তান জন্ম দেন রানꦐু বেগম। ৯ সন্তানের মধ্যে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ৩ সন্⛦তান মারা গেছে।
একদিকে অভাব অন💙্যদিকে পদ্মার ভয়াল ভাঙন গ্রাস করে রানুর সংসার। অভাবে পড়ে স্বামী হাকিম খান ও ছেলেদের নিয়ে প্রায় ১ যুগ আগে ঢাকায় পাড়ি জমান রানু বেগম। স্বামী ছেলে ঢাকায় দিন মজুরের কাজ করলেও সংসারের অভাব অনটন কমেনি আর। অভাবের কারণে সংসারে বোঝা হয়ে পড়েন রানু বেগম। এরপর গত ৩ বছর আগে তিনি ফিরে আসেন বাবার বাড়িতে। রানুর ভাইদের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো না হওয়ায় সেখানেও জায়গা হয়নি তার। পরে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জমির মাথায় রাস্তা পাশে কলা গাছের আড়ালে গাছের ডাল-পালা, পুরোনো পলিথিন ও ছেঁড়া কাপড় দিয়ে একটি খুপড়ি 𝓡ঘর তৈরি করে সেখানেই বসবাস শুরু করেন তিনি।
কাকের বাসার মতো দেখতে এই খুপড়িতে বছরের পর বছর রানু বেগম ঝড়, বৃষ্টিতে ভিজে বসবাস করেন। খুপড়ির মধ্যে মাটির ওপর একটি প্লাস্টিকের বস্তা বিছিয়ে ঘুমান তিনি। নারী হলেও প্রকৃতির ডাকে সারা দেওয়ার জন্য নেই কোনো টয়লেট। ভিক্ষা করতে লজ্জা লাগে বলে ভিক্ষাও চান না তিনি। তার এই করুণ অবস্থা দেখে যদি কেউ কিছু দেন, তবে তা দিয়েই তার ক্ষুধানিবারণ হয়। কেউ চাল-ডাল দিলে তা ঠিক𝄹 মতো রান্নাও করতে পারেন না। কারণ বৃষ্টিতে মাটির ♏চুলা ভিজে যায়। এসব সাহায্য যেদিন না পান, সেদিন তাকে শুধু পানি খেয়ে থাকতে হয়।
সম্প্রতি রানু বেগমের সঙ্গে কথা হয় সংবাদ প্রকাশের। তিনি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “স্বামীর সংসারে এক সময় সুখেই ছিলাম। নদীর ভাঙনে আমার সব শেষ হয়ে গেছে। ঢাকায় গিয়েও ঠিকমতো খেতে পাইনি। পরে ভাইদের কাছে চলে এসেছি। ভাইর বউদের সঙ্গে আমার বনিবনা হয় নဣা। ভাইয়েরা আমাকে একটু জমি দিয়েছে। কিন্তু জমিতে ঘর তোলার টাকা নেই। তাই এই জমির মধ্যে পুরোনো পলিথিন, বস্তা, ছেঁড়া কাপড় দিয়ে একটি ঘর বানিয়ে এখানেই থাকি। বৃষ্টি এলে সবকিছু ভিজে যায়। ভেজা ওই জ🌱ায়গায় আমাকে শুতে হয়।”
রানু বেগম আরও বলেন, “আমার খুপড়ির মধ্যে সাপ আসে। আমি সাপের মধ্যেই শুয়ে থাকি। যদি সাপে কামড়িয়ে মেরে ফেলে, তাহলে মরে যাব। ꦚভিক্ষা করতে শরম করে আমার। তাই কেউ সাহায্য দিলে খাই, না দিলে লবণ দিয়ে পানি খেয়ে থাকি। পানি খেয়ে ক্ষুধা না 🐷গেলে মানুষের বাড়িতে গিয়ে ভাত চেয়ে খাই। এখন পর্যন্ত কোনো মেম্বার বা চেয়ারম্যান বলে নাই যে, এই নে ১০টা টাকা। বয়স হয়ে গেছে, কাজ করতে পারি না। যদি সরকার আমার দিকে একটু তাকাত, তাহলে বাঁচতে পারতাম।”
রানু বেগমের ভাই নুরুল হক সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমাদের কষ্ট দেখে আমার বোন ছুপড়ি ঘরে থাকেন। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে তার। যদি আমার বোনের দিকে তাকিয়ে 🌄কেউ সাহায্য করত। তাহলে বোনটা আমার খেয়ে বাঁচতে পারত।”
সুমন লাকুরিয়া নাম🔴ের স্থানীয় এক যুবক বলেন, “রানু বেগমের যে অবস্থা, তা বলার ভাষা আমার জানা নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে সাহায্য করব। সܫরকারের উচিত রানু বেগমের কষ্ট দূর করতে তাকে সাহায্য করা।”
রানু বেগমের প্রতিবেশী মাসুম লাকুরিয়া। তিনি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “নদী ভাঙার পরে রানু বেগমের স্বামী ও সন্তানরা অসহায় হয়ে পড়ে। মাঝে মধ্যে আমি চাল, ডাল ও তরকারি দিয়ে যাই। আমার মতো আরও অনেকে এভাবে তাকে সাহায্য করে। কিন্তু আমরা গরীব মানুষ। এভাবে সাহায্য দিয়ে তার চলে না। আমরা দিত♌ে পারলে সে রান্না করে খেতে পারে। না দি෴তে পারলে না খেয়ে থাকে।”
রানু বেগমের বিষয়ে জানতে পেরে তাকে দেখতে যান কেদারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিল্লাল হোসেন জাহিদ।𒅌 তিনি বলেন, “নদী ভাঙনের শিকার অসহায় এক মানুষ এখানে এভাবে আছে, তা জানতে পেরে আমি🙈 খোঁজ খবর নিতে এসেছি। রানু বেগমের অবস্থা ভাষায় বর্ণনা করার মতো নয়। নড়িয়ার প্রবাসীদের তালতলা এসি নগর ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠন আছে। ওই সংগঠনের পক্ষ থেকে তাকে দুই বান টিন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কাল সকালেই আমি টিন পাঠিয়ে দেব। রানু বেগমকে সাহায্য করার জন্য আমি সবার কাছে অনুরোধ করছি।”
কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিহির চক্রবর্তী সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “রানু বেগমের বসবাসের ঘর ও ক্ষুধা নিবারণের যে বর্ণনা করলেন। তা খুবই পরিতাপ ও দুঃখজনক ঘটনা। এমন একটি সংবাদ তুলে আনার জন্য আমি আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এটা সবাই জানেন যে, পদ্মার ভাঙনে মানুষ কতটা অসহায় হয়ে পড়েছিল। আসলে নদী ভাঙার কারণে অনেকেই বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। আমাদের সঙ্গে যারা যোগাযোগ করেন বা আমাদের সঙ্গ যারা সম্পৃক্ত তাদের খোঁজখবর রাখার চেষ্টা করি। সাধ্যমত সাহায্যও করি। যে রানু বেগমের কথা বলছেন, তার সম্পর্কে আমার কোনো মেম্বার বা কেউ আমাকে অবগত করেনি। আমি বিষয়টি জানতাম না। আমি কালই ওনার ওখানে যাব। আমি পরিষদ থেকে ওনার𓂃 থাকার ঘরের ব্যবস্থা করব। এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে অন্যান্য সকল সুযোগ সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা করব। কেননা এভাবে একটি মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না।”