বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ-পূর্ব বিশ্বখ্যাত স্থান কক্সবাজার। ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর কক্সবাজার আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও জাতীয় ও স্থানীয় নেতৃত্বের অদূরদর্শিতা, অবহেলা ও অদক্ষতার কারণে স্থানীয় জনগণের তেমন কাজে ও উপকারে ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। কক্সবাজারের সমগ্র ইতিহাস আলোচনা করলে দেখা যায় স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পরেও জনগণের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও শিক্ষার উন্নয়নে বড় ধরনের কোনো চিত্র দৃশ্যমান হয়ꦍনি। অধিকতর সুস্পষ্ট করে বললে বলতে হয় বিগত সময়ের সরকারগুলো কক্সবাজারের প্রতি আন্তরিকতার সঙ্গে কোনো সুনজর দেয়নি। এমন অবহেলার প্রধান কারণ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের যোগ্যতা, শিক্ষা ও আন্তরিকতার অভাব। কেন্দ্রে যে দলই ক্ষমতায় আসুক তাতে কক্সবাজার তেমন একটা মর্যাদার আসন পায়নি। তাই তো কোনো সরকারই কক্সবাজারের উন্নয়নে তেমন উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ড করেনি। পরিণতি হয়েছে ভয়াবহ। উল্টো হয়েছে মাদক ব্যবসার কেন্দ্র! চোরাকারবারের আন্তর্জাতিক পথ। সামাজিক পরিবেশ হয়েছে ভয়াবহ দূষিত। তরুণসমাজ হয়েছে বিপথগামী ও মাদকসেবী। তাই পত্রিকা খুললেই দেখা যায়: আইস, বাবা, হিরোইন আরও কত কি! স্থানীয় জনগণের মতামত নিলে দেখা যাবে এমন ধরনের আন্তর্জাতিক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে এমন সব লোক জড়িত, যাদের কথা বললে অথবা লিখলে জীবননাশের সমূহ আশঙ্কা!
নানাবিধ অপশক্তির মিলিত জোটের কাছে ব্যক্তি, সাংবাদꦇিক ও বিবেক সম্পূর্ণ অসহায়। এই সম্মিলিত দুর্বৃত্তদের দাপটে দেশপ্রেমিক, আদর্শবান রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও শিক্ষিতসমাজ একেবারে 🅠কোণঠাসা সমগ্র কক্সবাজার।
এই হলো কক্সবাজারের অন্ধকার ও অপরাধচক্রের চিত্র। তবে আশার কথা রাতের পর দিন আসে। অন্ধকারের পর আলো আসে। অন্ধকার শেষে আশার আলো দ🍌েখা যায়। সাধারণত কক্সবাজারে মানুষ যায় সূর্যাস্ত দেখার উদ্দেশ্যে। এখন সময় পাল্টেছে। দক্ষিণ দিকে উন্নয়নের সূর্য উদিত হচ্ছে। নতুন করে উন্নয়নের সূর্য কক্সবাজারে উঁকি দিচ্ছে। কথা হচ্ছে, আমরা কক্সবাজারের লোকজন নতুন উন্নয়নের সুফল কতটুকু কাজে লাগাতে সক্ষম হব? না, শুধু কলুর বলদ হব? কেবলই পাহারাদার হব?
জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের নিদর্শন স্বাধীনতার অর্ধশতবছর পর কক্সবাজার রেলপথ চালু হয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে বড় ধরনের অগ্রগতি। শুধু রেলপথ নয় অবশ্যই কক্সবাজার থেকে মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ করে দ্রুত কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মিত জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের বিস্ময় বঙ্গবন্ধু টানেলের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে হবে। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর অর্থনৈতিকভাবে লাভবান ও টেকসই করা এবং বঙ্গবন্ধু টানেলের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্ম🅰াণ করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করতে হলে রেল যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে। ইতিমধ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। তাই কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সঙ্গে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরকে সংযুক্ত করতে অবশ্যই মহেশখালী-কক্সবাজার সংযোগ সেতু নির্মাণ করা জরুরি।
এই কক্সবাজার-মহেশখালী সেতু নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে কক্সবাজার শহরের একটি নতুন শাখা পরিকল্পনা অনুযায়ী মহেশখালীতে প্রসারিত হবে। কক্সবাজার বিমানবন্দর ও মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের মধ্যবর্তী স্থানে মহেশখালীতে নানা ধরনের দেশি-বিদেশি শিল্পকারখানা ও বাণিজ্য কেন্দ্র দ্রুত গড়ে উঠবে। স্থানীয় অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। ফলে সমগ্র কক্সবাজারের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন চিত্র দ্রুত প💝াল্টে যাবে। স্থানীয় সব স্তরের লোকজন উন্নয়নের সুফল পাবে। তাই উন্নয়ন গণমুখী করতে হলে একই সঙ্গে শিক্ষা ও সংস্কৃতির উন্নয়ন করতে হবে। টেকসই উন্নয়নে দক্ষ জনশক্তির কোনো বিকল্প নেই। আগেই বলেছি কক্সবাজারের সামগ্রিক উন্নয়নের বড় প্রতিবন্ধকতা হলো শিক্ষার অনগ্রসরতা। তাই টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে অবিলম্বে মহেশখালী-কক্সবাজারে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। অন্যথায় শিক্ষা-দীক্ষা ও রাজনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা কক্সবাজার কেবলই উন্নয়নের নীরব দর্শক হয়েই থাকবে! জনগণকে টেকসই উন্নয়নের ভাগীদার ও কারিগর হিসেবে গড়ে তুলতে কারিগরি শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।
কক্সবাজার ও মহেশখালীতে এত সব উন্নয়ন প্রকল্প হচ্ছে বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্র করে। পৃথিবীর সব সময় স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিকশিত হয়েছে জলপথে। এই জল বা সাগরভিত্তিক অর্থনীতির আধুনিক পরিভাষা হলো সুনীল অর্থনীতি। দক্ষিণা হাওয়া আসে বাংলাদেশে দক্ষিণ সাগর থেকে। কক্সবাজারে এখন সুনীল অর্থনীতির হাওয়া বইতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক ভাষায় উন্নয়নের হাওয়া। এই সুনীল অর্থনীতির উন্নয়নের হাওয়াকে জনগণের কল্যাণে, ♔বিশেষ করে স্থানীয় জনগণের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন মানসম্মত উচ্চশিক্ষা এবং সহজ যোগাযোগব্যবস্থা। সঙ্গে সঙ্গে মꦏাদক, সন্ত্রাস ও দুর্বৃত্তমুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। তবেই কেবল কক্সবাজারের সুনীল অর্থনীতি ও দক্ষিণা হাওয়া উন্নয়নের মহাসড়কে প্রবাহিত হবে।
লেখক: সমাজবিদ্যা গবেষক ও লেখক