• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Songbad Prokash

ইনস্টাগ্রাম

টুইটার


লিংকডইন

পিন্টারেস্ট

গুগল নিউজ


সিন্ডিকেটের দখলে ছিল নিত্যপণ্যের বাজার


মো. মির হোসেন সরকার
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৬, ২০২৩, ০৩:৪৩ পিএম
সিন্ডিকেটের দখলে ছিল নিত্যপণ্যের বাজার
সিন্ডিকেটের দখলে ছিল নিত্যপণ্যের বাজার

চলতি বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো সময়টাই বাজারে উত্তাপ ছড়িয়েছে দ্রব্যমূল্যের দাম। কিছুদিন পরপরই বাজারে কোনো না কোনো জিনিসের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে।  কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম এতোটা বেড়েছে, যা সাধারণ মানুষ😼ের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। অতি মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে নাস্তানাবুদ হয়েছে সাধারণ ক্রেতারা। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার কঠোর হলেও তা রোধ করা সম্ভব হয়নি এখনো।

বাজারে হঠাৎ করেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, মাছ, মাংস, ডিম, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ ও শাক-সবজির দাম বেড়ে যায়। বেশি আলোচনায় আসে কাঁচা মরিচের দাম। এ বছর কাঁচা মরিচের কেজি ১২শ টাকা পর্যন্ত উ🍸ঠেছে। যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ বলে দাবি সাধারণ মানুষের। এছাড়াও গরুর মাংসের দাম নিয়েও ক্ষোভ ছিল ক্রেতাদের। তবে ঘোষণা দিয়ে গরুর মাংসের প্রতি কেজির দাম ২০০ টাকা কমিয়ে আনায় কিছুটা স্বস্তি মিলছে সাধারণ ক্রেতাদের মাঝে।

সর্বোচ্চ দামে কাঁচা মরিচ

এ বছর অনেকটা অকল্পনীয় পর্যায়ে বেড়ে যায় কাঁচা মরিচের দাম। প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ১২শ টাকায়। যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ বলে দাবি সাধারণ মানুষের। 𒈔জুলাই মাসে বর্ষা মৌসুমে পানির কারণে মরিচের গাছ মরে যাওয়াসহ নানা অজুহাতে সেসময় বেশি দামে কাঁ🦄চা মরিচ বিক্রি করে ব্যবসায়ীরা।

পর্যাপ্ত কাঁচা মরিচ মজুত থাকার পরও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙতে বাজার নিয়ন্ত্রণে মাঠে নামে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নি🌳র্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। সারা দেশে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানাও করা হয়। তবু কাঁচা মরিচের দাম কমানো যায়নি। এরপর সরকারের কঠোরতা ও গোয়েন্দা সংস্থার নিয়মিত তদারকিতে শেষমেশ বাধ্য হয়ে কাঁচা মরিচের বাজারে স্বস্তি আসে।

সিন্ডিকেটের কবলে পেঁয়াজের বাজার

চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণা করে 🦩ভারত। রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পরই দেশের বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে দাম। রাতারাতি প্রতি কেজি পেঁয়াজে দাম বেড়ে যায় ১০০-১২০ টাকা। খুচরা ও পাইকারি বাজারে ২৮০-২৯০ টাকা পর্যন্ত ▨পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখা যায়।

বাজারে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুত থাকলেও সংকট তৈরি করে মোবাইল ফোনের মেসেজের মাধ্যমে দাম বাড়ায় ব্যবসায়ীরা। এমন দাবি করেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর♏ের মহাপরিচালক এ এইচ এম. সফিকুজ্জামান। সম্প্রতি জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের নতুন হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভোক্𓂃তার ডিজি এ কথা বলেন।

জানা গেছে, মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে পেঁয়াজের বাজার। ভারতের রপ্তানিকারকরা 💫দাম বাড়িয়ে দিতে বলেন এ দেশের আমদানিকারকদের। তারা নিজস্ব এজেন্টের মাধ্যমে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেয় সারা দেশে। এভাবেই ঝড়ের গতিতে দিন দুয়েকের মধ্যেই কোটি কোটি টাকার বাড়তি মু♊নাফা করে নেন ব্যবসায়ীরা।

হঠাৎ গরম ডিমের বাজার

এ বছর বেশ জোড়ালো আলোচনায় ছিল ডিম। আগস্টের মাঝামাঝিতে পণ্যটির দাম ছিল সর্বোচ্চ। সে সময় প্রতি ডজন ডিম বাজারে বিক্রি হয়েছে ১৪৫ থেকে ১৮০ টাকায়। অর্থাৎ, একটি ডিম কিনতে ভোক্তার খরচ হয়েছে প্রায় ꧑১৫ টাকা।

ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে গত সেপ্টেম্বরে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। তবে অভিযোগ𒐪 রয়েছে, বাজারে এই দাম কার্যকর করতে পারেনি সরকার। নিরুপায় হয়ে ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। বাজার নিয়ন্ত্রণে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে তিন ধাপে ১৫টি প্রতিষ্ঠানকে ১৫ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ডিম আমদানির খবরে বাজারে দাম কিছু্টা কমে। তবে অন🔴ুমোদনের প্রায় দুই মাস পরও নানা জটিলতায় ডিম আমদানি করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে বাজারে আবারও দাম বাড়ে।

অবশেষে নভেম্বরের শুরুতে অনুমোদনের প্রায় দুই মাস পর ভারত থেকে ৬২ হাজার ডিমের প্রথম চালান দেশে আসে। সরকার বাজারে প্রতি পিস ডিমের দাম ‌১২ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও ভারত থেকে আসা প্রতি পিস ডিম আমদানিতে আমদানিকারকের খরচ হয় ৭ টাকা ৯ পয়সা। এ🌞রপর ডিমের দাম কমতে শুরু করে। সবশেষ বাজারে প্রতি ডজন ডিম পাওয়া যাচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়।

সবজির বাজার

বছরের শেষদিকে এসে সবজির বাজারও আলোচনায় চলে আসে। দেখা গেছে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে কোনো সবজিই ৮০–১০০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। এই অস্থিত𝐆িশীলতা বেশ কিছুদিন বহাল ছিল। পরে শীতকালীন সবজি বাজারে আসায় বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফেরে।

মাংসের বাজারে স্বস্তি

বছরের শুরুতে মাংসের দামে ছিল অস্থিতিশীলতা। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির মাংসের দাম আড়াইশ টাকা পর্যন্ত ওঠে। আর গরুর মাংসের দাম ১ হাজার থেকে ১১শ টাকা পর্যন্ত বিক✃্রি করতে দেখা যায়। তবে বছরের শেষ সময়ে এসে মাংসের বাজারে স্বস্তি দেখা যা🌃য়। বাজারে বর্তমানে ব্রয়লার মুরগির মাংস প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়।

আর মাংসের বাজারে হঠাৎ করেই প্রতি কেজি মাংসের দাম ২০০ থেকে আড়াইশ টাকা কমে যায়। মাংসের দাম কমার পর বাজারে স্বস্তি দেখা য꧙ায়। তবে মাংস ব্যবসায়ীদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিলে বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মাস অ্যাসোসিয়েশনের ওপর দাম নির্ধারণের দায়িত্ব তুলে দেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। এরপর এই দুই সংগঠন প্রতি কেজি মাংস ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করে দেন। এখন বাজারে প্রতি কেজি মাংস ৬৫০ টাকায় বিক্রি হওয়ায় কিছুটা হলেও সাধারণের নাগালের মধ্যে রয়েছে বলে দাবি সাধারণ মানুষের। তবে আরও একটু কম হলে ভালো হতো বলেও দাবি করেন তারা।

তিনগুণ বেড়ে যায় আলুর দাম

দাম বৃদ্ধির জন্য আলোচনায় ছিল আলুও। দেশি আলুর দাম ৮০ টাকা ছাড়িয়ে গেলে টনক নড়ে সবার। শেষে আলুর দামও নির্ধারণ করে দেয় সরকার। খুচরায় ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা, আর হিমাগারে ২৬ থেকে ২৭ টাকা নির্ধারণﷺ করা হয়। এই দাম কার্যকরে মাঠে নামতে হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের। তবে এই দামও কার্যকর করা যায়নি। নিরুপায় হয়ে অক্টোবরের শেষে ডিমের মতো আলুও আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। তবে আলু আমদানি শুরু হলেও এখনো বাজারে এর প্রভাব পড়েনি। এখনো প্রতি কেজি আলু কিনতে গুনতে হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা।

তেল–চিনি আছে উঁচুতলাতেই

এ বছর তেল-চিনির দাম বাড়ার পর সেই অবস্থায়ই আছে। খোলা তেল বিক্রি বন্ধের পর ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। বোতলজাত প্রতি লিটার তেল কিনতে হচ্ছে ২০০ টাকায়। আর চিনির দাম প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ১৬০ টাক🦩া।

রসুনের কেজিতে বাড়ে ৮০ টাকা

চলতি মাসের মাঝামাঝিতে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি রসুনের দাম বাড়ে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। বাজারে পণ্যটির পর্যাপ্ত মজুত থাকলেও কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়💝ে নেন অসাধু ব্যবসায়ী চক্র। এই অভ✅িযোগ ক্ষুদ্ধ ক্রেতাদের। এমন মূল্যবৃদ্ধিকে তারা অস্বাভাবিক দাবি করেন।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ১৫ ডিসেম্বরের হালনাগাদকৃত তথ্যে দেখা 🀅যায়, বাজারে প্রতি কেজি দেশি রসুন ২১০ থেকে ২৭০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। আর আমদানিকৃত রসুন বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়।

দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়লেও এর কোনো সুবিধা পান না প্রান্তিক চাষিরা। পুরো মুনাফাই লুফে নেন মধ্যস্বত্বভোগী ও মজুতদারেরা। সব মিলিয়ে বছরজুড়েই নিত্যপণ্যের বাজারদর ছিল আলোচনায়। এর সাথে সঙ্গতি রেখেই বারবার উচ্চারিত হয়েছে ‘সিন্ডিকেট’ শব্দটি। বাণিজ্যমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রীসহ সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের মুখে বারবারই এসেছে এই শব্দ। এসেছে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতিও। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। বছরের শেষভাগে পেঁয়াজের ডবল সেঞ্চুরি বলে দেয়, কথিত ‘সিন্ডিকেট’ এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে। প্রতিবারই এই সিন্ডিকেট সামাল দিতে জেরবার সরকার। এরপর পণ্য আমদানির মাধ্যমেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এটি স্থায়ী কোনো সমাধান আনেনি। সা🎐মনের বছর কী হবে তা–💙ই এখন দেখার বিষয়।

Link copied!