প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জুলাই-আগস্টে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের পܫর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর তার জীবনের গতিপথ পরিবর্তন হওয়ার আভাস দিয়েছেন। মার্কিন পাবলিক ব্রডকাস্টিং সংস্থা এনপিআর সোমবার অধ্যাপক ইউনূসের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে।
মিশেল মার্টিন: গত গ্⭕রীষ্মে যখন আমরা কথা বলেছিলাম আপনি দুর্নীতির অ🎃ভিযোগে বিচারাধীন ছিলেন এবং এখন আপনি বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। এসব কিছুই ঘটনার পালাবদল। নিজেকে এই অবস্থানে পেয়ে অবাক হচ্ছেন কি?
মুহাম্মদ ইউনূস: ঘটনার খুবই অদ্ভুত পালাবদল। আমি প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে শপথ নেওয়ার আগে প্যারিসে ছিলাম, আমি দেখার চেষ্টা করছিলাম যে আমি ফিরে যাব কি-না, আমাকে গ্রেপ্তার করা হবে, কারণ তিনি আমার ওপর রাগান্বিত হবেন এবং আমাকে জেলে পাঠাবেন। তাই ভাবছিলাম ফিᩚᩚᩚᩚᩚᩚᩚᩚᩚ𒀱ᩚᩚᩚরতে দেরি করব। আর হঠাৎ বাংলাদেশ থেকে একটা ফোন পেলাম যে তিনি (শেখ হাসিনা) এখন চলে গেছেন। আমরা চাই আপনি সরকার প্রধান হন। এটি একটি বড় চমক ছিল।
মার্টিন: আপনি যখন ফোনটি পেয়েছিলেন তখꦚন আপনার মনে কী হয়েছিল?
ইউনূস: দেশ পরিচালনাꦬয় আমার আদৌ যুক্ত হওয়া উচিত কি-না। এটা খুবই কঠিন রাজনৈতিক পরিস্থিতি। কিন্তু যখন ছাত্ররা আমাকে ডেকে ব্যাখ্যা করল যে পরিস্থিতি কী, অবশেষে আমি বললাম, ‘হ্যাঁ, তোমরা এর জন্য জীব🎉ন দিয়েছ। তোমরা যদি জীবন দিতে পার, তবে আমি আমার সকল অন্যান্য বিবেচনা বাদ দিতে পারি। আমি তোমাদের সেবা করতে পারি। আমি এটা করব।’
মার্টিন: এবং আপনি যখন বলেন যে আপনি জীবন দিয়েছেন আপনি অতিরঞ্জিত করেননি এবং এটি কোন রূপক ন♏য়।
ইউনূস: না, এটা কোনো রূপক নয়। মানুষ মারা যায়। প্রায় এক হাজার যুবক মারা গেল, বন্দুকের 🦩সামনে দাঁড়িয়ে বুলেটে বুক পেতে দিলো। আক্ষরিক অর্থে, যুবকরা এসে আত্মাহুতি দিয়েছে। তারা যখন বিক্ষোভ༒ে যোগ দিতে তাদের বাড়ি থেকে বের হচ্ছিল, তারা তাদের বাবা-মাকে বিদায় জানাচ্ছিল। তারা তাদের ভাইবোনদের বিদায় বলছে; ‘আমি হয়তো ফিরে আসব না।’ এটাই সেই চেতনা যার মধ্যে পুরো ব্যাপারটা ঘটেছে। এবং অবশেষে, এটি এতটাই অবিশ্বাস্য ছিল। প্রধানমন্ত্রী দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন কারণ পুরো জনতা তার বাড়ির দিকে আসছিল।
মার্টিন: একদিকে, এসব বিক্ষোভ আন্দোলনে খুবই অজনপ্রিয় কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত নেতার প্রস্থানের পথ প্রশস্ত করেছিল। সেইসব বিশৃঙ্খলতার প্রথম দিনগুলোতে, আহমদিয়া ও হিন্দুদের ওপর হামলা হয়েছিল। এ সব ঘটনার কিছু অংশ ছিল শেখ হাসিনার দলের প্রতি তাদের আনুগত্যের কারণে। এর কিছু ঘটনা কেবলমাত্র সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে আক্রমণ বলে মনে হয়েছে। সেসব ঘটনাও কমে গেছে। কিন্তু তারপর থেকে, আরও হামলা হয়েছে, এইবার সুফি মাজারে। আমাদের প্রতিবেদন অনুসারে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে ২০ টিরও বেশ𒀰ি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, উত্তে𓄧জিত জনতার হাতে হত্যা হয়েছে। কেন এমন হচ্ছে?
ইউনূস: জনগণ বিপ্লবের মেজাজে আছে। সুতরাং এটি একটি বিপ্লবী পরিস্থিতি। তাদের অনেককে হত্যা করা হয়েছে। তাই তারা এমন লোকদের খুঁজছে যারা তাদের সহকর্মীদের মৃত্যু ঘটিয়েছে। তাই জনগণ শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দলের অনুসারীদের ওপর হামলা চালাচ্ছিল। আপনি যখন বলেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হচ্ছে, সেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায় শেখ হসিনার সঙ্গে যুক্ত ছিল। সুতরাং আপনি পার্থক্য করতে পারবেন না যে, তারা শেখ হাসিনার অনুসারী হওয়ার কারণে তাদের ওপর হামলা 🤪হয়েছে নাকি তারা হিন্দু বলে তাদের ওপর হামলা হয়েছে। কিন্তু তাদের ওপর হামলা হয়েছে, এটা নিশ্চিত। কিন্তু তারপর আমরা সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করি। আমি সবাইকে বলতে থাকি যে, আমাদের মতভেদ থাকতে পারে। এর মানে এই নয় যে, আমাদের একে অপরকে আক্রমণ করতে হবে।
মার্টিন: আপনি কি মনে করে⭕ন যে আপনি জনগণকে প্রতিশোধের পরিবর্তে সংস্কারের দিকে মনোনিবেশ করার পথে ফিরিয়ে আনতে পারেন?
ইউনূস: প্রতিশোধের সময় মাত্র কয়েক সপ্তাহ ছিল। কিন্তু তারপর স্বাভাবিকতা ফিরে আসতে শুরু করে। তাই আমরা দেশ ꦍচালাচ্ছি। কিন্তু বিক্ষোভ আছে, প্রতিশোধমূলক বিক্ষোভ নয়। বেশিরভাগ বিক্ষোভ তাদের বেতন ব🏅ৃদ্ধির দাবিতে, তাদের চাকরির দাবিতে, যাদের সরকার আগে বরখাস্ত করেছিল।
তাই তারা বলেছিল, অতীতের সরকার আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ক🔴রেছে এবং আমরা বিনা কারণে আমাদের চাকরি হারিয়েছি। কারণ আমরা অন্য রাজনৈতিক দলের সদস্য। তাই বঞ্চিতরা সবাই তাদের দাবি মেটানোর চেষ্টা করছে। আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম। দেখুন এগুলো আপনাদের ১৫ বছরের ক্ষোভ। আমরা ১৫ দিনের মধ্যে এটি সমাধান করতে পারি না। আমাদের কিছু সময় দিন যাতে আমরা ফিরে যেতে পারি। আপনারা একটি খুব কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন এবং আমাদের এটি এমনভাবে সমাধান করতে হবে যাতে এটি পদ্ধত⭕িগতভাবে সম্পন্ন হয়।
মার্টিন: সময়ের কথা বলছি, সেনাবাহিনী আপনা পেছনে রয়েছে। সামরিক নেতারা বলেছেন🧸, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ১৮ মাস শাসন করতে হবে। বিরোধী দলগুলো তা চায় না। তারা নভেম্বরে নির্বাচন চেয়েছিল। আপনার যা করতে হবে তা করার জন্য কি ১৮ মাস যথেষ্ট সময় আছে?
ইউনূস: জনগণ এই সংখ্যাগুলো বিবেচনা করছে না। কত মাস, কত বছর তাদের প্রয়োজন মনে হয়। কেউ কেউ বলে যে এটি দ্রুত করা উচিত, কারণ আপনি যদি দীর্ঘায়িত ক🌄রেন আপনি অজনপ্রিয় হবেন এবং সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাবে। কেউ কেউ বলেন যে 𓂃না, আপনাকে সংস্কার শেষ করতে হবে। সুতরাং আপনি দীর্ঘ সময় ধরে থাকুন। কারণ আমরা সবকিছু ঠিক না করে বাংলাদেশ ২.০-এ যেতে চাই না। তাই এই নিয়ে বিতর্ক চলছে।
মার্টিন: আপনি জানেন, আপনি প্রায় সুশীল সমাজের মতো করে সম্পূর্ণ💮 পুনর্গঠনের কথা বলছেন।
ইউনূস: সংস্করণ ২-এর অর্থ ঠিক এটাই। আমরা পুরনো স্টাইলে ফিরে যেতে চাই না। তাহলে এত জীবন দেওয়ার মানে কী? এর কোনো মানে নেই কারণ আমরা যা করেছি, 🍎স💖বকিছু ধ্বংস করেছি। তাই একটি নতুন দেশ নির্মাণ আমাদের শুরু করতে হবে।
মার্টিন: আপনি জানেন, এটি চ্যালেঞ্জিং, কিন্তু এটি উত্তেজনাꦕপূর্ণ, তাই না?
ইউনূস: এটা খুবই উত্তেজনাপূর্ণ। আপনি নেতিবাচক দিক দেখছেন। আমি এটাকে🐼 খুবই ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখি। আমি বলেছিলাম এই জাতি সবচেয়ে বড় সুযোগ পেয়েছে। এসব মান෴ুষ, দেশ একটি বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ: আমাদের পরিবর্তন দরকার।
মার্টিন: আপনি ৮৪ বছর বয়সী। আমি জানি না যে, আপনি কখনো নিজেকে সরকার প্রধান, রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ভেবেছেন🍬 কি-না। আপনি কি মনে করেন যে, আপনি বাংলাদেশকে সেই দেশে পরিণত হতে দেখবেন যা আপনি আশা করেন, আপনার জীবদ্দশায়?
ইউনূস: সব কিছু নয়। তবে আমি খুব খুশি হব, এটি হওয়ার পথে। প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিক আছে। নীতি সঠিক। তরুণেরা বিশ্বকে পরিবর্তন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে তারা দেশের মধ্যে এবং বিশ্বব্যাপী ভূমিকা পালন করে। জলবায়ু পরিবর্তনের কথা বললে, আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের ভুক্তভোগী। তবে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমি সবসময় তরুণদের গুরুত্ব দেই কারণ তারাই ভবিষ্যৎ গড়বে এবং যেভাবেই হোক তাদের নেতৃত্বের অবꦺস্থানে থাকা উচিত। কারণ তাদের উত্তরাধিকারসূত্রে এই গ্রহে থাকতে🍸 হবে। আপনি উল্লেখ করেছেন যে আমি ৮৪ বছর বয়সী। আমার সামনে দীর্ঘ সময় নেই, তাদের সামনে পুরো জীবন রয়েছে।