• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট, ২০২৪, ৫ ভাদ্র ১৪৩১, ১৫ সফর ১৪৪৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Songbad Prokash

ইনস্টাগ্রাম

টুইটার


লিংকডইন

পিন্টারেস্ট

গুগল নিউজ


নক্ষত্র আল মাহমুদের সঙ্গে ব্যক্তিগত স্মৃতি


হাসান শাওন
প্রকাশিত: জুলাই ১১, ২০২৩, ০৯:৫৩ এএম
নক্ষত্র আল মাহমুদের সঙ্গে ব্যক্তিগত স্মৃতি

যিনি কবি আল মাহমুদ তাকে প্রথম চিনি নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়। তার ‘খড়ের গম্বুজ’ কবিতা আমাদের এসএসসি🅘 সিলেবাসে ছিল। সেখানে একটা লাইন ছিল এমন,“ . . . তোমাকে বসতে হ🍸বে এখানেই, এই ঠান্ডা ধানের বাতাসে।”

যে কবির লেখা পড়ে গায়ে কাঁটা দেয় তাকে আরও পড়া-জানা হয় পরে। স্কুল শেষে “এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে” বয়সে একই সঙ্গে বিশ্বসাহিত্য কেন্❀দ্র ও বামপন্থী ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে যাই। সেটি ২০০০ সাল পরবর্তী সময়। তখন পাঠচক্রের জন্য আল মাহমুদের ‘একুশের কবিতা’, ‘ঊনসত্তরের ছড়া’ পড়ি। অনেক মানুষকে উজ্জীবিত করেন এমন স্রষ্টা মনে হয় এই কবিকে। কিন্তু তাকে নিয়ে বাজে বাজে কথা কানে আসে। যেমন- উনি ‘জামায়াত’ করেন, ‘মৌলবাদী’ ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু সে বয়সে তো যাচাইয়ের সুযোগ নেই। ভীষণ ধাঁধা হয়ে থাকেন আল মাহমুদ।

সব রহস্যের অবসান ঘটা༺ন অপার করুণাময় স্রষ্টা। বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি আল মাহমুদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সাক্ষাতের সুযোগ হয় ২০০৬ সালে। তারিখ মনে নেই। আমি তখন দৈনিক সমকাল এর সাপ্তাহিক রাজনৈতিক সাময়িকী ‘জনমঞ্চ’ এর কন্ট্রিবিউটর। অ্যাসাইনমেন্টের আশায় সারাদিন পড়ে থাকি দৈনিকটির ফিচার বিভাগে। ‘জনমঞ্চ’ এর সম্পাদক ছিলেন এসএ মামুন ভাই। ফিচার এডিটর প্রয়াত সাংবাদিক গোলাম ফারুক ভাই অনেক নির্দেশনা দিতেন কনটেন্ট বিষয়ে। রাজনৈতিক বিষয় হওয়ায় দৈনিকের সিনিয়র কর্তা মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু ভাই, প্রয়াত সাংবাদি🔜ক মিজানুর রহমান খান ভাই উনারাও ‘জনমঞ্চ’ এর দিকে চোখ রাখতেন।

তখন ঊনসত্তরের অভ্যুত্থান দিবসের তারিখ আসন্ন। কনটেন্ট মিটিং চলছে। আমি প্রস্তাব দেই আল মাহমুদের বিখ্যাত ‘ঊনসত্তরেরꦍ ছড়া’ (. . .ট্রাকে✤র মুখে আগুন দিতে মতিউরকে ডাক . . .)  নিয়ে উনার ভাষ্য অনুলিখনের। পত্রিকার কনটেন্ট ছলনা মাত্র। আমার বাসনা কবিকে স্বীয় চোখে দেখা। তাকে নিয়ে নিজের ধাঁধা কাটানো। কবি আল মাহমুদের বাসার টিএন্ডটি ফোন নম্বর দেন সাহিত্য সাময়িকী ‘কালের খেয়া’র তৎকালীন সম্পাদক (এখনের একাত্তর টিভির উর্দ্ধতন কর্তা) শহীদুল ইসলাম রিপন ভাই। তীব্র উত্তেজনায় ফোন দেই। কিন্তু কবি ফোন রিসিভ করেন না। ফোন তোলেন তার পুত্র। তিনি বাসার ঠিকানা দেন। দু‍‍`দিন পর এক বিকেলে চলে যাই গুলশান ২ এ কবির ফ্ল্যাটে। জনশ্রুতি ছিল জামায়াতের লোকরা এই ফ্ল্যাট তাকে দিয়েছে। ড্রয়িং রুমে ঢুকতেই দেখলাম আল মাহমুদ লুঙ্গি ফতুয়া পরে বসে আছেন। তাকে ঘিরে অনুরাগীর দল। সালাম দিয়ে, পরিচয় দিয়ে তার কাছে আসার উদ্দেশ্য জানাই। প্রেসের লোক দেখে তার অনুরাগী দল একটু সরে যায়।

আমি একান্তে মাহমুদ ভাইয়ের কাছে রেকর্ডার নিয়ে বসি। উনি প্রায় ২০ মিনিট ‍‍`ঊনসত্তরের ছড়া‍‍` নিয়ে কথা বলেন🌞। কথা বলতে বলতে মাহমুদ ভাই একটার পর একটা গোল্ডলিফ সিগারেট ধরাচ্ছিলেন। সোফার পেছনে একটি রূপালী রঙের বড় অ্যাসট্রে ছিল। সেটা বারবার সামনে এনে ছাই ফেলছিলেন। কিন্তু সামনের টেবিলে রাখছিলেন না অ্যাসট্রে। ছাই ফেলা শেষ হꦜলে আবার পেছনে রাখেন। এক পর্যায়ে আমাকে বললেন, "তুমিও তো মনে হচ্ছে সিগারেট খাও। ধরাও, ধরাও। বাসায় থেকে খেতে দেয় না। তোমরা আসলে খেতে পারি।" আমি কবি আল মাহমুদ এর সামনে সিগারেট জ্বালাবার অনুমতি পাই। আমার সাহস বেড়ে যায়। "ঊনসত্তরের ছড়া" বিষয়ক কাজ শেষ হলে রেকর্ডার বন্ধ করি। বুঝি এই আমার সুযোগ। যা ধাঁধা এখনই দূর করতে হবে। তার বাঁক বদল সম্পর্কে প্রশ্ন করি। বাংলা উইকিপিডিয়ার যেটি লিখিত এভাবে -

" ... অনেকেই সমালোচনা করেন যে, আল মাহমুদ ১৯৯০’র দশকে ইসলাম🥃ী ধর্মীয় বোধের দিকে ঝুঁকে পড়েন। তার কবিতায় ইসলামী চেতনার প্রতি🌊ফলন ঘটতে থাকে। যদিও তিনি বিভিন্ন সময় তা অস্বীকার করেছেন। . . . "

তখন আল মাহমুদ খুব বিরক্ত হন। বলেন, মুক্তিযুদ্ধ করলাম। এখন দাড়ি রেখে রাজাকার হয়ে গেলাম? তোমাদের মুক্তিয𒈔ুদ্ধওয়ালারা তো আমাকে চাকরি দেয়নি। আর আমার অপরাধ কী? আমি তো সারা জীবন কবিতাই লিখে গেছি। এরপর প্রশ্ন করি তার বিশ্বাস নিয়ে। তখন মাহমুদ ভাই আরও ক্ষেপে যান। বলেন, "শোনো যুবক, আমার বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন করতে এসো না। আমি সারা জীবনই বিশ্বাসী ছিলাম। হজের সময় কাবার দিকে তাকিয়ে আমি থরথর করে কেপে উঠেছিলাম।"

আমি কোনো বড় সাহিত্যিকের কাছে গেলে কিছু ব্যক্তিগত বৃন্তান্ত জানতে চাই। যেমন - কখন লিখতে বসেন? কী পড়েন লেখার আগে? ভোরে ল𝐆িখতে বসেন না কী গভীর রাতে? ইত্যাদি ইত্যাদি। মাহমুদ ভাইকেও এগুলো জিজ্ঞেস করলাম। উনি হাসলেন। আমার কাঁধে হাত রাখলেন। বললেন, ঠিক নেই। কবিতা যেন কীভাবে এসে যায়!

এই এসে যাওয়ার রাস্তাই আজ পর্যন্ত জানা হলো না! মাহমুদ ভাই ওনার বইয়ের সংগ্রহ দেখালেন। লেখার টেবিল দেখালেন। তিনি তখন এক চোখে প্রায় দেখেনই না। সেটা নিয়ে আবার "কানা মামুদ" সিরিজের কবিতা লিখেছেন। টেবিলে দেখলাম বিশেষ ধরনের লাইট সেটআপ। তারপর বিদায় চাই। উনি অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে বলছিলেন, লিখে দিও তোমার যা ভালো লাগে। বেশির ভাগ বড় মানুষদের দেখেছি অনুলিখন, সাক্ষাৎকারের বিষয়ে খুব সাবধান। বারবার বলেন, "ছাপার আ💮গে দেখাইয়্যা নিও।" আল মাহমুদ এর আলাদা ছিলেন।

এরপর দীর্ঘ যোগাযোগহীনতা আল মাহমুদের সাথে। সম্ভবত ২০১৬ সালে ইত্তেফাকের একটি বিশেষ সংখ্যায় চুক্তিভিত্তিকভাব⛦ে কাজ করি সাহিত্য সম্পাদক কবি ফারুক আহমেদ ভাইয়ের অধীনে। তখন বিজয় দিবসের আগে আবার তার বাসায় যাই কবিতা আনতে। তিনি তখন൲ মগবাজার থাকেন। মাহমুদ ভাই যখন মগবাজারের ফ্ল্যাটে যান তখন বন্ধুরা মজা করে বলতাম, পার্টি অফিসের কাছের এলাকায় ফিরে গেছেন! জামায়াতের অফিস যে মগবাজারে সেটা তো সবাই জানেন।  

মাহমুদ ভাইকে দেখলাম তিনি নিজে হাতে লিখতে পারেন না। মুখে বলতেন আর লিখে নিতে হতো। বারবার বলছিলেন, পড়ো। এখানে দাঁড়ি দাও, এখানে সেমিকোলন দাও। এভাবে পুরো কবিতাটা দাঁড় করাতে⛦ন। কতখানি স্মৃতিশক্তি এই মানুষের ভেবে অবাক লাগল। আমাকে দেয়া কবিতার ওশুরুটা ছিল এমন, "শেষ হয়নি কী আমাদের দেওয়া নেওয়া? হাত তুলে দাড়িয়ে আছে পাড়ানি মেয়েটি বিদায়ের শেষ খেয়া..."

আরেক🔥বার ফারুক ভাই আর আমি কবির জন্য ক্যাডবেরি চকলেট নিয়ে যাই। খুব খুশি হয়ে ফোঁকলা দাঁতে হেসেছিলেন আল মাহমুদ। বললেন, কে খাবে?

আরেকবার ফারুক ভাই কবির বাসায় নিয়ে গিয়ে গেলেন। আড্ডার মধ্যে 🍷ব🎉ললেন, মাহমুদ ভাই, আপনার "জলবেশ্যা" নিয়ে সিনেমা বানাব।

আল মাহমুদ হেসে বললেন, " তো বানাও। আমি তো সিনেমারই লোক।🌺 অনেক গল্প আছে আমার।" আমরাও হেসে উঠলাম꧟।

বাংলা কবিতার কিংবদন্তি আল মাহমুদকে নিয়ে এমন টুকরো টুকরো অসংখ্য স্মৃতি আমাদের। ﷽আজ তার জন্মবার্ষিকী। মস্তিস্ক হয়তো তাই উগড়ে দিচ্ছে এর অনেকটꦗা।  

Link copied!