বাবা জাতীয় দৈনিকের বার্তা সম্পাদক থাকাকালীন প্রতিদিন ভোরে ১৬ থেকে ২২টা জাতীয় পত্রিকা আসতো বাসায়। সেই সূত্রে ছোটবেলা থে💧কে সংবাদপত্রের সাথে ঘনিষ্ঠতা। বাংলা, ইংরেজি পত্রিকাগুলো সব একাধারে সাজিয়ে শিরোনাম পড়া, কোন নিউজের ট্রিটমেন্ট কোন পত্রিকা কেমন দেয়, সেগুলোও দেখার সুযোগ হতো। লাল রঙ্গা ব্যানার হেড হতো ব্রেকিং নিউজের। কোন নিউজের ট্রিটমেন্ট কোথায় হবে, কারটা বামে থাকবে, কারটা ডানে যাবে, আরও কতো কি! সে সময় ইত্তেফাকের নিউজ ভ্যালু ছিলো সর্বাধিক। সংবাদ, দৈনিক বাংলা, বাংলার বাণী, জনকণ্ঠ, ইনকিলাব, দিনকাল, সংগ্রাম এদের ছিলো নিজস্ব পাঠককুল। দৈনিকের পাশাপাশি তখন সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনের জন্য মানুষ অপেক্ষা করতো। বিচিত্রা, রোববার, বিচিন্তা,ᩚᩚᩚᩚᩚᩚᩚᩚᩚ𒀱ᩚᩚᩚ প্রজন্ম, প্রবাহ হয়ে যায়যায়দিন সবারই প্রতিবেদন ছিলো নির্ভরযোগ্য।
অন্যদিকে ইংরেজি অবজারভার ছিলো খুবই মানসম্পন্ন। সেইসময় পত্রিকার সম্পাদকদের দৃঢ় ব্যক্তিত্ব ছিলো। নব্বই পরবর্তী সময়ে আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ, প্রথম আলো, লালসবুজ, যায়যায়দিন, মানবজমিন, মুক্তকণ্ঠ, মাতৃভূমি প্রত্যে𝕴কেই মান অর্জনের চেষ্টা করেছে। অসম প্রতিযোগিতা ও নানা প্রতিবন্ধকতায় শেষ পর্যন্ত অনেকেই টিকে থাকতে পারেনি। এসবের কয়েকটাতো রাতারাতি আকাশছোঁয়া প্রচার সংখ্যা সৃষ্টি করেও ধরে রাখতে পারেনি। জেনারেশন মিলিনিয়ামের সময় এসে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, নিউএজ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, আমাদের সময়, সমকাল, কালের কণ্ঠ, সকালের খবর, দেশ রূপান্তর, কালবেলা হয়ে আজকের পত্রিকা, সবাই যার যার মতো করে চেষ্টা করছে ভালো করার জন্য। এরমধ্যে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার বহুমুখী বৈচিত্র্য যুক্ত করে বাণিজ্যিকভাবে প্রচার সংখ্যার শীর্ষে উঠে এসেছে। তাদের সংবাদকে নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য মনে করতো মানুষ। কিন্তু জনপ্রিয়তায় ভর করে একসময় তারা নিজস্ব আলোচ্য ও বয়ানে পাঠকদের প্রভাবিত করা শুরু করেছে। ফলে নিরপেক্ষ সংবাদমাধ্যম থেকে এখন তারাও বিশেষ পক্ষভুক্ত হয়ে গিয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন।
যাই হোক, যেজন্য এ আলোচনা পারা, সেটা বলি। একটা গণমাধ্যমের জন্য পাঠকের আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন, সার্কুলেশন ঠিক রাখা স꧟হজ বিষয় না। পত্রিকার নিউজের বিশ্বস্ততা তৈরি করা মালিক-সম্পাদকের জন্য যেমন চ্যালেঞ্জিং, তেমনই শ্রমসাধ্য সাংবাদিকদের জন্যও। একটা মানসম্পন্ন ভালো পত্রিকায় কর্মরত সকলের গুরুত্ব বেড়ে যায় সর্বত্র।
নব্বই দশকে কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে গণমাধ্যমকে। মালিক-সম্পাদক থেকে ব্যবসায়ী মালিক এবং সম্পাদক পৃথক হয়ে গেলো। সামাজিক অবক্ষয়ের সাথেই যখন কর্পোরেট পুঁজির প্রতিযোগিতা গ্রাস করলো গণমাধ্যমকে, ত🌠খন থেকেই পত্রিকার বিশ্বস্ততা কমতে শুরু করে। পত্রিকার বাণিজ্যিক লাভের জন্য, সরকারি বিজ্ঞাপনের জন্য, কাগজের শুল্কমুক্ত সুবিধার জন্য মালিকপক্ষ সরকারের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাইতো। ফলে পত্রিকার সম্পাদকীয় নীতিতে পরিবর্তন হতে থাকলো। নীতি, নৈতিকতার চাইতে বাজার কাটতি মুখ্য হয়ে উ🦩ঠলো।
দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, এতো এতো পত্রিকার ভিড়েও এখন চোখ বন্ধ করে কোনো একটি পত্রিকার সংবাদে নির্ভর করা যাচ্ছে না। কোনো একটি পত্রিকার একক বিশ্বস্ত নিউজ ভ্যালু নেই। এমনিতেই প্রিন্ট মিডিয়ার পাঠকরা অনলাꦐইনে ঢুকে পড়েছে। ছাপানো পত্রিকার পাঠক কমে গিয়েছে। অনেকেই বাসায় পত্রিকা রাখা বন্ধ করেছেন। গণমাধ্যমের নানামুখী প্রবণতা, সীমাবদ্ধতা, ব্যর্থতা ও অদক্ষতায় সাধারণ মানুষ এখন ফেসবুকের খবর বেশি বিশ্বাস করে। অথচ সেখানে যেহেতু গণমাধ্যমের মতো করে কোন ফিল্টারিং হয় না, ফলে কুতথ্য বা ভুল সংবাদে মানুষ বিভ্রা🐭ন্ত হচ্ছে। নিরপেক্ষ ও সৎ সাংবাদিকতায় জাতীয় দৈনিকগুলোতে মানুষের আস্থা ফিরে আসুক, সেই প্রচেষ্টা দেখতে চাই। ছাপানো পত্রিকা হাতে নিয়ে পড়ার গুরুত্ব আমাদের বোধোদয় হোক।
লেখক : সাবেক যুবনেতা, ছাত্রনেতা