• ঢাকা
  • রবিবার, ০১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১৭ ভাদ্র ১৪৩১, ২৭ সফর ১৪৪৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Songbad Prokash

ইনস্টাগ্রাম

টুইটার


লিংকডইন

পিন্টারেস্ট

গুগল নিউজ


কাশ্মীর যাওয়ার উপায়, দর্শনীয় স্থান ও খরচ


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ১২, ২০২৪, ০৩:১৪ পিএম
কাশ্মীর যাওয়ার উপায়, দর্শনীয় স্থান ও খরচ
কাশ্মীর ভ্যালি। ছবি : সংগৃহীত

ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে উত্তরে অবস্থিত বিশ্বজোড়া পর🐭্যটকদের প্রিয় গন্তব্য কাশ্মীর। তুষারাবৃত চূড়া এবং ব্যস্ত-সমস্ত তৃণভূমির অবারিত মোহনীয়তায় নিমেষেই খুঁজে পাওয়া যায় ভূস্বর্গ নামটির মানে। পাহাড় চূড়া, দীঘল উপত্যকা ও এক পশলা হৃদের প্রাণবন্ত ঐকতানের অন্য নাম কাশ্মীর। সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও উষ্ণ আতিথেয়তা যে কোনো পরিব্রাজককে আপন করে নিতে যথেষ্ট। চলুন জেনে নেওয়া যাক কাশ্মীর ভ্রমণের আদ্যোপান্ত।

বাংলাদেশ থেকে কাশ্মীরে যাওয়ার উপায়
ভিসা প্রক্রিয়া

কাশ্মীর ঘুরতে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশিদের ভারতের ট্যুরিস্ট ভিসা লাগবে। এর জন্য ভিসা আবেদনকারীর পাসপোর্টটি আনুমানিক প্রস্থানের দিন থেকে ন্যূনতম ছয় মাসের মেয়াদ থাকতে হবে। সেই সঙ্গে পাসপোর্ট বইয়ে কমপক্ষে দুটি পৃষ্ঠা খা൲লি থাকতে হবে। এই পাসপোর্টের পাশাপাশি জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ড্রাইভিং♌ লাইসেন্সও সঙ্গে রাখা যেতে পারে।

ভিসা আবেদনের জন্য একটি পাসপোর্ট আকারের ছবি জেপিজি বা পিএনজি ফাইলের মাধ্যমে আপলোড করতে হবে। কাশ্মীরে গিয়ে কোথায় থাকা হবে তার একটা প্রমাণপত্র দেখাতে হবে। হোটেলে থাকার ক্ষেত্রে বুকিংয়ের কাগজপত্র প্রিন্ট করে নিতﷺে হবে।

ভারতে প্রবেশ ও ত্যাগ করার সময়টা নি🐷শ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে বিমান বা ট্রেন যেভাবেই যাওয়া হোক না কেন, আসা-যাওয়ার টিকেট দেখাতে হবে। সর্বোপরি, কাশ্মীরে যাবতীয় খরচ চালানোর জন্য যথেষ্ট ভ্রমণ তহবিল আছে কি না তার একটা প্রমাণ দেখাতে হবꦉে।

ঢাকা থেকে কাশ্মীর যাতায়াত

জম্মু-কাশ্মীরের সঙ্গে সংযোগ আছে ভারতের দিল্লী অথবা꧒ চণ্ডিগড়ের। ঢাকা থেকে আকাশপথে সরাসরি এই রাজ্যগুলোতে প✃ৌঁছা যায়। স্থলপথে যেতে হলে রেলপথে বা বাসে কলকাতা দিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে হবে।

কাশ্মীরের জনপ্রিয় জায়গাগুলো ঘুরতে হলে প্রথমে যে পর্যন্ত যেতে হবে সে জায়গাটি হচ্ছে শ্রীনগর। দিল্লী থেকে শ্রীꦚনগর বিমাꦗনে যেতে সময় লাগে সর্বোচ্চ ৯ ঘণ্টা। এখানে খরচ হতে পারে প্রায় ২৫ হাজার থেকে সাড়ে ৫৫ হাজার টাকা।

রেলপথে যাওয়ার জন্য ঢাকা থেকে কলকাতার হাওড়ার ট্রেন আছে যেখানে শ্রেণিভেদে জনপ্রতি ভাড়া ২ হাজার ৫৯৯ থেকে ৩ হাজার🐻 ৮৯৯ টাকা🌺। তারপর হাওড়া থেকে ট্রেন বদলে যাওয়া যাবে জম্মু। এখানে ননএসি স্লিপারগুলোর ভাড়া ৭৫০ থেকে ৭৯০ রুপি বা ৯৯০ থেকে ১ হাজার ৪২ দশমিক ৮ টাকা (১ ভারতীয় রুপি = ১ দশমিক ৩২ বাংলাদেশি টাকা)।

ঢাকা থেকে বাসে গেলে কলকাতা পর্যন্ত বাস ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ১ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ৬০ টাকা। তারপর রেলপথে জম্মু পৌঁছানোর পর শ্রীনগরের বাকিটা ꦅপথ গাড়িতে শেয়ার করে কিংবা বাসে করে যেতে হবে। সব মিলিয়ে এভাবে শ্রীনগর পর্যন্ত যেতে সময় লাগতে পারে সর্বোচ্চ ২ দিন ১৯ ঘণ্টা।

কাশ্মীরের জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানগুলো
শ্রীনগর

কাশ্মীরের প্রবেশদ্বার শ্ꦍরীনগরেই মিলবে অপার্থিব অনুভূতির সঞ্চার করা ডাল লেকের স্নিগ্ধতা। এ ছাড়া এই লেকে রয়েছে এশিয়ার প্রথম ভাসমান সিনেমা হল। শঙ্করাচার্য মন্দিরের চূড়া থেকে জম্মু ও কাশ্মীরের এই রাজধানী শহরটির প্রায় পুরোটা চোখে পড়ে।

কাশ্মীর ভ্যালি

কারাকোরাম এবং পীর পাঞ্জাল রেঞ্জ পরিবেষ্টিত এই উপত্যকাটি দেখতে একদম ডিমের মতো। হিমালয়ের এই বৃহত্তম উপত্যকার সেরা আকর্ষণ হচ্ছে এখানকার ১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ ট্রেকিং পথ। পাহাড়ের ওপর অদ্ভূত সমতল রাস্তা রোমাঞ্চকর বাইকিংয়ের জন্যও বেশ জনপ্র🐼িয়।

প্যাহেলগাম

একদিকে ভীতি সঞ্চার করা গভীর উপত্যকাগুলোর আশ্রয়স্থল বেতাব উপত্যকা। অন্যদিকে হাজার বছরের স্রোত বুকে নিয়ে চির নꦛবীন লিডার হ্রদ। এদের মাঝে পাহালগাম যেন বুনো ও আদিম প্রকৃতির এক স্বতঃস্ফূর্ত উপাখ্যান। এরই মধ্যে লিডার হ্রদে রোমাঞ্চকর রাফটিংয়ের হাতছানি উপেক্ষা করা দুষ্কর। শহরের বিপণীগুলোর জগৎজোড়া খ্যাতি জানা না থাকলেও, ঐতিহ্যবাহী কাশ্মীরি সামগ্রীগুলো একবার হলেও ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছে করবে।

সোনামার্গ

শ্রীনগর থেকে ৮০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অপরূপ উপত্যকা ও ঝরনার এক নৈসর্গিক সংমিশ্রণ এই সোনামার্গ। এখানকার বরফের নদী থাজিয়ান হিমবাহ আর সিন্ধু নদী দেখার সময় চোখের পলক ফেলারই অবকাশ মিলবে না। আর এই বিস্ময়ক🔯ে সঙ্গ দিতে এখানে রয়েছে স্লেজিং, স্নো বাইক এবং ঘোড়ায় চড়ে ঘ🍸ুরে বেড়ানোর সুযোগ।

গুলমার্গ 

সবুজ ঘাসে আচ্ছাদিত গুলমার্গ সারা বছরই বরফে ঢাকা থাকে। শ্রীনগর থেকে ৪৯ কিলোমিটার দূরের এই দর্শনীয় স্থা🉐নে পাওয়া যাবে গন্ডোলার ক্যাবল কার রাইডিং ও প্যারাগ্লাইডিংয়ের মজা। ভারতের শীতকালীন ক্রীড়াযজ্ঞের কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত এই পাহাড়ি অঞ্চলটি এশিয়ার অন্যতম সেরা স্কিয়িং স্পট।

তাছাড়া দেখার মতো আরও ꦦআছে বাবা রেশির মাজার, খিলানমার্গ, গলফ কোর্স, সেন্ট ম্যারি চার্চ, এলপাথর লেক, বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ, এবং আফারওয়াত পিক।

কাশ্মীর ভ্রমণের সেরা সময়

🌞প্রকৃতির অন🔥িন্দ্য রূপ লাবণ্য উপভোগের জন্য সারা বছরই ভ্রমণপিপাসুদের ভীড় থাকে কাশ্মীরে। যারা বরফের জগতে ডুবে যেতে চান, তারা বেছে নিতে পারেন ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস। ভাগ্য ভালো হলে স্নোফলে ভেজার অভিজ্ঞতাও মিলে যেতে পারে।

ফুলেল এবং🌄 সবুজ কাশ্মীর দেখার জন্য উপযুক্ত সময় হলো এপ্রিল থেকে মে মাস।

তবে জুলাই থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত প্যাহেলগামে হিন্দু দেবতা শিবের গুহা মন্দিরে অমরনাথ যাত্রা অনুষ্ঠিত হয় টানা ৬২ দিন ধরে। ফলে সারা শহর জুড়ে থাকে বাড়তি যানজটের ধাক্কা। তাই কাশ্মীরে ঘুরতে যাও꧒য়ার ক্ষেত্রে এই সময়টা এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।

 থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা

রাতযাপনের জন্য কাশ্মীরে বেশকিছু🐽 মানসম্মত আবাসিক হোটেল রয়েছে। এগুলোর ভাড়া পড়তে পারে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ রুপি বা ১ হাজার ৩২০ থেকে ১ হাজার ৯৮০ টাকার মধ্যে। শ্রীনগর ও জম্মুতে থাকার জন্য হোটেলে꧅র পাশাপাশি রয়েছে রিসোর্ট ও হাউস বোট। এখানে দুই জনের জন্য রুম ভাড়া পড়তে পারে ১ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ রুপির (১ হাজার ৫৮৪ থেকে ৩ হাজার ৩০০ টাকা) মধ্যে।

তবে শ্রীনগরের ডাল লেক সংলগ্ন হাউস বোটগুলো সব থেকে জনপ্রিয় টুরিস্ট এলাকা। এখানে থাকার খরচ অন্যান্🌃য হোটেলগুলোর তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

অননꦦ্য মশলা ও রন্ধনশিল্পের কারণে কাশ্মীরের খাবারে রয়েছে এক স্বতন্ত্র সংস্কৃতির ছাপ। এখানকার নানা ধরনের তাজা ফল অন্যান্য যে কোনো পাহাড়ি ফলের স্বাদকে হার মানাতে সক্ষম। কাশ্মীরের বিখ্যাত মাটন বিরিয়ানি একবার হলেও ভোজনরসিক পর্যটকরা চেখে দেখার চেষ্টা করেন। এখানকার বিশেষ খাবারের মধ্যে রয়েছে ওজওয়ান, কাশ্মীরি কাবাব, মাটন রোগান জোশ, ভেড়ার মাংস, পনির চামান, আলুর দম এবং নাদরু ইয়াখনি।

এলাচ, দারুচিনি, জাফরান এবং বাদাম দিয়ে বানানো এক ধরনের চা আছে, যাকে কাহভা বলা হয়। এ ছাড়া এখানকার গুড়, গু💖ড় চা নামের বাটার💞 চাও বেশ জনপ্রিয়।

 প্রয়োজনীয় সতর্কতা

এই অঞ্চলটিতে ভ্রমণের স𝓰ময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা🐼 জরুরি।

পরিচয় প্রমাণের জন্য যাবতীয় নথি সঙ্গে না♛ থাকলে ঘুরে বেড়ানোর সময়ে বিড়ম্বনা হতে পারে। তাই রওনা হওয়ার আগেই পাসপোর্টের পাশাপাশি🧸 জাতীয় পরিচয়পত্র, পেশাগত এমনকি ড্রাইভিং লাইসেন্সও সঙ্গে নিয়ে নিন।

বর্তমানে অনলাইনে পেমেন্ট করার সুবিধা সবখানেই থাকে। এরপরেও প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোর কিছু দো🐷কান কিংবা হোটেল বা মোটেলে উন্নত প্রযুক্তির সুবিধা নাও থাকতে পারে। কাশ্মীরের মতো পাহাড়ি এলাকাও এর বাইরে নয়। এমনও হতে পারে যে, আশপাশে কোনো এটিএম বুথ না থাকায় রাতে নগদ টাকা তোলা যাচ্ছে না। তাই আগে থেকেই সঙ্গে কিছু নগদ অর্থ নিয়ে নেওয়া আবশ্যক।

কাশ্মীর খুবই ঠা⛎ন্ডা এলাকা। তাই অনলাইন বা অফলাইন যেভাবেই হোক না কেন, রুম বুকিংয়ের সময় তাতে হিটিংয়ের ব্যবস্থা আছে কি না তা নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে। যাওয়ার আগে দেশ থেকে প্রয়োজনীয় শীতের কাপড় নিয়ে নেওয়া ভালো।

বিমানের টিকেﷺট বুকিং দেওয়ার সময় কমপক্ষে ২ মাস আগে থেকে টিকেট কাটলে খরচ বেশ কমিয়ে আনা যাবে। এছাড়া দলগতভাবে ঘুরতে গেলেও ভ্রমণ খরচ যথেষ্ট কℱমে আসে।

কাশ্মীরে ট্রিপে ঝটিকা সফর না দিয়ে হাতে একটু বেশি সময় নিয়ে যাওয়া ভালো। ট্রাঞ্জিট বা অভিবাসন সময়ক্ষেপণ ছাড়াও নতুন হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় অতিরিক্ত সময় অতিবাহিত হ🌄তে পারে।

যথাযথ পূর্বপ্রস্তুতি ও সতর্কতা নেওয়া হলে ভূস্বর্গ কাশ্মীর ভ্রমণের আনন্দ প্রত্যাশার থেকেও বেশি হতে পারে। কার রাইডিং, রাফটিং, স্কিয়িংয়ের মতো রোমাঞ্চকর কার্যকলাপগুলো স্বভাবতই বেশ ব্যয়বহুল হবে। তবে দুয়েকটা চেষ্টা করা যেতে পারে যাতায়াতকে সাশ্রয়ী করে। এ ক্ষেত্রে দলগতভাবে রেলপথে পুরো যাত্রা সম্পন্ন করা যেতে পারে। শ্রীনগর বা কাশ্মীরের অভিজাত হাউস বোট বা রিসোর্টগুলো এড়িয়ে আবাসিক হোটেলগুলো বেছে নেওয়া যেতে পারে। সেইসঙ্গে কেনাকাটার থেকেও খরচ বাঁচিয়ে স্বাদ নেওয়া যেতে পারে কোনো কাশ্মীরি খাবারের। এভাবে শীত বা বসন্তের যে কোনো সপ্তাহ হয়ে উঠতে পারে জীবনের সেরা অভিজ্ঞতা।
 

Link copied!