• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Songbad Prokash

ইনস্টাগ্রাম

টুইটার


লিংকডইন

পিন্টারেস্ট

গুগল নিউজ


কাতার বিশ্বকাপ

এমিলিয়ানো মার্টিনেজ: স্বর্গ থেকে পাঠানো দূত?


সৌরভ কুমার দাস
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০২২, ০১:৪৮ পিএম
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ: স্বর্গ থেকে পাঠানো দূত?
ছবিঃ গেটি ইমেজস

কাল রাতে নিশ্চয়ই আর্জেন্টিনার জয়ের পরও অনেকক্ষণ টিভি পর্দায় চোখ রেখেছিলেন। ইচ্ছা না করলেও, ঘুমে বিভোর হয়ে গেলেও টিভি পর্দা থেকে সহস💞াই চোখ সরার কথা নয়, অন্তত♛ আর্জেন্টাইন সমর্থকদের তো নয়ই। কিভাবেই বা সরবে, এরকম দম বন্ধ করা ম্যাচ শেষে প্রায় সবাই তো কিছু সময়ের জন্য বাকরুদ্ধই হয়ে গিয়েছিলেন।

তবে যদি চোখ রাখেন তাহলে নিশ্চ🌠য়ই দেখেছেন, লাউতারো মার্টিনেজ যখন আর্জেন্টিনার পক্ষে টাইব্রেকারে জয়সূচক গোল করলেন, সবাই যখন ছুটলো মার্টিনেজের দিকে। তখন একটা লোক ছুটেছিলেন মার্টিনেজের দিকে, লোকটি লিওনেল মেসি। তিনি জানেন, মার্টিনেজ নামের এই লোকটা তার জন্য কি। কি করেছে সে একটু আগে, আরও একবার কি করেছে তিন কাঠি পোস্টের নীচে।

আচ্ছা, মার্টিনেজ কি স্বর্গ থেকে আর্জেন্টিনার জন্য পাঠানো কোনো দূত? এটা নিয়ে নিজেরাই আলোচনা করতে পারেন আর্জেন্টাইন সমর্থকরা। আলোচনাটা হওয়া উচিত। কারণ, যে দলটার গোলপোস্টে একসময় প্রতিপক্ষ 💦শট নিলেই গোলের দেখা পেতো সেটাই এখন চীনের মহাপ্রাচীর।

কিন্তু কিভাবে এই প্রাচীর? কে বানালো এটা। লোকটার নাম এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। ২০২১ সালের আগে যাকে আর্জেন্টিনা দলের আশেপাশেও দেখা যায়নি। এমনকি আর্জেন্টাইনরাও বোধহয় জানতো না তাদের জন্য কি উপহার ঘোরাফেরা করছ൲ে আশেপাশে।

২০২১ সালের কোপা আমেরিকাতেই পাদপ্রদীপের আলোয় আবিভার্ব মার্টিনেজের। একটা আন্তর্জাতিক ট্রফি নেই- মেসির আক্ষেপ মিটিয়েছেন যিনি তিনিই মার্টিনেজ। ২০২১ সালে কোপা আমেরিকাꦚতে কলম্বিয়ার বিপক্ষে যেভাবে টাইব্রেকাౠরে পেনাল্টি ঠেকিয়েছেন, তখনই সবার মন জয় করেছিলেন।

এরপর ফাই🧔নালেও ব্রাজিলের আক্রমণভাগের একের এক শট ফিরিয়ে আর্জেন্টাইন দুর্গ রেখেছেন অক্ষত। যাই হোক এসব তো পুরনো কথা। অতীত কজনেই বা মনে রাখে।

সার্জিও রোমেরো গোলপোস্টে 💛থাকতেও অত বেশি ভরসা পেতেন না আর্জেন্টাইন সমর্থকরꦬা। সেই রোমেরো চলে যাওয়ার পর তো অনেক আর্জেন্টাইন সমর্থক মজা করে বলতেন, আরে আমরা তো গোলরক্ষক ছাড়াই খেলি!

লাইনটা বলতে যে হৃদয়ে রক্ত খরণ হতো তাদের, এটা বোধহয় আর বলে দেওয়ার কিছু নেই। এ🍒রপরই এমিলিয়ানো মার্টিনেজ নামে এক ভদ্রলোকের আবিভার্ব ঘটলো আর্জেন্টিনার গোলপোস্টে। প্রথমে তো কোচ লিওনেল স্কালোনি তাকে খেলাতেই চাইতো না যেন। এ নিয়ে ক্ষোভের যেন শেষ ছিল না সমর্থকদের।

২০২১ কোপা আমেরিকা থেকে মার্টিনেজকে প্রথম একাদশে খেꩵলানো শুরু করলেন স্কালোনি। আস্থার প্রতিদান দিতে মোটেও সময় নেননি তিনি। অভিষেক টুর্নামেন্টেই অবিশ্বাস্য গোলকিপিং করে চ্যাম্পিয়ন করলেন দলকে।

বলেছিলাম অতীত কে মনে রাখে, অতীত বলবো না। কিন্তু মার্টিনেজের বেলায় আপনাকে অতীত বলতেই হবে। বলতে হবে এই কারণে, লোকটার অতীত ক্যারিয়ার, জীবনটা ভয়ঙ্কর বিষাদে♊র।

২০১২ সালে ইংলিশ ক্লাব আর্সেনালে যোগ দিয়েছিলেন মার্টিনে꧑জ। আট বছর ছিলেন সেখানে। না না, আর্সেনালে ছিলেন কিভাবে! কারণ, এই আট বছরে আর্সেলান তাকে ধারে খেলতে পাঠিয়েছে অন্তত ছ𝕴য় ক্লাবে। যেগুলোর অন্তত চার ক্লাবের নামই শোনা যায় না মিডিয়ায়।

আর্সেনালের হয়ে আট বছরে মাত্♔র ১৫ ম্যাচ খেলেছেন। সর্বশেষ ২০২০ সালে এফএ কাপের ফাইনালে খেলেছিলেন আর্সেনালের জার্সিতে। পুরো ম্যাচে অবিশ্বাস্য কিছু সেভ করেছিলেন, ম্যাচ শেষ কান্নায়🐽 ভেঙে পড়েছিলেন। তবে এরপর সেই কান্নাকে নিজের দুর্বলতা হতে দেননি। আর্সেনাল প্রস্তাব দিয়েছিল থেকে যাওয়ার, থাকেননি।

এরপর যোগ দিয়েছেন আরেক ইংলিশ ক্লাব এভারটনে। এই ক্লাবে এসেই নিজেকে চেনালেন সবাইকে। এরপর অভিষেক হলো 🐬আর্জেন্টিনার জার্সিতে, আরও একবার বলি, মনে হলো স্বর্গ থেকে যেন দূত হয়ে এসে দাড়ালেন মেসির দলের গোলপোস্টে।

অনেক তো অতীত হলো, এবার সদ্য স্মৃতিতে ঘোরা যাক। গেল রাতে  দুই গোল ♚করে ম্যাচের লাগাম টেনে রেখেছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু নাটকীয়ভাবে শেষ দিকে জোড়♋া গোল শোধ করে সমতায় ফেরে নেদারল্যান্ডস।

অতিরিক্ত সময়েও গোল না হলে খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। সর্বশেষ মার্টিনেজ টাইব্রেকারে মুখোমুখি হয়েছিলেন কলম্বিয়ার বিপক্ষে কোপা আমেরিকায়। সেবা🃏র তো রীতিমতো চোখে চোখ রেখে জিতিয়েছিলেন আর্জেন্টিনাকে।

এবারও তাই হলো, হলো আরও বড় মঞ্চ- বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে। টাইব্রেকারে প্রথম শট নিতে এসেছিলেন ডাচ অধিনায়ক ভ্যান ভাইক। দারুণ এক শটে ডান পাশের একদম কোনা দিয়ে মারতে চেয়েছি❀লেন তিনি। অন্য দিন হলে গোলও পেয়ে যেতে পারতেন, তবে এদিন পাননি। কারণ এদিন আর্জেন্টিনার গোলপোস্টে ছিলেন ♔মার্টিনেজ। পুরো শরীর শূন্যে ভাসিয়ে ঠেকিয়ে দিলেন অবিশ্বাস্যভাবে।

প্রথমটা হয়েছে তাই বলে দ্বিতীয়টাও হবে! হয়েছে, বলা ভালো শুধু হয়নি, প্রথমটার কপি পেস্টই হয়েছে যেন। শুধু একটাই পার্থক্য প্রথমটা ছিল বা পাশে দ্বিতীয়টা বাম ൲পাশে। এবারও পুরো শরীর শূন্যে ভাসিয়ে অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতায় ঠেকালেন গোলার মতো শট।

চতুর্থ শ🀅টে লাউতারো যখন গোল করলেন, ক্যামেরা চলে গেল মার্টিনেজের দিকে। গোল হওয়ার সাথেই মার্টিনেজ তখন দুই হাত, দুই পা ছেড়ে শুয়ে পড়েছেন মাটিতে। টাইব্রেকারে তো শুধু শারীরিক নয়, মানসিক ধকলও তো যায়। মার্টিনেজ যেন তখন দম ছেড়ে বাঁচতে চাইলেন, চাইলেন দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিতে।

আমি নিশ্চিত এমিকে দেখে হোক না দেখে হোক আর্জেন্টাইন সমর্থকরা তখন কাঁদছেন। কান্না করছেন ১২০ মিনিটের পর আরও চার শটের টাইব্রেকারে জয়ের পর। এটা কি শুধু জয়, মোটেও নয়! এই জয়ে আপনি কাঁদবেন, আপনার কাঁদা উচিত। কেন কাঁদা উচিত, সেটা ভাষায়💎 ব্যখা করা সম্ভব নয়। আর্জেন্টাইন সমর্থকদের ওই সময়ের অনুভূতি আসলে পৃথিবীর কোনো ভাষাতেই বর্ণ্না করা সম্ভব নয়।

আমি মেসির নিজের জীবন দিতে চাই- এই কথাটাই বলেছিলেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। আসলেই তো, মেসির জন্য তো জীবন বাজি রেখেই লড়াই কౠরছেন এই আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক। তিন  কাঠির গোলপোস্টের নীচে যেভাবে নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছেন তাতে লিওনেল মেসি নিজেকে ভাগ্যবান ভাবতেই পারেন।

ম্যাচ জিতলেও কা🌊ঁদতে হয়, হারলেও কাঁদতে হয়, বলছিলেন একজন আর্জেন্টাইন সমর্থক। তবে একটা বিষাদের কান্না হলেও দ্বিতীয়টা হয় উল্🌺লাসের, আবেগের। 

Link copied!