• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Songbad Prokash

ইনস্টাগ্রাম

টুইটার


লিংকডইন

পিন্টারেস্ট

গুগল নিউজ


সিরিয়ার শিশুদের কথা ভাবুন


আফরিদা ইফরাত
প্রকাশিত: জুন ২২, ২০২৩, ০৮:৪৩ পিএম
সিরিয়ার শিশুদের কথা ভাবুন

যেখানে যুদ্ধ নেই সেখানকার ১২টি বছর একবার কল্পনা করে দেখুন। আপনার নিজের শৈশবের কথাই কল্পনা করুন𝓡। কিভাবে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক তারপর উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে চলে এলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর মধ্যে সম্ভবত ১২ বছর কাটিয়েছেন বন্ধুদের সঙ্গে। আবার হয়তো আপনার জীবনে সংগ্রামের গল্পও ছিল। 

কিন্তু একবার ভেবে দেখুন, যেখানে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত নগরী ও অবকাঠামো স্তূপীকৃত হয়ে আছে সেখানে পরিস্থিতি কতটা নাজুক। একবার ভেবে দেখুন সেখানকার শৈশব কতটা ভয়াবহ। প্রতি🍷নিয়ত দৌড়ের ওপর থাকা। পশ্চিমা বিশ্বের সমস্যাগুলো একবার ভেবে দেখুন। লিঙ্গ পরিবর্তনের অধিকার, বাক-স্বাধীনতা বন্ধ থেকে শুরু করে আরও আয়েশি কিছু আন্দোলনে তারা মগ্ন। অথচ বিশ্বের✅ এই উন্নত অঞ্চল একবার সিরিয়ার দিকে তাকালে পরিস্থিতি কতটা ঠিক করা যেতো। 

সিরিꦫয়ায় ক্ষমতার দম্ভ, টিকে থাকার লড়াই, নিয়ন্ত্রণের রাজনীতি রাজায় রাজায় শুরু হওয়া—এই ত্রিমুখী লড়াইয়ে পথে বসেছে দেশটির নাগরিকরা। পৈতৃক বসতভিটার ভগ্নস্তূপের সঙ্গে মিশে গেছে তাদের উপার্জনের অবলম্বনও। এখন রাস্তার পাশে পড়ে থাকা ছোট ছোট আবর্জনার স্তূপ, ময়লার ভাগাড়ে নিজেদের জীবিকা খুঁজছেন অসহায় সিরীয়রা। সম্প্রতি এমনই একটি পেশা বেশ রমরমা হয়ে উঠছে কর্মহীন শ্রমবাজারে প্লাস্টিক কুড়ানি ‘টোকাই’। ছেলে-বুড়ো, নারী-পুরুষ সবাই ছুটছে সিরিয়ার নতুন এ কর্মসংস্থানে।

꧂সিরিয়ার সংকট নিয়ে জাতিসংঘ থেকে শুরু করে অনেক আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানই চিন্তিত। প্রতিনিয়ত তারা দেশটিতে শিশুদের অবস্থার পরিসংখ্যান তুলে ধরে। একটি রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎꦿ ওই রাষ্ট্রের শিশু। তারা যদি প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা এবং সর্বোপরি মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হয় তাহলে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্য থেকে আলোকিত মুখ দেখার সম্ভাবনা কম। বর্তমান বিশ্ব প্রতিযোগিতামূলক। এই প্রতিযোগিতার সঙ্গে যোগ হয়েছে ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি। ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব এবং সংস্কৃতির গতিশীলতা। ইউরোপে অভিবাসী একটি সমস্যা। কিন্তু অভিবাসী হিসেবে যদি নিজের বাজে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটাতে চায় কেউ তাহলে তাকে এই প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বের সঙ্গে মানিয়ে চলতে হবে। অনৈতিক পদ্ধতিতে অনেকেই হয়তো ইউরোপে যেতে পারেন। কিন্তু সেটাও বেঁচে না থাকার শামিল। তাই সিরিয়ার শিশুদের ভবিষ্যৎ কতটা শঙ্কার মুখে তা বলে দেওয়ার কিছু নেই। 

সিরিয়ার অনেক শিশু ও তাদের পরিবার মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে স্থানান্তরিত হচ্ছে। কিন্তু সেখানে তারা কি থিতু হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। মনে আছে আল-জাজিরায় একবার একটি প্রতিবেদনে মাহমুদ নামে একটি ছেলের গল্প বলা হয়েছিল। তার পরিবার লেবাননে স্থানান্তরিত হয়। সেখানে সে মাছ কাটার কাজে যুক্ত হয়। মাত্র দুই ডলার আয় তার দৈনিক। মাত্র দুই ডলার সারাদিন স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে কাজ করার জন্য। এই আয়টুকুই তার মুখে হাসি এনে দেয়। অথচ তখন তার ছিল গাছের পাতা গুনে প্রহর শেষ করার। তার সামনে সম্ভাবনার🎐 দুয়ার কতটা বিস্তৃত তা বোঝার সময় ছিল🐻 তখন। অথচ তার মনোযোগ আয়ের দিকে। দুই ডলার থেকে তা কিভাবে পাঁচ ডলার হয় সেদিকে তার মনোযোগ। এমনকি পাঁচ বছর বয়সী শিশুরাও নানা শ্রমে যুক্ত হয়ে পড়ছে। 

সিরিয়ার আইন অনুযায়ী পনের বছরের নিচে কোনো শিশুকে চাকরি দেওয়া যাবে না। কিন্তু যুদ্ধ আমাদের চেনা জগতকে নিমেষেই উল্টেপাল্টে দেয়। এখন সিরিয়া কিংবা দামাস্কাসে গেলে শিশুদের ঢল একটি চেনা চিত্র হিসেবেই চোখে ধরা দেবে। শিশুর ঢল কথাটি শুনলে ভালো লাগে।কিন্তু দামাস্কাসে গেলে এই ঢল বন্যার মতোই শঙ্কা জাগায় মনে। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশটিতে আইন এখন একটি বাক্য মাত্র। আছে তো আছে। মানার বা প্রয়োগ করার ক্ষমতা নেই। সবজির দোকান কিংবা ফুটপাতে প্লাস্টিকের সিটে বসে থাকা শিশুদের চোখেমুখে অভিজ্ঞ বিক্রেতার ছাপ। এত অল্প বয়সে এমনটা কাম্য হওয়ার কথা নয়। যুদ্ধ সিরিয়ার অর্থনীতিতে এতটাই বিরূপ প্রভাব ফেলেছে যে শিশুশ্রমের ধরনেও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। অনেক শ্রম বা পেশাকে এখন ঠিক শিশুশ্রম হিসেবে চিহ্নিত করাও শক্ত। আলোহীন কারখানা, ধুলোয় ভরা ওয়ার্কশপ এমনকি দামাস্কার ক্যাফেতেও অনেক শিশুকে কাজ করতে দেখা য꧂াবে। স্বাস্থ্য-ঝুঁকির বিষয়টি আর তাদের জন্য বিবেচ্য নয়।

বিস্ময়কর বিষয়, সিরিয়াকে শিশুশ্রমের পরিসংখ্যান এখনও আমাদের অজানা। তবে রাষ্ট্রীয়ভাবে এতটুকু ২০১৮ সালে জানা গিয়েছিল, প্রায় ১ দশমিক ৭ মিলিয়ন শিশু স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে। ২০২৩ সালে সংখ্যাটি কত বড় হতে পারে তা আন্দাজ করা কঠিন না। জাতিসংঘের মতে অধিকাংশ শিশুকেই ♌জোর করে শ্রমবাজারে যুক্ত করা হচ্ছে। তাদের পরিবার থেকেই চাপ দিয়ে যুক্ত করা হচ্ছে বাজারে। এমনটি কাম্য নয় মোটেও।

২০১৮ সালের মার্চে সেভ দ্য চিলড্রেনের আরেকটি প্রতিবেদন পাওয়ার পর সারাবিশ্বই চমকে উঠেছিল। শুধু চমকেই উঠেছিল। কারণ এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে ভূরাজনৈতিকভাবে কাউকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরিয়ায় একজন শিশু-শ্রমিকের ওপর অমানবিক চাপ দেওয়া হয়। দামাস্কাস বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বি🍰ভাগের এক অধ্যাপক জানিয়েছেন, এই কাজের চাপ তাদের মনের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। এমনকি তারা মানসিকভাবে এতটাই ভেঙে পড়ে যে একসময় এই সমাজের অংশ হিসেবে নিজেকে আর ভাবতে পারে না। অসহায়ত্ব তাদের আরও ভয়াবহ পথে ঠেলে দেয়। শিশুদের মনে এক ধরনের🌜 দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। কারণ তারা শিশু হিসেবে জীবনের কোনো অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারে না। অপরদিকে তাদের প্রাপ্তবয়স্কও বলা চলে না। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার অভিনয় তাদের চালিয়ে যেতে হয়। 

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন বলে, তুরস্ক, লেবানন এবং জর্ডানে ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন অভিবাসী সিরিয়ান শিশু-শ্রমিক রয়েছে। ফলে এই দেশে শিশুশ্রমের হারও꧋ বেশি। তবে এই যুদ্ধের প্রভাব শুধু সিরিয়ার শিশুদের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এমনটি ভাবার কারণ নেই। যুদ্ধাবস্থাও তাদের জন্য মানসিক আতঙ্ক। ২০২২ সালে অন্তত ৯০০ সিরিয়ান শিশু নিহত কিংবা আহত হয়েছে। ২০২২ সালেই এক সমীক্ষায় দেখা গেছে সিরিয়ার শিশুদের মধ্যে নানা মানসিক সমস্যা দেখা দিতে শুরু করেছে। অবসাদ, নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারানোসহ অনেক সমস্যায় তাদের ভুগতে হচ্ছে। সিরিয়ার ভবিষ্যৎ কতটা ঝুঁকিতে তা সহজেই আন্দাজ করা যায়। তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম রয়েছে বিরাট শঙ্কায়। উপনিবেশ নয়। ১২ বছরের ভয়াবহ যুদ্ধের ক্ষত বহন করার পাশাপাশি নিজের অস্তিত্ব বিলোপের মধ্যে অবস্থান করছে তারা। আন্তর্জাতিক মহল ঠিক কবে এদিকে মনোযোগ দেবে ও তাদের অদ্ভুত আন্দোলনের বিষয়গুলো থেকে বের হয়ে আসবে তা একটি বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের জন্য আপাতত শুধু প্রশ্নই করার সুযোগ আছে। এর বেশি কি করা যেতে পারে।

লেখক : সংবাদকর্মী

Link copied!