• ঢাকা
  • শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Songbad Prokash

ইনস্টাগ্রাম

টুইটার


লিংকডইন

পিন্টারেস্ট

গুগল নিউজ


গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশুরা, হাসপাতালে বাড়ছে চাপ


মো. মির হোসেন সরকার
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৪, ২০২৪, ০৪:১৮ পিএম
গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশুরা, হাসপাতালে বাড়ছে চাপ
গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশুরা। ছবি : সংবাদ প্রকাশ

নাজমা বেগম। এক বছরের সন্তান ও স্বামীসহ বসবাস করেন রাজধানীর টিটিপাড়ায়। হঠাৎ একদিন ছেলের পেটের ব্যথা উঠলে ভর্তি করান মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা করে জানত💛ে পারেন তার ছেলের নিউমোনিয়া হয়েছে। এরপর থেকে প্রায় দেড় মাস হলো ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালেই আছেন।

চোখেমুখে হতাশার ছাপ নিয়🐟ে নাজমা বেগম সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “একটামাত্র সন্তান আমার। স্বামী ছোটখাটো একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। মাস শেষে যা বেতন পান তা দিয়ে ছেলেকে নিয়ে ভালোই চলছিল সংসার। বলতে গেলে আমাদের সুখী পরিবার। কিন্তু হঠাৎই একদিন ছেলে পেট ধরে প্রচণ্ড কান্নাকাটি করে। পরে স্বামীকে নিয়ে রাতে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসি। এরপর থেকে এখনও হাসপাতালেই আছি। ছেলে সুস্থ হয়নি। ডাক্তার বলেছে আরও কয়েক দিন থাকতে হবে।”

নাজমা বেগম আরও বলেন, “তীব্র গরমে শিশুদের রোগ বাড়ছে। শিশু ওয়ার্ডে সব শিশুই গরমের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সন্তান অসুস্থ হলে মা ঠিক থাকতে পারে না। ছেলের কষ্ট দেখে কলিজা ফেটে যাচ্ছে আমার। না পারছি দুধের বাচ্চাকে কোলে করে হাঁটাহাঁটি করতে, না পারছি ছেলেকে ভাল🍒োমন্দ কিছু খাওয়াতে। কবে যে আমার কলিজাকে নিয়ে বাসায় ফিরবো জানি না। তবে দোয়া করি এই গরমে কারও সন্তান যেন অসুস্থ না হয়। সবাই যেন সুস্থ থাকে।”

শুধু নাজমা বেগম একাই নღয়। তার মতো আরও দুই শতাধিক অভিভাবক এসেছেন সন্তান নিয়♍ে হাসপাতালে। কেউ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত, কেউবা নিউমোনিয়া, পানিশূন্যতাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। তবে জ্বর-কাশি, সর্দি, শ্বাসকষ্ট রোগেই আক্রান্ত বেশি। এদেরই একজন রিপন শেখ।

রিপন শেখের বাবা হাছনাত সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমার সন্তানের বয়স তিন বছর। হঠাৎ করেই একদিন দেখি অনেক জ্বর। তড়িঘড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে আসলাম। জ্🐭বরের পাশাপাশি সর্দি-কাশিও আছে। ডাক্তার বলল গরম ঠান্ডা একবারে লেগে যাওয়ার কারণে এই অবস্থা। চিকিৎসা চলছে। আশা করি দুই-তিন দিনের মধ্যে বাসায় ফিরতে পারব।”

সরেজমিনে মুগদা হাসপাতালে দেখা যায়, আটতলার শিশু ওয়ার্ডের ফ্লোরে পাতলা কাপড় বিছিয়ে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছেন অভিভাবকরা। যে যেখানে পেরেছেন সন্তান নিয়ে শু🌊য়ে পড়েছেন ডাক্তারের চিকিৎসাসেবা নিতে। শুধু তাই নয়, সেখানেই খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে সবই করা হচ্ছে।

এ তো গেলཧো ফ্লোরের কথা। ওয়ার্ডের অবস্থা আরও করুণ। ছোট ছোট বেডে রোগী ভর্তি। রোগীর মা-বাবা থেকে শুরু করে আত্মীয়স্বজন সবাই উপস্থিত। ঠিকমতো বসার জায়গা নেই। বেডের নিচেই কেউ কেউ শুয়ে আছেন। বসার জায়গা না থাকায় অনেকেই আবার হাসপাতালের ব্যালকনিতে পাতলা কাপড় বিছিয়ে শুয়ে আছেন। তবে তীব্র গরমে এত সংখ্যক মানুষের অবস্থানে ফ্যানের বাতাসেও শান্তি নেই। গরম বাতাসে রোগীর স্বজনদের হাঁসফাঁস অবস্থা। শিশুরাও গরমে কান্নাকাটি করছে।

প্রচণ্ড গরমে কান্নাকাটি করছিল নাঈম নামের এক শিশু। খালা হাতপাখা দিয়ে বাতাস করলেও কান্না যেন কোনোভাবেই থামছে না ছোট শিশু নাঈমের। নাঈদের খালা সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “বাইরে প্রচণ্ড গরম। ওয়ার্ডে ফ্যান ঘুরলেও বাতাস গরম হয়ে যায়। তাই গরমে বাচ্চারা অনেক কান্নাকাটি করে। আর রোগীর পাশাপাশি যে পরিমাণ মানুষ এখানে গরম তো লাগার কথা।ꩲ”

তিনি আরও বলেন, “হাসপাতালে আসলে অনেক কষ্ট লাগে। এই গরমে এღত রোগ বাড়ছে। বাচ্চারা কিছু বলতে না পারায় খুব কষ্ট হচ্ছে তাদের। কেউ সন্তান নিয়ে তিন মাসও হাসপাতালেই আছেন। সন্তান অসুস্থ হল⛎ে অনেক কষ্ট লাগে।”

অসুস্থ শিশুদের ভিড় শুধু মুগদা হাসপাতালেই বাড়ছে এমন নয়। এ হাসপাতালের মতোই ঢাকা শিশু হাসপাতাল, আইসিডিডিআর,বি বা কলেরা হাসপাতাল. ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, মিডফোর্ড হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ আরও বিভিন্ন হাসপাত🔯ালে অসুস্থ শিশুদের ভিড় বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, গরমের কারণে হিট স্ট্রোক, ডায়রিয়া, আমাশয়, জ্বর, টাইফয়েড, প্যারাটাইফয়েড, জন্ডিসে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। শিশুদের সর্দি, কাশি, ভাইরাল জ্বর ও ডায়রিয়া বেশি হ🐭চ্ছে। চিকিৎসকরা সতর্ক থাকার প্রস্তাব দিয়েছেন। সতর্ক থাকলে ঘরে বসে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে গরম এড়িয়ে চলা। গরমে কীভাবে নিরাপদ থাকতে হবে, সেই পরামর্শও দিয়েছেন তারা।

জানতে চাইলে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “তীব্র গরমে বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে শিশুরা হাসপাতালে বেশি আসছে। এরমধ্যে ডায়রিয়া, পানিশূন্যতা, জ্বর, পেটে ব্যথা, বমি এই ধরন💛ের উপসর্গ বেশি দেখা যাচ্ছে। শিশুদের ক্ষেত্রে গরমের প্রাদুর্ভাব অনেক বেশি। পূর্ণ বয়স্ক রোগীরাও আসছেন। তবে তাদের ক্ষেত্রে ওতটা বোঝা যাচ্ছে না।”

ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান আরও বলেন, “চিকিৎসাসেবা নিয়♎ে শিশুরা ভালো হচ💃্ছে। তবে কিছু শিশু থাকে তারা একটু সুস্থ হতে একটু সময় লাগে। তবে গরমের তীব্রতা কমলে শিশুদের চাপ কমবে।”

Link copied!