• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১,

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Songbad Prokash

ইনস্টাগ্রাম

টুইটার


লিংকডইন

পিন্টারেস্ট

গুগল নিউজ


বই আলোচনা

ফিচার নিয়ে লেকচার


লাবণী মণ্ডল
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২১, ০২:১৪ পিএম
ফিচার নিয়ে লেকচার

‘ফিচার’ পড়ার প্রতি তীব্র আগ্রহ রয়েছে। একটি মাসিক পত্রিকায় যুক্ত থাকার সুবাদে সেখানেই প্রথম ফিচারধর্মী লেখা লিখতে হয়েছে। যখন নিজে লিখতে গিয়েছি, বারবার আটকে গিয়েছে হাত। কখনো শব্দের বেড়াজালে, কখনো শেষ করতে না পাড়ার অন্তর্দহন হয়েছে। এরপর বেশ কয়েকদিন ধরে দৈনিক, সাহিত্য পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ফিচার পড়া শুরু করলাম। ফিচারধর🤡্মী বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ এবং আর্টিকেল পড়ে ফেললাম। ঠিক এমন এক সময় কথাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হলো ‘ভালো ফিচার লিখতে হলে’। বইটি লিখেছেন সাংবাদিক জাহীদ রেজা নূর। যিনি ফিচার বিভাগে কাজ করছেন টানা ১৭ বছর ধরে।

লেখক অলিউর রহমান তাঁর ‘সাংবাদিকতা : ধারণা ও কৌশল’ বইয়ে ফিচার নিয়ে লিখেছেন, “ফিচার গদ্যময় রচনা হলেও এতে ছড়িয়ে থাকে বিভিন্ন মাত্রার কাব্যময়⛎তা।  উপস্থাপনের দিক থেকে এতে নাটকীয়তারও সুযোগ রয়েছে প্রচুর। একে কখনো কখনো কিছুটা রম্যময় ও ব্যঞ্জনাময় মনে হলেও বাস্তবের সঙ্গে থ꧑াকে এর প্রত্যক্ষ যোগসূত্র। ফিচার প্রতিবেদনের শব্দে আঁকা দৃশ্যচিত্রে পাঠক যেন কখনো নিজস্ব অভিজ্ঞতার ব্যক্তি-সংস্পর্শের একাত্মতা খুঁজে পায়। তা ছাড়া এ ধরনের প্রতিবেদনে কিছুটা মনের মাধুরী ও রসবোধের উপাদান থাকে বলে ফিচারকে বলা হয় কাগজের নিত্যদিনের ‘সরস প্রতিবেদন’।”

‘ভালো ফিচার লিখতে হলে’ বইটি প্রথম থেকে শেষঅব্দি একটি অ্যাকাডেমিক বই হিসেবেই আমার চিন্তায় স্থান পেয়েছে। এর যে বর্ণনা, বিস্ত🐟র আলোচনা এবং সাব হেডিং দিয়ে লেখক যেভাবে প্রতিটি বিষয় আলাদাভাবে বুঝিয়েছেন তাতে একটি পাঠ্য বইয়ের বাইরে ধারণা করা মুশকিল।

পাঠ্য বইয়ের অ্যাসাইনমেন্ট লিখতে গেলে যেমন, প্রতিটি বিষয়কে আলাদা আলাদা সাব-হেডে ভাগ করা হয়, এখানে লেখক সেটিই করেছেন। একজন সাংবাদিকই শুধু নয়, নতুন লেখকদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বইটি। আমার আগ্রহের জায়গা ছিল ফিচার লেখার বিষয়টিতে; কিন্তু পড়তে গিয়ে দেখলাম জাহীদ রেজা নূর এ রকম বই লিখেছেন–একজন  সাংবাদিক এ বইটি থেকেই তার কাজের রসদ পেয়ে যেতে পারেন। রাষ্ট্রীয় শিক্ষাব্ꦿযবস্থা মননশীল হলে, এ বইটি হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য হতো কিংবা সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীরা এটিকে আত্মস্থ করত।

বইটিতে ২৪টি অধ্যায় রয়েছে। এরপর পরিশিষ্ট-১ হিসেবে ‘প্রতিবেদনের সাত ধাপ’ এবং পরিশিষ্ট ২ হিসেবে ‘লেখালেখি করার জন্য কিছু প👍রামর্শ’ যুক্ত করা হয়েছে।

লেখকের শব্দ চয়ন ও বাক্যগঠন এতই সাবলীল, সহজ করেছেন, যা সত্যিই অভাবনীয়। এ কারণেই বইটি সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে। একজন লেখকের বই যখন সহজ ভাষা দিয়ে শিক্ষানবীশ থেকে শুরু করে গবেষক-তাত্ত্বিক পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, তখন সেটি নিশ্চিতভাবেই লেখকের স্বার্থকতা। এখানে যদি ভাষার দুর্বোধ্যতা ব🧜েশি থাকত; সেটি হয়♚ত আমার পক্ষেও পড়া সম্ভব হতো না।

‘নিউ সার্ভে অব জার্নালিজম’ গ্রন্থে জর্জ ফক্স মর্ট ও সহ লেখকগণ বলেছেন, ‘ফিচার প্রতিবেদন নিছক সংবাদের চেয়ে মানবিক আবেদনের দিককে বেশি প্রাধান্য দেয়, যে কারণে সাধারণ 🔯পাঠক ফিচারের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং তারা এর প্রতি মনোযোগী হয়; আর এতে করে ফিচার পাঠকের আবেগকে নাড়া দিতে ꩵসক্ষম হয়।’

দীর্ঘ একটি বাক্য–বিশেষ করে যেসব বাক্যে এ﷽কাধিক অধীনস্থ বাক্🌄যাংশ থাকে, সে ধরনের বাক্য বুঝতে হলে পাঠককে ব্যাকরণের পাশাপাশি মূল বিষয়টিকে মাথায় একসাথে রাখতে হয় বলেই ফিচার লেখকরা বলে থাকেন। এ বইটি পড়তে গিয়েও তার আঁচ পেলাম।

কিছুদিন আগেই বিশিষ্টজন থেকে শুরু প্রান্তিকজনের জীবনচরিতের উপর ভিত্তি করে সাক্ষাৎকার নেওয়ার পরিকল্পনা করেছি। বেশ অবাক করার মতো ঘটনা হলো–এ বইটি পড়তে গিয়ে এ নিয়ে একটি প্রবন্ধ পেলাম–সাক্ষাৎকার ও কিছু বিড়ম্বনা। যেখানে সাক্ষাৎকার নেওয়ার পূর্বে সে ব্যক্তি সম্পর্কে পড়াশুনা থেকে শুরু করে, প্রশ্ন তৈরি করা এবং প্༺রশ্নগুলো যিনি সাক্ষাৎকার দিবেন তার সামনে হাজির করার বিষয়টি চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন। এরপর এটি ছাপানো এবং ছাপানোর পর এর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে। ব্যক্তিগতভাবে এটি আমার কাজে ভীষণ সহায়ক হবে বলেই মনে করছি।

এ বিষয়ে বই থেকে উদ্ধৃত করছি–‘মুখোমুখি সাক্ষাৎকারই সেরা সাক্ষা🧔ৎকার। যদি কোনো ব্যক্তিত্ব বা তারকার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়, তা হলে তা সামনাসামনি নেওয়া হলে তিনি তাঁর পুরোটা নিয়েই ধরা পড়েন ফিচারে।

টেলিফোনে সাক্ষাৎকারে নির্দিষ্ট ব্যক্তির দেহভাষা বোঝার সুযোগ হয় না। ভালো ফিচারগুলো পড়লেই বুঝতে পারবেন, সেখানে উঠে এসেছে সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময়কার কিছু বর্ণনা। কীভাবে তিনি এলেন, কী ছিল তাঁর পরনে, ঘড়িটি পরেছেন কোন হাতে, অলঙ্কার ছিল কী ধরনের। চা বা কফির কাপটা কোন হাতে ধরেছেন, কোথꦺায় বসলেন, কীভাবে বসলেন ইত্যাদির সঙ্গে ছবির মতো পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সুযোগ মিলে যায় তাতে।’

এ বিষয়গুলো নিয়ে বেশ কয়েকমাস আগে🀅 একজন ‘তুখোড়’দাবিদার সম্পাকদের সঙ্গে হালকা বিতর্ক হয়েছিল। তাঁর দাবি–সাক্ষাৎকার হতে হবে কাঠখোট্টা। সাক্ষাৎকারের বিষয়বস্তুকে প্রাধান্য দিয়ে এগুতে বললেন তিনি। আমি এতে নান্দনিক বিষয়-আশয় তুলে ধরার কথা বললাম, কিন্তু যেহেতু আমি তাঁর অধীনে কর্মরত ছিলাম, আমার কথা ধোপে টিকেনি। এ বইটি পড়ার পর নিজের প্রত༺ি আস্থা বেড়েছে নিশ্চিতভাবেই।

একই প্রবন্ধে বলা হয়, ‘সাংবাদিকের সঙ্গে শিল্পীদের একটা বন্🍷ধন হয়। সেটা খারাপ কিছু নয়। কিন্তু মুশকিল হয়ে যায়, সম্পর্কের কারণে পেশাদারি মনোভাব বজায় না রেখে সাংবাদিকদের কেউ কেউ সেই শিল্পীর হয়ে কাজ করেন।...’ বেশিরভাগ মিডিয়ার ক্ষেত্রেই এমন অভিযোগ পাওয়া যায় অহরহ। অনেক ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যম এবং সাংবাদিকগোষ্ঠী হয় প্রশ্নবিদ্ধ।

মুনিয়ার আত্মহত্যার পর সাংবাদিকদের পক্ষপাতিত্ব স্পষ্টভাবে প্রকাশ হয়েছে। যেখানে মুনিয়ার চরিত্র নিয়ে হাজারটা সত্য-মিথ্যা গল্প ফেঁদেছে কোনো কোনো মিডিয়া। কেন? কারণ এখানে পেশাদারিত্ব তৈরি হয়নি কিংবা সিস্টেমের কারণে বাধ্য হয়ে তা করতে হয়েছে। এত সমালোচনার পরও আমরা সংবাদপত্রকেই গুরুত্ব দেই কিংবা এখন অব্দি এ পেশাটাকেই আপন মনে করি। বিচার-বুদ্ধি পরিণত হওয়ার পর থেকেই এ প🐲েশার প্রতি আলাদা টান রয়েছে, আগ্রহ রয়েছে। এ রকম বই পড়তে পারলে, আগ্রহের মাত্রা আরও বেড়ে✱ যায়।

মিশেল চার্নলি ও ব্লেয়ার চার্নলি তাদের রিপোর্টিং বইতে বলেছেন, ‘ফিচার শব্দটি সংবဣাদ কক্ষেও সর্বজনীন এবং সার্বক্ষণিক বুলি। তারা মানবিক আবেদনসমৃদ্ধ বিবরণীকে ফিচারের একটা প্রকার হিসেবে দেখিয়েছেন।’ তাদের মতে, সময়ানুগ নয়, প্রধানত এই কারণে নির্বাচিত উপাদানের ভিত্তিতে রচিত বিবরণই হচ্ছে ফিচার। অপরদিকে ম্যাককিনি বলেছেন, ফিচার হচ্ছে কাঠামোর শৃঙ্খলার বাইরে অন্যভাবে রচিত বিবরণী, যা মানুষের কৌতূহল, সহমর্মিতা, ভীতি, আনন্দকে উদ্দীপিত করে। ম্যাককিনি বেশি গুরুত্ব দিয়েছ𒅌েন মানবিক আবেদনের উপর আর চার্নলিরা গুরুত্ব দিয়েছেন সময় নিরপেক্ষতার উপর।

‘ভালো ফিচার লি🎉খতে হলে’ বইটিতে এ কথাগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য খুঁজে পেলাম। মানুষের ভেতরকে উপলব্ধি করতে না পারলে, মানুষের ভেতরে ঢুকে সংবাদ বের না করলে সেটি আসলে ‘ফিচার’হয় না। এখানেই কলাম, প্রতিবেদনের সঙ্গে ফিচারের পার্থক্য। যে কারণে আমা🌱দের ফিচার লেখকের সংখ্যা হাতেগোণা কয়েকজন।

প্যಞাটারসন বলেন, ‘ফিচারও এক ধরনের সংবাদ। ꩲযা পাঠকের কাছে তথ্য তুলে ধরে। লেখা হয় দ্রুত পাঠোপযোগী চিত্তাকর্ষক ভঙ্গিতে। ফিচার হলো অধ্যয়ন, গবেষণা ও সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে রচিত সংবাদের এক সম্প্রসারিত রূপ, যার লক্ষ্য তথ্য পরিবেশন, শিক্ষাদান ও বিনোদন।’

নবম অধ্যায়ে ‘যেদিকে তাকাই শুধু ফিচারসমুদ্র’ প্রবন্ধে জাহীদ রেজা নূর লিখেছেন, “মানুষকে কথা বলতে দিন। অনেক মানুষ আছে, যারা অন্তর্মুখী। কিংবা ক্যামেরার সামনে কিংবা অচেনা মানুষের সামনে নিজেকে মেলে ধরে না। আপনি যেহেতু তাঁর আপনজন নন, তাই মোটেও ভাববেন না যে, শুরুতেই আপনাকে বন্ধু ভেবে ‘আরে দোস্ত&rs𝔉quo; বলে কথা বলা শুরু করবে। একটু একটু করে খাপছাড়াভাবেই তিনি কথা বলা শুরু করবেন।” এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ফিচারধর্মী লেখার জন্য অনেক সাংবাদিকই হয়তো এমন অবস্থার সম্মুখীন হয়েছেন। এমনিতেই হাজার রকমের গল্পের ফুলঝুরি; কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলতে গেলেই মুখে যেন ‘তালা’ ℱমেরে দেয়। এ ক্ষেত্রে বিরক্তি কাজ করে। নিজেকেই ব্যর্থ মনে হতে পারে। এ প্রবন্ধটি পড়ে তার অনেকটা কাটানো সম্ভব হতে পারে।

ত্রয়োবিংশ অধ্যায়টি আমার প্রফেশনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত: বই আলোচনা। ওই অধ্যায় থেকে উদ্ধৃত করছি–  ‘আলোচনা এমনভাবে করতে হবে, যেন বিভিন্ন অধ্যায়ে কী ধরনের সোনার খনি অপেক্ষা করছে, সে ব্যাপারে পাঠক যেন ꧋একটু আগাম খবর পেয়ে যান। তা থেকে বেছে বেছে অল্প কিছু উদাহরণ দেওয়া হলে তিনি বুঝতে পারবেন, কোন বইটি পড়া দরকার।’

‘...ভালো ভালো লেখা না পড়লে নিজের কলমেও ভালো বিষয়,🌼 ভালো ভাষা আসবে না। তাই সেরা লেখাগুলো পড়ুন এবং পড়তেই থাকুন।’ এটি ঠিক যে, আমার কাছে যেটি স⭕েরা লেখা, সেটি অন্য একজনের কাছে নাও হতে পারে। তবে যে কোনো বিষয়ের সেরা লেখাগুলো পড়লে ভাষাগতভাবে যে উৎকর্ষ লাভ করা সম্ভব, তা নিশ্চিতভাবেই বলে দেওয়া যায়।

‘ভালো ফিচার লিখতে হলে’ বইতে যে বিষয়টি কিছুটা দৃষ্টিকটূ মনে হতে পারে, সেটি হলো–বইটির উচ্চতা বুঝাতে গিয়ে প্রকাশিত হয়েছে একরকম অহমিকা, আর সেটি এই বইয়ের উচ্চতাকে কিছুটা হলেও আঘাত ক♛রেছে বলে মনে হয়। বইটির ব্যাক কভারে লেখা— ‘ফিচার নিয়ে এ রকম বই কোনোদিন লেখা হয়নি, হবেও না কখনো। ... এই বইয়ের তুলনা শুধু এই বইটিই।...’ এরকম যান্ত্রিক বক্তব্যে আস্থা রাখা একজন সচেতন পাঠক হিসেবে মানতে পারলাম না, এজন্য দুঃখিত। কেননা, এর পূর্বে লেখা হয়েছে কি-না এ ধরনের বই, সেটি গবেষণার বিষয়; কিন্তু কখনো হবে না, সে বিষয়টি অগ্রিম বলে দেয়া যায় না।

‘ভালো ফিচার লিখতে হলে’বইটি প্রকাশ করেছে কথাপ্রকা𒆙শ। লিখেছেন সাংবাদিক জাহীদ রেজা নূর। প্রচ্ছদ করেছেন সব্যসাচী হাজরা। বইটির মূল্য ৪০০ টাকা। প্রকাশকাল: জুলাই ২০২১।

Link copied!