“এখন যৌবন যার....”এই পর্যন্ত বল💫লেই যে কেউ-ই মিলিয়ে পড়েন, “...মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/ এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়”। গত প্রায় সাড়ে পাঁচ দশক ধরে এই কবিতাটি মানুষের মুখে মুখে ফিরেছে। আর দ🙈েশের যেকোনো গণজাগরণে তারুণ্যের বারুদ জুগিয়ে চলেছে।
কবিতাটা এতই শক্তিশালী যে কয়েকটি শব্দের๊ উন্মাদনা প্রেরণা জুগিয়েছিল উনসত্তরের গণ–অভ্যুত্থান থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ, নব্বয়ের গণঅভ্যুত্থান আর স্বৈরাচারবিরোধীসহ প্রগতিশীল সব আন্দোলনেꦓ।
একই সঙ্গে জনপ্রিয় আর দারুণ প্রেরণাদায়ক কালজয়ী কবিতাটি লিখেছিলেন প্রেমের কবি, যৌবনের কবಞি হেলাল হাফিজ। আর কবিতাটির শিরোনাম ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’।
যেভাবে লেখা
তখন ১৯৬৯ সাল। কবি হেলাল হাফিজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। চলছে গণ-অভ্যুত্থান। উত্তাল সেই দিনগুলোর একদি𓃲ন সন্ধ্যায় পুꦆরান ঢাকা থেকে ইকবাল হলে (এখন সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ফিরছিলেন কবি। গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়ায় আসতেই হঠাৎ সামনে চলে আসে উত্তাল মিছিল।
রিকশাচালক ব্রেক কষে রিকশা থামলেন। মিছি♛লকারীদের থামাতে পুলিশ ধাওয়া দিতে শুরু করে। মিছিলকারীরা উত্তরে ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে হঠাৎ রিকশাচালক বলে উঠলেন, ‘মার, মার শালাদের। প্রেমের জন্য কোনো কোনো সময় মার্ডারও করা যায়।’
রিকশাচালকের কথা শুনে কিছুটা চমকে উঠলেন কবি। ভেতরে তার কবিমন জেগে উঠল। মনে মনে বললেন, ‘আসলেই তো তা–ই! দেশপ্রেমের জন্যও তো মার্ডার করা যেতে পারে⛄।’
এক সময় সেই ঘটনা থেকেই কবি হেলাল হাফিজ লিখে ফেলেন ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ শি𝔍রোনামের সেই কবিতা-
নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়
এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
মিছিলের সব হাত
কণ্ঠ
পা এক নয়।
সেখানে সংসারী থাকে, সংসার বিরাগী থাকে,
কেউ আসে রাজপথে সাজাতে সংসার।
কেউ আসে জ্বালিয়ে বা জ্বালাতে সংসার
শাশ্বত শান্তির যারা তারাও যুদ্ধে আসে
অবশ্য আসতে হয় মাঝে মধ্যে
অস্তিত্বের প্রগাঢ় আহ্বানে,
কেউ আবার যুদ্ধবাজ হয়ে যায় মোহরের প্রিয় প্রলোভনে
কোনো কোনো প্রেম আছে প্রেমিককে খুনী হতে হয়।
যদি কেউ ভালোবেসে খুনী হতে চান
তাই হয়ে যান
উৎকৃষ্ট সময় কিন্তু আজ বয়ে যায়।
এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় ।
রচনাকাল: পহেলা ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯
এক সাক্ষাৎকারে হেলাল হাফিজ বলেছিলেন, কবিতাটি ওই সময় কোনো পত্রিকা প্রকাশ করার সাহস পায়নি। তবে প্রথম দুটি লাইন আহমদ ছফা এবং কবি হুমায়ুন কবির ১৯৬৯ সালে একরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে দেয়াললিখন করে দিয়েছিলেন। এরপর ছাত্রাবস্থাত🐲েই কবি হিসেবে তারকা খ্যাতি পেয়ে যান হেলাল হাফিজ।
দেয়াললিখন হিসেবে এ কবিতার প্রথম দুই চরণ প্রচারিত হওয়ার পর ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয় একটি ছোট কাগজে। সে কাগজের ন🥃াম বলতে পারেননি হেলাল হাফিজ। তিনি বলেছিলেন, সে সময় একুশে ফেব্রুয়ারির সময় প্রচুর লিটল ম্যাগাজিন বের হতো। তার কোনো একটিতে কবিতাটি ছ💮াপা হয়েছিল।
কবিতাটি ইংরেজি, হিন্দি, জার্মান, ফরাসিসহ বিভিꦯন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। অনেকেই আবৃত্তিও করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় কবিতাটౠি রণাঙ্গনের মানুষের মুখে মুখে ফিরেছে।