মারুফুল ইসলাম লিখছেন আশির দশক থেকে। স্বরসন্ধানী হওয়ায় নিরীক্ষা করছেন কবিতার বিষয় ও প্রকরণে। তাঁর কবিতায় আছে প্রকৃতি, প্রেম, আত্মজৈবনিকতা, নিঃসঙ্গতা, লোকসাহিত্য, পুরাণ, সমাজ, দেশ, দার্শনিক মতো। ছোট ও বড় কবিতায় এসবের বয়ান পাওয়া যায়। প্রায় প্রত🔯্যেকটি কাব্যে উপরোক্ত বিষয়গুলোর সমন্বয় থাকে। আজকে, যে বইটি আলোচ্য, এখানে কেবল সম🀅াজ ও মানুষের আখ্যান শৈল্পিকতায় উপস্থাপিত। এই হিসাব থেকেই মারুফুলের ‘দহগ্রাম’ অন্য বই থেকে আলাদা। প্রত্যেকটি কবিতার পঙ্ক্তিতে পঙ্ক্তিতে রয়েছে সমাজবাস্তবতার নানাদিক।
‘দহগ্রাম🦩’ কাব্যের কিছু কবিতা পাঠককে নাড়া দিবে নতুনবোধে। আমরা আগে যেভাবে ইতিহাস, সমাজ, রাজনীতি, মানুষের ভেতর বাস্তবতার কথা জেনেছি, এই বইয়ে একটু আলাদা স্বরে জানা যাবে সেসব।
বইয়ের শুরুতেই রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কবিতা। পরপর তিনটি কবিতার বিষয়বস্তু বঙ্গবন্ধু। প্রথম কবিতায় রয়েছে বঙ্গবন্ধুর শক্তি, সামর্থ্য ও বীরত্বগাঁথা। দ্বিতীয়টায় রয়েছে বঙ্গবন্ধুর মতো বীরের অকাল মৃত্যু যে জাতির জন্য বড় গ্লানি, বড় অপরাধ সে বিষয়ে স্পষ্ট কথন। তৃতীয়টা আমৃত্যু বঙ্গবন্ধু যে বাড়িতে বসবাস করেছেন, সেই বাড়ি নিয়ে লেখা। ‘বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামের কবিতাটিতে একজন বালকের অনুভূতিতে প্রকাশিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর মাহাত্ম্য। মায়ের কাছ থেকে শুনে এবং নি꧂জের উপলব্ধিতে জাতির জনককে বুঝতে পেরে বালক বিস্মিত হয়। আর ভাবে : “একটা মানুষের চোখে কোথা থেকে আসে এত স্বপ্ন/ একটা মানুষের মনে কোথা থেকে আসে এত প্রেম/ একটা মানুষের আ💛ঙুলে কোথা থেকে আসে এত জাদু/ একটা মানুষের বুকে কোথা থেকে আসে এত সাহস/ একটা মানুষের কণ্ঠে কোথা থেকে আসে এত শক্তি।”
নিম্নবর্গের তাত্ত্বিকদের একজন পার্থ চট্টোপাধ্যায় মনে করেন পুরুষ শাসিত সমাজে সব নারীই এক অর্থে নিম্নবর্গ। মারুফুল ইসলাম নারীকে নিম্নবর্গের আবরণ থেকে বের করার প্রচেষ্টায় লিখেছেন রেহানের জবানে সমাজ ও ক্ষমতায় থ♕াকা মানুষের ভেতর বাস্তবতার কথা। বলিয়েছেন, “তাকিয়ে দেখো সেইসব পুলিশের দিকে/ আইনজীবীর দিকে/ বিচারকের দিকে/ যারা আমার অধিকার পিষে দিয়েছে বুটের নিচে/ মিথ্যা আর অজ্ঞানতার কুয়াশায় আড়াল করেছে সত্য।” রেহানে হয়েছ꧋ে প্রতিবাদী অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অসত্যের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে নিজের অধিকার।
আমরা প্রত্যেকদিন শুনি, জানি, কেউ কেউ হয়তো দেখেও ফেলে ধর্ষণ ও নারীর সম্ভ্রমহানির দৃশ্য। শিশু থেকে বৃদ্ধা কেউই বাদ যায় না ধর্ষণের পীড়া থেকে। সমাজের এই ভয়ঙ্কর ও বিপর্যস্ত জীবনচিত্র তুলে আনতেও কবি যত্নবান হয়েছেন। ‘বৃষ্টি’ নামক কবিতায় বলেছেন বৃষ্টির বিপর্যস্ত জীবনকথা।
আমাদের পরিস্থিতি এমন হয়ে গেছে যে আমরা স্বাভাবিক মৃত্যু প্রত্যাশা করতে পারছি না। যেকোনো সময় যেকোনো দুর্ঘটনায় আমাদের জীবন চলে যাওয়ার দশা। মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা, রাস্তা, অফিস, এমনকি নিজের বাড়িও নিরাপদ নয়। জীবন চলে যেতে পারে আগুনে পুড়ে, গুলিবিদ্ধ হয়ে, বাস চাপায়। ‘মানুষ মারার কল’, ‘সব কিছু মেনে নেওয়া যায় না’, ‘কালের ঝঞ্ঝা’, ‘হরতাল’ প্রভৃতি কবিতায় এই দিকগুলোর কথা উঠে ܫএসেছে। যদিও মেনে নেওয়া যায় ꦡনা অন্যায় তর্জনী, অসত্য ভাষণ, জবরদখল, নিয়মনীতি না মেনে গাড়ি চলানো, বাসচাপায় স্কুল ছাত্রের মৃত্যুর পর মন্ত্রির ঠা ঠা হাসি, ব্যাংকের আমানতের খেয়ানত, খনির কয়লা নাই হয়ে যাওয়া, জীবনমৃত্যু নিয়ে খোলামকুচি খেলা।
‘দহগ্রাম’ কাব্যে ১৯৭১ থেকে ২০১৯ সালের সমাজবাস্তবতার🎀 কথা প্রকাশ পেয়েছে। শৈল্পিকতায় বর্ণ✤িত হয়েছে সমাজ ও মানুষের আখ্যান। পুরো বাংলাদেশ একটি গ্রাম কল্পনা করলে ওই গ্রামের দাহই হয়েছে উপজীব্য এই কাব্যে।
কাব্যগ্রন্থ : দহগ্রাম, লেখক : মারুফুল ইসলাম; প্রকাশক : অন্যপ্রকাশ; প্রচ্ছদ : মোমিন উদ্দীন খালেদ; মূল্য : ২৫০ টাকা; পৃষ্ঠা : ৫৬।