সত্য কি সবসময় সুন্দর? নাকি কখনো কখনো জীবনের কুৎসিত রূপটিকেও সামনে আনে? সত্য হোক মিথ্যা—মানুষের জীবন তো আসলে এই দ🧸াঁড়িপাল্লার ওপর দাঁড়িয়ে। যার সঙ্গে জড়িয়ে অস্তিত্ববাদও। অস্তিত্ববাদ (Existentialism) শব্দটি যখন এলো, একটু বিংশ শতাব্দীতে ফেরা যাক। অস্তিত্ববাদ ইউরোপের কেবল ওই সময়কার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় দর্শনচর্চায় ছিল না; এর মাধ্যমে দুই বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী জীবনের অর্থ খোঁজাটাও জরুরি হয়ে পড়েছিল পশ্চিমাদের। বলতেই হয়, দুই অস্তিত্ববাদী দার্শনিক ও লেখক জ্যঁ-পল-সার্ত্রের সঙ্গে আলবেয়ার কাম্যুর বন্ধুত্ব ও পরবর্তী সময়ে শত্রুতায় যেন অস্তিত্ববাদী দর্শনকে জনপ্রিয় করে তুলেছিল। অবশ্য যে কোনো বিষয়কে রঙিন ও রোমান্টিকতার মোড়কে ইউরোপিয়ানরা পণ্য করে তুলতে সিদ্ধহস্ত। একবিংশ শতাব্দীতে এসে চর্চা না থাকতে পারে, তাই বলে অস্তিত্ববাদীদের যে জীবনের অর্থ খোঁজা সেটি থেমে নেই। প্রতিটি প্রাণ ও উদ্ভিদ শেষ পর্যন্ত নিজের গাঢ় অস্তিত্বকেই স্বীকার করে।
কিন্তু কাম্যুর এই অস্তিত্ববাদ আদতে অস্তিত্বকে স্বীকার করে নয়, দাঁড়িয়ে আছে অস্তিত্বের অর্থহীনতা ও জীবনের নির্জলা কিছু সত্যকে ভাবলেশহীনভাবে প্রকাশ করার মধ্য দিয়ে। যে সত্যগুলোকে আমরা সাধারণত প্রকাশ করতে কয়েকবার ভাবি বা ভয় পাই। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় উদাহরণ হতে পারে তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস, ‘দ্য আউটসাইডার’ এবং এর শুরুর কয়েকটা লাইন, “My♋ mother died today. Or maybe yesterday, I don`t know. I received a telegram from the old people’s home: ‘Mother deceased. Funeral tomorrow. Very sincerely yours.’ That doesn’t mean anything. It might have been yesterday.”
এই উপন্যাস দিয়ে সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা ও মমত্ববোধ এবং মায়ের প্রতি সন্তানের যে কর্তব্য ও দায়িত্ব—শুরুতেই সেটিকে বড় এক প্রশ্ন ও বিস্ময়চিহ্নের মুখোমুখি করে দেন কাম্যু। যেটা 💞গ্রহণের মতো হৃদয় আজও আমাদের প্রস্তত হতে পারেনি। সত্য🐻ের সন্ধানে থাকা হৃদয়ে কাম্যু বারবার এমন কুঠারাঘাত করে গেছেন। কিন্তু সত্যের চেয়ে মিথ্যাও অনেক মানবিক হয়ে ওঠে যখন আমরা তাঁর ‘আ হ্যাপি ডেথ’ উপন্যাসে বলতে দেখি, ‘Should I kill myself, or have a cup of coffee?’ এ যে জীবনকে নিয়েই স্যাটায়ার! কিংবা জীবনের অনিশ্চয়তাকে আরও অনিশ্চিত প্রশ্নের মুখে ছুড়ে দেওয়া।
কাম্যুর দুনিয়াদারি দেখা মূলত এমনও হেঁয়ালি ও অ্যাবসার্ডিজমের (Absurdism) ভেতর দিয়ে। আর সেই অ্যাবসার্ডিটি দিয়ে কঠিন সত্যের মুখোমুখি করে দেখাতে চেয়েছ💞েন জীবনের নিরর্থকতা। দুই বিশ্বযুদ্ধের সময়ে রাষ্ট্রনায়কদের ক্ষমতার বলি অসংখ্য সাধারণ মানুষের মৃত্যু ও অসহায়ত্ব, কাম্যুর মনেও যে দাগ কাটবে সেটিই স্বাভাবিক, এসবের ভেতর দিয়েই তো তাঁর বেড়ে ওঠা। যার কারণে জীবনকে অ্যাবসার্ড দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখলেও শেষ পর্যন্ত কাম্যুর কথন মূলত মানবিকতার। সেটি ‘আমার কি নিজেকে হত্যা করা উচিত নাকি এক কাপ কফি খাওয়া’ এই লাইনেই যেন সবকিছুর উত্তর দিয়েছেন।
জীবনকে কিছু সময়ের জন্য আমরা যে নিরর্থ (meaningless) ও অ্যাবসার্ডিটির চোখে দেখি, সেটি কাম্যুর আগেই আমরা পাই স্যামুয়েল বেকেটের নাটক ‘ওয়েটিং ফর গডো’ ও পরবর্তীতে গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের কথাসাহিত্যে। তবে বেকেট সমাধানে আসেননি। তিনি শেষ পর্যন্ত ‘গডো’র অপেক্ষায় থেকেছেন। আর মার্কেজ সমাধান টেনেছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, ‘কর্নেলকে কেউ চিঠি লেখে না’ নামের নভেলা ও ‘আমি শুধু একটা ফোন করতে এসেছিলাম’ ছোটগল্প। কাম্যু এখানে একটু ব্যতিক্রম। তিনি অপেক্ষায় যেমন রেখেছেন তেমনি এসেছেন সমাধানেও। সঙ্গে জীবনকে নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন জোরালোভাবে। জেমস জয়েসের ‘ইউলিসিস’ যদি হয় জীবনকে ‘হ্যাঁ’ বলার মহত্ত্বম উৎস, প্রেক্ষাপট কিংবা পটভূমি, তব🎃ে আবদুল মান্নান সৈয়দের ছোটগল্প থেকে নাম ধার করে কাম্যুর ‘দ্য আউটসাইডার’ ও ‘দ্য প্লেগ’কে বলতে হবে জীবন ‘সত্যের মতো বদমাশ’। ভাগ্যিস, ডাক্তার বের্নার্দ শুরুতে পাত্তা না দিয়ে প্লেগের জীবানুবহনকারী ইঁদুরকে মাড়িয়ে চলে গিয়েছিলেন হাসপাতালে, নয়তো মহামারি সময়ের অমন নির্জলা সত্য ও বাস্তব দৃশ্য রচিত হতো কী! আমাদের সামান্য ভুলে যে কত কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, সেটির বড় উদাহরণ ‘দ্য প্লেগ’। সেটি যেন আরও বেশি প্রকটভাবে দেখা গেল কর💟োনা মহামারির সময়ে।