• ঢাকা
  • রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Songbad Prokash

ইনস্টাগ্রাম

টুইটার


লিংকডইন

পিন্টারেস্ট

গুগল নিউজ


জিম মরিসন: এক অদ্ভুত আগন্তুক


উপল বড়ুয়া
প্রকাশিত: জুলাই ৩, ২০২৩, ০৮:৩৯ এএম
জিম মরিসন: এক অদ্ভুত আগন্তুক

‘Peo🍸ple are strange/When you‍‍’re a stranger/Faces look ugly/When you‍‍’re alone’

✱জিম মরিসনের সঙ্গে সিড ব্যারেটে𒁃র কি কখনও দেখা হয়েছিল? ষাটের দশকে এ দুজনের চেয়ে আর কে বা এমন উত্তুঙ্গ সময় কাটিয়েছেন! দুজনের সাইকেডেলিক রক অন্যভাবে ভাবতে শিখিয়েছে মিউজিক প্রেমীদের। দুজনেই ছিলেন মিউজিক্যালি জিনিয়াস, দেখতে সুন্দর ও ক্যারিশমাটিক, তরুণ। দুজনের মেন্টাল হেলথ ইস্যুর ব্যাপারে আজ কে না জানে।

মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় পিংক ফ্লয়েড থেকে ব্যারেট অগোচরে চলে গিয়েছিলেন। পরে চিকিৎসা নেন। মারা যান ৬০ বছর বয়সে, ২০০৬ সালের ৭ জুলাই। তাঁর চেয়ে তিন বছরের বড় মরিসন মারা যান মাত্র ২৭ বছর বয়সে, ১৯৭১ সালের সালের ৩ জুলাই। এখন ক্লাব ‘টুয়েন্꧅টꦉি সেভেনে’র মধ্যমণি হয়ে আছেন তিনি। তাঁকে কবর দেওয়া হয় ৭ জুলাই। খ্যাতির মধ্যগগণে থাকার সময় প্যারিসে শেষ নিশ্বাস ছাড়েন। সেটিই যেন চেয়েছিলেন। মরিসন হয়তো আগে থেকে ইঙ্গিত পেয়েছিলেন, অমরত্ব তাঁকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যান ‘শামান ড্যান্স’ দিতে দিতে।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ রণক্ষেত্র। পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে লড়ছে মুক্তিবাহিনী। সে বছরের কোনো এক এক মেঘলা দিনে নিজের মুক্তি ও শান্তির জন্য মরিসন এসে পৌঁছান প্যারিসে। ‘দ্য ডোরস’ ফ্রন্টম্যান অবশ্য বাধ্য হয়েছিলেন জন্মভূমি যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে। অপরাধ বলতে, মিয়ামিতে এক কনসার্টে অভব্যতার অভিযোগ। যার কারণে দ্য ডোরসের হাতে থাকা সব কনসার্ট বাতিল হয়ে যায়। মরিসন তখন প্যারিসে চলে আসার সিদ্ধান্ত নেন। সে কথা জানান ব্যান্ডমেটদের। ইচ্ছে ইউরোপে কিছুদিন ঘোরাঘুরি। ওই সময় তাঁরা ‘এল.এ. ওম্যান’ গানটির রেকর্ডিং শেষ করেছে। লস অ্যাঞ্জেলসের এক নারীকে নিয়ে লেখা গান। ব্যান্ডমেটরাও মরিসনকে যেতে দিলেন। এক সপ্তাহ ♈পর, প্যারিসের উদ্দেশ্যে রওনা দেন ‘দ্য লেজার্ড কিং’। এই নামেই ভক্ত ও বন্ধুদের কাছে পরিচিত মরিসন। প্যারিসে গার্লফ্রেন্ড পামেলা সুসান কার্সনের সঙ্গে এক ভাড়া করা অ্যাপার্টমেন্টে ওঠেন তিনি। অ্যালকোহল ও হেরোইনের প্রতি আগে থেকে আসক্ত ছিলেন, নতুন শহরে সেটি যেন আরও বেড়ে গেল মরিসনের। সঙ্গে ওজনও। মারা যান হার্ট অ্যাটাকে। তাঁর দীর্ঘদিনের বান্ধবী কার্সনও বেশিদিন বাঁচেননি। মারা যান মাত্র ২৮ বছর বয়সে। তিনিও ছিলেন দ্য ডোরসের গায়িকা। মরিসনের শরীর বাথটাবে ভাসতে দেখেছিলেন তিনি।

প্যারিস শিল্পের শহর। ছবি ও কবিতার দেশ। তবে শার্ল বোদলেয়ার, আর্তুর র‌্যাবোꦆঁদের ভূমিতে নিজের কাব্যܫ প্রতিভা আরও বেশি বিস্তৃত করা হয়নি মরিসনের। তাঁর বিশ্বাস ছিল, প্যারিসেই সেই জায়গা যেখানে শান্তিতে শেষ নিশ্বাসটুকু ত্যাগ করতে পারবেন।

অকালমৃত্যুꦉ হলেও শিল্প-সাহিত্য অঙ্গনের আইꦍকনিক ক্যারেক্টার হয়ে আছেন মরিসন। কবি, গায়ক ও গীতিকার—এমন বিরলপ্রজ প্রতিভার ব্যক্তি অনেক আছেন। লেওনার্দ কোহেন, বব ডিলানও তাঁদের কবিতা ও গানে সুবাসিত করেছেন চারপাশ। তবে মরিসনের মতো আর কারও এমন উত্তুঙ্গ ও প্রভাববিস্তারি জীবন কাটাতে পারেননি।

শিল্পীর জীবন ও শিল্প কোনো আলাদা বিষয় নয়। মরিসন তাঁর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। নিজের ব্যক্তিগত জীবনের মত তাঁর কবিতা ও সংগীত জীবনও ছিল অপ্রথাগত। মঞ্চে তাঁর ব্যারিটোনের সঙ্গে শামান ড্যান্স দর্শকদের দিত সর্বইন্দ্রিয় সুখ। সিড ব্যারেটের সঙ্গে মরিসনের আরেক মিল ছিল, স্টেজ পারফরম্যান্সে। ব্যারেট গাইতে গাইতে হঠাৎ নেশার ঘোরে ঢুকে পড়তেন বেসুরে। ব্যান্ডমেটরা টের পেলেও ব্যাপারটি দর্শকেরা ধরতে পারত না। ধরবে কি করে! তারা যে তখন ব্যারটের গানে বুঁদ! আর মরিসন মাইক্রোফোন হাতে ডলফিনের মত লাফ মেরে পেছনে কোমর বাঁকিয়ে পড়তেন স্টেজে। সঙ্গে ছিল পাগল করে দেওয়া একেকটি গান। যেন তিনিই সেই ঝড়ের পরিচালক, ‘রাইডার্স অন দ্য স্টর্ম’। যিনি প্রেমিকার থেকে ধার চাইছেন বেঁচে থাকার আলো𒁏। অনেক আকুতি নিয়ে বলছেন ‘কামন বেবে লাইট মাই ফায়ার’।

মূলত নিজেকে হনন করে শ্রোতাদের ব্যথা উপশমের কারিগর ছিলেন মরিসন। যেন এই চেতনা থেকেই তাঁর শামান নৃত্য। শামানবাদ মূলত এক প্রকার ধর্ম চর্চা। শামান হলো এমন এক ব🐓্যক্তি যিনি ভালো ও মন্দ আত্মার সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম। বিশেষ করে উত্তর এশিয়া ও উত্তর আমেরিকার লোকজনের কাছে তারা বিশেষ ক্ষমতাধারী হিসেবে পরিচিত। তারা ভবিষ্যদ্বাণী এবং ব্যথা উপশমও করতে পারেন। আমাদের দেশেও এমন ব্যক্তির দেখা পাওয়া যায়। মরিসনও যেন সেই শামান ব্যক্তি। যাঁর প্রভাব রয়েছে ভালো ও মন্দ আত্মার ওপর এবং গানে-নাচে মানুষের অবচেতনে উপশম করেন যত দুঃখ-ব্যথা।

মরিসনের গান অসংখ্য মানুষকে প্রভাবিত করেছে। তবে তাঁকে প্রভাবিত করেছিলেন ফ্রাঙ্ক সিনাত্রা ও এলভিস প্রিসলি। দ্য ডোরসের দ্বিতীয় স্টুডিও অ্যালবাম ‘স্ট্রেঞ্জ ডেজ’ রেকর্ডের সময় অদ্ভুত এক কাণ্ড করেছিলেন মরিসন। তাঁর সবচেয়ে পছন্দের গায়ক ফ্রাঙ্ক সিনাত্রা স্টুডিওতে যে মাইক্রোফোন ব্যবহার করতে🗹ন একেবারে তেমন এক মাইক্রোফোন নিয়ে গান রেকর্ড করেছিলেন।

জিম মরিসন বলত🐲েই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে খাম খেয়ালী রাগী রকস্টারের মুখ। তীক্ষ্ণ চোখ। মরিসন যেন এক অপ্রচলতার গান ও কবিতা। প্রবল আত্মবিশ্বাসে নিজেকে ভেঙে ভেঙে দেখা।

Link copied!