“Men are not afraid of things, but of how they view them.”― Epictetus.
শিল্পী মারিনা আব্রামোভিচকে একবার একটি সাক্ষাৎকারে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, তিনি নারীবাদী কিনা। তিনি সরাসরি উত্তর দিয়েছিলেন- না, তিনি তা নন। তবে তিনি কী? মারিনা আব্রামোভিচকে, ‘পারফর্মিং আর্টের গ্রান্ডমাদার’ বলা হয়। মারিনা খুব সোজাসাপ্টা কথা বলতে পছন্দ করেন। এবং ๊আমরা জানি একজন আপাদমস্তক সৎ মানুষই মুখে ও মনে এক হতে পারেন। মারিনা শুধু কথায় নয়, কাজেও অসম্ভব সৎ এবং সাহসী একজন শিল্পী। মারিনার জন্ম ১৯৪৬ সালের ৩০ নাভেম্বরে ইউরোপের সার্বিয়ার বেলগ♕্রেদে। ৭৩ বছর বয়সী এই শিল্পী আজও তারুণ্যে ভরপুর। সমসাময়িক উত্তর আধুনিক শিল্পকলার জগতে তিনি এখনও কর্মরত রয়েছেন । শিল্পী মারিনার হাত ধরেই পারফমিং আর্ট আজকের অবস্থানে এসেছে। পারফরমিং আর্ট শুধু নয়, তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করেছেন, এমনকি আত্মজীবনীও লিখেছেন, সমগ্র শিল্পকলার ইতিহাসে তাঁর অবদান অপরিসীম।
(বামে) ড্রাগন হেডস, ১৯৯০-১৯৯২। (ডানে) ক্লিনিং দ্য মিরর, ভিডিও ইন্সটলেশন, ১৯৯৫
শিল্পকলার মাধ্যমে শারীরিক সীমাবদ্ধতাগুলো চিহ্নিত করে, মানসিক শক্তি🍸 পরিবর্ধন করবার মাধ্যমে সেই সীমাবদ্ধতাগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে কর্ম উদ্যমী এই শিল্পী ক্রমাগতভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। মৃত্যুঞ্জয়ী হওয়া সম্ভব না হলেও মৃত্যুভয়কে জয় করা সম্ভব। মারিনা তাঁর শিল্পচর্চার মাধ্যমে সেই প্রচেষ্টাই করে যাচ্ღছেন। তিনি মৃত্যুভয়কে জয় করতে চান এবং মৃত্যুকে নির্ভয়ে আলিঙ্গন করতে চান। শুধু তাই নয় তিনি জীবনের বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভয়কে জয় করেছেন, বৃহত্তর ভয়কে জয় করবার উদ্দেশ্যে। যেমন তিনি শৈশবে সাপ ভয় পেতেন, শিল্পী জীবনে তিনি সাপ নিয়ে পারফর্মিং আর্টের মাধ্যমে সেই ভয়কে জয় করেছেন। সাপকে তিনি এখন বন্ধু ভাবেন, ভয় নয়।
সত্যকে সত্যিকারভাবে প্রকাশ করবার সাহসিকতা সব শিল্পীর থাকে না। মারিনা অসম্ভব সাহসী একজন শিল্পী যিনি সততার অস্ত্র দিয়ে ধার করে গেছেন তাঁর সৃষ্টির পেন্সিল। তিনি নিজের শরীরকে তাঁর শিল্পকলা চর্চা এবং প্রদর্শনের পরিসর বা বাহন মনে করেন। শরীরে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রণা সহ্য করে তিনি তাঁর মনকে করেছেন ইস্পাতের মতো শক্ত। তবে এই কঠিন শরীর এবং ইস্পাত হৃদয়ের আড়ালে লুকিয়ে আছে সৃষ্টির নেশায় মত্ত এক শিশু সত্তা। মারিনা এই সুদীর্ঘ পেশাগত জীবনে পারফরমিং আর্টের মতো মানুষ নির্ভর শিল্পকলায়- যেখানে মানুষের সাথে যোগাযোগটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ- আজও পারফরমিংয়ের আগে শিশুর মত ভীত হয়ে পড়েন। কিন্তু তাঁর সৃষ্টি ভয়কে তাড়ানোর যাদুবিদ্যা, ভয় পেলে তো চলবে না। তিনি প্রতিবার সেই ভয় এবং উৎকণ্ঠাকে জয় করে সফল ভাবে পারফর্ম করেন এবং এভাবে তিনি দশকের পর দশক সার্থকভাবে শিল্পচর্চা করে যাচ্ছেন। সর্বংসহা মারিনার সৃষ্টির রহস্যের নেপথ্যে রয়েছে তাঁর দৃঢ় ব্যক্তিত্ব, শিশু সুলভ অনুসন্ধিৎসু মন এবং একাগ্রচিত্তে ধ্যান ও চর্চা।
মারিনার শিল্পকলার শিক্ষার শুরু হয়েছিল শৈশব থেকেই এবং গতানুগতিক ধারায়। মায়ের উৎসাহ, সমর্থন ও সহযোগিতায় তিনি শিল্প শিক্ষা চালিয়ে যান। তবে তাঁর মায়ের ইচ্ছা ছিলো তিনি প্রথাগত শিল্পী হবেন। মারিনা জীবনভর রঙ তুলি নিয়ে ইজেলের সামনে দাড়িয়ে শিল্প নির্মাণ করে যেতে চাননি। চিত্রকলা প্রদর্শনশালা বা সংগ্রহশালার দেয়ালে ঝুলিয়ে দিয়ে দায়িত্ব মুক্ত হতে চাননি। তিনি জীবনে, শিল্পশৈলী ও শিল্পচর্চায় আরো নাটকীয়তা আনতে চেয়েছিলেন। তাই তিনি মায়ের কঠোর শাসন ভেঙ্গে ঘর পালিয়ে, নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন শিল্পকলার জগতে। তিনি প্রথার শিকল ভেঙ্গে নতুনত্বের জন্ম দিয়েছেন। মঞ্চনাটক এবং শিল্পকলার সমন্বয়ে সৃষ্টি করেছেন অসাধারণ শিল্পশাখা– ইংরেজিতে যাকে বলা হয় ‘পারফরমিং আর্ট’। মারিনা শিল্পনৈপুণ্য প্রদর্শন করেছেন পৃথিবীর বিখ্যাত মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের সাথে। মারিনার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তাকে সেলিব্রিটি শিল্পী জেফ কুনের সাথে তুলনা করা গেলেও তাদের দুজনের সৃষ্টি ও দর্শনের মধ্যে রয়েছে বিরাট ব্যবধান।
হোমেজ টু ফ্রিদা কাহলো (বৃশ্চিক সহ প্রতিকৃতি) ২০১৪
মারিনা জন্মগ্রহণ করেছিলেন সচ্ছল পরিবারে। মা বাবা ছিলেন জাতীয় বীর। একমাত্র ছোট ভাই, সংসারে মানুষ কম কিন্তু সম্পর্কগুলো ছিলো খুব শিথিল। মারিনার ব্যক্তিগত জীবন সুখের ছিলো না কখনও। পারিবারিক সুখ-শান্তি থেকে তিনি আজীবন বঞ্চিত। মা অত্যন্ত কঠোর এবং নিয়মতান্ত্রিকতায় আবদ্ধ করে রাখতে চেয়েছিলেন মেয়েকে। কিন্তু মারিনা তো জাত শিল্পী, মুক্তমনা, স্বাধীনচেতা। তিনি পারিবারিক সংস্কার, সমাজের কুসংস্কার সব ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে শিল্পকলাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তিনি বারবার তাঁর হাতিয়ার দিয়ে সমাজের পঁচাগলা প্রথাগুলোকে আঘাত করেছেন। তাঁর মা ক্রমাগতভাবে তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যাচার করে গেছেন। বাবার সাথে বন্ধুসুলভ সম্পর্ক থাকলেও মা-বাবার বিচ্ছেদের কারণে, মারিনার পক্ষে পারিবারিক শান্তি ভোগ করা সম্ভব হয়নি বেশীদিন। তবে পরিবারের প্রতিটি সদস্যের প্রতি তিনি তাঁর কর্তব্য পালন করে গেছেন আজীবন। মারিনা তাঁর মা-বাবার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে ‘বলকান বারোক’ নামে একটি শিল্প সৃষ্টি করেন। যার জন্য তিনি ১৯৯৭ সালে ভেনিস বিয়েনালে ‘গোল্ডেন লায়ন’ পুরষ্কার জিতে নেন।
বলকান বারোক, ১৯৯৭
২০০০ সালে তিনি ইউরোপের গণ্ডি পেরিয়ে নিউ ইয়র্কের শিল্প জগতে পা রাখেন। নিজে ঋদ্ধ হন এবং সমৃদ্ধ করেন বিশ্ব শিল্প জগৎটাকে। এযাবৎকাল মারিনার সব থেকে জনপ্রিয় কাজটি ছিল, নিউইয়র্কের মিউজিয়াম অব মর্ডান আর্টে প্রদর্শিত ‘দি আর্টিস্ট ইজ প্রেজেন্ট’। তিন মাস ধরে, মোট ৭০০ ঘন্টা তিনি একটানা মিউজিয়ামে বসেছেন। হাজার হাজার মানুষ এসে তার সামনে এসে বসেছে। নিয়ম হলো কোনো কথা বলা যাবেনা, শুধু শিল্পীর দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। মানুষ যখন নির্বাক তাকিয়ে থাকে, তখন মানুষের চোখে ফুটে ওঠে মনের সব গোপন কথা। সেই প্রদর্শনী নিয়ে পরবর্তীকালে মারিনা বলেছেন মানুষের মনের গভীরে কত কষ্ট লুকানো আছে তা তিনি এই পারফর্মিংয়ের মাধ্যমে বুঝতে পেরেছেন।
মারিনার প্রথম পারফরমেন্স রিদম ১০, ১৯৭৩
তবে মারিনা তাঁর শিল্প জীবন একা শুরু করেনি, প্রথম স্বামী নেসা তাঁর সহশিল্পী ছিলেন। এবং পরে তাঁর প্রেমিক উলাই’র সাথে কাজ করতেন। ভালোবাসার মানুষটির সাথে তিনি ভ্যানে করে যাযাবরের মতো ঘুরে ঘুরে পারফর্ম করে বেড়িয়েছেন। গভীর ভালোবাসার দিনগুলোতে তাঁরা জীবনকে বুঝতে শিখেছেন শিল্পকলার মাধ্যমে। মারিনা সংসারী হতে চাননি, চাননি শিশুর জন্ম দিয়ে অবহেলা করতে, শিশু ও শিল্পের মধ্যে শিল্পকলাকে বেছে নিয়েছেন। সেই সিদ্ধান্তে উলাই💟 খুশী ছিলো না বলে বিচ্ছেদের বাঁশিটি তিনিই বাজিয়েছিলেন। তবে এই মহান দুই শিল্পী তাদের বিচ্ছেদের মুহুর্তটিকেও একটি শিল্পকর্মে রূপান্তরিত করেন। ১৯৯৮ সালে ‘দ্য লাভার্স’ নামে একটি পারফরমিং আর্ট করেন, তাঁরা চীনের গ্রেট ওয়ালের উপর দিয়ে দুজন দুদিক থেকে হেঁটে এসে এক স্থানে মিলিত হন, চিরতরে বিদায় নেবার জন্য। বিষয়টি যতটা রোমান্টিক ꧂ততটা কষ্টদায়ক। আমরা দেখি দুই প্রেমিকের মাঝে চীনের দেয়ালের মতো অহংকার দাঁড়িয়ে থাকে। তারা আবার দু’জন দু’দিকে হাঁটতে থাকেন এবং তাদের জীবনের পথ বিভক্ত হয়ে যায়। মারিনা চলতে থাকেন শিল্পকলার পথে, উলাই আটপৌরে জীবনের পথে । সম্প্রতি দীর্ঘ ২০ বছর পরে তাদের পুনর্মিলন ঘটে ।
রিদম ০, ১৯৭৪
মারিনার উল্লেখযোগ্য কাজ ‘রিদম ০’(১৯৭৪), সেখানে ৭২টি বস্তু সাজিয়ে রাখা ছিলো। যেমন কাটাসহ গোলাপ ফুল, পিস্তল, ছুরি, কাঁচি, গলার চেইন, ব্লেইড ইত্যাদি। তিনি গ্যালারিতে ৬ ঘন্টা ধরে একা দাঁড়িয়ে ছিলেন। দর্শকরা ইচ্ছা করলে সেই বস্তুগুলো ব্যবহার করতে পারবে এবং তারা করেও ছিল। প্রথমে বলেছিলাম মারিনা নিজেকে নারীবাদী বলে দাবী করেন না। তিনি বলেন, সেদিন গ্যালারিতে উপস্থিত নারীরা তাদের পুরুষ সঙ্গীদের মারিনাকে আঘাত বা অপদস্থ করবার জন্য উস্কে দিচ্ছিল এবং পুরুষ সঙ্গীরাও সেসব নির্দেশ পালন করছিল। মারিনা যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাচ্ছিলেন কিন্তু তাকে সোজা হয়ে দাড়িয়ে থাকতেই হবে। এমনকি একজন তাঁর দিকে তাক করে পিস্তলের ট্রিগারে চাপ দেন তখন বাকিরা সেই ব্যক্তিকে বাধা দেন। মারিনার পারফর্ম করা শেষ হওয়া মাত্রই কোনো মানুষ লজ্জা আর অপরাধবোধে তার চোখের দিকে তাকাতে পারেনি, সবাই দৌঁড়ে পালিয়ে যায়, মারিনা হাঁটা শুরু করলে। সেদিন শিল্পী বুঝে যান, মানুষ সবই করতে পারে। মানুষ সত্যি তার সীমানা ছাড়িয়ে অনেক দূর যেতে পারে যখন মানুষ দলবদ্ধ থাকে এবং যখন তাকে দেয়া হয় ক্ষমতা বা স্বাধীনতা।
দি অনিওন, ভিডিও পারফরমেন্স ১৯৯৬
সব পারফরমিং শিল্পীই শরীর নির্ভর শিল্পকলা সৃষ্টি করেন। কিন্তু মারিনা সেটিকে ভিন্নমাত্রায় নিয়ে যেতে পেরেছেন। নিজেকে একাধারে বেত্রাঘাত করেছেন, জ্বলন্ত স্টারের মধ্যে ঘন্টার পর ঘন্টা শুয়ে থেকেছেন, বরফের মধ্যে নগ্ন হয়ে শুয়ে থেকেছেন, জীবন্ত সাপ পেঁচিয়ে বসে থেকেছেন, পঁচা রক্তমাংসওয়ালা হাড়গোড় পরিষ্কা✃র করেছেন একটানা দিনের পর দিন, নগ্ন হয়ে দেয়ালে ঝুলে থেকেছেন, নিজেকে দেয়ালে আছড়ে ফেলেছেন, ক্রমাগতভাবে অন্যের শরীরে নিজের শরীর বাড়িয়ে দিয়েছেন, ঘন্টা ধরে ไগলা ফাটিয়ে চিৎকার করেছেন, ছুরি দিয়ে নিজেকে জখম করেছেন, একই পারফরমেন্সে বহুবার অর্গাজম করেছেন, নগ্ন হয়ে নৃত্য করেছেন, যৌন আবেদনময়ী সেজেছেন, বীর সেজেছেন, নারী সেজেছেন, নান সেজেছেন, চিকিৎসক সেজেছেন। বহুরূপে আমরা তাকে অবতীর্ণ হতে দেখি শিল্পকর্মগুলোতে। মারিনা বাস্তবে আমাদের দেখিয়ে দেন যে শরীর সীমাবদ্ধ হলেও মানুষের মনের ক্ষমতা অসীম।
মারিনা এবং উলাই, দি আর্টিস্ট ইজ প্রেজেন্ট, মিউজিয়াম অব মর্ডান আর্ট, নিউ ইয়র্ক, ২০১০
একজন শিল্পীর শিল্পের মাধ্যম হতে পারে তাঁর নিজের শরীর, মন ও আত্মা, কে ভাবতে পেরেছিল? কিন্তু একজন শিল্পীর যাপিত জীবনই স্বয়ং একট🦂া শিল্পকর্ম। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চিও সখ করে কারুকার্যখচিত পোশাক পরতে পছন্দ করতেন। রেমব্রাঁ নানা ধরনের নাটকীয় পোশাকে নিজেকে সাজাতেন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতেন, তাঁর চিত্রকলার জন্য। মারিনা তাঁর গোটা জীবনকেই একটি শিল্পকলারূপে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন। আর কোনো শিল্পী এত সার্থকতার সাথে কাজটি করতে পেরেছে বলে জানা নেই। কারণ তিনি শিল্পকলার প্রতি সৎ ছিলেন আজীবন, সে কারণে তিনি মা-বাবা, পরিবার, দেশ, ভালোবাসা, সংসার, ভবিষ্যৎ সন্তান সবকিছু ত্যাগ করেছেন, শুধুমাত্র শিল্পকলাকে আপন করে নিয়েছেন। শিল্পের জন্য এমন উৎসর্গকৃত জীবন সত্যি বিরল।
মারিনা সেই অসম্ভবের নাম, যিনি বহু অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। মারিনা জীবনের সেই অন্ধকার ঘরটি আলোকিত করেছেন, যে ঘরে যেতে আꦆমরা অনেকেই ভীত হবো, অস্বীকৃতি জানাবো। মারিনা আমাদের মনের সেই অন্ধকারতম ঘরে জ্বেলে দিয়েছেন শিল্পের আলো। সেই উজ্জ্বল আলোয় আমরাও উদ্ভাসিত হই। শিল্পকলার প্রতি তিনি আমাদের আস্থা ফিরিয়ে এনেছেন। আমরা মৃত্যু ভয়ে ভীত হইনা, আমরা ভিন্নধর্মী শিল্পকলাকে মৃত্যুর সমতুল্য মনে করি না বরং আমরা বুঝতে পারি মৃত্যু মানেই নতুন জন্ম। মৃত্যু এবং আমাদের মাঝে দেয়ালের মতো যা দাড়িয়ে থাকে তা হলে মৃত্যুভয়। শিল্পী সেই ভয়কে গুড়িয়ে দেবার জন্য আমাদের শক্🐓তি যোগাবেন তাঁর শিল্পকলার মাধ্যমে।
মহাকাব্যের মতো মারিনার জীবনদর্শন ও শিল্পকলাকে এই হাজার খানেক শব্দের গণ্ডিতে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। মারিনার শিল্পকলাকে আমাদের দেখতে হবে মুক্তমন ও নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। মারিনার শিল্পকর্ম আজ পৃথিবীর বিখ্যাত প্রদর্শনশালাগুলোতে এবং সংগ্রহশালাগুলোতে প্রদর্শিত হয় এবং সংগৃহীত রয়েছে। পারফরমিং আর্টের এই গ্রান্ডমাদারকে শিল্প-রসিকরা মনে রাখবেন যুগ যুগ ধরে, শুধু তাঁর সৃষ্টির জন্য নয়, তাঁর সাহসিকতার জন্যও। তিনি শিল্পকলার সাথে আধ্যত্মিকতার যে অপূর্ব সঙ্গম ঘটিয়েছেন, তাতে সৃষ্টি হয়েছে এক নতুন ধারার। তিনি তাঁর সাহসিকতা দিয়ে মৃত্যুভয়কে জয় করবেন, তাঁর সমস্ত বিসর্জন স্মারক স্তম্ভ হয়ে দাড়িয়ে থাকবে চিরকাল।