• ঢাকা
  • রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Songbad Prokash

ইনস্টাগ্রাম

টুইটার


লিংকডইন

পিন্টারেস্ট

গুগল নিউজ


বই আলোচনা

আল ফারাবীর সমাজ ও রাষ্ট্রভাবনা


সাদাত উল্লাহ খান
প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২২, ১২:২৫ পিএম
আল ফারাবীর সমাজ ও রাষ্ট্রভাবনা

মুসলিম চিন্তাজগতের ইতিহাসে একজন বিশিষ্ট মৌলিক ও জ্ঞানশীল চিন্তাবিদ আবু নসর আল ফারাবী (৮৭০-৯৫০ খ্রি.)। সমাজ বিশ্লেষণও রাষ্ট্রচিন্তার ক্ষেত্রে তাঁর মৌলিক অবদান এখনো সমগ্র বিশ্বে মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। তাঁর সমাজ, রাষ্ট্র ও দর্শনভাবনা এই একবিংশ শতকেও মানুষের ভাবনাকে সমানভাবে আকৃষ্ট করে। তাঁর চিন্তার প্রভাব এখনো বিদ্যমান। অধ্যাপক এ কে এম গিয়াসউদ্দিনের গবেষণা তারই প্রমাণ। তিনি আল ফারাবীর চিন্তাজগৎকে নানা দিক থেকে বয়ান করেছেন। তবে তাঁর রাষ্ট্রচিন্তাকে প্রাধান্য প্রদান 🤡করেছেন। 

 

অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আল ফারাবীর সমগ্র জীবন ও কর্মকে দুই ভাগে বিভাজন করে আঠারো পরিচ্ছেদে  খণ্ড খণ্ড করে উপস্থাপন ও বয়ান করেছেন। এমন ধরনের বিভাজন প্রথাগত হলেও শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জন্য বিষয়টা সহজবোধ্য হয়েছে। আলাদা আলাদাভাবে যেকোনো একটা পরিচ্ছেদ পাঠ করে আল ফারাবীর  চিন্তাধারা সম্পর্কে জানা যাবে। আমরা সাধারণভাবে জানতাম মুসলমানদের মধ্যে বড় মাপের সমাজবিজ্ঞানী ছিলেন ইবনে খালদুন (১৩৩২-১৪০৬)। তবে অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন তাঁর গবেষণায় সফলভাবে দেখিয়েছেন ইবনে খালদুনেরও অনেক আগে আল ফারাবী সমাজবিজ্ঞান প্রবর্তন করেছেন। তিনি ‘ইলম আল সিয়াসত’🎶 বা মানবিক বিদ্যার পরিক্রমায় ‘আল উমরানিয়াত’ বা একটি সমাজতত্ত্ব বিজ্ঞানের উদ্ভাবন করেন। অতঃপর মানবসমাজের গঠন প্রক্রিয়ায় মানুষের পরস্পর সহযোগিতার ভূমিকা ও গুরুত্ব নির্ণয় করতে গিয়ে তিনি প্রথমে একটি নতুন দর্শনের সূত্রপাত করেন, যাকে আল-ফারাবীর সমবায় দর্শন বা পরস্পর সহযোগিতার দর্শন নামে অভিহিত ൩করা যায়। এই সমবায় দর্শনের ফলাফল হিসেবে তিনি নতুন সমাজতত্ত্ব বিদ্যার গোড়াপত্তন করতে সমর্থ হন (পৃ. ১৩)। আল ফারাবী গ্রিক দর্শন দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত ও অনুপ্রাণিত ছিলেন।ফলে তিনি সারা জীবন ধরে প্লেটো ও এরিস্টটলকে মনেপ্রাণে লালন করেছেন। অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন জানান আল ফারাবীর আমলে আরবি ভাষায় প্লেটোর ‘রিপাবলিক’ ও এরিস্টটলের ‘পলিটিক্স’ অনুবাদ হয়েছিল এবং জানা যায় সেই সময়ে আরবের জ্ঞান জগতে যথেষ্ট সমাদৃত ও জনপ্রিয় হয়েছিল। এই সূত্রে আমরা জানতে পারি আরব জগতে সেই সময়ে দর্শনচর্চার ইতিহাস ও ঐতিহ্য ছিল।

 

অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন গভীর মনোনিবেশের সঙ্গে আল ফারাবীর চিন্তাধারার গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণের চেষ্টা করেছেন। তাই তিনি আল ফারাবীর সমাজভাবনাও রাষꦡ্ট্রচিন্তার একটা রূপরেখা তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। আল ফারাবী জানতেন সমাজ দ্রুত পরিবর্তনশীল। কাল মুহুর্তের জন্যও থেমে নেই।  সভ্যতা জন্মাচ্ছে, সভ্যতা বিলুপ্ত হচ্ছে। দেশে দেশে কালে কালে নতুন সংস্কৃতি জন্ম নিচ্ছে, রূপান্তরিত হচ্ছে বা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এই&nඣbsp; পরিবর্তন রাষ্ট্রসমূহকে নিয়ে যাবে বিশ্বরাষ্ট্রের গন্তব্যে (পৃ. ১৭)।

মহান একজন চিন্তাবিদ হিসেবে আল ফারাবীর প্রভাবও খ্যাতি আরবজগতের বাইরেও বিস্তার লাভ করেছে। বিশিষ্ট চিন্তাবিಌদ ইবনে সিনা (৯৮০-১০৩৭) এবং ইবনে রুশদ (১১২৬-১১৫৮) আ💦ল ফারাবীর অনুসারী ছিলেন। মুসলিম পণ্ডিতদের আরেকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ইবনে খল্লি খান (১২১১-১২৮২) বলেছেন আল ফারাবী হলেন মুসলমানদের সর্বশ্রেষ্ঠ দার্শনিক। অনেক মুসলমান সমালোচক আল ফারাবীর উচ্চপ্রশংসা করে তাঁকে চিরায়ত গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর সমমর্যাদার চিন্তাবিদ হিসেবে বিবেচনা করেন। 

ইতিহাসের আলোকে দেখা যায় মুসলমানরা নতুন চিন্তাকে সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। নতুন চিন্তা ও চিন্তাবিদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার ও তীব্র সমালোচনার তীর নিক্ষেপ করে। এরই ধারাবাহিকতায় আল কিন্দি 🐭(৮০১-৮৭৩) ও আল রাজির (৮৬৪-৯৩৫) ন্যায় আল ফারাবীও ধর্মবিরোধী হিসেবে সমসাময়িক প্রতিক্রিয়াশীল মুসলমানদের দ্বারা সমালোচনার শিকার হয়েছেন। বিশেষত ইমাম গাজ্জালি (১০৫৮-১১১১) জোরালোভাবে আল ফারাবীর প্রতি সমালোচনা🍰র তুফান চালান। অথচ সমগ্র ইউরোপে আল ফারাবীর প্রভাব প্রসার লাভ করে। ইউরোপীয় দর্শনের কেন্দ্রে আল ফারাবীর অবস্থান সুদৃঢ় হয়েছে। আরব দেশে মুসলমান পণ্ডিতদের এটাই বড় সমস্যা—নতুন চিন্তা ও চিন্তাবিদকে সহজে হজম করতে অপারগ।

 

যে যত সমালোচনাই করুক না কেন, আল ফারাবী একজন মৌলিক চিন্তাবিদ। তাঁর সমাজ ও রাষ্ট্🎀রচিন্তায় প্লেটোর প্রভাব যতই গভীর হোক—শেষ বিচারে দেখা যায়—ইসলাম ধর্মের প্রভাবই সর্বাধিক। অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন তাঁর গবেষণার শেষ পর্যায়ে ফারাবীর  চিন্তা সম্পর্কে এই কথাই সুস্পষ্টভাবে বলেছেন। তিনি শুধু আল ফারাবীর মতবাদ, সমাজভাবনা ও রাষ্ট্রচিন্তা নিয়ে কথা বলেছেন তাই নয়, অধিকন্তু আল ফারাবীর বিস্তর পড়াশোনা নিয়েও মন্তব্য করেছেন। তাঁর মতে আল ফারাবী ছিলেন সামষ্টিক সুখের প্রচারক ও পক্ষপাতী। তাঁর চিন্তার সারকথা হলো একটাই—জনগণের সুখ। 

 

গৌতম বুদ্ধ (আনুমানিক খ্রি.পূ. ৫৬৩-৪৮৩) বলেছেন : জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক। অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন অনেক দার্শনিক ও চিন্তাবি💦দের সঙ্গে আল ফারাবীর চিন্তাভাবনার আলোচনা—সমালোচনা-তুলনামূলক আলোচনা ও প্রভাব নিয়ে কথা বলেছেন। তবে যদি তিনি আল ফারাবীর মানসজগৎ ও ভাবনার ক্ষেত্রে গৌতম বুদ্ধের প্রভাব আছে কিনা আলোচনা করতেন—তাঁর গবেষণা অধিকতর সমৃদ্ধ ও পূর্ণাঙ্গ রূপঅর্জন করত। বাংলাদেশে প্রকাশনার ক্ষেত্রে বিদ্যমান যে সমস্যা—তা এই বইয়ের ক্ষেত্রেও দৃশ্যমান। এই হলো আমাদের প্রকাশনাশিল্পের অদক্ষতার নির্দশন। তারপরও আমরা অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিনের গবেষণাকে সাধুবাদ জানাই। 

 

 

আলোচিত বই: আল ফারাবীর রাষ্ট্রচিন্তা: এক বিশ্ব এক দেশ, এ. কে. এম. গিয়াসউদ্দিন, খান ব্রাদার্স অ্যান্ড কোম্পানি, বাংলাবাজার, ঢাকা, ২০২০, প্রচ্ছদ: উত্তম সেন, মূল্য : ৩০০  টাকা।

Link copied!