• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Songbad Prokash

ইনস্টাগ্রাম

টুইটার


লিংকডইন

পিন্টারেস্ট

গুগল নিউজ


রবির বনলতা ও পোর হেলেন নিয়ে ‘বনলতা সেন’


উপল বড়ুয়া
প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৩, ১২:২০ পিএম
রবির বনলতা ও পোর হেলেন নিয়ে ‘বনলতা সেন’
কলকাতার কবিদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে ইংরেজি সাহিত্যর প্রতি টান ও জ্ঞান ছিল লক্ষণীয়

নাম নিয়ে কাব্য করা, বিশেষ করে নারী নামে—সুপ্রাচীন বিষয়। মহাকবি আলাওল তো মহাকাব্যই রচনা করে ফেলেছিলেন ‘পদ্মাবতী’ নামে। মহাকাব্যের কথা বাদ দিলে এ ক্ষেত্রে এডগার অ্যালান পোর ‘অ্যানাবেল লি (Annabel Lee) ও টু হেলেন (To Helen) শিরোনামের কবিতা দুটি শুধু উনিশ শতকের তরুণদের নয়, বুড়ো হাড়েও প্রেমের স্পন্দন ছড়িয়ে দিত। ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষার্থী পরে শিক্ষক হওয়ায় জীবনানন্দ দাশ নিশ্চিতভাবে অ্যালান পোর এই অমর দুই প্রেমের কবিতা পাঠ করে থাকবেন। ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর বাঙালি কবি-সাহিত্যিকদের কাছে মার্কিন কবি অ্যালান পো ও দুই বৃহত্তর ব্রিটেনের ডব্লু বি ইয়েটস এবং টি এস এলিয়ট বহুল চর্চিত-চর্বিত ছিলেন, সেসব কে না জানে! কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেও পাশ্চাত্য সংগীত-সাহিত্য সাধনায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। তাঁর আগে মাইকেল মধুসূদন দত্ত তো একেবারে খাঁটি ইংরেজ সাহেবই হতে চাইলেন। গায়ের রং বাঙালি হওয়ায় এত প্রতিভা নিয়েও সুবিধা করতে পারেননি। তাঁদের উত্তরসূরি, বিশেষ করে পাশ্চাত্যজ্ঞানে ঋদ্ধ কবি হিসেবে পঞ্চপাণ্ডব—সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বুদ্ধদেব বসু, বিষ্ণু দে, অমিয় চক্রবর্তী, জীবনানন্দ দাশের নাম নেওয়া যায়। সমর সেনও বা বাদ যাবেন কেন! বিশেষ করে কলকাতার কবিদের মধ্য✨ে স্বাভাবিকভাবে ইংরেজি সাহিত্যর প্রতি টান ও জ্ঞান ছিল লক্ষণীয়।

এদের সবারই অ্যালান পোর ‘কালো বিড়াল’ পড়ার পাশাপাশি তার কবিতার সঙ্গেও কমবেশি পরিচয় ছিল নিঃসন্দেহে। রবি ঠাকুর ‘অ্যানাবেল লি’ মাথায় রেখে ‘ক্ষণিকা’ কাব্যগ্রন্থের ‘একই গাঁয়ে’ কবিতাটি লিখেছেন দাবি গবেষক-বিশেষজ্ঞদের। আর ꦯ‘টু হেলেন’ পাঠে প্রভাবিত হয়ে জীবনানন্দ দাস ‘বনলতা সেন’ লিখেছেন, সেটিও এখন কমবেশি সবার জানা। যেকোনো মহৎ শিল্প মহৎ শিল্পীকে প্রভাবিত করে, যুগ যুগ ধরে সেটিই হয়ে আসছে।

জীবনানন্দও হেলেনের প্রেমে পড়ে বনলতাকে নায়িকা বানিয়েছিলেন। মহাত্মা আলী আকবর খান অবশ্য ‘চাবিকাঠির খোঁজে: নতুন আলোকে জীবনানন্দের ‘বনলতা সেন’ গ্রন্থে আরেকটি নতুন তথ্য দিয়েছিলেন। বনলতা সেন নাম্নী আদতে কেউ ছিলেন না জীবনানন্দ দাশের জীবনে। কবি তার মাসতুতো কি পিসতুতো বোনের প্রেমে পড়েছিলেন, তাকে উপজীব্য করে ‘বনলতা সেন’ লেখা। তার কাছে দু’দণ্ড শান্তি চেয়েছিলেন বলেই হয়তো হাজার বছর ধরে হাঁটারও অক্লান্ত মানসিকতা ছিল কবির। আকবর আলী খানের বইটি আপাতত হাতের নাগালে না থাকায় এবং ব🍷হু আগে পড়ার কারণে এর অত্যধিক তথ্য উপস্থাপন করা গেল না।

তবে ‘বনলতা সেন’ কবিতাটি নিয়ে নতুন এক তথ্য হাজির করা যেতে পারে এ ক্ষেত্রে। রবি ঠাকুরের বিখ্যাত ‘গীতাঞ্জলি’ প্রকাশিত হয় ১৯১০ সালে, শান্তিনিকেতন থেকে। পরবর্তীকালে ১৯১৩ সালে নোবেল পাওয়ার সুবাদে কাব্যগ্রন্থটি পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা ন💧িশ্চিতভাবে বেড়ে যায়। এবং যুবক বয়সে জীবনানন্দও সেটি পাঠ করে থাকবেন। আর সেখানেই তিনি পান ‘বনলতা’ নামটি, ভাবও কি নয়!

গীতাঞ্জলির ৭১ নম্বর কবিতার শেষ চার পঙক্তি এখানে পাঠ💦কদের উদ্দেশ্যে তুলে দিচ্ছি—‘তখন আমার পাখীর বাসায়/জাগবে কি গান তোমার ভাষায়। তোমার তানে ফোটাবে ফুল/আমার বনলতা?’ রচনাকাল হিসেবে চিহ্নিত—১৮ জ্যৈষ্ঠ, ১৩১৭, তিনধরিয়া।

রবি ঠাকুরের এই কবিতা পুরোপুরি প্রেমের। অ্যালান পোর ‘হেলেন’ও একই ভ🍰াবের উদ্রেক করে। সমীকরণ মেলানোর মতো না হলেও কিঞ্চিৎ সন্দেহের চোখে বলায় যায়, রবি ঠাকুরের এই বনলতা আর অ্যালান পোর হেলেন মিলিয়ে জীবনানন্দের বনলতা সেন। তবে এ প্রশ্ন আসাও স্বাভাবিক, রবির গীতিধর্মী কবিতার অনুগামী না হয়ে জীবনানন্দ কেন গীতাঞ্জলি থেকে ধার করতে যাবেন? এই যুক্তি থকে দু’পা সরে আরেকটু চিন্তা করলে দেখা যায়, নজরুল ইসলামের সমবয়সী হলেও জীবনানন্দের শুরুর দিকের রচনার প্যাটার্ন ছিল একটু ভিন্ন; প্রায় নজরুল মতো। অবশ্য বিপ্লবীপনা খুব বেশি নেই তাতে। প্রাথমিক অবস্থায় কবিচিত্ত যে কোনো মহৎ শিল্প ধারা প্রভাবিত হতে পারে। সেক্ষেত্রে ওই সময়ের সবচেয়ে আলোচিত কবি ও গ্রন্থটি পাঠে প্রভাবিত হবেন না, এমনটা ভাবায় বিস্ময়ের।

তবে রবি ঠাকুরের প্রভাব কিঞ্চিতও যদি অন্য চার♈ পাণ্ডবের ওপরে থাকেও, জীবনানন্দের কবিতায় অবস্থাটা মোটামুটি শূন্য। কিন্তু বিপত্তি ওই ‘বনলতা’ নামটি। সেই নাম যেন আজও লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির ‘মোনালিসা’র রহস্যময় হাসি হেসে যাচ্ছে কোটি বাঙালির চোখের সামনে। এই হাসি অমীমাংসিত এখনো, বনলতা নামটিও নয় কি? তবে ‘বনলতা’র মতো অমন প্রভাববিস্তারি আর কটি নামই বা আছে? শ্যামল মিত্র থেকে আইয়ুব বাচ্চুর গানে উঠে আসা ‘বনলতা’ নামটির বয়স বেড়েছে কিন্তু বুড়িয়ে যায়নি, সেটির প্রমাণ তো পাওয়াই গেল।  

সাহিত্য-সংস্কৃতি বিভাগের আরো খবর

Link copied!