জীবনে চলার পথে সঙ্গীর প্রয়োজন। ব্যক্তিগত জীবনে রয়েছে প্রিয়জনরা। আর পেশাগত জীবনে সহকর্মীরা সঙ্গীর মতোই পথ চলে। প্রতিদিন সকালে অফিসে যাচ্ছেন, কিংবা ব্যবসার কাজে যেতে হচ্ছে। বাড়ি ফিরতে প্রায় রাতই হয়ে যায়। ২৪ ঘণ্টার প্রায় অর্ধেকটার বেশী সময় কাজের ব্যস্ততাতেই কেটে যাচ্ছে। সেই ব্যস্ততার মাঝে কিছুটা মানসিক প্রশান্তি পেতে যারা সঙ্গ দেন তারা হচ্ছেন সহকর্মীরা। যাদের সঙ্গে কাজ করছেন প্রতিনিয়ত। একসময় সহকর্মীরাও প্রিয়জন হয়ে উঠে। তবে কিছুক্ষেত্রে এর বিপরীতও হয়। কারণ সবার মানসিকতা এক নয়। সহকরꦬ্মীদের মধ্যেও একেকজন একেক স্বভাবের হতে পারে। তাই সহকর্মীদের সঙ্গে যেকোনো কথা বলা, সবকিছু শেয়ার করার ক্ষেত্রে একটু সতর্ক থাকাই শ্রেয়।
বয়স বাড়ছে। কোথায়, কোন বিষয় কীভাবে ব্যালেন🌊্স করতে হবে তাও নিশ্চয়ই আয়ত্ত করে নিয়েছেন। তবে সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্কটা কেমন ব꧋া কতটুকু ব্যালেন্সে থাকবে তা নিয়ে হয়তো হিমশিম খেতে হয় এখনও। চলুন এই বিষয়ে কিছুটা ধারণা নেওয়া যাক।
- মন উজাড় করে সহকর্মীদের সঙ্গে মিশবেন। কিন্তু মন উজাড় করে সব বলে দেওয়ার আগে সতর্ক হোন। নিজের ব্যক্তিগত বিষয়গুলো সহকর্মীর সঙ্গে শেয়ার না করাই ভালো। এতে আপনার দুর্বলতা সহজেই জেনে যাবে আপনার সহকর্মী। আর কোনো পরিস্থিতিতে সেই দুর্বলতার সুযোগও নিতে পারেন তিনি। তাই মন উজার করে সহকর্মীকে সব না বলাই হয়তো পেশাগত উন্নতির জন্য় ভালো হবে।
- অফিসের কোনো বিষয়ে নিজের মত থাকতেই পারে। যা নেতিবাচক বা ইতিবাচক দুভাবেই হতে পারে। নিজের মত সহকর্মীর সঙ্গে আলোচনা করবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আপনার নেতিবাচক মতামতকে সহকর্মী অপব্যবহার করতে পারেন। হয়তো কর্তপক্ষের কাছে আপনার নেতিবাচক মতামত জানিয়ে দিবেন। যা আপনার ক্যারিয়ারের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
- সহকর্মীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকবে এটা স্বাভাবিক। প্রতিযোগিতার দৌড়ে অন্যকে পিছিয়ে ফেলার সুযোগ হয়তো অনেকেই নষ্ট করবেন না। বিশেষ করে পারিশ্রমিক বা বেতন –বোনাস ও সুবিধাদি বেশি পেতে অনেকেই লোভনীয় হয়ে থাকে। তাই নিজের বেতন নিয়ে কিংবা অন্য সহকর্মীদের বেতন বা সুবিধার বিষয়ে চর্চা না করাই ভালো। ব্যক্তিপর্যায়ে এমন আলোচনা অনেক সময় ঈর্ষা তৈরি করতে পারে।
- অফিসে বা যেকোনো কর্মক্ষেত্রে আলোচনা ও সমালোচা এড়িয়ে যাবেন। কোনো গুজব শুনলে তা নিয়ে কথা বাড়াবেন না। সহকর্মীদের কাছে সেই বিষয়ে মন্তব্য করবেন না। কারণ কোনো বিষয়ে প্রমাণ ছাড়া মন্তব্য করা ঠিক নয়। শোনা কথায় মন্তব্য করলে বিষয়টি আরও বেড়ে যাবে। যা অফিসে বিশৃঙ্খলার পরিবেশ তৈরি করবে।
- অফিসের কাজের আলাপ হতে পারে। তবে রাজনীতি, ধর্মের মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আলোচনায় না জড়ানোই ভালো। সহকর্মীর সঙ্গে আপনার মতে মিল নাও হতে পারে। তাই আলোচনা থেকে সংঘাত বাধতে সময় লাগবে না। নিজের যুক্তিকে সঠিক আর অন্যের যুক্তিকে ভুল প্রমাণ করতে যাবেন না। এসব বিতর্ক সহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্কও তিক্ত করে তোলে।
- সহকর্মীর সঙ্গে চায়ের আড্ডায় নিশ্চয়ই পরিবারের বিষয়গুলোও শেয়ার করেন। একে অপরের পরিবার সম্পর্কে জানা খারাপ নয়। এতে সহকর্মীর সঙ্গে আন্তরিকতাও বাড়ে। তবে সব সম্পর্কে একটু ব্যালেন্স প্রয়োজন। সহকর্মীকে নিজের পরিবারের ভালো দিকগুলো জানাতে পারেন। তবে পারিবারিক জটিলতা, সহধর্মীনির কোনো অপছন্দীয় আচরণ বা কাজের কথা সহকর্মীকে না বলাই ভালো। এসব বিষয়ে আলোচনা এড়িয়ে যান। নয়তো পরবর্তীতে এসব কথাই আপনার ব্যক্তিগত সম্মানকে আঘাত করতে পারে।
- সহকর্মীদের সঙ্গে নিজের অতীত নিয়েও কথা না বলাই উত্তম। কারণ আপনার অতীত অভিজ্ঞতা থেকে আপনি শিখেছেন। কিন্তু আপনার সহকর্মী সেই কথা শুনে হয়তো আপনাকে মূল্যায়ন করবে। কখনও সুযোগ হলে হয়তো সেই অতীতের কথা প্রকাশ করে আপনার সম্মানকে ছোট করতে পারে। তাই একান্ত বিষয়গুলো নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখুন।
- কর্মক্ষেত্রে মতবিরোধ হতেই পারে। তবে এক সহকর্মীর নামে অন্য সহকর্মীর কাছে নেতিবাচক মন্তব্য করবেন না। কারও নামে আড়ালে নেতিবাচক মন্তব্য করলে তা আরও বেশি নেতিবাচক হয়ে ওই ব্যক্তির কাছে উপস্থাপন হতে পারে। এতে আপনার কাজের পরিবেশ নষ্ট হবে। তাই কারো সমালোচনা না করে খারাপ লাগার বিষয়টি সরাসরি কথা বলে মিটিয়ে নিন।
- নিজের স্বাস্থ্যের জটিলতা নিয়েও আলোচনায় সাবধান থাকুন। সহকর্মী নিজের অভিজ্ঞতা আপনাকে জানাতে পারে। সেই অভিজ্ঞতা নেতিবাচক হলে আপনি মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
- অফিসে কারো পোশাক, চলাফেরা নিয়েও বেফাঁস মন্তব্য না করাই ভালো। বেফাঁস মন্তব্য আপনার উদ্দেশ্যকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করবে। তাই সম্পর্ক যতই ভালো হোক সহকর্মীর প্রশংসা বা দুবর্লতার কথা সহনীয়ভাবেই প্রকাশ করুন। এতে আপনার সহকর্মীও বিব্রত হবেন না।