বাংলাদেশের বাঙালিকে বইয়ের সঙ্গে মিতালি পাতিয়ে দেওয়ার কৃতিত্ব একজন কাজী আনোয়ার হোসেনের। সেবার পাঠ♚কদের কাছে ‘কাজী দা’ নামে অধিক পরিচিত। তাকে অভিহিত করা যায় ‘পেপারব্যাক সম্রাট’ হিসেবেও। সর্বজনের বই কিনতে অনীহা তার কারণে দূর সম্ভব হয়েছে।
সেবা প্রকাশনী না থাকলে জুলভার্ন, মার্ক টোয়েন, হেমিংওয়ে, অগথা ক্রিস্টি, জর্জ অরওয়েল আর মারিও পুজো অত ছোটবেলায়🔜 কীভাবে পেতাম? অন্য অনুবাদ তো কঠিন লাগত। আর দামও সাধ্যের বাইরে।
বুনো পশ্চিমকে প্রথম চেনানোর দাবিদার সেবা প্রকাশনীর ওয়েস্টার্ন। ইরফান জেসাফ, ফ্যাঙ্ক শ্যাননকে যতই তখন রেড ইন্ডিয়ান মারা বী🤪র মনে হোক, তা আসলে ছিল সাদা চামড়ার মানুষদ🏅ের একটি মহাদেশ দখলের বৃত্তান্ত। টারজানের বেলায়ও একই কথা।
সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী দা গত বছর এক মাঘের বিকেলে (১৯ জানুয়ারি) পাড়ি জমিয়েছেন অনন্ত ভুবনে। যার অবদানে সীমাহীন আর্থিক ও সাংস্কৃতিক দারিদ্রের দেশের লোক পেপারব্যাক বই কিনে পড়তে পেরেছে। বাজার অর্থনীতিতে বই একটি পণ্য সেটি তিনি প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। প্রকাশনা বাণিজ্য একটি সফল পেশা এই সত্য গ্রাহ্য করেছেন তিনি। এ দেশে প্রজন্মের পর প্রজন্ম অজস্র লেখক, চিত্রকর, ছবি পরিচালক ও চিন্তক তিনি তৈরি করেছেন। ব্যবসা, ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং, শিক্ষকতা, কনসালটেন্সিসহ বꦏড় ডিগ্রিধারীদের অনেক পেশার মতো লেখালেখিও একটি পেশা এ সত্যকে প্রতিষ্ঠার জনক তিনি। জনপ্রিয় সংস্কৃতিকে যারা পাত্তা দেন না তাদের উত্তর দিয়েছেন চুপ থেকে কাজের মাধ্যমে।
এই চুপ থাকা, আড়ালে থাকা কাজী আনোয়ার হোসেনের জীবন কীর্তির অন্যতম এক বৈশিষ্ট। ঢাকঢ🏅োল পিটানো, পুরস্কারবাজি, সেলফি ও তুমুল আত্মপ্রচারের যুগে কাজীদা ছিলেন ভিন্ন। ৮৫ বছরের জীবন পাওয়া মানুষটি ছিলেন কাজে ধ্যানী।
‘ধ্বংস পাহাড়’ স্রষ্টাকে আমরা একজন ভাষা সৈনিক মনে করি। বর্ণমালাকে তিনি পৌঁছে দিয়েছেন ভূমিহীনের ঘরে, আমার ঘরে, তোমার ঘরে, তোর ঘরে, আপনার ঘরে। বাংলা ভাষায় বৃষ্টির তৃষ্ণা ছিল। তখন কাজী আনোয়ার হোসেন বিদ্যুৎ মিত্র হয়ে বিনা বজ্রপাতে কাঙ্ক্ষিত বর্ষা ঝরিয়েছেন জনপদে। এককভাবে কুয়াশা ভেদ করেছেন তিনি তার ভেতরের তীব্র আলো দিয়ে। প্রখ্যাত বিজ্ঞানী, গণিতবিদ ও সাহিত্যিক কাজী মোতাহার হোসেনের পুত্র হয়ে তিনি দেখিয়েছেন অসামান্য উদ্ভাবনী মস্তিস্কের ক্ষমতা। বড়লোকদের দামি বুক সেলফ থেকে বইকে 🔯তিনি নিয়ে গেছেন সর্বজনের ফুটপাতে। হয়েছেন সবার হৃদয়ের কাজী দা।
কাজী দা এখন শায়িত বনানী কবরস্থানে। মা সাজেদা খাতুনের কোলে চিরঘুমের ইচ্ছে ছিল তার। কিন্তু আমাদের কেন জানি মনে হয় কাজী দা ঘুমে নেই, বরং জেগে আছেন অতন্দ্র। তিনি এখনো ভাবছেন বাংলার আগামী গণমুখꦫী শিল্প সাহিত্য নিয়ে। আর আমরা তো জানি, ঘুম নেই মানে হলো জেগে থাকা।