• ঢাকা
  • রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Songbad Prokash

ইনস্টাগ্রাম

টুইটার


লিংকডইন

পিন্টারেস্ট

গুগল নিউজ


উপনিবেশবিরোধী লড়াকু লুমুম্বার জন্মদিন


হাসান শাওন
প্রকাশিত: জুলাই ২, ২০২৩, ১০:১১ এএম
উপনিবেশবিরোধী লড়াকু লুমুম্বার জন্মদিন

১৯২৫ সালের আজকের দিন ২ জুলাই কঙ্গোতে জন্মেছিলেন আফ্রিকা কাঁপানো বিপ্লবী প্যাট্রিশ লুমুম্বা। ঔপনিবেশিকতার শেকল ভাঙতেই যার আবির্ভাব। মাত্র 🐎৩৫ বছরের জীবন ছিল তার। সে জীবনজুড়ে সক্রিয় ছিলেন সর্বোচ্চ। বিদেশি পরাশক্তির মদদে সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন। পরে ফায়ারিং স্কোয়াডে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ক্ষমতার লোকেরা লুমুম্বার মৃতদেহ নিয়ে পর্যন্ত আতঙ্কে ছিল। টুকরো টুকরো করে এর অংশ পুতে ফেলে মাটিতে। আফ্রিকার কালো মানুষের লড়াইয়ের ইতিহাস অপূর্ণ এই মহানকে ছাড়া।

১৮৮৫ সাল থেকে কঙ্গো ছিল বেলজিয়ামের কলোনি। সে দেশ দখলে আমাদের ভারতবর্ষের 𒊎মতো ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি লাগেনি। বেলজিয়ামের তৎকালীন রাজা দ্বিতীয় লিওপোল্ড হস্তগত করেন দেশটি। আফ্রিকাজুড়ে তখন ইউরোপীয়দের দখল, শোষণ, লণ্ঠন বিরামহীন। ঔপনিবেশিক শক্তি কঙ্গোর নামই পাল্টে দেয়। কঙ্গোর নামকরণ করা হয় ‘বেলজিয়ান কঙ্গো’।

পরাধীন কঙ্গোর কাস🔯াই প্রদেশের ওনালুয়া গ্রামের এক কৃষক পরিবারে প্যাট্রিশ এমেরি লুমুম্বার জন্ম। পারিবারিকভাবে তারা ছিলেন বাতেতেলা নৃগোষ্ঠীভুক্ত। বাবা চাইতেন লুমুম্বা শিক্ষক হন ভবিষ্যতে। মিশনারি স্কুলে পাঠানো হয় তাকে। সেখানেও অত্যাচার চলত শিশুদের ওপর। পড়াশোনায় প্রবল ঝোঁক ছিল লুমুম্বার। মিশনারি স্কুলের শিক্ষকরা একটু যেন সদয় হন তার প্রতি। তারা তাকে বই পড়তে দিতেন। শিশু লুমুম্বার পরিবারে রাতে আলো জ্বালবার মতো তেল কেনার সামর্থ ছিল না। তিনি চেষ্টা করতেন দিনের ম𒐪ধ্যে বই পড়ে ফেরত দিতে।

১৮ বছর বয়সেই পড়া শেষ করতে বাধ্য হন প্যাট্রিশ লুমুম্বা। তিনি চাকরি নেন কিনশাসার ডাক বিভাগে কেরানি হিসেবে। পরে স্ট্যানলেভিলের পোস্ট অফিসে হিসাবরক্ষক হন। তার সঙ্গে তখন যোগাযﷺোগ ঘটতে থাকে রূপান্তরকামী রাজনীতিবিদ ও তরুণ বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মীদের। ১৯৪৭ সালে তিনি শ্রমিক ইউনিয়নে যুক্ত হন। ৫০-এর দশকের শুরুতে তিনি ঔপনিবেশিকতা বিরোধী পত্রিকায় কাজ শুরু করেন। লিখতে থাকেন কালো মানুষদের জাগিয়ে তোলার কবিতা, নিবদ্ধ।

১৯৫৫ সালে বেলজিয়ামের রাজা বদোয়াঁ কঙ্গো সফর করেন। অনেক বিপত্তি পেরিয়ে রাজার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন লুমুম্বা। জন্মভূমির ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি কিছু প্রশ্ন তোলেন রাজার সামনে। এই ঘটনায় লুমুম্বা জাতীয়ভাবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। কিন্তু খড়গে পড়েন ঔপনিবেশিক শাসকের। ডাক বিভাগের টাকা চুরির মিথ্যা অভিযোগ꧑ে তিনি ১১ মাস জেল খাটেন।

জেল থেকে বের হয়ে হতাশায় দমে যাননি লুমুম্বা। তখন কঙ্গোতে গড়ে উঠছে বেশ কিছু রাজনৈতিক শক্তি। ত💃িনি তাদের সঙ✨্গে যোগাযোগ শুরু করেন। ১৯৫৮ সালের অক্টোবরে প্যাট্রিশ লুমুম্বার নেতৃত্বে গঠিত হয় ন্যাশনাল কঙ্গোলিজ মুভমেন্ট (এমএনসি)। ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে সরাসরি স্বাধীনতার ডাক দেন তিনি।

প্যাট্রিশ লুমুম্বার ডাকে পুরো পরাধীন জনপদ যেন জেগে ওঠে। ১৯৫৮ সালের ডিসেম্বরে ঘানায় অনুষ্ঠিত প্যান-প্যাসিফিক পিপলস কনফারেন্সে যোগ দেন তিনি। সেখানে শুধু কঙ্গো নয়, পুরো আফ্রিকা মহাদে꧟শকে ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তির ডাক দেন লুমুম্বা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ উত্তর পরিস্থিতিতে ঔপনিবেশিক শক্তিও তখন হাত আলগা করে। ১৯৬০ সালে মে মাসে কঙ্গোর জাতীয় নির্বাচনে ১৩৭ আসনের সংসদে লুমুম্বার এমএনসি ৩৩টি আসন পায়। কঙ্গোর আরেক জাতীয়তাবাদী নেতা জোসেফ কাসাভুবুর আবাকো দল পায় ১৩টি আসন। সে পরিস্থিতিতে লুমুম্বা কাসাভুবুকে প্রেসিডেন্ট পদ দিয়ে নিজে দায়িত্ব নেন কঙ্গোর প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। দেশটির মুক্তিসংগ্রামের এই ধারাবাহিকতায় জুনে স্বাধীন হয় কঙ্গো। কিন্তু যুগে যুগে কালে কালে সব দেশে প্রতিবিপ্লবী ও স্বাধীনতার প্রতিপক্ষ শক্তি থাকে। বিদেশি পরাশক্তির মদদে কঙ্গোজুড়ে চলে অরাজকতা। প্রধানমন্ত্রী হলেও লুমুম্বার অনুগত ছিল না সেনাবাহিনী। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কঙ্গোতে ‘কমিউনিজম ভূত’ দেখতে থাকে।  

১৯৬০ সালের সেপ্টেম্বরে সেনা অভ্যুত্থানে লুমুম্বা ও কাসাভুবুকে পদচ্যুত করা হয়। ডিসেম্🦹বরে গ্ꦯরেপ্তার হন প্যাট্রিশ লুমুম্বা। ১৯৬১ সালের জানুয়ারি মাসের ১৭ তারিখ বন্দী অবস্থায় ফায়ারিং স্কোয়াডে হত্যা করা হয় কঙ্গোর স্বাধীনতার এই স্থপতিকে।  

কিন্তু ইতিহাস থেকে তাকে নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব নয়। লুমুম্বা ফুল ফুটবার ডাক দিয়ে ফি෴রে ফিরে আস𓂃েন তার লেখা এই কবিতা মতোন—

মন্দ, নিষ্ঠুর সময় কখনোই আসবে না আবার ফিরে। 
নিঃখরচায় উৎসাহী কঙ্গোর কালো মাটি থেকে উত্থিত হবে, 
একটি মুক্ত এবং দুর্দান্ত সাহসী কঙ্গো—কালো মাটি থেকে কালো পুষ্প!

Link copied!