আজ ৭☂ জুন। ১৯৫৬ সালের এই দিনে ঢাকায় জন্ম হয় বরেণ্য শিল্পী লাকী আখান্দের। তিনি ছিলেন বহু গানের সুরকার। তার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত স্মৃতিও অনেক। তার জন্মদিনে এর কিছু উল্লেখ করতে চাই পাঠকদের জন্য।
অনেকে অনেকভাবে তার গান ব্যবহার করে গেছেন। সেসব গান থেকে আয় হয়েছে তুমুল। কিন্তু ব্যক্তি লাকী আ💯খান্দ আমৃত্যু ছিলেন দারিদ্র্যের মধ্যে। তিনি যখন কপিরাইট সম্পর্কে জানলেন, এসব গান থেকে এত এত টাকা পাওয়ার কথা তার, তখন আমাকে বললেন, “তাহলে, এগুলো কপিরাইট করো। গান গোছাও। সব রেডি করো।”
সব রেডি করা হলো। এবার আমরা রওনা দেব কপিরাইট অফিসে। এ সময় একদিন বললেন, “এক কাজ করো। কপিরাইট অফিসে দিয়ো না। ওখানে তো লোকজন নানা ধরনের। এটা-সেটা করবে। দেরি করাবে। তা ছাড়া কনটেন্ট প্রোভাইডার, প্রোডাকশন ও মোবাইল কোম্পানিগুলো তো সবাই ওদের ধরে ফেলেছে। আমরা বরং এদের কাছে না গ♐িয়ে তারানা হালিমের (তৎকালীন মন্ত্রী) কাছে যাই। তাকে অনুরোধ করব যেন তিনি নিজে এগুলোর বিষয়ে দেখেন। আমাদের কপিরাইটগুলো করিয়ে এনে দেন। অনেকগুলো তো আর ফিরেই পাব না। রেডিওতে আমার সুর করা প্রায় কয়েক হাজার গান আছে, সেগুলো তো আর পাব না। তোমরা যে লিস্ট করেছ, সেগুলো নিয়ে মুভ করো। অন্তত আমার উত্তরসূরিরা যেন টাকাটা পায়, সেই ব্যবস্থা করো। আমি তখন তাকে বললাম, “আপনি থাকবেন না কিন্তু আপনার গানগুলো থেকে আপনার পরিবার প্রতি মাসে রয়্যালটির টাকা পাবে।” তখন তার মধ্যে একটা ভরসা তৈরি হলো। বললেন, “আচ্ছা আমি অসুস্থ আজ প্রায় দুই বছর অথচ কোথাও থেকে কোনো ইনকাম নেই আমার।”
লাকী ভাইয়ের বাসাভাড়া ছাড়া আর কোনো আয় ছিল না তখন। তখন মানুষের সাহায্য-সহযোগিতায় তার চꦗিকিৎসা চলছে।
এ সময় আমরা আর একটা কাজ করেছিলাম✨ যে কাজের কারণে বাচ্চাদের নিয়ে টেনশন দূর হয় তার। ‘শিল্পীর পাশে ফাউন্ডেশন’ তাকে ৪০ লাখ টাকা দেয়। টাকাটা আমরা ফিক্সড ডিপোজিট করে দিলাম দুই বাচ্চার নামে। ফিক্সডཧ ডিপোজিটের কাগজটা দেখে আবেগে কেঁদে ফেলেছিলেন লাকী ভাই। তিনি বলেছিলেন, “এখন আমার দুই বাচ্চার বিয়েশাদি-পড়াশোনা নিয়ে কোনো টেনশন নেই আর। ওরা ওদের মতো করে নিতে পারবে।” তারও আগে, আরও এক দফায় দশ-দশ মিলিয়ে ২০ লাখ টাকা ওদের নামে ফিক্সড ডিপোজিট করে দিয়েছিলাম আমরা।
বিএসএমএমইউর সেন্টার ফর প্যালিয়েটিভ কেয়ারের অধ্যাপক নিজামউদ্দীন আহমেদ স্যারের প্রথম কথাই ছিল, ক্যানসারে আক্রান্ত শিল্পীকে মানসিক স্বস্তি দেওয়া খুব জরুরি, যাতে করে পরিবারের ভরণ-পোষণ নিয়ে আর টেনশন করতে না হয়। ওনার যেসব সম্পত্তি ছিল তা আমরা উত্তরসূরিদের নামে হেবা দলিলের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সেখানেও তিনি কোনো ভেদাভেদ করেননি। দুই ছেলেমেয়েকে সমানভাগে হেবা করে দিয়ে গেছেন। এ ছাড়া প্যালিয়েটিভ কেয়ারে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় শেষ গানের সুর করেছেন, যা প্যালিয়েটিভ কেয়ারের প্রতি ভালোবাসার🏅 উপহার হিসেবে দিয়ে গেছেন।
লাকী ভাইয়ের সব গুছিয়ে রাখা গানগুলো নিয়ে তার সঙ্গে কপিরাইট-সংক্রান্ত কাজে তারানা হালিমের কাছে আর যাওয়া হয়নি। তারানা হালিম তখন সিঙ্গাপুর ছিলেন। এই কপিরাইট না করতে পারাটা ছিল তার আরেকটা কষ্ট। তার প্রকাশিত এবং অপ্রকাশিত অনেক গান। অনেক গানের রয়্যালটি অন্য কেউ পায়, তিনিဣ পান না।
কপিরাইটের সঙ্গে আরে💧কটি বিষয়, কে তার কোন গানটি করবেন তার ফয়সালা। উনি বলতেন, এটা রুনাকে দিয়ে, 𒅌এটা সাবিনাকে দিয়ে, এটা সুবীরকে দিয়ে, কিংবা এটা সামিনাকে দিয়ে গাওয়াবো। যার গলায় যেটি যায়। অথচ আমরা অনেকেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছি না। বারবার তিনি একটি কথা বলতেন, “আমার গান গাও। কিন্তু গানটাকে নষ্ট করো না। গানের কথা আর সুরের বিচ্যুতি করো না। গানগুলো যেন ঠিকঠাক মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে। যখন আমি থাকব না তখন কেউ আমার গান করতে চাইলে আগে থেকে যেন আমার পরিবারের অনুমতি নিয়ে নেয়। বেসুরো উপস্থাপনায় গানগুলোর অমর্যাদা করা হয়। সেগুলো যেন কেউ না করে।”
লাকী ভাই ব🔴লতেন, “তুমি যদি কঠিন গান তুলতে না পারো ত��বে গাওয়ার দরকার নাই। সহজ গানটাই করো।”
শেষ সময়ে পাহাড়ে গিয়ে থাকতে চেয়েছিলেন🐠 লাকী🀅 ভাই। থাইল্যান্ডের ডাক্তারই মূলত তাকে বলেছিলেন পাহাড়ের বিশুদ্ধ হাওয়া নিতে। বন্ধুবর রাজা দেবাশীষকে তিনি বলেছিলেন পাহাড়ে গিয়ে থাকার ইচ্ছার কথা। একটা পাহাড় কেনারও শখ ছিল তার। সেখানে প্রকৃতির মাঝে বসে গান করবেন কাছের মানুষগুলোকে নিয়ে, এই ছিল তার বাসনা।
কিন্তু সে ইচ্ছে পূরণ হয়নি। ২০১৭ সালের ২১ এপ্রিল আমরা লাকী আখান্দকে চিরতরে হারাই। যে শিল্পীর জন্ম দিবসে ২০১৯ সালে গুগল নতুন ডুডল প্রকাশ করেছিল। এমন বিশ্বমানের সংগীত ব্যক্তিত্ব ছিলেন এই মানুষটি। জন্মদিন൩ে তার প্রতি অপার শ্রদ্ধা।