ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে খুশি। একটি মাস সিয়াম সাধনার পরই মুসলিম জাতির জীবনে খুশির দিন আসে। তা হলো ঈদুল ফিতর। আর এই দিনকে ঘিরে বিশ্বের সব মুসলিম আনন্দ-উল্লাস ও উৎসবে দিনযাপন করেন। ধনী-দরিদ্রের বিভেদ ভুলে একই ছায়াতলে 🧜আসার একটি দিন ঈদুল ফিতর। সামর্থ্যবান লোকেরা সদকায়ে ফিতরা ও যাকাতের মাধ্যমে ধনী ও দরিদ্রের হক আদায় করেন। এর মাধ্যমে সম্প্রীতি ও ভাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি হয় মানুষের মধ্যে। ঈদের এই খুশিতে আপ্লুত হয় সমাজ।
প্রত্যেক মানুষ উৎসবকে পছন্দ করেন, ভালোবাসেন। আর সেই উৎসব যদি হয় সম্প্রীতি সৃষ্টির হাতিয়ার তবে তা মোটেই অগ্রহণযোগ্য নয়। ঈদ মুসলিম জাতির জীবনে আনন্দের জোয়ার বয়ে আনে। কিন্তু এই ঈদও কারো কারো জীবনে দুঃখ-কষ্টের। যাদের প্রিয়জন কাছে নেই বা যাদের প্রিয়জন তাদের ছেড়ে পরলোকে গমন করেছেন। আরও একশ্রেণির জন্য এই ঈদ সবসময় খুশি বয়ে আনে না। তারা হলেন এ সমাজের দরিদ্র ও অসহায় মানুষ। যারা ঈদে একটু খুশির জন্যও তার মা🦂লিক শ্রেণির ওপর নির্ভরশীল।
ঈদুল ফিতরকে ঘিরে অনেকেই কেনাকাটায় ব্যাপক মনোযোগ দিয়েছেন। কিন্তু কয়জনই বা তার বাড়ির পাশের অনাহারী, অর্ধভোজী, দরিদ্র-ছিন্নমূল শ্রেণির ওপর নজর দিয়েছেন। ঈদ সম্প্রীতির-ভাতৃত্বের আনন্দের। তবু এই ঈদে যারা প্রান্তিক চালচুলোহীন, তাদের দুঃখ কাটে না। একটি দিনকে ঘিরে ধনিক শ্রেণি তাদের মুখে হাসি ফোটাতে পা♉রেন। ঈদের খুশিকে ভাগাভাগি করে নিতে পারেন। গার্মেন্টস মালিক তার শ্রমিকদের বেতন-ভাতা-বকেয়া পরিশোধ করে দিতে পারেন। সঙ্গে ঈদের একটি দিনে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থাও করতে পারেন। এতে ভালোবাসা-মমত্ব ও সম্প্রতির বন্ধন গড়ে উঠবে বলেই আশা করি।
বৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে। তবে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ৬০ শতাংশ কারখানার শ্রমিকেরা গত মার্চ মাসের বেতনই পাননি। ঈদের উৎসব ভাতা বা বোনাস পাননি ১৪ শতাংশ কারখানার শ্রমিক। ফলে ঈদের আনন্দ সম্প্রীতি👍 ও বন্ধনের-ভাতৃত্ব সৃষ্টি হলেও ঘাটতি থেকে যাচ্ছে সঠিক দায়িত্ব পালনের। ধনিক শ্রেণির পরিবার যেখানে ঈদ উদযাপনে লাখ লাখ টাকা খরচ করছেন, তখন একজন গার্মেন্টস শ্রমিক বা মজুরি ভিত্তিক শ্রমিক একটু টুকরো মাংস খেতে পারছেন না। সন্তানকে নতুন পোশাক দিতে পারছেন না। ঈদ সম্প্রীতির ও আনন্দের এ কথা কে না জানে। কিন্তু সম্প্রীতি ও আনন্দের কাজটা আমাদেরই করতে হবে। ধনী ও দরিদ্রের মাঝের দেওয়াল ভেঙে তাদের জীবনকে একটু সুখময় করে তুলতে একটি দিনই কি যথেষ্ট নয়।
ঈদের দিন তাই সম্প্রীতি-বন্ধনের ও ভালোবাসার। গার্মেন্টস শ্রমিকের যেমন সেই ভালোবাসার প্রয়োজন, একজন চাকরিজীবীরও প্রয়োজন। পারস্পরিক সহমর্মিতা ছাড়া যা সম্ভবপর নয়। ঈদকে ঘিরে বাড়ির গৃহকর্মীর সঙ্গে সম্প্রীতি ও বন্ধন গড়ে উঠুক। মনে রাখতে হবে, সেও মানুষ। একজন রক্ত-মাংসের মানুষ। হোক সে দরিদ্র। স্রষ্টা পৃথিবীতে সবাইকে সমান সুযোগ-সুবিধা দিয়ে পাঠান না ঠিকই, কিন্তু তিনꦆি ধনীর মধ্যেই গরিবের হককে রেখেছেন। সে অনুযায়ী যাকাত প্রদান করতে হবে। ঈদকে ঘিরে গৃহকর্মে যিনি সবসময় সাহায্য করেন, সেই মানুষটাকে এক🐎টু খুশি রাখতে ঈদে বেতন-বোনাস, ঈদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী উপহার মিলিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে।
প্রবীণরা যখন তাদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করেন তখন তারা নির্দ্বিধায় বলেন, আগের দিনগুলোই ভালো ছিল। যা এখন আর নেই। গ্রাম বা শহরে পূর্বে একে-অপরের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে দেখা গেলেও এখন ঘটে না। আগে একে-অপরের বাড়িতে একটি উৎসব, একটি ঈদকে কেন্দ্র করে যাওয়া-আসার 🌸যে প্রচলন ছিল, তা কালের ধুলোয় হারিয়ে যাচ্ছে। যা আসলে আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মৃত্যু। কিন্তু এই অপমৃত্যুকে রুখতে হবে। ঈদ উদযাপনের। আর এই উদযাপন হবে সম্প্রীতি গড়ে ওঠার। মোটেও তা খণ্ডবিখণ্ড করার জন্য নয়। একে-অপরের সঙ্গে সময় কাটানো, ঈদের ছুটিতে শুভেচ্ছা বিনিময়, আত্মীয়দের সঙ্গে ঈদ সামগ্রী উপহার সবমিলিয়ে ঈদের দিন হোক আনন্দের।
শিশু-কিশোর-তরুণ-তরুণীদের ঈদও যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন। বছরের দুটি ঈদে শিশুরা অত্যন্ত আনন্দ পায়। বিশেষ করে নতুন পোশাক পরিধানে তাদের যে অপার আনন্দ তা, সবকিছু ছাপিয়ে যায়। এখন শিশুরা ঈদের মাঠে যাওয়া, আত্মীয়দের সঙ্গে একসঙ্গে নামাজে যাওয়া, ঈদ থেকে ফিরে একসঙ্গে পাত পেড়ে খাওয়ার মতো মজাগুলো হারিয়েছে বলাই চলে। কিন্তু ঈদ মানেই তো আনন্দ, খুশি। সম্প্রীতির বৃদ্ধির একটি দি🍒ন। ভাতৃত্ব গড়ে তোলার দিন। ফলে এই দিনকে ঘিরে যে রীতি বা প্রথা ছিল তার সঙ্গে আরও নতুন কᩚᩚᩚᩚᩚᩚᩚᩚᩚ𒀱ᩚᩚᩚরে সম্পৃক্ত হওয় জরুরি। ঈদে সবার সঙ্গে নতুনভাবে নিজেদের পরিসর বৃদ্ধি করুক আমাদের শিশু-কিশোরেরা। ভালোবাসা-আনন্দ-সম্প্রীতির বন্ধনে নিজেদের আবদ্ধ করুক তারা।
ঈদ আনন্দের তবে প্রবীণদের জন্য ঈদটা কতোটা আনন🥃্দের তা নির্ভর করে পরিবারের সদস্যদের ওপর। তাই ঈদকে আনন্দমুখর করতে প্রবীণদের আবেগের গুরুত্ব দিতে হবে। ভালোবাসা বন্ধনে আবদ্ꦓধ করতে হবে।
শুধু পরিবারই নয় ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগি করতে অসহায়-দরিদ্রের প্রতিও নজর♏ দিতে হবে। আনন্দ যাতে তাদের হাতেও ধরা দেয় সেলক্ষ্যে তাদের পাওয়া তাদের দিতে হবে। সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তির ওপরই দায়িত্ব রয়েছে। সে দায়িত্ব সঠিক𒐪ভাবে বুঝে অন্যের জন্য কাজ করতে হবে।
এ সম📖াজে একজন লাখ টাকার চাদরে ঘুমিয়ে দিন গুজরান করেন। আরেকজন একমুঠো ভা💛তও খেতে পারে না। ঈদের উদযাপনটা হোক এই মানুষগুলোর জন্য। যারা ছিন্নমূল, সেসব মানুষের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে হবে। সুবিধা বঞ্চিত শিশুর জীবনে অনেক অভাব-দুঃখ-কষ্ট। কিন্তু একটি দিনকে ঘিরে তাদের জীবনে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়া খুব একটা কঠিন নয়। সম্প্রীতিটা গড়ে উঠুক একেবারে সমাজের প্রান্তিক স্তর থেকে, একদম পরিবার পর্যায় পর্যন্ত। ঈদের আনন্দ হোক গৃহকর্মে নিপুণা মা-স্ত্রীর জন্য যেমন, ঠিক তেমনই দরিদ্র-দুঃখী পরিবারের জন্যও।
লেখক: গবেষক ও শিক্ষক নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়