দীর্ঘদিন ধরে সূচকের বড় ধরনের পতন, লেনদেন কম হওয়াসহ নানা কারণে দেশের প্রধান দুই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমতে শুরু করেছে। বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়াতে পুঁজিবাজা💝র ‘চাঙ্গা’ করার জন্য বিভিন্ন সময়ে নানা উদ্যোগও নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে সেসব উদ্যোগের বিপরীতে যেসব 𓂃সুফল মিলেছে তা বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কতটা বাড়িয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সূচকের অব্যাহত দরপতনে𝓀 বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির মুখে পড়ে ধীরে ধীরে তারা পুঁজিবাজার থেকে নিজেদের সরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে নতুন আরও পরিকল্পনা নিয়ে ‘ইতিবাচক’ বার্তা দিয়ে 🐽বিনিয়োগকারীদের ফিরিয়ে আনার প্রত্যাশা সবারই।
পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত এক যুগেরও বেশি সময় ꦿধরে দেশের পুঁজিবাজারে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বহু বিনিয়োগকারী পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। তাদের জাগিয়ে তোলার সঙ্গে পুঁজিবাজারে ফিরিয়ে আনাই বড় চ্যালেঞ্জ।
বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “দুর্বল কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজার🌠ে আসছে বহুদিন ধরে। এতে মার্কেটের কোয়ালিটি অনেক ডাউন হয়েছে। আর এতে যারা বিনিয়োগ করছেন তারা ক্ষতির মুখে পড়ছেন।”
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গেল সপ্তাহ সূচকের বড় ধরনের🅷 উত্থান-পতনে শেষ হয় লেনদেন। এতে সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন বাড়ে এক হাজার ২৩৫ কোটি টাকা। অথচ চলতি সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে ডিএসইতে লেনদেন হয় ৬৬৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকার শেജয়ার। তার আগের দিনে লেনদেন ছিল ৯৬৮ কোটি ২ লাখ টাকার শেয়ার। একদিনের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ৩০৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
অন্যদিকে, দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) চলতি সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১৪ কোটি ৭১ লাখ টাকার শেয়ার। এর আগের কার্যদিবসে লেনদেন ছিল ১০৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার শেয়ার। অর্থাৎ একদিনের ব🍒্যবধানে লেনদেন কমেছে ৯৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব ও ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে শেয়ার ধারণসংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) এক তথ্যে দেখা যায়, গত তিন বছরের ব্যবধানে দেশের শেয়ারবাজারে নারী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমেছে ২ ল🐈াখ ৫৫ হাজার ৪০৮ বা ৩৭ দশমিক ১৭ শতাংশ।
মাঝেমধেই দেশের পুঁজিবাজারে সূচকের ঊর্ধ্বগতি প্রবণতায় আশার আলো দেখা গেলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। দু-একদিন ๊স্থায়ী হলেও পরবর্তীতে পতনের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় কার্যদিবস। সূচকের পাশাপাশি কমে লেনদেনও। যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে। কেউ কেউ পুঁজিবাজার থেকে নিজেকে গুটিয়ে♔ নেওয়ার কথা ভাবেন, কেউ আবার আশায় আশায় শেয়ার কিনে সূচকের পতনে বিনিয়োগ হারিয়ে হতাশা আর বিষণ্নতায় ঘরে ফেরেন।
অব্যাহত দরপতন স্থায়ী হলেও একদিন পুঁজিবাজারের সূচকের ঊর্ধ্বগতি প্রবণতা বাড়বে এমন আশায় বুক বেঁধেছেন মো. ইব্রাহিম নামের এক বিনিয়োগকারী। মাঝেমধ্যে পুঁজিবাজার তার কাছে ইতিবাচক সাড়া দিলেও কখনই স্থায়ী হয় না। বড় কোম্পানির শেয়ার ছাড়া ছোট কোম্পানির শেয়ার লাভজন🐻ক ন♔য় বলে মন্তব্য তার।
মো. ইব্রাহিম সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “বাজারে এখন ছোট কোম্পানিগুলোর দাপট কম। বড় কোম্পানিগুলো মাঝেমধ্যে আশার আলো দেখালে পরবর্তীতে সেটি আবার মুখ থুবড়ে পড়ে। ভালো মানের কোম্পানি বাজারে না আসায় বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে আগ্রহ কমেছে। বর্তমান বাজারের জন্য ভালো আইপিও অবশ্যই অপরিহার্য। ভালো আইপিও আসা মানে নতুন নত♋ুন বিনিয়োগকারী বাজারে আসা।”
ইব্রাহিম আরও বলেন, “মার্কেট♌ে ভালো আইপিও এলে যে শুধু লোকাল বিনিয়োগ আসে তা নয়। পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরও আগ্রহ বাড়ে। ভালো আইপিও বলতে আমরা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর কথা বলছি। এখনো অনেক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি ক্যাপিটাল মার্কেটের বাইরে আছে। এদের যদি ক্যাপিটাল মার্কেটে যুক্ত করা যায় তাহলে লোকাল বিনিয়োগকারীর পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরও আগ্রহ বাড়বে।”
শুধু ইব্রাহিম শেখ একাই নন, তার মতো আরও অনেক বি꧒নিয়োগকারী পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর একসঙ্গে 𒁏দাপট দেখার অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। তাদেরই একজন আসলাম শেখ। আসলাম বলেন, “একটা সময় পুঁজিবাজার গরম ছিলো। সেই সময়টা আবার নতুন করে দেখতে চাই। কবে যে পুঁজিবাজার গরম হবে, বিনিয়োগকারীরা স্বস্তিতে বিনিয়োগ হারানোর ভয় ছাড়া বিনিয়োগ করবে।”
আসলাম শেখ আরও বলেন, “বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ হারানোর পেছনে অনেক কোম্পানি দায়ী। যারা বিনিয়োগকারীদের মুনাফার টাকা মেরে খায়। আবার অনেক কোম্পানি টাকা নিয়ে দেশ ত্যাগ করে। তাদের 𓆉বিরুদ্ধে সরকার যদি কঠোর হতো বিদেশে পাচারকৃত টাকা ফেরত এনে বিনিয়োগকারীদের হাতে তুলে দিতো তাহলে বিনিয়োগকারীদের আস্থার জায়গা অটল থাকতো। তবে সেসব কাজ কয়টা হয়েছে আমার জানা নেই। এখানে সমন্বিত সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। যার দায়ভার কেউই এড়াতে পারেন না।”
এদিকে, ক্রান্তিকাল পেরিয়ে সামনের𒊎 দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে ডিএসই। এক বৈঠকে এমন মন্তব্য করেছেন ডিএসই’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু। তিনি বলেন, “সেজন্য বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মিলে একটি পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। তার অংশ হিসেবেই বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ❀ সংরক্ষিত করে যে কোনো পলিসি তৈরি করতে হবে। বহুজাতিক কোম্পানি, ভালো ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি, তৈরি পোশাক খাতের গ্রিন ফ্যাক্টরি কোম্পানিগুলো ও ইন্সুরেন্সসহ অনেক ভালো ভালো কোম্পানিকে বাজারে আনার সুযোগ রয়েছে। এজন্য একটি ‘রিসার্চ সেল’ তৈরি করে কাজ করতে হবে।”