• ঢাকা
  • শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Songbad Prokash

ইনস্টাগ্রাম

টুইটার


লিংকডইন

পিন্টারেস্ট

গুগল নিউজ


কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিভক্তি, কোন পথে উদীচী?


বিশেষ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২৪, ০৫:৩৭ পিএম
কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিভক্তি, কোন পথে উদীচী?

দেশের প্রাচীন সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর অভ্যন্তরে বিভাজন দেখা দিয়েছে। এতদিন তা গোপন থাকলেও ক্রমে তা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মূল্যায়ন, গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ ইস্যꩲুকে কেন্দ্র করে উদীচীর মধ্যে বিভক্তি প্রবল আকার ধারণ করেছে।

উদীচীর কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও একুশে পদকপ্রাপ্ত গণসংগীতশিল্পী মাহমুদ সেলিমের সাম্প্রতিক এক𓄧টি𒈔 ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নানা প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। এর মধ্য দিয়ে উদীচীর অভ্যন্তরীণ বিরোধের বিষয়টি প্রকাশ্য হয়েছে বলেই মনে করছেন অনেকে।

সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিভিন্ন সংগঠক ও উদীচীর একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জুলাই-আগস্টে আওয়ামী সরকারের ছাত্র-গণহত্যার পক্ষে-বিপক্ষে দুটি গ্রুপ সক্রিয়ꦇ হয়ে ওঠে সংগঠনের ভেতর। একপক্ষ জুলাই ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী সরকারের দমন-পীড়নের পক্ষে অবস্থান নেয়, অপর পক্ষ ছাত্রহত্যার প্রতিবাদে পূর্ণ সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে মাঠে থাকার জন্য চাপ দিয়ে গেছে কেন্দ্রীয় কমিটিকে। একপক্ষ আওয়ামী প্রেস নোটের নিরিখে আন্দোলনকে পর্যবেক্ষণে রাখে, অপর পক্ষ প্রথম দিন থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নেয় এবং ছাত্র-গণহত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজনে ভূমিকা রাখে। ফলে শেখ হাসিনার পতনের ‘এক দফা’ আন্দোলনের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে উদীচীর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মধ্যে বিভক্তি চরমে ওঠে।

জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শেষ দিকে গণহত্যার প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের পতনের প্রশ্নে উদীচীর কেন্দ্রীয় নেতারা ছিলেন দোদুল্যমান। যদিও আন্দোলনে থাকা অংশটি দীর্ঘদিন ধরেই শেখ হাস🗹িনা ও আওয়ামী লীগের পতন দাবি করে আসছিল। সে লক্ষ্যে সাংস্কৃতিক সংগ্রাম পরিচালনার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। এ অংশটি উদীচীতে বরাবরই কোণঠাসা বলে জানিয়েছে একাধ✃িক সূত্র।

এদিকে গত ২৪ সেপ্টেম্বর মাহমুদ সেলিম, গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া অংশটিকে মুখোশ পরে থাকা জামায়াত-শিবির বলে ইঙ্গিতপূর্ণ একটি স্ট্যাটাস দেন। তিন🌞ি তার ফেসবুক স্ট্যটাসে লেখেন “জামাত শিবির মুখোশ পরে ঘাপটি মেরে আছে রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক সব সংগঠনে। এদের ঝেঁটিয়ে বের করো।” এরপর তার স্ট্যাটাসে বিভিন্নজন উদীচীর মধ্যে ‘ঘাপটি মেরে থাকা জামায়াত-শিবিরের’ এজেন্টদের চিহ্নিত করার দাবি তোলেন। লেখক ও গল্পকার কুলদা রায় সেখানে কমেন্ট করেন, “উদীচীতে অন্তত তিনজন জামায়াতি এজেন্ট আছে। এদের নেতা জামসেদ আনোয়ার তপন।”

উদীচীর সাবেক স🔯াধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপনের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ তোলার পর কমেন্টে মাহমুদ সেলিম কোনো প্রত্যুত্তর করেননি। তবে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।

এ প্রসঙ্গে মাহমুদ সেলিম সংবাদ প্রকাশকে বলেন, তার স্ট্যাটাসটি উদীচী♎র সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। আর এই স্ট্যাটাসের কমেন্টগুলোর দায় ত🅷ার নয়, সংশ্লিষ্টদের।

এ বিষয়ে অ্যাক্টিভিস্ট বাকি বিল্লাহ বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকারের পুলিশ বন্দুক হাতে যে কাজটি করত, মাহমুদ সেলিমের মতো লোকেরা🎃 হারমোনিয়াম হাতে সেটি করতেন।”

গণ-অভ্যুত্থানে জামসেদ আনোয়ার তপনের ভূমিকা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বাকী বিল্লা🔯হ বলেন, “ফ্যাসিস্টের তল্পিবাহক না হয়ে উদীচী যেন গণমানুষের কথা বলে, তার জন্য উদীচীর ভেতরে যেসব সৃষ্টিশীল তরুণ সংগ্রাম করছেন, জামসেদ আনোয়ার তপন তাদের নেতা। তাই তিনি আওয়ামীভাবাপন্ন ক♏ালচারাল অ্যাক্টিভিস্টদের টার্গেটে পরিণত হয়েছেন।”

সূত্র জানিয়েছে, ছাত্র-জনতা হত্যার প্রতিবাদে কারফিউ ভেঙে সংস্কৃতিকর্মীদের সমাবেশ, গানের মিছিল এবং ২ আগস্ট দ্রোহযাত্রার মতো আয়োজনের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তপন🅺ের নেতৃত্বে উদীচীর অংশটি। অপর অংশটি ছিল দোদুল্যমান। আন্দোলনের পুরো সময়ে তাদের অংশের কাউকে মাঠে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন সাংস্কৃতিক সংগঠকদের অনেকে।

গত ৬ সেপ্টেম্বর নাট্যাভিনেতা ও তীরন্দাজ রেপার্টরি নাট্যদলের প্রধান দীপক সুমন একটি ফেসবুকে স্ট্যাটাসে জানান, গত ২৬ জুলাই প্রতিবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ কারফিউর মধ্যে যে সাংস্কৃতিক সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছিল উদীচী সে কর্মসূচি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। সাংগঠনিকভাবে উদীচী নিজেদের প্রত্যাহার করলেও আন্দোলনে থাকা উদীচীর নেতাকর্মীরা ওই সমাবেশ আয়োজনে ভূমিকা রাখেন এবং অংশগ্রহণ করেন। এরপর ২৯ জুলাই বিকেল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে উদীচী নিজেই একটি প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশের ডাক দেয়। কিন্তু ওই দিন শেষ মুহূর্তে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে উদীচীর কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সে সমাবেশ স্থগিত করে। ওই দিনও আন্দোলনে থাকা উদীচীর অংশটি ফেস্টুন প্ল্যাকার্ড নিয়ে উদীচী কার্যালয়ের সামনে ছাত্রহত্যা ও কারফিউর প্রতিবাদে গান ও 🍸কবিতা পরিবেশনের মধ্য দিয়ে প্রতিবাদ করে।

এদিকে ছাত্র-জনতার আন্দোলন নিয়ে দোদুল্যমান🌠 অবস্থানের কারণে সমালোচনার মুখে পড়ছে উদীচীর কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সেই সঙ্গে ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারেﷺর পতনের পর গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া উদীচীর অংশটিকে জামায়াত-শিবির তকমা দিয়ে সংগঠনে কোণঠাসা করার অভিযোগ তুলেছেন উদীচীর সক্রিয় একাধিক কর্মী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উদীচীর সক্রিয় এক কর্মী জানান, অর্ধশতকের বেশি সময় সংগঠনটিকে ব্যবহার করে একটা গোষ্ঠী আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বয়ান উৎপাদন করে গেছে। তারা গোটা উ﷽দীচীকে জাতীয়তাবাদী ঘরানার মধ্যে আটকে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক স্বার্থে উদ্ধার করে গেছে। কিন্তু আজ যখন উদীচীর নতুন যুগের কর্মীরা তাদের অভিসন্ধি বুঝতে পারছে এবং উদীচীর মধ্যে দীর্ঘদিনের জটবদ্ধতা চিহ্নিত করছে তখন তাদের জামায়াত-শিবির ট্যাগ দিয়ে ঝেঁটিয়ে বিদায় করার কর্মসূচি নিচ্ছে আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী অংশটি।

এ বিষয়ে শিল্পীগোষ্ঠীটর সহসভাপতি জামশেদ আনোয়ার তপন বলেন, “যে কোনো সংগঠনে মতবিরোধ থাকতে পারে। এটা হচ্ছে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর তা অনুসরণ ও বাস্তবায়ন করা সবার দায়িত্ব। উদীচী শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে অনেকদিন ধরে লড়াই করেছে। অনেকগুলো সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনকে একত্রিত করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ নিপীড়নমূলক আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংঘটিত করেছি। আন্দোলনকারীদের জামাত-শিবির ট্যাগ লাগান﷽ো ছিল আওয়ামী লীগের অস্ত্র। আমাদের বিরুদ্ধেও এই অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে। বিএনপি-জামাত/মার্কিন এক্টিভিস্টিং ইত্যাদি ট্যাগ দেওয়া হয়েছে। যারা এগুলো করেছে তারা আন্দোলনের বিরুদ্ধ শক্তি, ফ্যাসিবাদের সহযোগী। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পুরো সময়টাতে আন্তরিকভাবে আমরা ছিলাম। সাংস্কৃতিক প্ল্যাটফর্মের সংগঠক হিসেবে আমরা নেতৃত্ব দিয়েছি। ২৬ জুলাই কারফিউ ভঙ্গ করে গানের মিছিল থেকে শুরু করে দ্রোহযাত্রার মাধ্যমে এক দফার বিশাল স্রোতধারা নির্মাণ করার ক্ষেত্রে আমরা মুখ্য ভূমিকা পালন করেছি। কিন্তু একটা পক্ষ আমাদের বিরুদ্ধে জামাত-শিবির ট্যাগ লাগানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। আন্দোলনে যে সংগঠনগুলো সংগঠিত হয়েছে, তা আগামী দিনে সাংস্কৃতিক ক্ষত্রে একটি বড় ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি। উদীচীই এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবে বলে মনে করি।”

উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর আরেক সহসভাপতি মোল্লা হাবিবুর রছুল মামুন বলেন, “উদীচী একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন হলে গণমানুষের পক্ষে সব সময় সরব ভূমিকা রেখেছে। সারা দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো যখন কার্যত নষ্ট করে ফেলা হয়েছে, তখন শেখ হাসিনা সরকার ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পরাজিত হয়েছে। সে সময় উদীচী অফিশিয়ালি গণ-অভ্যুত্থানের পক💮্ষে অবস্থান নিয়েছিল। কেউ এ সিদ্ধান্তে বিপক্ষে ছিলেন না। কেউ যদি বিপক্ষে থাকেন এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়।”

এসব বিষয়ে কথা হয় উদীচীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদ🦋ক অমিত রঞ্জন দের সঙ্গে। দলের বিভক্তির বিষয়টি নাকচ করে তিনি বলেন, “উদীচী একটি গণতান্ত্রিক সংগঠন। এখানে ভিন্নমত থাকাটা স্বাভাবিক। সব ভিন্নমতকে সামনে নিয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে আমরা সংগঠনটাকে এগিয়ে নিতে চাই। এটাই উদীচীর সৌন্দর্য। সমঝোতার ভিত্তিতে নিজেদের মতো করে সংগঠনের আগামী দিনের করণীয় আমরা ঠিক করতে চাই।”

গণ-অভ্যুত্থানের উদীচীর ভূমিকা প্রসঙ্গে অমিত রঞ্জন বলেন, “জন্মলগ্ন থেকে উদীচী সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অনাচারের বিরু🐻দ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করে আসছে। কখনো তার ব্যত্যয় ঘটেনি। ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের আগে ও পরে উদীচী সব সময় সোচ্চার ছিল।”

Link copied!