‘আমার বাসায় কাজ করেছে, পিয়ন ছিল সে, এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে এমন তথ্য প্রকাশের পর থেকে ওই পিয়নকে নিয়ে রাজধানীসহ সারা দেশে আলোচনা-সম🐻ালোচনা তৈরি হয়। পরবর্তীতে জানা যায় তার নাম জাহাঙ্গীর আলম। তিনি প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন। ইতোমধ্যে স্ত্রী এবং তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক হিসেব জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব বিষয় নিয়ে বিবিসি বাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন জাহাঙ্গীর আলম। তার দাবি, তিনি মনে করেন না যে প্রধানমন্ত্রী তাকে ইঙ্গিত করে কথাগুলো বলেছেন।
সোমবার (১৫ জুলাই) বিবিসি বাংল♉ায় কথা বলেন জাহাঙ্গীর আলম।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “আমার পুরো বংশের মিলেও এতো টাকা হবে না। আর আমার কী আছে, তা ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ করেছি। আমি 𝔍দুরꦉ্নীতি করিনি।”
রাজনীতির প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক এই সহকারী বলেন, “আমি নমিনেশ🐷ন চেয়েছিলাম নোয়াখালী-১ আসনের জন্য। পরে দল থেকে না বলায় প্রত্যাহার করেছি।”
জাহাঙ্গীর আল🐠ম জানান, তিনি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার অনেক আগে থেকেই দলীয় সভানেত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করছিলেন তিনি।
এর মধ্যেই এলাকার রাজনীতিতে তার জড়িয়ে পড়া এবং হেলিকপ্টারে আসা-যাওয়ার খব🀅রের পাশাপাশি হঠাৎ করে বিপুল অর্থবিত্ত অর্জনের খবর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নজরে আসে। এরপর গত বছরের শেষ দিকে তাকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন প্রধানমন্তꦰ্রী। যদিও দুর্নীতির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে তিনি জানান, ৪০০ কোটি টাকার বিষয়টি তাকে নিয়ে বলা হয়নি।
৪০০ কোটি টাকার বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “আমি দুর্নীতি করিনি। আমাকে অব্যাহতি দেওয়ার পর পরিচয়পত্রসহ আমার কাছে যা ছিল তা আনুষ্ঠানিকভাবে জম✅া দিয়ে এসেছি। আর ৪০০ কোটি টাকা আ☂মার চৌদ্দ গোষ্ঠীর টাকা ও সম্পদ মিলালেও তো হবে না।”
এদিকে সপ্তাহখানেক আগে জাহাঙ্গীর আলম দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন তার একজন স্বজন। সম্প্রতি সাবেক ও বর্তমান বেশ কয়েকজনে ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার অবৈধ সম্পত্তির বিষয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা দুর্নীতিবাজদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা ܫদেয়। এ💎জন্য নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জাহাঙ্গীর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান বলে ধারণা করছেন তার স্বজনরা।
সোমবার জাহাঙ্গীর আলমের দেশ ꦗছেড়ে নিয়ে পালানো নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে দেশের শীর্ষ গণমাধ্যম প্রথম আলো।
ওই প্রতিবেদনে জꦰাহাঙ্গীরের বড় ভাই মো. মীর হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মো. মীর হোসেন নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার খিলপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী ল▨ীগের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, খিলপাড়ꦚা ইউনিয়নের নাহারখিল গ্রামে জাহাঙ্গীরের চারতলা বাড়ি রয়েছে। বাড়িট💎ির দোতলা ও তিন তলায় জাহাঙ্গীর থাকতেন। সোমবার বিকেলে দুটি ফ্লোর তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখা গেছে।
জাহাঙ্গীর এখন কোথায় জানতে চাইলে মীর হোসেন বলেন, “জাহাঙ্গীর দুই বিয়ে করেছে। প্রথম স্ত্রীর ঘরে এক সন্তান আর দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে তিন সন্তান রয়েছে। প্রথম স্ত্রী দেশে আছে, তবে তার সঙ্গে জাহাঙ্গীরের যোগাযোগ নেই। দ্বিতীয় স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে যু🌊ক্তরাষ্ট্রে থাকেন। রোববার (১৪ জুলাই) রাতে তার কাছেই চলে গেছে জাহাঙ্গীর।”
মীর হোসেন আরও বলেন, “আমরা এতদিন জানতাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার খুবই ভালো সম্পর্ক। তার কার্যালয়ে আসা-যাওয়া আছে। হঠাৎ রোববার প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে ৪০০ কোটি টাকার মালিক হয়ে যাওয়ার কথা শুনে লজ্জিত ও হতভম্ব হয়ে পড়ি। সন্ধ্যায় বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। তখনো জাহাঙ্গীর দেশেই ছিল। এরপর রাতে শুনেছি যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছে। তবে এখনো তার সঙ্গে 🧸আমার কথা হয়নি। তার ব্যক্তিগত সবগুলো মোবাইল বন্ধ আছে। এজন্য 🌺যোগাযোগ করতে পারছি না।”
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, পিয়ন জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। তার বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। জাহাঙ্গীর প্রধানমন্ꦗত্রী🌺র ব্যক্তিগত কর্মচারী হিসেবে ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের দুই মেয়াদের পুরোটা সময় এবং প্রধানমন্ত্রীর টানা তৃতীয় মেয়াদেরও কিছু সময় ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলে থাকার সময়ও জাহাঙ্গীর তার বাসভবন সুধাসদনের ব্যক্তিগত স্টাফ হিসেবে কাজ করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলম প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মচারী হলেও নিজের পরিচয় দিতেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত বিশেষ সহকারী। এই পরিচয় ব্যবহার করে নিয়মিত সচিবালয়ে তদবির–বাণিজ্য করতেন। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের কাছে নানা তদবির করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। একই পরিচয় ব্যব꧃হার করে তিনি নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদও বাগিয়ে নিয়েছিলেন। নোয়াখালী-১ স🍸ংসদীয় আসনে নিজের একটি রাজনৈতিক বলয় তৈরি করেছেন।
এদিকে জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও তাদের স্বার্থসংশ্ল🅺িষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেইসঙ্গে তাদের হিসাব খোলার ফরমসহ যাবতীয় তথ্য আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়েছে। সোমবার বিকেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সব ব্যাংকে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠিয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানে উল্লিখি🅷ত ব্যক্তিবর্গ ও তাদের মাল༺িকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো হিসাব থাকলে সেসব হিসাবের লেনদেন মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২–এর ২৩ (১) (গ) ধারার আওতায় ৩০ দিনের জন্য স্থগিত রাখার নির্দেশনা দেওয়া হলো।
জাহাঙ্গীর আলমের যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালী-১ আসনের সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহীম বলেন, “বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে সত্য নাকি ম🔯িথ্যা, তা ൲জানি না।”