• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Songbad Prokash

ইনস্টাগ্রাম

টুইটার


লিংকডইন

পিন্টারেস্ট

গুগল নিউজ


নির্যাতনের বর্ণনায় জবির সমন্বয়ক

ডিবির হারুন এসে বলেন, ‘একে বাঁচিয়ে রাখছ কেন?’


জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০২৪, ১২:৩২ পিএম
ডিবির হারুন এসে বলেন, ‘একে বাঁচিয়ে রাখছ কেন?’

১৯ জুলাই দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক মো. নূর নবীকে তুলে ন🎐িয়ে যায় ডিবি। মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) তিনি মুক্তি পান।

মো. নূর নবী বলেন, ‘‘আমার হাত ভেঙে গেছিল। হাড় ভেঙে টুকরো-টুকরো হয়ে গিয়েছিল। কোনো রকম এক্স–রে ছাড়াই খুব বাজেভাবে অপারেশন করা হয়েছিল। উলঙ্গ অবস্থায় আমাকে ডিবির রুমে নেওয়া হয়েছে, আমার চোখ খুলে দেওয়া হয়েছে।  বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ডিবির হারুন আসেন। এসে বলেন, ‘একে বাঁচিয়ে রাখছ কেন? ক্রসফায়ার দে।’ এরপর ജডিবির লালবাগ শাখা আমাকে ধরে নিয়ে যায়। আমার দুই হাঁটু পিটিয়ে ওরা ভেঙে ফেলে। ওই হাঁটুর ওপর তারা আমাকে বসায়ে রাখে। আমি ভাবছি আমাকে মেরেই ফেলবে। তারা আমার মাথায় বন্দুক তাক করে বলে, একে মেরেই ফেলব। বাংলাদেশের যত সমস্যার মূল এই ছাত্ররা। এরা শিবির, এরা সাধারণ ছাত্রদের উস্কে দিয়েছে। আমি ধরেই নিয়েছিলাম, আমাকে মেরেই ফেলবে।’

জামিনে মুক্ত হওয়ার পর শুক্রবার (৯ আগস্ট) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের কাছ♏ে নির্যা♉তনের বর্ণনা দেন তিনি।

নির্যাতনের বর্ণꩲনা দিয়ে নূর নবী বলেন, ‘ওরা আমাকে ১৫ জুলাই থেকে ট্র্যাক করছিল। আমার মায়ের কাছ থেকে ১৭ তারিখ বিদায় নিয়েছিলাম। বলেছিলাম, আমি মরে গেলে কেঁদো না। আর বেঁচে থাকলে বিকালে ফোন দেব। এই ভয়েস রেকর্ডটা তারা শুনিয়ে শুনিয়ে মারত।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জবি শাখার এই সমন্বয়ক বলেন, ‘আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়🌊 দফা দাবি নিয়ে ♎এসেছিলাম। এডিসি বদরুল (ডিএমপির কোতোয়ালি জোনের এডিসি) আমাকে ডেকে আলাদা করেন। ডিবির পাঁচটা গাড়ি এসেছিল। তারা শুধু আমাকে এখান থেকে উঠিয়ে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়। গাড়িতে উঠিয়েই আমাকে মারধর শুরু করে। যখন আমাকে ডিবি অফিসে নেওয়া হয়, তখন ভেবেছিলাম গাড়িতে যে টর্চার করা হয়েছে এর চেয়ে বেশি টর্চার আর হতে পারে না। কিন্তু এর চেয়ে পাশবিক নির্যাতন যে তারা করতে পারে—তা আমার কল্পনায় ছিল না।’

নূর নবী বলেন, ‘ডিবিতে নেওয়ার পর আমাকে প্রস্রাব করতে বলে। প্রস্রাব করতেই বৈদ্যুতিক শক খেয়েছি আমি। দাঁড়ানো অবস্থা থেকে আমি পড়ে গেছি। হাতে একটি ইনজেকশন দিয়েছে আমার। ওরা আমার অণ্ডকোষে জোরে জোরে আঘাত করেছে। বারবার আমার মনে হচ্ছিল, আমি মরে যাচ্ছি না কেন। তারা বারবার আমার কাছে সমন্বয়কদের নাম ꦑজানতে চাচ্ছিল। আমার কাছ থেকে বিএনসিসির কার্ড পায়। পরে নিজেদের মধ্যে বলে, সে এত শক্ত কেন? এ জঙ্গি, জঙ্গি ট্রেনিং নিয়েছে। আমি এটা বলতে পারিনি যে, আমি সেনা মহড়ায় অংশ নিয়েছি, আমি অন্তত জঙ্গি হতে পারি না।’

নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে নূর নবী আরও বলেন, “তারা আমাকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে একটি চে🉐য়ারে বসিয়ে আমার সব কাপড়-চোপড় খুলে ফেলে। সেই চেয়ারে বসিয়ে গালি দিচ্ছিল। তখন পাশের অন্যদের কথা শুনে বুঝতে পারি যে ডিসি আসছে। তখন আমাকে চেয়ার থেকে উঠিয়ে নিচে শোয়ায়। চিৎ করে শুইয়ে আমাকে বলে, তোর এক হাত তো ছাত্রলীগ ভেঙেছে, আরেক হাত আমরা ভেঙে দেব। রুটি যেভাবে বেলে, ঠিক সেভাবে আমার হাঁটু থেকে নাভি পর্যন্ত লাঠি দিয়ে চাপ দেয়। আমাকে কান্না করতে পর্যন্ত😼 দেয়নি। আমি ভাবছিলাম যে, এরা মানুষ না। মেরে মেরে আমাকে বারবার বলছিল, তোর তথ্য আমরা অনেক দিন শুনেছি, ক্যাম্পাস থেকে কয়েকজন তোর কথা আগেই বলেছে। তুই জঙ্গি, তুই শিবির। ভেবেছিলাম আমার পায়ের অংশ পচে যাবে বা কেটে ফেলতে হবে।”

কারাগারে নির্মম অত্যাচারের কথা বর্ণনা করে তিনি বলেন, “কারাগারে আমি অনেক গার্ডকে কান্না করে বলেছি, আমাকে হাসপাতালে নেন, তারা আমাকে নেয়নি। এক প্যান্ট আট দিন পরে ছিলাম। আমাকে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি। আমাকে আমদানিতে (কারাগারের আমদানি কক্ষ) পাঠায় দিছে। আমি একদিক হয়েꦆও শুয়ে থাকতে পা🅰রতাম না। আমি অনেক চেষ্টা করেছি ডাক্তারের কাছে যাওয়ার, পারিনি। শেষে ২৭ তারিখে আমাকে এমসিতে নেওয়া হয়। ডাক্তার দেখে বলে, ওকে ইমার্জেন্সি হাসপাতালে নিতে হবে। ঢাকা মেডিকেল বা পঙ্গুতে রেফার করে। তবুও আমাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়নি।”

তিনি আরও বলেন, “কারাগারে𓃲 যখন অন্য ছাত্ররা জানতে পারে, আমি সমন্বয়ক। তখন তারা আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে। আমি একটু সাহস পাই। পানিতে মরিচ দিয়ে রাখা হতো, যেন পানি খেতে না পারি, গোসল করতে না পারি। স্যারেরা যখন দেখা করতে আসে, তখন আমাকে একপর্যায়ে বলা হয়, আমাকে টাওয়ারে আলাদা এক ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তখন আমি সবাইকে আমার কাছে আসতে বারণ করি। আমি নিজেকে একঘরে করে রাখি।”

সাজানো মামলা দেওয়ার ঘটনা বর্ণনায় নূর নবী বলেন, “তারা আমাকে বলে, তোকে ক্রসফায়ার দেব। তুই রেডি হয়ে নে। আমরা ছয়জন ছিলাম মোট। রমনায় নিয়ে আমাদের চোখ খুলে দেওয়া হল🅰ো। আমার হাতে পেট্রোল বোমা ধরিয়ে দিল। ভিডিও করা শুরু করল। তারা যে মামলা সাজাবে আমি ভাবতেও পারিনি। দেশের ডিটেকটিভ ব্র্যাঞ্চ এমন পর্যায়ে যাবে ভাবিনি। ডিটেকটিভ ব্র্যাঞ্চ দেশের ম🗹ানুষের আস্থার জায়গা হওয়া উচিত ছিল। যাই হোক তারা আমাকে মেরে ফেলেনি। আমি বেঁচে ফিরেছি। স্বাধীন দেশে আবার ফিরতে পেরেছি। এটা আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা।”

জাতীয় বিভাগের আরো খবর

Link copied!