প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংকট কাটতে না কাটতেই ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু। এ যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব মিলিয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্ব অর্থনীতির পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। অনেক উন্নত দেশেও অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে আমাদের দ🤡েশে।
বাংলাদেশে যেসব সংকট দেখা দিয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ব্যাংক খাত। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়া, রিজার্ভে টান পড়া ও ডলারের চরম সংকট নি꧑য়ে বছরজুড়েই আলোচনা ছি🍸ল।
বছরের শেষের দিকে নানামুখী উদ্যোগে ডলারের ব൩াজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এবার খেলাপি ঋণ আদায়ে তৎপর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশไেষজ্ঞরা। নতুন বছরে খেলাপি ঋণ কমাতে ব্যাংকিং কমিশনকে পরামর্শও দিয়েছেন তারা।
বাজারে ডলারের অস্থিতিশীলতা
চলতি বছরের শুরুর দিকে ডলার-সংকট খুব একটা চোখে পড়েনি। সরকারের আমদানি দায় পরিশোধে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করতে হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার বিক্রির পরিমাণ ৬০৫ কোটি মার্কিন ডলার। ২০২১-২২ অ🐼র্থবছরে রেকর্ড ৭৬২ কোটি ১৭ লাখ ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যা🐻ংক। তার আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেখানে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে কিনেছিল প্রায় ৭৯৩ কোটি ডলার।
পাঁচটি মানি এক্সচেঞ্জের লাইসেন্স বাতিল
যখন ডলার-সংকট তীব্র আকার ধারণ ꧙করতে থাকে, তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার মনিটরিং করা শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় খোলাবাজারে ꦉডলার নিয়ে কারসাজি করায় পাঁচটি মানি এক্সচেঞ্জের লাইসেন্স স্থগিত করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম বিসমিল্লাহ মানি এক্সচেঞ্জ, অঙ্কন মানি এক্সচেঞ্জ ও ফয়েজ মানি এক্সচেঞ্জ। এ ছাড়া ৪২টি মানি এক্সচেঞ্জকে শোকজ করা হয়। আরও ৯টি প্রতিষ্ঠান সিলগালা করা হয়।
ডলার-কাণ্ডে ছয় এমডিকে শোকজ
শুধু মানি এক্সচেঞ্জেই নয়, ডলারের সংকটকে পুঁজি করে অনৈতিক সুবিধা নেয় ১২ ব্যাংক। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ডলার মজুত করে বড় অঙ্কের মুনাফা করে ব্যাংকগুলো। কোনো কোনো ব্যাংক ডলার বিক্রি করে ৭৭০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের কারণে ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক ও বিদেশি খাতের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের এমডিদে🦋র কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিলাসীপণ্য আমদানিতে কড়াকড়ি
কেন্দ্রীয় ব্যাংকে য💜খন ডলার-সংকট বাড়তে থাকে, তখন আমদানি ব্যয়ের চাপ কমাতে বিলাসীপণ্য আমদানির লাগাম টেনে ধরা হয়। বিশেষ করে মোটরকার, হোম অ্যাপ্লায়েন্স হিসেবে ব্যবহৃত ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিকস সামগ্রীর আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৭৫ শ𒈔তাংশ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করার কথা বলা হয়। একই সঙ্গে অতি জরুরি পণ্য ছাড়া অন্য সব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করতে বলা হয়।
নিলামে সোনা বিক্রির উদ্যোগ
রিজার্ভে চাপ কমাতে বিভিন্ন সময় জব্দ করা সোনা নিলাম🥀ে বিক্রির উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রাথমিকভাবে ২ হাজার ১৭০ ভরি সোনা (২৫ দশমিক ৩১ কেজি) বিক্রি করার কথা জানানো হয়। লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ীরা নিলামে অংশ নিয়ꦓে এ সোনা কিনতে পারবেন বলে জানানো হয়।
এলসিতে ২০০ শতাংশ ওভার ইনভয়েসিং
ডলারে চাপ কমাতে দেশে এলসির ক্ষেত্রে ২০ থেকে ২০০ শতাংশ ওভার ইনভয়েসিং করা হচ্ছে। গত বছর এবং চলতি বছরের এলসির তথ্য যাচাইয়ের সময় এ বিষয়টি ধরা পড়ে। ওভার ইনভয়েসিং করা ১০০ এলসি বন্ধ করা হয়েছে। ⛄তবে ব্যবসায়ীরা চাইলে পরে তা সং🍎শোধন করে প্রকৃত দরে আমদানি করতে পারবেন।
রিজার্ভে টান পড়া
করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়ছে প্রতিনিয়ত।꧒ এতে রিজার্ভের পরিমাণও দিন দিন কমছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৭ বিলিয়ন থেকে নেমে ৩৪ বিলিয়ন ডলারের আশপাশে ওঠানামা করছে। এ থেকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলসহ কয়েকটি তহবিলে 💝বিনিয়োগ করা হয়েছে ৮০০ কোটি (৮ বিলিয়ন) ডলার। এ বিনিয়োগ করা অর্থ বাদ দিলে রিজার্ভ থাকে ২৬০০ কোটি (২৬ বিলিয়ন) ডলার, যা দিয়ে বর্তমানে নিয়ন্ত্রিত আমদানির মধ্যে সাড়ে চার মাসের ব্যয় মেটানো সম্ভব। অর্থাৎ খরচ করার মতো রিজার্ভ এখন ২৬ বিলিয়ন ডলার।
রিজার্ভ সংস্কারে আইএমএফের প্রস্তাব
ডলার-সংকটের এমন পরিস্থিতিতে নানা মহলে প্রশ্ন শুরু হয়। এমন প্রেক্ষাপটে আইএমএফ বাংলাদেশের রিজার্ভ সংরক্ষণের হিসাব পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে রিজার্ভের হিসাব রাখাসহ বেশ কিছু সংস্কারের পরামর্শ দেয় সংস্থাটি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও তাতে সায় দেয়। এর পরের দিনই অর্থমন্ত্রী জানান, আইএমএফ ও দেশীয় দুই হিসাবই থাকবে। এতে আইএমএফ থেকে চার বিলিয়ন ডলারের ঋণপ্রাপ্তির পথও অনেকটা পরিষ্কার হয়।