এ সময় ভারতে জীবিত পরিচালকদের ভেতরে অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র পরিচালক আদুর গোপালকৃষ্ণনের জন্মদিন আজ। তিনি আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত চলচ্চিত্র পরিচালক। তিনি মালয়ালাম ভাষায় চলচ্চিত্🐓র নির্মাণ করেন। ১৭টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও ১৭টি কেরালা রাজ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং টানা ছয়টি চলচ্চিত্রের জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব থেকে জুরি সমালোচক পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ১৯৮৪ সালে পদ্মশ্রী, ২০০৪ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার এবং ২০০৬ সালে পদ্মবিভূষণ লাভ করেন।
আদুর গোপাল কৃষ্ণন মন্নাদিতে জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪১ সালে। তার বাবা মাধবন উন্নিথন এবং মাতা মৌত্থাথু গৌরি কুঞ্জম্মা। আট বছর বয়সে তিনি অভিনেতা হিসেবে বিভিন্ন নাটকে অ⛦ভিনয় করেন। পরে তিনি নাটক লেখা ও নির্দেশনায় মন দেন। গান্ধীগ্রাম রুরাল ইনস্টিটিউট থেকে অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও লোক প্রশাসনে ডিগ্রি অর্জন করে তিনি তামিলনাড়ুর দিনদিগুলের কাছে সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন। ১৯৬২ সালে তিনি সরকারী চাকুরী ছেড়ে দিয়ে পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউটে চিত্রনাট্য ও পরিচালনা বিষয়ে পড়াশুনা করেন। তিনি সেখানে ভারত সরকারের বৃত্তিসহ পড়াশুনা শেষ করেন। তার সহপাঠী ও বন্ধুদের নিয়ে তিনি চিত্রলেখা ফিল্ম সোসাইটি ও চলচ্চিত্র সহকর্ণ সংঘম গড়ে তোলেন।
গোপালকৃষ্ণন পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘স্বয়ংবরম’ ১৯৭২ সালে মুক্তি পায়। সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালীর পর এটিই কোনো ভারতীয় পরিচালকের প্রথম চলচ্চিত্র যা এতটা খ্যাতি অর্জন করে। নব বিবা🤪হিত এক দম্পতি নতুন জীবন শুরু গল্প নিয়ে তৈরি সাদাকালো চলচ্চিত্রটি মালয়ালাম ভাষার চলচ্চিত্রে এক নতুন মাত্রা যোগ করে। চলচ্চিত্রটি মস্কো, মেলবোর্ন, প্যারিস, লন্ডনের চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। গোপালকৃষ্ণন শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ও শ্রেষ্ঠ পরিচালক বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। তার দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘কোদিয়েত্তম’ মুক্তি পায় ১৯৭৮ সালে। ছবিটি শ্রেষ্ঠ মালয়ালাম ভাষার চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের জন্য কেরালা রাজ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে এবং শ্রেষ্ঠ পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ কাহিনীর জন্য কেরালা রাজ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। ওনার ছবি বৈশিষ্ট্য হলো ডিটেইলিং, যা পরবর্তী সময় মালায়লাম সিনেমার ট্রেডমার্ক হয়ে দাঁড়ায়।
তার পরবর্তী চলচ্চিত্র ‘এলিপ্পাথায়াম’ ১৯৮১ সালে মুক্তি পায়। এটি গোপালকৃষ্ণান পরিচালিত অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র। ছবিটি কান চলচ্চিত্র উৎসব সহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। এটি সেরা মৌলিক ও কল্পনামূলক চলচ্চিত্র হিসেবে ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট পুরস্কার, লন্ডন চলচ্চিত্র উৎসবে সাদারল্যান্ড ট্রফি এবং শ্রেষ্ঠ মালয়ালাম ভাষার চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে।তিনি অনেকগুলো ডকুমেন্টারীও বানিয়েছেন।পরবর্তীতে তিনি মুখমুখম (১৯৮৪), অন্তরাত্মাম (১৯৮৭), মাথিলুকাল (১৯৯০), বিধেয়ান (১৯৯৩), ও কালপুরুষণ (১৯৯৫) চলচ্চিত্রের জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্🌌র উৎসবে জুরি সমালোচক পুরস্কার লাভ করেন। এই আশি বছর বয়সেও তিনি মালায়লাম সিনেমা নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করেন। মুহাম্মদ খসরুর একটা চলচ্চিত্র বই আছে সাক্ষাৎকার ভিত্তিক, সাক্ষাৎকার চতুষ্টয়। বইটা অসাধারণ। ⛎এত সুন্দর বই সাধারণত বাংলাদেশ থেকে বের হয় কম। সেখানে আদুর গোপাল কৃষ্ণানের একটা দারুণ ইন্টারভিউ আছে।
গল্পটা অমিতাভ রেজার। তিনি কেরালায় এক শহরে ঘুরছিলেন। তো ট্যাক্সি ড্রাইভার বললো, ‘আপনি বাঙালি, তাহলে তো সত্যজিৎ আপনার প্রিয়।’ অমিতাভ অবাক হয়ে প্রশ্ন রাখেন, ‘তুমি দেখেছো ওনার মুভি? সেই ড্রাইভার বলে, না তবে আমার মনে হয় আদুর গܫꦍোপাল কৃষ্ণন বেটার।’ চিন্তা করেন একটা ট্যাক্সি চালক আদুর গোপালের মুভি নিয়ে জানেন।
বাংলাদেশে অনেক শিক্ষিত মানুষই দেখেননি তার সিনেমা। অথচ আদুর গোপাল কৃষ্ণনানের বন্ধু ছিল বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আন্দোলনের পুরোধা মুহম্মদ খসরু। তারেক মাসুদ বলেছিলেন একবার, ‘আমরা সবাই খসরু ভাইয়ের পকেট থেকে সিনেমা দেখতে শিখেছি।’ সাত ছয় হাজার দেশি বিদেশি দুস্পাপ্য বই,ꦿ বই যা ইঁদুরে আক্রান্ত তা নিয়ে কেরানীগঞ্জে এক টিনের ছাপড়াতে তার শেষ দিনগুলো কেটেছে। তেমন কেউ আসতো না দেখা করতে। আদুরকে নিয়ে লিখলে খসরু ভাইকে মনে পড়ে।