দাদা-দ🦋াদির কোলের এই অবুঝ দুই শিশুর নাম মেহজাবিন (৫) ও মোস্তাকিম (৩)। গত দুই মাস আগে বনিবনা না হওয়ার কথা বলে বাবার সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছেদ করে চলে গেছেন মা। ৪ আগস্ট𓃲 ছাত্র আন্দোলনের সময় ঢাকার যাত্রাবাড়ি এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন বাবা রিয়াজুল তালুকদার (৩৪)। এখন এই শিশুদের একমাত্র আশ্রয়স্থল দাদা-দাদি। কিন্তু অভাবের সংসারে নাতি-নাতনির ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এই বৃদ্ধ দম্পতি।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর সদর উপজেলার চিকন্দী ইউনিয়নের আবুরা গ্রামের ভূমিহীন কৃষক পরিবারের সন্তান রিয়াজুল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পার হওয়ার পরেই সংসারের হাল ধরেছিলেন। ঢাকায় দিনমজুরের কাজ করে গ্রামের বাবা-মায়ের কাছে সংসারের খরচ পাঠাতেন। ২০১৮ সালে শিমু আক্তার নামে এক নারীর সাথে বিয়ের পর তাদের সংসারে ফুটফুটে দুই সন্তানের জন্ম হয়। মাস খানেক আগে পারিবারিক কলহের অভিযোগ করে রিয়াজ🐼ুলের সঙ্গে সম্পর♎্ক বিচ্ছেদ করে অন্যত্র চলে যান শিমু। এরপর থেকে তাদের সন্তান মেহজাবিন ও মোস্তাকিম দাদা-দাদির কাছে থাকতে শুরু করে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শেষ সময় ৪ আগস্ট রিয়াজুল গুলিস্তান থেকে চিটাগং রোডে মাল আনতে যাওয়ার পথে কোমরে গুলিবিদ্ধ হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্তায় মারা যান তিনি। মারা যাওয়র আগে ওইদিন সকালে মায়ের ওষুধ কেনার 🍬জন্য বাবার মোবা💜ইল ব্যাংকিং নম্বরে ১৫০০ টাকা পাঠিয়েছিলেন রিয়াজুল।
রিয়াজুলের মা শেহেরজান সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমার বাবার ঘরে ফুটফুটে দুই নাতি-নাতনি। রিয়াজুলের বউ ডিভোর্স দিয়ে চলে গেছে দুই মাস আগে। এখন আমার বাবাও গুলি খেয়ে চলে ♓গেল। আমার প্রতি মাসে অনেক টাকার ওষুধ লাগে। ওষুধের সব টাকা রি꧅য়াজুল দিত। রিয়াজুল মারা যাওয়ার পরে আমার ওষুধ খাওয়া বন্ধ। এখন দিন দিন অসুস্থ্য হয়ে যাচ্ছি। আমি এভাবে অসুস্থ্য হয়ে পড়লে বাপ-মা হারানো আমার কলিজার নাতি-নাতনিদের দেখবে কে?”
শেহেরজান আরও বলেন, “রি𒈔য়াজুলের বাবা বৃদ্ধ মানুষ। জমি-জায়গা নাই। বর্তমান যুগে পড়ালেখা না করলে কাজকর্মও পাওয়া যায় না। আমার নাতি-নাতনিদের কী হইব? যারা আন্দোলন করছে, যে সরকার এখন আছে, তারা যদি আমার নাতি-নাতনির পড়াশোনার দায়িত্ব নিত, তাহলে আমি খুব খুশি হতাম। রিয়াজুলকে মানুষ শহীদ বলে। আমি যদি শহীদের মা হই, তবে দেশবাসীর কꦆাছে অনুরোধ করি তারা যেন আমার নাতি-নাতনিদের পড়াশোনার দায়িত্ব নেন।”
রিয়াজুলের বাবা গিয়াস উদ্দিন তালুকদার সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমার জমি-জায়গা নেই। অন্যের জমিতে কাজ করে সংসারের মানুষের মুখে খাবার দিতাম। রিয়াজুল বড় হওয়ার পরে আমার সেই কষ্ট কিছুটা দূর হয়েছিল। আমার পাঁচ সন্তান হলেও সবাই শ্রমিক। নিজেরটা করতেই কষ্টকর। আমার এখন শেষ বয়স। নাতি-নাতনির ভরণ-পোষণ ও পড়ালেখার দায়িত্ব যদি সবাই মিলে নিত, তাহলে আমি চিন্তামুক্ত হতাম। দেশের জন্য জীবন দিয়েছে রিয়াজুল। রিয়াজুলের সন্তানদের ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে 💎তাদের পড়াশোনার দায়িত্ব দেশবাসীকে নেওয়ার💃 জন্য আহ্বান জানাই।”
এদিকে রিয়াজুল মারা যাওয়ার পরে তার মরদেহ পেতে বেগ পেয়ে হয়েছে তার স্বজনদের। রিয়াজুলের ছোট ভাই রাসেল তালুকদার সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “৪ তারিখ রাত ৭ টা ৪০ মিনিটে আমার ভাই মারা যাওয়ার পর হাসপাতাল থেকে আমাদের বলা হয় থানা থেকে লিখিত আনতে হবে, নয়ত মরদেহ দেবে না। এরপর আমরা শাহবাগ থানায় গেলে সেখান থেকে আমাদের পাঠানো হয় যাত꧑্রাবাড়ি থানায়। কিন্তু যাত্রাবাড়ি থানা থেকে আমাদের আবার শাহবাগ থানায় ফেরত পাঠানো হয়। এভাবে একটি কাগজের জন্য আমি দুই থানায় ৭ থেকে ৮ বার ঘোরাঘুরি করি। কিন্তু কোনো থানা থেকেই কাগজ পাইনি। পরে ৫ তারিখে সরকার পতনের আমি ছাত্রদের এসব কথা জানাই। পরে ছাত্ররা হাসপাতালের মর্গের রুম ভেঙে ছাত্ররা আমার ভাইয়ের মরদেহ বুঝিয়ে দেয়। এরপর আমি আমার ভাইয়ের মরদেহ পুলিশের ছাড়পত্র ছাড়া শুধুমাত্র হাসপাতালের ছাড়পত্র দিয়ে নিয়ে এসে গ্রামের বাড়িতে দাফন করেছি।”