বাংলাদেশের মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, দিয়েছিলেন স্বাধীনতা। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্র🐭াম এবং সীমাহীন ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে যুগ যুগ ধরে শোষিত হয়ে আসা বাঙালি জাতিকে যিনি দিয়েছেন ম൲ুক্তির স্বাদ, তিনি বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৭৫ সালের ജ১৫ আগস্টের কালরাতে ঘাতকদের নির্মম বুলেটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবার নিহত হন। বাঙালি জাতির জন্য আজীবন সংগ্রাম করা এ মহানায়কের পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়াটা ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়, যা এ জাতিকে বয়ে যেতে হবে চিরকাল।
১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যার পরদিন ১৬ আগস্ট সামরিক হেলিকপ্টারে করে শুধু বঙ্গবন্ধুর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। সেখানে তাঁকে বিনা গোসলে দাফন করতে চাইলে গ্রাসবাসীর আপত্তির মুখে পড়ে সেনাসদস্যরা। পরে থমথমে অবস্থার মধ্যে দায়সারাভাবে কাপড় কাচার ৫৭০ সাবান দিয়ে গোসল ♛করানো হয়। রেডক্রসের মার্কিন কাপড় দিয়ে সমাহিত করা হয় জাতির পিতার মরদেহ। সেদিন টুঙ্গিপাড়াবাসী ও বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যাচ্ছেতাই আচরণ করে সশস্ত্র সেনারা। জানাজায় অংশ নিতে দেওয়া হয় মাত্র ২০-২৫ জনকে।
বঙ্গবন্ধুর জানাজা, দাফনসহ পরিবারের পর সেই অত্যাচারের কথা জানতে কথা হয় বঙ্গবন্ধুর চাচাতো ভাই শেখ বোরহান উদ্দিনের সঙ্গে। বর্তমানে তিনি টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর পুরোনো বাড়িতে বসবাস করছেন। একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট সেদিনের কথা তুলে ধরেন এই প🧜্রতিবেদকের কাছে।
তিনি বলেন, “১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরবেলা ঢাকা থেকে ফোন আসে আমার বড় ভাইয়ের, যে ঢাকায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে সব শেষ, টুঙ্গিপাড়ার অবস্থা কী? তখনো বিশ্বাস🦹 হচ্ছিল না। কিছু সময় রেডিওতে শুনতে পেলাম ‘আমি মেজর ডালিম বলছি, বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের সকলকে হত্যা করা হয়েছে। এ সংবাদ শোনার পরে আমরা বাড়ির সবাই থমকে গেলাম। কারও মুখে কোনো ভাষা নেই। বিশ্বাস হচ্ছিল না যে বাঙালি ব✨ঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে পারে।”
“পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধু প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার পর টুঙ্গিপাড়ায় যোগাযোগের জন্য আমাদ𒅌ের বাড়িতে একটা ওয়্যারলেস সেট করেছিলেন। রেডিওতে শোনার পর আমি সেই ওয়্যারলেসের মাধ্যমে ঢাকায় যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। পরে আমার ভাই আমাকে নিশ্চিত করে যে বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। আমার কাছে জানতে চায় টুঙ্গিপাড়ার কী অবস্থা?”
১৬ আগস্ট সকাল থেকে আমাদের বাড়িতে এলাকাবাসী আসতে শুরু করলেন। ১০টার দিকে পুলিশ আসতে লাগল আমাদের বাড়িতে। এ সময় এলাকাবাসীর মধ্যে একটা ভয় কাজ করছিল। ১২টার দিকে ওসি সাহেব আমাকে ডেকে বললেন, “কবরস্থান দেখাও”। তখন আমি আমাদের নতুন একটি কবরস্থান দেখাই। যেটি ফজিলাতুন্নেছা করেছিলেন। পরে ওসি সাহেব আমার বাবা ও চাচাকে নিয়ে কবরস্থানটি ✱ঘুরে দেখেন। ১টার দিকে ওসি সাহেব বললেন ‘দ্রুতই কবর খোঁড়ার ব্যবস্থা করেন।’ তখন আমি বললাম কয়টা কবর খুঁড়ব, তখন তিনি কখনো বলেন চারটা কবর খোঁড়ো, ৮টা কবর খোঁড়ো আবার কখনো বলে ১০টা কবর খোঁড়’ তোদের বংশসহ শেষ করা হইছে।” তখন চিৎকার করে কান্না আসিতেছিল কিন্তু কানতে পারতেছিলাম না।”
দুপুর দেড়টার দিকে দেখলাম একটি হেলিকপ্টারে করে মরদেহ এলো। বাড়ির আশপাশ ঘিরে ফেলল সেনাসদস্যরা। ঘর থেকে কাউকে বের হতে দিচ্ছিল না। এর মধ্যে আমি দৌড়ে গিয়ে মফেল চৌকিদার নামে বাড়ির পাশে একজনকে ডেকে নিয়ে এলাম। বঙ্গবন্ধুর বাবা-মায়ের কবরের পাশে কবর খোঁড়ার জন্য। বাড়ির পাশের আরও কয়েকজন ছুটে এলেন কবর খুঁড়তে। তখন আমার চাচা আমাকে ইশারা দিয়ে বললেন তুই বাড়ির ভেতরে যা। কিছু সময় পর বঙ্গবন্ধুর মরদেহের কফিন হেলিকপ্টার থেকে নামানো হলো। তখন ওই সেনাসদস্যরা বললেন লাশ ওই অবস্থায় কফিনসহ মাটি দিতে। কিন্তু আমাদের মসজিদের ইমাম বললেন, “না, এভাবে লাশ মাটি দেওয়া যায় না। এভাবে মাটি দেওয়া হয় শহীদের লাশ।” পরে ইমামসহ এলাকাবাসীর আপত্তির কারণে লাশ গোসল ও জানাজার অনুমতি দেয় সেনাসদস্যরা। সময় বেঁধে দেওয়া হলো ৩০ মিনিট। পরে গোসল করানোর মধ্য দিয়ে পাশের একটি হাসপাতালের রেডক্রসের মার্কিন♕ কাপড় ও বাড়ির পাশে একটি দোকান থেকে ৫৭০ সাবান আনা হলো। পরে সেই সাবান☂ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর লাশের গোসল করানো হলো। রেডক্রসের ওই মার্কিন কাপড় জড়িয়ে জানাজা হলো। জানাজায় অংশ নিতে দেওয়া হলো মাত্র ২০-২৫ জনকে।
বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর খবর পেয়ে দূরদূরান্ত থেকে লোকজন ছুটে এসেছিলেন, কিন্তু তাদের বঙ্গবন্ধুর মুখ তো দূরꦑের কথা, জানাজায় অংশ নি𒐪তে দেওয়া হয়নি। দাফন শেষে তড়িঘড়ি করে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় ফিরে গেলেন সেনাসদস্যরা। ভাবতেই পারছিলাম না, যাঁর বাপ-দাদারা জমিদার ছিলেন, নিজে ছিলেন দেশের রাষ্ট্রপতি, যাঁর এক তর্জনীর মধ্য দিয়ে স্বাধীন হয়েছিল দেশ, তাঁর মরদেহের দাফন হলো ৫৭০ সাবান ও মার্কিন কাপড় দিয়ে।