প্রতীক্ষার শুরুটা ৩ জুন থেকে। এই দিনই ফ্রান্স সময় সকাল ১১টা আর বাংলাদেশ সময় বিকেল চারটায় উৎসব পরিচালক 'থিঁয়েরি ফ্রেমো'র কণ্ঠে বাংলাদেশের তরুণ পরিচালক আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের ‘রেহানা মরিয়ম নূর' ছবির নাম উচ্চারিত হবার সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাসের অংশ হয়ে গেলো, বাংলাদেশ!
দিনটি ছিল বাংলাদেশের ৫০-তম বাজেট ঘোষণারও দিন। ব্যস্ত নিউজরুমে খবরটি এলো একটু ভিন্ন লয়ে। অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধনের সাথে মুঠোফোন যোগাযোগে সন্ধ্যায় ক্যামেরা নিয়ে দ্রুত ছুটলাম গুলশান। ওখানেই আছে ‘রেহানা মরিয়ম নূর টিম’। ক্যামেরায় শুধু বাঁধনই কথা বললেন। পরিচালক সাদ কথা বললেন না। একটু হতাশ হলাম। অর্জনটা কত বড়, তা দর্শককে তো বোঝাতে হবে! কী করি? ছুটলাম রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি আহমেদ মুজতবা জামালের কাছে। ২০০২ সালে কানে 'ফিপ্রেসি’র বিবেচনায় তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’ যে ‘ডিরেক্টরস ফোর্ট নাইট’ জিতেছিল, সেই ফিপ্রেসকি জুরির অন্যতম এই চলচ্চিত্রজন বলে দিলেন, 'এই অর্জন দুর্দান্ত!'
খুব রাশ নিউজরুম৷ তবু রাত ১১ টায় শিরোনাম হলো, &lsq🌊uo;ব🐻িশ্ব চলচ্চিত্রে মর্যাদার আসন, কানের অফিসিয়াল সিলেকশনে বাংলাদেশের রেহানা মরিয়ম নূর’।
শুরু হলো কাউন্টডাউন। উৎসবের এক্রিডিটেশন নেয়া ছিল। অনেকটা খেয়ালের বশেই নিয়ে রেখেছিলাম।ꦺ কিন্তু এরপর?
ফ্রান্স দূতাবাস বন্ধ।‘টিম রেহানা মরিয়ম নূর&﷽rsquo; যেꦐতে পারবে কি না, তা নিয়েই আছে ধোঁয়াশা। বিশ্ব করোনা পরিস্থিতির তালিকায় বাংলাদেশ আছে ‘রেড জোনে’। কোথাও কোন আশা নেই।
একটু একটু করে দিন গড়াতেই আশার পালে হাসতে থাকলো রোদ। পুরো কৃতিত্ব ঢাকাস্থ আঁলিয়স ফ্রঁসেজের। প্রোগ্রাম অফিসার মামুন অর রশীদ আর পরিচালক অলিভিয়ে দঁতজে ভিসার জন্য লিখলেন ফ্রান্স দূতাবাসকে।🍌 তাতেই কাজ হলো। একটু ঝক্কি হলেও ভিসা পেলাম ২২ জুন। কোয়ারেন্টাইন করতে হবে। যেহেতু টিকা দুই ডোজই নেয়া হয়েছে, তাই সাতদিন আগে অন্তত যাওয়া চাই। কিন্তু অর্থ?
আশ্বস্ত করলেন একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু। দ্রুত সব ব্যবস্থা হলো হেড অব নিউজ শাকিল🤡 আহমেদ আর কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স ও কন্টেন্ট প্রধান নূর সাফা জুলহাজের কল্যাণে।
২৪ জুন কাটা হলো টিকেট। ২৭ জুলাই সন্ধ্যায় ফ্লাইট। ঢাকা-প্যারিস-ঢাকা। এবার ক্যামেরাম্যান ছাড়াই আমার যাত্রা। পܫ্রোডাকশন হেড আহমেদ রেজাউর রহমানের তাগাদায় এরমধ্যেই হলো প্রোমো শুটিং। প্রযোজক আরিফুর রহমান যত্ন নিয়ে করলেন সেই শুটিং।
২৬ তারিখ সকালে আইসিডিডিআরবিতে গেলাম পিসিআর টেস্ট দিতে। ♓রাতেই পাওয়া 🌄হলো টেস্ট রিপোর্ট। ব্যাগ গুছিয়ে তৈরি। প্রতীক্ষা ২৭ জুলাই সন্ধ্যার।
বিকেল ৪টায় এয়ারপোর্টে। করোনাকালীন ঢাকা এয়ারপোর্ট যেন ঝক্কির অপর নাম। পিসিআর টেস্ট রিপোর্ট নিয়ে গেলেই হবে না। বিমান শপ থেকে নিতে হবে তিনশত টাকা দিয়ে সনদ। আবার প্রতি সনদের ফটোকপি ২৫ টাকা করে! সবাই হুমড়ি খেয়ে প🌠ড়ছে সেই বিমান শপে।🅷 সেই ধাপ পাড় করে দাঁড়ালাম বোর্ডিং কিউতে। লাইন যেন এগুচ্ছেই না। বিদেশ যাত্রায় কখনো এমন অভিজ্ঞতা হয় নি ঢাকা এয়ারপোর্টে। যাই হোক তাও একসময় হলো। হলো ইমিগ্রেশনও। এবার অপেক্ষা ওড়ার।
ঠিক সন্ধ্যা সাড়ে ছটায় দোহার উদ্দেꦑশ্যে আকাশে উড়লো কি𒁏উ আর সিক্স থার্টি ফাইভ। ৫ ঘন্টার ভ্রমণ শেষ হলো বাংলাদেশ সময় রাত ১১.২৫ মিনিটে, আর দোহা সময় রাত ৮.২৫।
দোহা ‘হামাদ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে’ ১২ ঘন্💖টার দীর্ঘ ট্রানজিট। করোনাকালীন নতুন স্বাভাবিকে একটু একটু করে জেগে ওঠা বিমানবন্দর। এর আগেও কয়েকবার এখানেই কাটানো ট্রানজিট রুটটা এবার একা এবং প্রায় অপরিচিত! করোনা কত বদলে দিয়েছে পৃথিবীকে!
সকাল ৮টা ১০ এ প্যারিসের ফ্লাইট। ফ্লাইট নাম্বার কিউ আর থার্টি নাইন। দীর্ঘ ৭ ঘন্টার ভ্রমণ শেষ হলো শার্ল দ্য গল বিমানবন্দরে। ইমিগ্রেশনে নন ইউরোপিয় কিউতে দাঁড়িয়ে। বেশ সময় নিলো। তবে সময় নিলেন না ইমিগ্রশন অফিসার। স্রেফ দুই মিনিট! ফেস্টিভাল দো কানের কথা বলতেই বললো, ‘তুমি কি অভিনেতা?’ বললাম, ‘সাংবাদিক’। দ্রুত পাসপোর্টে 🌸সিল দিয়ে যেন হাফ ছাড়লো অফিসার।
বেল্ট থেকে লাগেজ নিয়ে ট্য♏াক্সি। আমার গন্তব্য, ‘সেভরন বুঁদে’। এখানেই কাটবে 🥂আমার আগামী ৭ দিন। কোয়ারেন্টাইন!
(চলবে)