সাহিত্যের জগতে একটি শব্দ প্রায়ই শুনি। শব্দটি ‘কালজয়ী’। সাহিত্যপ্রেমীরা কোনও সাহিত্যপাঠ করার পর নিজের মতপ্রকাশ ෴করতে গিয়ে বলেন এই সাহিত্য কালজয়ী হবে, অথবা এই সাহিত্য কালজয়ী হবে না। এই সাহিত্যিক অমর, অথবা এই সাহিত্যিক ক্ষণস্থায়ী। ঠিক কত দিন বা কত বছর উত্তীর্ণ হওয়াকে ওঁরা কালোত্তীর্ণ🉐 বলেন, তা আজও আমার জানা হয়নি।
‘কালজয়ী’ শব্দটিকে আমার খুব হাস্যকর শব্দ বলে মনে হয়। বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের বয়স তেরোশ আশি কোটি বছর। পৃথিবীর বয়স চারশ চুয়ান্ন কোটি বছর। আর মানুষের জন্ম মাত্র তিন লক্ষ বছর আগে। যেকোনও সময় পারমাণবিক বিস্ফোরণে, গ্রহাণুর পতনে, আবহাওয়ার পরিবর্তনে, মারণ ভাইরাসের কামড়ে মানুষ বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। আমাদের চেয়েও শক্তিশালী হয়েও, আমাদের মস্তিষ্কের চেয়েও বড় মস্তিষ্কের অধিকারী হয়েও নিয়ানডার্থাল নামের মানুষ বিলুপ্ত হয়ে গেছে, বিলুপ্ত হয়ে গেছ📖ে আরও নানা মানুষ প্রজাতি। আমরা কতদিন টিকবো, তার কোনও ঠিক নেই। অনেকটা এই আছি তো এই নেই-এর মতো। আর লেখকদের গল💧্প উপন্যাস— তার টেকা বা বেঁচে থাকা নিয়ে কিছু লোকের ঘুম নেই। বটে।
কেউ কেউ বলতে পারে, এক দশক, পাঁচ দশক, দশ দশক ধরে কোনও লেখা যদি লোকে পড়ে, তাহলেই সেটা কালজয়ী। তাহলে তো বটতলার উপন্যাস আর সস🐟্তা রসরচনাগুলো ভীষণই কালজয়ী। কেউ কেউ বলতে পারে, ওসব সাহিত্য নয়। কোনটা সাহিত্য, কোনটা সাহিত্য নয়— তা বিচার করার ভারই বা কার ওপর!
কিছু লেখক꧅, আমি জানি, কালজয়ী হওয়ার স্বপ্নে বুঁদ হয়ে আছেন। কালজয়ী কিছু লেখার কোনও বাসনা আমার অন্তত নেই। অমরত্বেও আমি বিশ্বাস করি না। যা আমার ভালো লাগে, যা লেখা আমার জরুরি মনে হয়, তা আমি লিখি। এসব লেখা কাগজের ঠোঙা হয়ে গেলেও আমার কোনও আপত্তি নেই। আমি আজকের মানুষ, আজকে আমার লেখা কেউ পড়লেই আমি ধন্য। দু’দিনের জীবন, দু’দিনের জন্যই আমার রচনা। যদি কেউ আমার লেখা দু’দশক পড়ে, সে চমৎকার। আমি মরে যাওয়ার পর আমার লেখালেখি নিয়ে কী হবে না হবে, তা ভেবে রাতের ঘুম নষ্ট করার কোনও ইচ্ছে আমার নেই। মোদ্দা কথা কালজয়ী হওয়ার স্বপ্ন কামড়ে না ধরলে বেশ নিশ্চিন্তে লেখা🌊লেখি করা যায়, ঘুমোনোও যায়।