দেশের ফুটবলের দুর্নীতি নিয়ে অনেক লেখা হয়েছে। বলা হয়েছে। কিন্তু সেসবꦕ কিছুকে ব্যাকভলি মেরে উড়িয়ে দেয়া হয়েছে! `ষড়যন্ত্রে`র হাওয়ায় ভাসিয়ে অভিযোগগুলোকে মাঠের বাইরে পাঠানো হয়েছে! এতে ফুটবলকর্তারা নিজেদের চেয়ার ঠিক রাখতে পেরেছেন। কিন্তু দেশজ ফুটবল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে মানুষ।
গত পনের বছরের বাংলাদেশ ফুটবল তার ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। অন্তত সাফল্যের বিচারে। আর শেষ পর্যন্ত যখন পঞ্চাশ-ষাট লাখ টাকার জন্য বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে প্রাক অলিম্পিক বাছাই পর্ব খেলতে মিয়ানমারে পাঠানো গেল না, তখন বেরিয়ে পড়ল ফুটবলের আর্থিক দীনতা! তাহলে ফিফা-এএফসির দেয়া কোটি কোটি টাকা যায় কোথায়? উত্তরটা এদেশের মানুষ জেনে গেছে খোদ ফিফার কাছ থেকে। ফিফার দেয়া টাকা নয়-ছয় করা হয়েছে। দশ-বার কোটি টাকার হিসেবেই গরমিল। ভুয়া কাগজ পত্র দিয়ে এই টাকা জায়েজ করার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের বেতনভোগী সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ যে কাগজপত্র ভাউচার হিসেবে জমা দিয়েছিলেন, তা নিয়ে সন্দেহ জাগে। তদন্ত শেষে সেই সন্দেহ সত্যি প্রমাণিত হয়েছে ফিফার কর্মকর্তাদের কাছে। শাস্তি হিসেবে সোহাগকে দুই বছরের জন্য সব ধরনের ফুটবলীয় কার্যক্রম থেক🍰ে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সঙ্গে বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় বার লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। শাস্তিপ্রাপ্ত সোহাগ আইনজীবীর মাধ্যমে জানিয়েছেন, তার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে। তিনি সবোর্চ্চ ক্রীড়া আদালতে যাবেন।
আদলতে যেতেই পারেন। তিনি বলতেই পারেন তার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে, ন্যায় বিচার তিনি পাননি। কিন্তু আদালতে সোহাগ কি সত্য কথা বলার সাহস দেখতে পারবেন? তিনি কি বলতে পারবেন, কার বা কাদের নির্দেশে তিনি এই আর্থিক অনিয়ম 🌼করে গেছেন বছরের প⛦র বছর?
ফুটবল ফেডারেশনের আর্থিক অনিয়ম আর দুর্নীতি নিয়ে মুখ তো প্রথম খুলেছিলেন ফেডারেশনের ভেতর থেকে কয়েকজন সাবেক তারকা ফুটবলার। প্রয়াত বাদল রায় বাফুফের সহ-সভাপতি থাকার সময় সোহাগ ও বাফুফের শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তার অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন। তখন বাফুফের এই বেতনভোগী সোহাগকে দিয়ে বাদল রায়কে অপমানিত করানো হয়েছিল! বাদল রায়ের প্রতিবাদ যে অন্যায়ের বির✃ুদ্ধে ছিল সেটা আজ ফিফা প্রমাণ করে দিলো। স্বর্গ থেকে বাদল রায়🔯 আজ আপনি হাসছেন না কাঁদছেন জানি না। আপদমস্তক ভদ্রলোক, নিখাঁদ ফুটবলপ্রেমী সাবেক জাতীয় তারকা বাদল রায় ওপারে বসে হাসতে পারেন এটা দেখে যে, যাদের প্ররোচনায় সোহাগ তাকে অপমান করার সাহস দেখিয়েছিলেন, সেই কর্তারা সোহাগের দুর্নীতি আর শাস্তির কথা উঠতেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে দ্রুত হল থেকে বেরিয়ে গেছেন!
একজ﷽ন সোহাগ কি তার নিজের জন্য এই কাজ করার সাহস দেখিয়েছেন? যারা তাকে দিয়ে করিয়েছেন,তারা কী বলবেন! কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে পড়ছে যে এখন। সোহাগের দুর্নীতির দায় বাফুফের শীর্ষকর্তারা এড়াতে পারবেন না। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কী করে সেটাও দেখার বিষয়। সরকারের ও স্পন্সরের অর্থ লুটপাট হয়নি সে ব্যাপারেও সংশয়হীন থাকা যাচ্ছে কি? বাফুফের এই আর্থিক অনিয়মের দায় এড়াতে পারবেন না সাধারণ কাউন্সিলররাও। যারা নির্বাচনের আগে দুই-তিন রাত ফাইভ স্টার হোটেলে থাকা খাওয়ার সুযোগ পাওয়ার পর `পাস` `পাস` বলে সব জায়েজ করে দিয়েছেন বছরের পর বছর, জবাব তাদের কাছেও চাওয়া উচিৎ। রাজনৈতিক ক্ষমতা আর অর্থের জোরে যারা কাউন্সিলর হয়েছেন, তাদের কাছ থেকে ফুটবলের উন্নয়নে কী আশা করবেন!
দিন কয়েক ফাইভ স্টারে থাকার জন্য কাউন্সিলর হয়ে ফুটবলে আসেন, তা🐟দের হাত ধরে আজ দেশের⭕ ফুটবলের বস্তিবাস! বাফুফের আর্থিক কেলেঙ্কারি গোটা জাতিকে বিশ্বফুটবল বিশ্বে খুব ছোট করেছে। যে কর্তাদের কারণে দেশের ফুটবলের এই অবস্থা, তারা আসলে কেন বাফুফের চেয়ার বারবার আকড়ে থাকতে চান সেটাও আজ পরিষ্কার।
যে দেশের প্রধানমন্ত্রী একজন ক্রীড়াপ্রেমী, তার সময়ে ফিফা এদেশের ফুটবলের বড় আর্থিক অনিয়ম আর কেলেঙ্কারির কথা ফাঁস করল। এরমধ্যে কোনো ষড়যন্ত্র আছে তা ভাবার কারণ নেই। প্রধানমন্ত্রীর উচিত বাফুফের কর্তাদের ডেকে ব্যাখ্যা চাওয়া। দেশের এক সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবলের এই দুরাবস্থার জন্য একজন বেতনভোগী সোহাগ একা দায়ী নন। তাকে দিয়ে কাজগুলো যারা করিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে সরকার কী ব্যবস্থা নেয়, তার উপর অনেকখানি নির্ভর করবে এদেশের ফুটবলের ভবিষ্যৎ।
দেশজ ফুটবলের অনিয়ম নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বাদল রায়রা অপমানিত হয়েছেন। লাঞ্ছিত হয়েছেন। সে সময়💖 যদি সোহাগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতো, তাহলে আজ বাংলাদেশ ফুটবলের গায়ে কালির দাগ পড়ত না। এটা এমন এক 𝄹কালির দাগ, যা দেশের সবচেয়ে পাওয়ারফুল ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়েও পরিষ্কার করা যাবে না।
লেখক: সাংবাদিক